আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি সবাই ভালো আছেন বন্ধুরা। আমিও ভালো আছি পরিবার পরিজনকে নিয়ে। আজকে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাচ্ছি আমার আজকের নতুন ব্লগে। বন্ধুরা প্রতিনিয়ত আপনাদের সাথে ইউনিক কিছু শেয়ার করতে খুব ভালো লাগে। ভালো লাগে সবার সাথে শেয়ার করতে এবং আরো অনেক বেশি ভালো লাগে যখন সবাই অনেক উৎসাহ প্রদান করেন। প্রতি সপ্তাহে চেষ্টা করি সপ্তাহে ৭ দিন বিভিন্ন রকমের পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। আজকে আমি সেই ধারাবাহিকতায় একটি জেনারেল রাইটিং আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।জেনারেল রাইটিং কিম্বা ক্রিয়েটিভ রাইটিংগুলো সবার সাথে শেয়ার করতে ভালো লাগে। এর মাধ্যমে ভিন্ন কিছু টপিকস ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করা যায়।
আজকে আমি শেয়ার করবো গ্রামের এক অবহেলিত নারীর কথা। আমেনা ছিলেন গ্রামের এক অসহায় নারী। পরিবারের বড় কন্যা সন্তান হয়েও তাকে সবাই অনেক বেশি অবহেলা করতো। তার নিজের মা ছিলো না তার সৎ মা ছিল। তার সৎ ভাই ছিল দুইজন আর বোন ছিলো দুইজন। সেই ছিল তার মা-বাবার এক মেয়ে সন্তান। তার বাবার প্রথম স্ত্রীর কন্যা সন্তান। তার বাবার সাথে তার মায়ের কোন মিল বন্ধন না হওয়ার কারণে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই তার বাবার কাছে বড় হতে থাকে। তার বাবা আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘর সংসার করে। সেখানে তার দুই ভাই এবং দুই বোন জন্মগ্রহণ করে। তারা ছিল মোট ভাই-বোন পাঁচজন। কিন্তু আমেনাকে সবাই অনেক বেশি অবহেলা করতো।
যেহেতু অনেক ছোট বেলায় তার মা তাকে বাবার কাছে রেখে চলে যাই। সে তার সৎ মাকে নিজের মা বলে ডাকতেন। তাছাড়া ও তার পরিবারে তার দাদা দাদী চাচা চাচিরা ছিল সবাই তাকে দেখাশোনা করতো। তার সৎ ভাইয়ের একজনের নাম শহিদুল্লাহ সেই বড় হয়ে সৌদি আরবে যায়। সেখানে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়ে যায়। বলতে গেলে সেই গ্রামের সব মানুষদেরকে অনেক বেশি সহযোগিতা করতেন। কিন্তু সে তার বড় বোন আমেনাকে একদম সহ্য করতে পারতেন না। যেহেতু আমেনার সৎ মা আমেনা কে সহ্য করতে পারতো না তাই তার ছোট ভাই বোনেরাও একই অবস্থা করতো।
আমেনাকে তাদের বাড়ির পাশে বিয়ে দেওয়া হয় এক গরিব ছেলেকে। সেখানে আমেনা ঘর সংসার করতে থাকে। যদিও স্বামীর আয় রোজগার তেমন ভালো ছিল না। সেই মাঝে মাঝে তার বাবা ভাইদের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা চাইতো। কিন্তু আমেনার সৎ ভাই একদম সহযোগিতা করতো না। বলতে গেলে অনেক বেশি অবহেলা করতো অনেক বেশি হিংসে করতো। আমিনার আরো দুই সৎবোন ছিল তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। তবে আমেনার বাবার জায়গা সম্পত্তি ও ছিল অনেক। তারপরেও তারা আমেনাকে অবহেলা করতো।
এক সময় আমেনার বাবা মারা যায় কিন্তু আমেনার সৎ মা আছে এবং ভাই বোন আছে। আমেনা বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারতো না কিংবা বাবার বাড়ির কোন আবদার তার কাছে ছিল না। যেহেতু তার বাবা ছিল না তার মা ছিলনা। যদিও তার সৎমা কিংবা সৎ ভাই-বোনেরা যদি খুশি মনে আমেনাকে ডাকতেন তাহলে যেত। তবে মাঝে মাঝে এমন হতো যে কোন অনুষ্ঠান তারা গোপনে করে ফেলতো কিন্তু আমানাকে খবর দিত না। কোন কারণে যদি সেই খবরগুলো আমেনা জানতে পারতো সেই অনেক কান্নাকাটি করতো। তবে সৃষ্টিকর্তায় বেশ ভালো বোঝেন চোখের পানি মানুষের চোখ থেকে এত সহজে বের হয় না।
সেই চোখে পানি এক সময় অভিশাপে পরিণত হয়। বেচারী আমেনা অনেক কান্নাকাটি করে সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক দোয়া কামনা করতো যেন তাদের হেদায়ত দান করেন। আমেনার মনে অনেক কষ্ট ছিলো যে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানতো। এই এভাবে করতে করতে আমেনারও বয়স হয়ে যায়। তার সব ভাই বোনদের বিয়ে হয়ে যায়। তার সেই ছোট ভাই শহীদুল্লাহ তার মাকে সৌদি আরবে নিয়ে যায় হজ্ব করার জন্য। শহীদুল্লাহ তার বউকে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। সেখানে ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তারা আমেনাকে অবেহেলার করতে থাকে। তার কোন খবর রাখেনা তারা।
তবে আমেনার এই কান্নাকাটি এক সময় অভিশাপে পরিণত হয়। সৃষ্টিকর্তা বেশ ভালো বুঝে থাকেন কার অভিশাপ কখন লেগে যায়। এক সময় শহীদুল্লাহ সৌদি আরব থেকে তার সন্তানদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেয় তার মাকেও পাঠিয়ে দেয়। শহীদুল্লাহ সৌদি আরব থেকে দেশে আসে অনেক দিন থাকার পরে আবার চলে যায়। হঠাৎ করে একদিন খবর আসলো শহীদুল্লাহ কাজের সময় পাঁচ তলা বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে গেলো। এমন ঘটনা যেন পুরো পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসলো। কিন্তু কোন মানুষ কামনা করেনা কোন মানুষের ক্ষতি হোক কিংবা খারাপ হোক।
অনেকদিন অবচেতন থাকার পরে এক সময় সেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অপারে চলে গেলেন। আসলে মানুষের মৃত্যু কখন আসে বলা খুবই কঠিন। কেউ কখনো জানতে পারে না যে তার মৃত্যু কখন আসবে। তাই সবার কাছে সবাইকে একটু ভালো হয়ে থাকতে হয় প্রস্তুত থাকতে হয়। একটু ভালো কাজ করতে হয়। কারো চোখের পানি যেন কারো অভিশাপে পরিণত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। যদিও শহীদুল্লাহ এত বেশি খারাপ মানুষ ছিল না। গ্রামের লোকজনদেরকে অনেক বেশি সাহায্য সহযোগিতা করতো। কিন্তু তার ঘরের মানুষ তার নিজের বোনকে সেই অনেক বেশি অবহেলা করেছে অনেক বেশি হিংসা করেছে।
এটা বোঝা খুব মুশকিল কোন সময় কার অভিশাপ কিভাবে লেগে যায় সেটা বলা যায় না। শহিদুল্লাহ মারা যাওয়ার পরে তার পরিবারের সবার যেন দুর্বলতা নেমে আসে। কারণ শহীদুল্লাহ ছিল সেই পরিবারের একজন মূল স্তম্ভ। তার ইনকামের উপর তার সহযোগিতার উপর সবাই নির্ভর করতো। সেই অনেক টাকা ইনকাম করেছে সব টাকা পয়সা তার বউ জব্দ করে ফেললো। অর্থাৎ শহিদুল্লাহর বউয়ের অনেক সন্তান ছিলো ৬জন।তিন বছর আগের ঘটনা। এখনো সেই সন্তারা ভালো আছে। সেই ইনকামের টাকা দিয়ে ব্যাংকের টাকা দিয়ে শহীদুল্লাহর বউ এখনো তার সন্তানদেরকে মানুষ করতেছে।
শুধুমাত্র শহীদুল্লাহ নেই কিন্তু তার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে। আমরা কেউ কল্পনা করি নাই যে সে এভাবে দুনিয়া থেকে চলে যাবে। আসলে মানুষের এই ধরনের কথাগুলো বললে ভালো নয়। কিন্তু মানুষ দুনিয়াতে পাপ করলে কিংবা দুনিয়াতে অভিশপ্ত হলে কখনো সুখে থাকতে পারেনা সেটা আমি বিশ্বাস করি আর কেউ না করুক। তাই আমরা একটু সচেতন হয়। একটু সাবধান হয়ে জীবন যাপন করি যেন কারো অভিশাপ নিয়ে চলে যেতে না হয়।
লেখার উৎস | নিজের অনুভূতি থেকে |
---|---|
ইমেজ সোর্স | ভিক্টিজি ডক কম |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সময় দেখা যায় মানুষের অভিশাপ ঠিকই লেগে যায়। কিন্তু আমরা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি না। হয়তো তেমনটি হয়েছিল শহিদুল্লার সাথে। তাছাড়া যেহেতু সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিল এজন্য তার পরিবারের ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক। শহীদুল্লাহ যেহেতু নেই সেজন্য তার বউ সব টাকা পয়সা দখল করে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এরকম দেখা যায় স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর পরিবারকে আর বউরা তেমন দেখতে পারেনা। যাইহোক খুব খারাপ লাগলো গল্পটি পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের গ্রামের একটি বাস্তব ঘটনা আপু। আপনি সময় দিয়ে পড়লেন অনেক ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/nahar_hera/status/1797197291633422367?t=JDABq3SbLP6M3rGg6wBLEg&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে কেউ কিন্তু ইচ্ছে করে কারো খারাপ চায় না। তবে যদি কারো কষ্ট হয় তাহলে কিন্তু সে কিছু বললে অনেক সময় সেটা লেগে যায়। এখানে দেখছি তেমনি হয়েছে। আমেনা আসলে অনেক বেশি কষ্ট করেছে। সৎ মা হলেই আর কোন শান্তি নেই। সৎ মায়েরা কেন যে দেখতে পারে না এটাই বুঝিনা। কিন্তু আমেনা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে বলেই হয়তোবা এমন হয়েছে। তবে এইভাবে বলা কখনোই ঠিক নয়। শহীদুল্লাহ মৃত্যুটা সত্যিই অনেক দুঃখজনক ছিল। আপনি খুব ভালো লিখেছেন আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অভিশাপ টা এমন জিনিস আপু কারো দীর্ঘশ্বাস কারো চোখের পানি খুব সহজেই লেগে যায় আল্লাহর আরসে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অবহেলিত মেয়ে আমেনার গল্পটি শুনে খুব খারাপ লাগলো আপু। আসলে মা না থাকলে বাবা ও সৎ হয়ে যায় রকম এই ঘটনা ঘটেছে আমেনার জীবনে। সত্যিই তাই কখন কার অভিশাপ কিভাবে কাকে লেগে যাবে কেউ বলতে পারে না ভালো মানুষ হলেও নিজের বোনকে যে পছন্দ করেনি নিজের বোনই তো সৎ বোন মানেই তো নিজের বোন। পৃথিবীতে কেউ চিরজীবনের জন্য থাকতে আসে নি তাই সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত। ধন্যবাদ আপু আমাদের সাথে পোস্টটি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই পৃথিবীতে মা-বাবারা হচ্ছেন অমূল্য সম্পদ। তারা যদি না থাকে সব সময় অবহেলিত হতে হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে অনেক সময় মুখে অভিশাপ দিতে হয় না কষ্ট পেয়ে যদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেটাই অভিশাপ হয়ে যায়। আমেনার জন্য খুবই খারাপ লাগলো। কত কষ্ট করেছে সে।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। যদিও মানুষের মৃত্যু কামনা করা ঠিক নয়। তারপরও তাদের শাস্তি কিন্তু তারা পেয়ে গেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলছেন আপু মুখ দিয়ে কিছু বলতে হয় না দীর্ঘশ্বাস হচ্ছে বড় অভিশাপ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit