ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডব কক্সবাজার শহরে।

in hive-129948 •  last year 

সবাইকে শুভ দুপুরের শুভেচ্ছা জানাই।

প্রিয় কমিউনিটির সকল ব্লগার ভাই ও বোনেরা আশা করি সকলে ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে আপনাদের দোয়ায়। তো বন্ধুরা বেশ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা চাইলে সব কিছু করতে পারেন এক নিমিষেই। অনেক বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছি আপনাদের দোয়ায় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতে। আসলে বিপদ যে কখন আসে সেটা বলেই আসে না। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হয় সব সময়। যখন সতর্কহীন ভাবে থাকি তখন মহা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। যা আমাদের হয়েছিল কক্সবাজার বাসীদের জন্য।

vecteezy_overgrown-with-vegetation-and-trees-street-in-city_30653343_566.jpg

Image Source

বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে যে বিষয় শেয়ার করব তা হচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডব নিয়ে। যেহেতু দুর্গা পূজা উৎসব দশমীর দিন সমস্ত অফিস আদালত সবকিছু বন্ধ ছিল পূজাকে কেন্দ্র করে। তো সেদিন যেহেতু সকল অফিস আদালত বন্ধ ছিল সবাই ঘরেই ছিল। ভাবছিলাম বাচ্চাদেরকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে যাব বিকেলে। কারণ সেদিন সব দিক থেকে মা দুর্গাগুলোকে নিয়ে আনা হয় বিসর্জন দেওয়ার জন্য। যেহেতু হিন্দুদের জন্য বড় একটি উৎসব সবাই সমুদ্র সৈকত আসে মা দূর্গার সাথে। সেখানে আমরা ও সবাই সমবেত হয় আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু বিপদ টা সেদিন ঘটে গেল কক্সবাজারে।

বেলা যতই বাড়তেছিল মনে হচ্ছিল যে অন্ধকারটা ঘনিয়ে আসতেছে। বের হব দুপুরের দিকে হঠাৎ করে একদম অন্ধকার হয়ে যায় আবহাওয়া। প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সাহেব কে জিজ্ঞেস করলাম এত বৃষ্টি হচ্ছে কেন এই অসময়ে। সাহেব আমাকে প্রতি উত্তর দিলেন এখন তুমি জাননা ৬ নাম্বার বিপদ সংকেত চলতেছে। আমি বললাম কি কথা এ সময় কেন এত বিপদ সংকেত। আসলে এই সিজনে তো ঘূর্ণিঝড় আসার কথা না। সৃষ্টিকর্তা চাইলেই আমাদের সাথে অনেক কিছুই করতে পারেন। আসলে সবকিছু হচ্ছে মানুষের অভিশাপ। আমরা সব মানুষ অভিশপ্ত মানুষে পরিণত হয়ে গেছি। তাই সময়ে অসময়ে আমাদের কাছে বিপদ গুলো ছুটে আসে।

তো ভাবলাম হালকা পাতলা বৃষ্টি হয়ে হয়তো চলে যাবে। তখনও কিন্তু কোন আভাস পাইনি যে এভাবে একটা তান্ডব চালাবে হামুন। কোন প্রস্তুতি ছিল না হঠাৎ করেই সিগন্যাল বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়তো ভেবেছিলাম নরমাল হয়ে যাবে। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টি আরো বাড়তে থাকে। তো বাচ্চাদেরকে কিছুতে বোঝাতে পারছিলাম না যে আসলেই এত বৃষ্টিতে বের হওয়া যাবে না। ওদেরকে কথা দিয়েছিলাম যদি বৃষ্টি কমে যায় তাহলে রাতে বাইর থেকে খেয়ে আসবো। কিন্তু একটা করুন অবস্থা যতই সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ততই বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছিল। তো সন্ধ্যা সাত টার দিকে হঠাৎ করে দূর থেকে একটা বড়সড়ো আওয়াজ শুনলাম। তারপরেই ব্যালকনিতে যেয়ে দেখি একটা বিল্ডিং থেকে বড় একটা কিছু পড়ে গেছে বাতাসের ধাক্কায়।

vecteezy_destruction-caused-by-hurricane-in-country_30652407_374.jpg

Image Source

কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি তখন ধরে নিলাম আসলে বাতাসের গতির মাত্রা বেড়ে যাবে। এর দুই এক মিনিট আগেও কোন বাতাস ছিল না হঠাৎ করে জোরেসোরে বাতাস শুরু হয়ে গেল। আস্তে আস্তে বাতাসের মাত্রা বাড়তে থাকে। আমার এই জীবনে অনেক ঘূর্ণিঝড় দেখেছি কিন্তু এত ভয়ঙ্কর বাতাসের গতি আমি এর আগে দেখিনি। মনে হয়েছিল বাতাসের বেগ পুরো বিল্ডিংটা ভেঙ্গে যাবে। যখন রুমে বসে ছিলাম তখন মনে হয়েছিল যে বাতাসের ধাক্কায় পুরো কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে আমাদের গায়ে পড়বে। তো জানালার পাশ থেকে সরে গেলাম বাচ্চাদেরকে নিয়ে। ইতোমধ্যেই কারেন্ট চলে গেছে বাতাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে। তখন ভাবনাই পড়ে গেলাম। মনে করেছিলাম যে বাতাস হালকা বেয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

কিন্তু দুই ঘন্টার বাতাসে কক্সবাজারের পুরো এলাকায় তছনছ করে দিয়েছে হামুন। বাতাসের গতি এত বেশি ছিল ভেঙ্গে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হাজার হাজার বিদ্যুৎ লাইন। শত শত ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেল বাতাসের থাবায়। এছাড়াও হাজার হাজার গাছ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে গেছে। শুনেছি আরো অনেক মানুষের প্রাণনাশ এর ঘটনা। অনেক বেশি অবাক লাগতেছে বাতাসের এত গতিবেগ আমার এই জীবনে আমি দেখিনি। সামান্য ২ ঘন্টার ব্যবধানে অনেক অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের কক্সবাজার জেলাতে। তো বন্ধুরা অনেক কষ্টের দিন যাপন করেছি ২ দিন। আসলেই বলার মতই না দুইদিন বিদ্যুৎ বিহীন এবং নেটওয়ার্ক বিহীন জীবন যাপন কত যে কষ্টের ছিল। সেগুলো আমি নিশ্চয়ই আপনাদের সাথে বিস্তারিত পরে বর্ণনা করব

আসলেই মানুষের জীবন বড়ই অনিশ্চিত। কখন যে জীবনে কি নেমে আসবে সেটা বলে আসেনা। তাই আমি মনে করি সব সময় মানুষকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। বন্ধুরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই সময় দিয়ে আমার লেখাগুলো পড়ার জন্য। সবার জন্য শুভকামনা রইল এবং দোয়া রইল। আপনারা সবাই আমার জন্য এবং আমাদের পরিবারের জন্য এবং কক্সবাজার বাসীর জন্য দোয়া করবেন।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

লেখার উৎসনিজের অনুভূতি থেকে
ইমেজ সোর্সভিক্টিজি ডট কম
অবস্থানকক্সবাজার, বাংলাদেশ
রাইটিং ক্রিয়েটিভিটি@samhunnahar
ক্যাটাগরিজেনারেল রাইটিং


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।

268712224_305654151337735_1271309276897107472_n.png

🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀


আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7DiLvzq9baKkST8T1mkhiizFXSFVv2PXDydTeMWpnYK2gToiY733FT9uwSdBSXWz7RnGmzsa8Pr9pGoyYaQFsuS3p.png

Steem_Pro.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আর যাই হোক মহান সৃষ্টিকর্তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের খুব বেশি বাঁচিয়ে রাখেন। এই সমস্ত কারণে সৃষ্টিকর্তার প্রতি যেন বেশি আন্তরিকতা আর মহাব্বত মনের মধ্যে জেগে থাকে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমন একটা খারাপ জিনিস যারা এই দুর্যোগের মুখোমুখি হয় তারাই জানে কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিটা বছর প্রাকৃতিক সকল প্রকার দুর্যোগ থেকে মুক্ত রাখেন।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সাবলীল ভাষায় মতামত প্রকাশ করার জন্য।

আমিও মনে করি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের নিজের অপকর্মের ফলেই ঘটে। তবে এটি এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল যেটি পুরো কক্সবাজারের চিত্রই পরিবর্তন করে দিয়েছে। যাক সেই সময় বাসায় অবতরণ করেছেন এটা অনেক ভালো কাজ ছিল। আর যখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই সময় কিন্তু আসলেই রিস্ক ছিল। বাতাস অথবা অন্য কোন কিছু যদি কাঁচের গ্লাসে এসে লাগতো, সেটি হয়তো আপনাদের গায়ে পড়তে পারতো। যাইহোক বাচ্চাদেরকে নিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে গেলেন এটাই ভালো কাজ করেছেন। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।

অনেক শক্তিশালী একটা ঘুর্ণিঝড় ছিল ভাইয়া। মহেশখালীর অবস্হা খুবই খারাপ। ধন্যবাদ আপনাকে।