সাদা চাদর মোড়িয়ে শীতের সকালে বের হয়ে পড়লাম।সকাল না ভোর বলা চলে কি আর করা সারারাত্র এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়ে নতুন দিনের অপেক্ষায় বেরিয়ে পড়লাম ।চারদিকটা যেন ঘন কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন,এই নিস্তব্ধ ভোরে হাটতে বেশ লাগছিল।কখনো আবার পাখির দু একটা কিচিমিচির ডাক আমায় নতুন সজীবতা ফিরিয়ে দিচ্ছিল।এভার কেন জানি খুব সিগারেটের তেষ্ণা পেয়ে গেল সিগারেট থাকলেও পকেটে লাইটারের বড্ডই অভাব ছিল।সিগারেট টা মুখে গুজে আশেপাশে তাকিয়ে দেখচ্চিলাম কেহ আছে নাকি আমায় এ প্রাণের আকুল তেষ্ণা হতে মুক্ত করতে।
-আগুন খুজছিলেন কি জনাব ?
পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা অষ্টদশী মেয়ে হলুদ জামা পড়ে আমার দিকে তাকিয়ে এ কথা টা বলে উঠলো।প্রথমে বেশ ভয় পেয়েছিলাম ভূত নয়তো এই ভেবে।দৌড় দেওয়ার ছোট খাটো একটা পস্তুতি নিচ্ছিলাম কেননা এই সময়ে একটা অষ্টদশী,সুন্দরী মেয়ের দেখা পাওয়া একটু অন্যরকমই।
-কি হলো?ভূত নাকি এটা ভাবছেন কি?
এভার ও অল্প ভড়কে গেলাম,মেয়েটা কিভাবে মনের কথা টা বুজতে পারলো এই ভেবে।
-হ্যা,এমন ই কিছু ভেবেছিলাম।
-নাহ ভূত নয়,আসলে রোজ ভোর বেলা হাটার স্বভাব টা আমার বেশ পুড়নো।তিমিরে কেটে যাওয়া রাত্রকে নতুন একটা দিনের সূচনা দেখতে আমার বেশ লাগে।আর হ্যা,আমার কাছে কিন্তু ম্যাচ আছে।আপনার চাই কিহ ?
-কেন আপনি কি আমার মতো বিড়িখোড় নাকি ?
-হা হা,না এমন কিছু নয়,কখনো কখনো রাস্তায় আপনার মতো পাগলের দেখা যদি পাই সেই জন্যই মূলত।
-ওহ আচ্ছা, আপনাকে তো হাসলে বেশ লাগে ।
-সকাল সকাল ধন্যবাদ টা না-ই দিলাম ।
-আমিও না হয় স্বাগতম শব্দটার আজ সকালে বয়ান ই না করলাম।
-কবি নাকি প্রেমিক?
-দুটুর সংমিশ্রণে যদি কিছু হয় তাহলে সেটাই ।
- সংমিশ্রণ যদি না করি ।
-তাহলে যে পৃথিবীর সকল শব্দই বন্দী থেকে যাবে।সবাই তো চায় কারো সাথে গভীর মিশ্রণে আবদ্ধ হতে।
-তার মানে আপনি কবি ।আর কবিরাই এমন গভীরে তাদের চিন্তাদ্বারাকে প্রবেশ করাতে পারে।
-।কি জানি ।আগে তো কেহ বলে নি এ চয়ণ ।
-জিজ্ঞাস করেছিলেন কি কাউকে ?
-নাহ্ সময় হয়ে উঠে নি ।
-আপনার কথা বলার ধরণ টা অনেকটা ভিন্ন।বলতে পারেন অমায়িক ।
-থাক আর সুনাম নাই গ্রহন করলাম । নাম টা জানা যাবে কি?
-আফসানা অথৈ নিশিতা,
-মানুষ একজন কিন্তু নাম তিন টা ।তা মিস দেশের আর মানুষ তাহলে কি নাম রাখবে,সব যদি আপনি ই নিয়ে নেন ?
-তাহলে আপনি আপনার পছন্দ মতো একটা ই ডাকুন।
-তা সময় করে কখনো ডেকে নিব তাহলে ।তো আর কিছু বলুন আপনার ব্যাপারে ,,,
-বলা যায় জীবন প্রেমিক।জীবনের প্রতিটা মোড় এতই ভয়ানক সুন্দর যে জীবনের প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো। আপনার ?
-নামহীন এক পাগল ই ভেবে নেন।
-পাগলের ও কিন্তু একটা নাম হয় জনাব ।
-বাউন্ডুলে ।পচন্ড সিগারেট প্রেমি ।
-কেন কোন মেয়ের প্রেম আসে নি বুজি ?
-আপনি লাইটার টা দিলে হয়তো আসতো।কেননা এখনো পযন্ত আমার প্রিয় সিগারেট টা কে জ্বালাতে পারলাম না।
-হিহি এই নিন…
এভার মনের সুখে সিগারেট টা টানতে লাগলাম।প্রতিটা টানে আমার ভেতরে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।মেয়েটিও আমার সাথে হেটে যাচ্ছে আর সিগারেট খাওয়া দেখছে। আমরা আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম সামনের দিকে ।রোদের ঝিলিক টা অবশ্য কিছুটা আমরা অনুভব করছি।হঠাৎ করেই আফসানা বলে উঠলো
-আমি হয়তো আপনার আসল নাম টা জানি .আর হয়তো আপনার বেশ কিছু বায়ো ও আমার জানা মিঃ ইমু……
-আপনি নাম টা কি করে জানলেন আমার ?
-আপনার হাতের কাটা ছ্যেড়া ক্ষত দেখে ।
-আরেকটু বুজিয়ে বলুন
-আপনার প্রাপ্তন প্রায়স আপনার বিষয়ে বলতো,ইমু এমন,ইমু এটা করে ইমু সেটা করে এই আর কি ।আর ওর মুখ থেকে এত আপনার বিষয়ে জেনেছি যে আপনাকে আমি প্রথমে না দেখেই চিনে নিয়েছি।
-কেমন আছে ও ?
-কেন কষ্ট হয় বুজি?
-নাহ্ এ হৃদয় পুড়ানোর জন্য এখন আর তাকে প্রয়োজন নেই ,তামাক আছে তো ।
-এখনো কি আপনি তাকে ভালোবাসেন ?
-ভালোবাসা এটি একটা সহজ চিন্তাদ্বারা।আমার মতো জটিল মানুষের দ্বারা এটা এখন আর হয় না ।আর ভালোবাসা শব্দটা আমি বেশ কিছু বছর হয়েছে যে আমি ভুলে গিয়েছি ।
-এখনো কি তাকে নিয়ে কবিতা লিখেন ?
-কবিতা লিখার জন্য সুন্দর একটা মনের প্রয়োজন হয় বিকৃত মস্তিষ্ক নয় ।
-তাহলে গল্প কিভাবে লিখেন ?
-ঠোটের ফাকে সিগারেট গুজলে সেই সিগারেটের ধোয়ায় আমার সব র্ব্যাথতা উড়ে যায়,আর তখন নিউরন টা আমার হাতের আঙ্গুলগুলি কে অটোমেটিক কিবোর্ডে চেপে ধরে ।
-আপনি আসলেই জটিল একজন মানুষ ।
-এভার ও কোন কমপ্লিমেন্ট দিবো না ।
-চেয়েছে কে ?
-আশা তো করেছেন ?
-কিভাবে বুজলেন ?
-কত দিন ধরে আমায় ফলো করছেন ?
এভার মেয়েটা চুপ হয়ে গেল,আসলে সে হয়তো ভাবতে পারেনি আমি এটা বুজে যাব।আসলে প্রতিদিন সকালে আমার মনে হতো কেহ আমায় দেখছে,কেহ হয়তো আমার পিছু করছে।কিন্তু পেছনে তাকালে কুয়াশার চাদরে আর কাউকে দেখতে পেতাম না ।কিন্তু এক জোরা চুড়ির টুংটাং শব্দ পেতাম ।ঠিক আজও সেই শব্দ টা আমার সামনে থাকা মেয়েটার হাতের চুড়ি থেকে আসছে।
মেয়েটি চুপ করে রইলো কোন কথা না বলে……………
-রোদ উঠেছে এভার আমার যাবার বেলা হয়ে গেছে.
-আপনি কি কালকে থেকে আগের মতো আসবেন ?
-কি জানি,হয়তো আবার হয়তো বা না ।
-আমি কি এতই খারাপ ?
-নাহ ,আমার প্রাপ্তন থেকে ও অধিক সুন্দরী আপনি ।
-তাহলে আসবেন তো ?
-হয়তো,,,
-আমি কাল ঠিক সবুজ শাড়ি পড়ে,হাতে আলতো মেহেদি সাথে আপনার পছন্দের নীল চুড়ি আর মাথায় বেলি ফুলের মালা গেথে আকাশ পানে তাকিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো ।
-আচ্ছা…..
-আপনি আসবেন তো ?
-হুম আসবো।আচ্ছা এখন আমি চলি
মেয়েটা মুচকি হেসে আমায় বায় বলে উল্টো দিকে হাটা শুরু করলো।আমি জানি সে এখন হাজারো ভাবনায় নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে,সারাদিন তার পছন্দের ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে দেখবে আর বারবার হাসবে ।সারাদিন অপেক্ষা করবে রাত্র হওয়ার জন্য,রাতের প্রহর গুনবে দিন শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ।তাই না ঘুমিয়ে মেয়েটা মধ্য রাত্র থেকেই সেজে বসে থাকবে এ পাগলের জন্য।চোখে ঘুম আর চোখের কালোদাগ নিয়ে অপেক্ষা করবে মেয়েটা ।
আমিও মেয়েটার বিপরীত পথে হাটা শুরু করলাম,পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট টা বের করে জ্বালিয়ে দিলাম।কাল থেকে নতুন কোন এক পথে পা রাখতে হবে। আমি মেয়েটাকে কথা দিলেও আমি এ পথে আর আসবো না।মেয়েটা অপরূপ সজ্জিত রূপ আমি দেখতে আসবো না।কেননা আমি এমন ই ।আমার হারাতে ভালো লাগে ,এ প্রেম থেকে মুক্ত হতে ভালো লাগে,ভালো লাগে এ আধারের চাদর গায়ে জড়িয়ে রোজ সকালে হারাতে।জানি কালকে অম্বুদ্বারা লেপ্টে যাবে কাজল খানি,নেত্র টা ফুলে উঠবে মেয়েটার।আর কাদো কাদো গলায় বলবে ‘তুমি কথা দিয়েছিলে কিন্তু তা রাখনি”।আসলে আমি কথা টা রাখবো ই না প্রিয় ।কেননা এ নিদারুণ এ যন্ত্রনার শহরে ,মধ্যরাতের চিৎকার গুলো শব্দহীন ।
-তুমি কথা রাখো নি ....