সন্ধ্যাতারা টার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হেসে বাসে উঠে পড়লো ওলি। আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরোতে পেরেছে, অনেক দিন পর । আজ মনে হয় শুভ কে একটা সারপ্রাইজ দিতে পারবে।কারণ আজ যে শুভর জন্মদিন । সকালে একবার ফোন করেছিল, ধরেন নি বাবু। বেচারা নাইট শিফ্ট করে করে কাহিল। বাসে ওঠার আগে একটা বড় ডেয়ারি মিল্ক কিনলো, ফুল কাকুও বসেছে । কিন্তু নাহ্, ছেলেটা বাড়ি নিয়ে তো যেতে পাড়বে না। যদিও কাকিমা, কাকু সবই জানে ওদের কথা। শুধু চকোলেট টাই নিলো ছোট্ট খাট্টো চেহারার ওলি। আজ বেশ সেজেছে, কাজল আর কানে অনির দেওয়া "এ" লেখা দুলটা পরেছে। অনি ওদের দুজনের খুব ভালো বন্ধু, বেস্ট ফ্রেন্ড, সেই কলেজ থেকে । ইদানীং অনি টার সাথে কথাই হয় না ওলির। বাসের জানলায় বসে হঠাৎ অনির কথা মনে পড়লো ওলির। ফোন করলো অনি কে। - "ওই শুভর অফিস টা যেতে ঠিক কোথায় নামতে হবে রে?"
অনেক দিন পর ওলির ফোন পেয়ে অনি বুঝেছে, নিশ্চয়ই আবার কিছু দরকার, একটা সুযোগ পেয়ে গেলো অনি। - "আমি কি জানি! তোমার মানুষের সাথে দেখা করবে, আর আমি বলবো?"
"বলনা, বাবু, আমার মনে পরছে না ।"
"মনে করো, আমি কি সারাক্ষন তোমার এটা ওটা করতে আছি! পারবো না ।"
"আরে, এরম করছিস কেন?"
"দরকার পরলেই বুঝি এই অনির কথা মনে পরে? আর বাকি দিন গুলো একবারও খোঁজ নিবি না! শয়তান! যাহ্।" এক নিঃশ্বাসে অনি বলে চলে সাজানো অভিমান নিয়ে ।
বেশ খানিকক্ষণ দু পারেই কোন কথা হয় না । হঠাৎ ওলি বলে ওঠে - "তোর বলতে হলে বল, না হলে আমি ওকেই জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি । এত তেল মারতে পারছিনা ।"
অনি একটু অবাক হয়, ওতো রাগ দেখাতে চেয়েছিল, সত্যি সত্যি তো নয় । ফোন করলো যখন মেয়েটা তখন তো খুব চনমনে লাগলো, হঠাৎ এমন কিছুই তো বলে নি রিঅ্যাক্ট করার মতো । তবে এত দিনের ভালো বন্ধুর মুখে "তেল মারা" কথাটা অনির বুকে লাগে ।
অনি আর কোন কথা না বলে ডিরেক্সান টা বলে দেয় আর রাখছি বলে ফোন টা কেটে দেয় । ওলির বাস এগিয়ে চলে, অনিও নিজের কাজে ডুবে যায় ।
বাইরে তখন বসন্তের মিষ্টি হাওয়া বইছে, আমের মুকুলের গন্ধে হারিয়ে যায় ওলি। এই গন্ধ টা অনির খুব প্রিয় । মনে হয় -ইস্, অনিকে ওভাবে না বললেই হতো, বেচারাকে এতদিন পর ফোন করলো, না হয় রাগ করলো একটু, তাই বলে... ।
আবার ফোন করলো সরি বলতে। রিং হচ্ছে, ধরছে না। চার বারের বার ফোন টা রিসিভ হতেই বলে চলল ওলি - "সরি সরি । আরে আমি ওটা বলতে চাইনি, দ্যাখ । তুইও হয়েছিস আজকাল, বড্ড রেগে যাস।"
অনেকটা বলার পর কোন সাড়া নেই দেখে ওলি বলে ওঠে - "কিরে, কথা বলবি না?"
ওপার থেকে এক অচেনা কন্ঠ বলে - "আপনি কি এনার বান্ধবী? আপনাকে এখুনি একবার নেষ্ট টাউন থানায় আসতে হবে। অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে এনার ।"
শুনে কেঁপে ওঠে ওলি। সর্বনাশ! ছেলেটা করল কি! ওভাবে বলা টা সত্যিই খারাপ হয়েছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ওলি। শুভ কে ফোন করলো, ধরলো না। খুব ভয় পেয়েছে আর সাথে একটা প্রচন্ড টেনশান। হঠাৎই দেখে বাস টা নেষ্ট টাউন থানার সামনে । বাইরে থেকে হাত নারছে শুভ আর অনি। সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে ওলির । পরি কি মরি করে নামল। এসে ওর মুখ চোখ দেখে শুভ, অনি দুজনেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো । "কি রে, এভাবে কি দেখছিস? কি হয়েছে? ঘামছিস কেন?" - শুভ বলে। অনি বলে - "কিরে ভয় পেয়েছিস নাকি?"
ওলি একটু সামলে নিয়ে ভালো করে দেখে অনি কে। - "তুই ঠিক আছিস তো?"
অনি আকাশ থেকে পড়ে - "আমার কি হবে!"
- "থানার থেকে যে বলল তোর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে!"
শুভ বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে বলে - "কি বলছিস? ও তো কতক্ষণ আমার সাথে দাঁড়িয়ে ।"
ওলি আসতে আসতে বোধহয় বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে ।
অনি বলে - "ফোন টা কাটলি কেন? তোকে তো পুরোটা বলতেই পারলাম না।
ওলি প্রশ্ন করে - "মানে?"
"মানে, তুই ওর অফিসের ডিরেক্সান জানতে চাইলি, আমরা একটু ঝগড়া করে তোকে বললাম । পট করে ফোন টা কেটে দিলি। তো ঘুরিয়ে করতে গিয়ে দেখলাম ১০ টা বাজতে যায় । এত রাতে তুই আসছিস দেখে অামি শুভ কে ডেকে নিলাম ।
" ১০ টা! কি বলছিস? আমার অফিস থেকে তো আধ্ ঘন্টা লাগে ।" - বিষ্মিত হয় ওলি।
শুভ একটু ধমকে ওঠে - "কে বলেছে, এত রাতে আসতে? ঘড়ি টা দেখেছিস?"
ওলি ঘড়িতে দেখে রাত ১০ টা ২০। কিভাবে হলো! ওতো বেড়লো সন্ধ্যের সময় । আকাশে তখনও তারা টা দেখলো!
অনি বলে - "তোকে ফোন করছি কিন্তু তুই তো ধরলি না, বাধ্য হয়ে শুভ তোর বস্ কে ফোন করলো, কারন আমিও তো ঠিক বুঝলাম না তুই আদৌ বেড়িয়েছিস কিনা। তোর বস্ বলল তুই আজ রাত করে বেড়িয়েছিস ।"
ওলির সব ঘেঁটে যাচ্ছে । বেড়লো সন্ধ্যে, হয়ে গেল রাত! আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল।
শুভ বলে উঠল - "তারপর দেখি তুই বাসের জানালায় ঘুমোচ্ছিস। ভাগ্যিস সিগনালে থেমেছিল!"
ওলি বলে ফেলে - "তবে অ্যাক্সিডেন্ট এর কথাটা... "
অনি আর শুভ হাসতে থাকে । অনি বলে - "কি ভাবলি তোর কথা শুনে গাড়ি চাপা পড়লাম?" বলে আবারও হেসে ওঠে।
ওলি এবার বুঝতে পারে যে আদৌ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরোতে পারে নি, বাসের জানালার ধারে হাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল আর তার ফলে স্বপ্নে দেখেছে ওই অ্যাক্সিডেন্টের খবর ।
শুভ এবার নাক টা ধরে নাড়িয়ে দেয় ওলির - "ওহ্! পাগলি একটা।" বলেই চমকে ওঠে। দু হাতে গাল দুটো ধরেই ধমক - "একি! গা এত গরম! জ্বর তো গায়ে তোর ।"
অনিও কপাল ছুঁয়ে দেখে বেশ ভালো গরম। - "ওফ্! কি যে করিস না তুই!"
ওলি এতক্ষণে নিজেও বোঝে, তার জ্বর এসছে। আর তার জন্যই বুঝতে পারে নি অফিস থেকে কখন বেড়িয়েছে, আর স্বপ্ন দেখাটাও ওই একই কারনে ।
অনেক রাত হয়ে গেছে, দুজনে মিলে ওলি কে উবের বুক করে দিল, বেচারি জ্বর গায়ে যাবে। উবের ছেড়ে দিয়েছে, শুভ - ওলি তাকিয়ে হাসছে দুজনের দিকে । অনি ভাবতে থাকে, পাগলি টা শুভ শুভ করে কি না করে। তোদের জুটি টা এরমই মিষ্টি থাকুক ঠাকুর, তুমি দেখো! শুভ চলে গেল । অনিও হাঁটা দিতে যাবে, কি মনে করে একবার পেছন ফিরে তাকাল। দেখে পাগলি টা গাড়ি থেকে নেমে আসছে হন হন করে। ছুটে গেল অনি। - "কি রে, আবার কি হল?"
- "এই চকোলেট টা একটু শুভ কে দিয়ে দিবি প্লিজ? ভুলে গেছি একদম! আর শোন শোন না, তুই না খুব খুব ভালো । তুই এত ভাবিস আমার কথা, আমাদের কথা আর আমি তোকে কিরম ভুলে যাই। আমাকে ভুল বুঝিস না। আমি কথা দিচ্ছি এরপর থেকে তোর খোঁজ নেব, গল্প করবো তোর সাথে, শুধু দরকারেই ফোন করবনা। প্রমিস। পাক্কা ।"
"ওহ্, পাগলি একটা, যাহ্, বাড়ি গিয়ে ঘুমো, ওষুধ খাস কিন্তু । পোঁছে আমাকে বা শুভকে একটা টেক্সট করে দিস। আর হ্যাঁ, অনি সবসময় তোদের সাথে আছে জানবি।" - বলে ওলির গাল দুটো টিপে দেয় অনি।
উবের মিলিয়ে যেতে থাকে দুরে, বসন্তের মিষ্টি হাওয়া গায়ে মেখে বাড়ির পথে হেঁটে চলে অনি।
টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।
এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source: https://storymirror.com/read/bengali/story/oli-prem/gdhcqtx2
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit