প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ পরিবার,
প্রিয় কমিউনিটির সকল ব্লগার ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। লেখার শুরুতে সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাচ্ছি আমার আজকের ব্লগিংয়ে। আশা করি বন্ধুরা আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। তো বন্ধুরা প্রতিদিনের মতো আবার উপস্থিত হয়ে গেছি। আজকে আমি আবারো নতুন একটি টপিক্স নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমি আজকে আপনাদের সাথে যে বিষয় শেয়ার করব তা হচ্ছে গত পর্বে আমি একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম চির দুঃখী সুমির ভালোবাসার গল্প পর্ব-২। আজকে শেয়ার করবো পর্ব-৩ এবং শেষ পর্ব।
চির দুঃখী সুমির ভালোবাসার গল্পঃ
তো বন্ধুরা গত পর্বে আমি শেয়ার করেছিলাম সুমি এবং রাসেল দুইজনের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরে। এরপরে দুই জন দুই প্রান্ত চলে গেল। এখন সুমির উপর অনেক চাপাচাপি শুরু হলো। যেহেতু সুমির ছোট দুই ভাই ছিল। ভাই দুটি এখন বিয়ের পর্যায়ে চলে এসেছে। সে ক্ষেত্রে ছোট ভাইদের কে বিয়ে করাতে হলে আগে সুমিকে বিয়ে দিতে হবে। এদিকে সুমির বয়স বেড়েই যাচ্ছিল। পরিবারের সবার অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছিল সুমিকে নিয়ে। এদিকে বিয়ের প্রস্তাব আসলে সেগুলো রাসেল ভেঙ্গে দিচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। খুব গোপনে বিয়ের প্রস্তাব আনলেও তা রাসেলের কানে চলে যায়। তারা সবাই চেষ্টা করছিল যাতে রাসেল না শুনে। কিন্তু তারপরও কেন জানি তার কানে চলে যায়। কিংবা যারা প্রস্তাব নিয়ে আসে তাদেরকে অনেক খারাপ খবর শুনাই দেয় রাসেল। এভাবে বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল। যদিও সুমি আমার বয়সে বড় ছিল।
তো সেই দুঃখের কথা গুলো মাঝে মধ্যে সুমির মা আমার সাথে শেয়ার করতো। যাতে সুমির জন্য একটা ভালো ছেলে দেখা হয়। কিন্তু এর আগে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম সুমির বড় বোন রুমির দেবর সুমিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু রুমির দেবর রনিও তখন বিয়ে করে নাই। কি জানি সৃষ্টিকর্তার এমন লীলা খেলা। রনি তখনো পর্যন্ত বিয়ে করে নাই। রনিকে কেউ আর বিয়েতে বসাতে পারে না। সে একজন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের টিচার ছিলেন। একজন সিনিয়র ইংলিশ টিচার ছিলেন। তো এভাবে যেতে যেতে হঠাৎ একদিন সুমির দুলাভাই রুমির হাজব্যান্ড রনির সাথে তার আর সুমির বিয়েটা ঠিক করার জন্য পরিকল্পনা করে। অবশেষে রনিও রাজি হয়ে যায়। রাজি হওয়ার কারণ হচ্ছে আগেও রনি সুমিকে প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু সুমি তা গ্রহণ করেনি।
কিন্তু সুমির এখন কিছু করার নেই তাই অবশেষে সেই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। যদিও রনি একজন সিনিয়র টিচার ছিলেন তবে তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তো বিয়ের সময় রনিকে খুব সম্মানিত করা হলো। সুমিকে ও রনি অনেক গয়না দিল অনেক কিছু দিল। তাছাড়া সুমিদের বাড়ির থেকেও অনেক টাকা খরচ করল বিয়েতে সুমির জন্য। যদিও বিয়েটা গোপনে হলো কিন্তু তার পরেও সম্মানের সাথে হল। অবশেষে দেখা যায় সুমিও রনিকে নিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট ছিল। যেহেতু সেই আগে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে রাসেল কে ভালবেসে। সেই এখন আর তা মনে রাখতে চাইনা। অবশেষে তাদের মধ্যে বছর পেরিয়ে একজন কন্যা সন্তানের আগমন হলো। সেই সাথে সুমির ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে। সেই অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু তার হাজবেন্ড রনি তাকে অনেক বেশি সেবা যত্ন করতো। অনেক বেশি দেখাশোনা করত। বলতে গেলে ভালবাসায় ভরপুর ছিল তাদের মধ্যে।
কিন্তু এদিকে সুমির ছোট ভাই সেলিমও বিদেশ থেকে আসার জন্য পরিকল্পনা করলো। তাদের বাড়িতে অনেক বড় করে একটি বিদেশী স্টাইলে ঘর করলো বেশ সুন্দর করে। ঘরের বাবদ সেলিম অনেক টাকা খরচ করলো। কিন্তু যেদিন তারা নতুন ঘরে প্রবেশ করল সেদিন সুমি তাদের বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসলো। সন্ধ্যায় হঠাৎ করে শোনা যায় সুমির হাজব্যান্ড স্ট্রোক করে মারা যায়। তখন সুমি তো আত্মহারা হয়ে গেল। সুমির কান্নায় পুরো গ্রাম বাসির চোখে জল আর জল। আসলে আমরা কেউ বুঝতে পারি নাই এমন একটি ঘটনা হয়ে যাবে। মাত্রই বিয়ের দুই বছর চলছিল এর মধ্যেই তার হাজবেন্ড স্ট্রোক করে মারা যায়। এভাবে কিছু দিন গেল। কিন্তু সুমি স্নাতক শেষ করেনি তাই তাকে তার হাজবেন্ডের স্কুলে নিলো না। না হয় তার একটা সুরাহা হত। তার হাজবেন্ডের স্কুলের কিছু টাকা ছিল সেগুলো অবশ্য সুমিকে এবং বাচ্চাদেরকে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করল।
কিন্তু রনির ভাই এবং পরিবার সেটা নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে গেল। অবশেষে স্কুল কমিটির বিচারের রায় অনুযায়ী সেগুলো সুমি এবং তার বাচ্চা পেয়ে গেল। এভাবে সুমি কিছুদিন তার বাপের বাড়িতে থাকে এবং কিছুদিন স্বামীর বাড়িতে যাই এভাবে তার দিন কাটতে থাকে। যদিও স্বামীর বাড়িতে থাকে কিন্তু খাওয়া দাওয়া সেই তার বড় বোন রুমির বাড়িতে করত। তাদের বাড়ি খুব কাছাকাছি ছিল দুই জনেরই। অবশেষে সুমির ছোট ভাই সেলিম বিদেশ থেকে আসে। অনেক বড়োসড়ো আয়োজন করে বিয়ে করাই সেলিম। খুব আনন্দ করা হয় বিয়েতে। কিন্তু সুমির মনে দুঃখ থেকে যায়। দিন শেষে সেই একা হয়ে গেল।
একটা কন্যা সন্তান নিয়ে তাকে দিন যাপন করতে হচ্ছে। কিন্তু তাকে কঠিন রোগে ধরেছে ডায়াবেটিসে। ডায়াবেটিসের কারণে তার চোখের সমস্যা স্ক্রিনের সমস্যা ইন্সুলিন দিতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে তার জীবনটা খুবই কষ্টের যাচ্ছে। তো বন্ধুরা একটা কথা না বললে নয় সেটা হচ্ছে যে আসলে কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না। কেউ যদি অপরাধ করে কেউ যদি পাপ করে তার শাস্তি তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হয়। সেটা অবশ্যই সুমির পরিবার এবং সুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। কিন্তু রাসেল এখনো বিয়ে করেনি। রাসেল এখনো অবিবাহিত অবস্থায় আছে।
আজ এই পর্যন্ত বন্ধুরা আশা করি আমার আজকের গল্প আপনাদের ভালো লাগবে। আজকে আমার গল্পটি এখানেই শেষ করেছি। সময় দিয়ে আমার তিনটি পর্ব পড়ার জন্য এবং সহযোগিতা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখার উৎস | নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তব গল্প। |
---|---|
ইমেজ সোর্স | ভিক্টিজি ডট কম |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
রাইটিং ক্রিয়েটিভিটি | @samhunnahar |
ক্যাটাগরি | গল্প রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
Twitter
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তিন পর্বের এই গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে আপু। আসলে কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারে না। অনেক সময় অভিশাপ দিতে হয় না,এমনিতেই লেগে যায়। তাইতো সুমির বিয়ের দুই বছরের মাথায় তার স্বামীকে হারালো এবং তার জীবনটা আবারও এলোমেলো হয়ে গেল। রাসেলের কিন্তু কোনো দোষ ছিলো না,তবুও সে শাস্তি পেয়েছে বা এখনো পাচ্ছে। তাইতো রাসেল এখনো বিয়ে করেনি। সন্তানসহ রাসেল এবং সুমিকে বিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি 😂। যাইহোক একটু মজা করলাম আপু। আসলে প্রকৃত ভালোবাসা পূর্ণতা না পেলে দুঃখের সীমা থাকে না। সুমিও রাসেলকে অনেক ভালোবেসেছিল, কিন্তু পরিবারের চাপে পড়ে রাসেলের সাথে এমন অন্যায় করা ঠিক হয়নি। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হবেন আমাদের মাঝে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ভাল লাগলো শুনে। পোস্ট পড়েছেন সময় দিয়ে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit