সবাইকে শুভ দুপুর,
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনাদের দিনকাল বেশ ভালই যাচ্ছে? আমি আপনাদের সাথে যুক্ত আছি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার শহর থেকে। প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষায় ব্লগিং করতে পারি বলেই এত ভালো লাগে সেই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। যখন নিজের ভাষা দিয়ে নিজের অনুভূতি গুলো সবার সাথে শেয়ার করা যায় এর চেয়ে আনন্দের আর কি থাকতে পারে। এত সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রিয় দাদা। দাদার জন্য সব সময় দোয়া ও শুভকামনা রইলো আরও যেন অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারেন। বন্ধুরা আবার উপস্থিত হয়েছি নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয় আপনাদের সাথে তুলে ধরার। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আমি আবার উপস্থিত হয়েছি নতুন একটি টপিক্স তুলে ধরতে।
আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম ধারাবাহিক একটি বাস্তব জীবনের গল্প। সখিনার কষ্টের জীবনের গল্পের কথা শেয়ার করেছিলাম। যদিও আমি গত চারটি পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি সমাজের অসহায় ও এতিম সখিনার জীবনের গল্পের পঞ্চম পর্ব। তাহলে শুরু করা যাক বন্ধুরা—--
যদিও সখিনার দুইটি বিয়ে আগে ভেঙ্গে যায় এখন তৃতীয় স্বামী নিয়ে ঘর সংসার করতেছে। বেশ অনেকদিন হয়ে গেল তাদের সংসার জীবনের। এই সংসারে দুইটি মেয়ে সন্তান এবং দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মান অভিমান চলতে থাকে। সেই স্বামীটির একটি বদ অভ্যাস রয়েছে বাইরের মেয়েদের দিকে বদনজরে দেখে। কিন্তু সখিনা সেই বিষয়টি একদম ভালো চোখে দেখে না। যদিও তার স্বামীর জন্য এ বিষয় নিয়ে সমাজে অনেকবার বিচার সালিশ ও হয়েছে এবং সকিনার পরিবারকে অনেক অসম্মানিত হতে হয়েছে। একদিন হঠাৎ করে সকিনার সাথে তার স্বামীর সাথে তর্ক লেগে গেল। হঠাৎ এক সময় সখিনাকে দুইটি তালাক দিয়ে দিলো। তখন সখিনার স্বামীর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল।
সেই বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় এমন একটি খারাপ কাণ্ড ঘটে গেল। সখিনাকে তালাক দেওয়ার বিষয় টা সখিনার ভাইয়েরা জানতে পারে এবং সেই বিষয় নিয়ে তারা বসলো। ইতিমধ্যে তো সখিনার বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেল। এখন আছে সখিনার ভাইয়েরা এবং সখিনার আপন এক ভাই এবং তার সৎভাইয়েরা ছিল। সখিনাকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি যখন তার ভাইয়েরা জানতে পারে অনেক বেশি ক্ষেপে যায়। এক সময় তারা তার স্বামীকে মারধর করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। আবারও নেমে এলো সখিনার জীবনের দুঃখের অন্ধকার। তখন সখিনার ৫ সন্তান ছিল। তার আগের স্বামীর এক সন্তান এবং তার বর্তমান স্বামীর চার সন্তান মিলে মোট পাঁচ সন্তান নিয়ে সখিনার জীবনের কষ্টের শেষ থাকলো না আর। এখন এই পাঁচ সন্তানের খাওয়া দাওয়া ভরণ পোষণ অনেক খরচ সখিনার সংসারে।
তখন সখিনা তার বড় ছেলেকে পড়ালেখা থেকে বাদ দিয়ে দিল। সখিনা তার সেই বড় ছেলেটাকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করায়। এভাবে সখিনা বাড়ির আশেপাশে সবজি বাগান লাগিয়ে এবং নিজে সেলাই কাজ করে কিছুটা টাকা পায় সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে থাকে। এক সময় সখিনা তার বড় ছেলেটাকে গ্রামের বাড়ির পাশে একটা দোকান দিয়ে বসালো। মুদির দোকানে অনেক বেশি বিক্রি হতো। এভাবে সখিনার জীবন চলতে থাকে সুন্দরভাবে। যেহেতু স্বামী নেই সখিনাকে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয় বিভিন্ন সময়। স্বামী হচ্ছে মাথার ছায়া যখন মাথা থেকে সেই ছায়া টা সরে যায় তখন মানুষেরা কথা বলতে আর কেউ তুয়াক্কা করেনা।
যেহেতু তার দুঃখে ভরা জীবন একদিকে ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে বিভিন্ন কথা সবকিছু মিলিয়ে তার জীবনটা একদম বিষন্ন। এক সময় সখিনা সেই মুদির দোকান থেকে বেচা কেনা করে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন। সখিনা তার অন্য সন্তানদেরকেও পড়ালেখা করাতে থাকে। সখিনা তার জমানো টাকা দিয়ে বড় ছেলেকে তার ভাইদের সহযোগিতায় বিদেশে পাঠিয়ে দিল। বলতে পারেন সখিনা কিছুটা সুখে ছিল যদিও তার স্বামী ছিল না। তার এই বদ অভ্যাস জনিত স্বামী না থাকার কারণে আরও সুন্দর হলো সখিনার জীবন। বাচ্চারা ভালোভাবে পড়ালেখা করতে থাকলো এবং বিদেশ থেকে তার বড় ছেলে টাকা পাঠাতে থাকে। দেখতে দেখতে দুঃখ কষ্টের সখিনা তার সব সন্তানকে বড় করে নিলো। বড় মেয়ে পড়ালেখা করে ছোট মেয়ে পড়ালেখা করে। বাকি দুই ছেলে সন্তান তারাও পড়ালেখা করে।
এক সময় তার বড় ছেলে বিদেশ থেকে ঘরে কিছু দিনের জন্য আসে। সুন্দর একটি ঘর করল তার আগের পুরাতন ঘরটা ভেঙ্গে। সখিনার বড় মেয়েকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিল। সে সাথে আরও একটি মেয়ে আছে তাকে পড়ালেখা করাতে থাকে। বাকি দুই ছেলে সন্তানও পড়ালেখা করতে থাকে। সখিনা তার বড় ছেলেকে অনেক বড় আয়োজন করে বিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে সখিনার সেই ছেলের দুইটা সন্তানের জন্ম হয়। এভাবে সুখ দুঃখ মিলিয়ে সখিনার জীবন ভালভাবে চলতেই থাকে। এক সময় আবারও ঝামেলা শুরু হয়ে যায় সংসারে। যেহেতু স্বামী নামক বট গাছটি সংসারে নেই তাই তাকে বিভিন্ন ধরনের বিপদের দিকে ধাবিত হতে হয় এবং সেগুলো সামলে নিতে হয়। তার আরও দুই ছেলে বড় হয়ে যায়। একটা ছেলেকে তার বড় ছেলের সহযোগিতায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও সেই ছেলেটি দেশে থাকতে তেমন কাজকর্ম করত না।
পড়ালেখা করাতে চেয়ে ও সেই ছেলেটি পড়ালেখা করল না। যেহেতু সেই ভালোভাবে পড়ালেখা করতেছে না তাই বিদেশে পাঠিয়ে দিল। সখিনা একটা মেয়েও যখন বিয়ে দিল। এখন সখিনার সংসার রয়ে গেল পুত্রবধু এবং তাদের নাতিরা। সে সাথে সখিনার অবিবাহিত এক মেয়ে এবং অবিবাহিত দুই ছেলে। এক সময় তার ছেলের বউ তাদের থেকে আলাদা হতে চেষ্টা করল। তারপর চিন্তা করল তার স্বামীর টাকাই এত বড় একটি সংসার সামলানো কি দরকার। তাই তার ছেলের বউ সখিনার বড় ছেলেকে বুঝিয়ে সুজিয়ে সে সংসার থেকে সরে যাওয়ার জন্য খারাপ বুদ্ধি দিতে থাকলো। তার বড় ছেলেরও সেই চিন্তা মাথায় আসলো। যেহেতু বড় ছেলে আগের স্বামীর। তখন তার বড় ছেলে ভাবতে থাকলো শুধু শুধু অন্যের ছেলে মেয়েদেরকে কেন খাওয়াবে।
সখিনার বড় ছেলে তাদের আর খাওয়া দাওয়া করাবে না সেই চিন্তা মাথায় আনলো। কিন্তু সখিনার অন্য ছোট ছেলেমেয়েদের এই ধরনের মনের মধ্যে কোন খারাপ বুদ্ধি ছিল না। তারা এক সাথে যেহেতু বড় হয়েছে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। হঠাৎ একদিন তার ছেলে এবং ছেলের বউ দুই সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে দূরে একটি জায়গা নিয়ে সেখানে সুন্দরভাবে একটি ঘর করলো। যেহেতু তার বড় ছেলের অনেক টাকা পয়সা ছিল তার ঘর করতেও কষ্ট হচ্ছিল না। তার ছেলের বউ অনেক বেশি খুশি ছিল যেহেতু সেই সংসার থেকে বেরিয়ে আসলো। এখন যেহেতু সংসারের অন্যান্য খরচ বহন করতে হচ্ছে না তার ছেলের বউ অনেক বেশি খুশি ছিল। সেই চিন্তা করল তার অনেক বেশি টাকা পয়সা হবে অনেক ধন সম্পদ হবে।
আজ এখানে শেষ করছি আগামী পর্বে বিস্তারিত শেয়ার করব—------
লেখার উৎস | গ্রামের বাস্তব একটি গল্প |
---|---|
ইমেজ সোর্স | কেনভা দিয়ে তৈরি |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | গল্প লেখা |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1776917920515510498?t=UTLBQBST4gGC535DXDNiJA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit