প্রবন্ধ || ট্রেনের জানালায় পূর্ণিমা চাঁদ||~~☀️🌙

in hive-129948 •  last month 

আসসালামু আলাইকুম/আদাব



সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।

1000015644.jpg


বন্ধুরা গতকাল রাতে ট্রেনের জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখছিলাম। চাঁদের আলো এমন ভাবে কিরণ ছড়াচ্ছিল যেন মনে হচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ।
লোভ সামলাতে না পেরে হাতের মুঠো ফোনে চাঁদের ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ট্রেন এত দ্রুত গতিতে চলছিল যে, সঠিকভাবে ছবিটা তুলতেই পারছিলাম না। যেমন করে তুলি না কেন, সেটা নিয়ে ট্রেনে বসে বসে একটি প্রবন্ধ লিখে ফেললাম। আর মনে মনে ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেই।


1000015603.jpg


প্রবন্ধ

রাতের আকাশে ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের ছবি তোলার অনুভূতি এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ ও রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। ট্রেনের গতির সাথে মিশে থাকা বাতাসের হালকা শীতল স্পর্শ, চারপাশের নীরবতা এবং চাঁদের মৃদু আলোয় যেন সবকিছু এক রূপকথার মতো মনে হয়। চাঁদের আলো ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে ভিতরে আসার সাথে সাথে সেই আলোকে ক্যামেরায় ধরে রাখার প্রচেষ্টা প্রকৃতির সাথে এক গভীর সংযোগ অনুভূত হয়। এটা যেন মুহূর্তকে সময়ের জন্য অমর করে রাখার এক অসাধারণ চেষ্টা।

ট্রেন দ্রুত চলার ফাঁকে জানালা দিয়ে ছবি তোলা আসলেই খুব সহজ নয়। ট্রেনের গতির সাথে সাথে চারপাশের দৃশ্যগুলো দ্রুত পরিবর্তিত হয়, ফলে সঠিক মুহূর্তটিকে ক্যামেরায় ধারণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।

প্রথমত, ট্রেনের কাঁপুনির কারণে ক্যামেরা স্থির রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্যামেরা ঠিকঠাক ধরে রাখা এবং ফ্রেম ঠিক রাখা একটা দক্ষতার বিষয়। দ্বিতীয়ত, দ্রুতগতির কারণে দৃশ্যগুলো ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। সঠিক মুহূর্তটি ধরার জন্য দ্রুত শাটার স্পিড এবং সঠিক ফোকাস অপরিহার্য।

তবে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে, ফলাফলটি সত্যিই চমকপ্রদ হয়। ট্রেনের গতির মাঝে জানালা দিয়ে দেখা চাঁদের আলোয় ভরা আকাশ, চাঁদের আলোয় ঝলমলে প্রকৃতি, এসব ধরা পড়লে তা হয়ে ওঠে এক অসাধারণ মুহূর্ত। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে অতিক্রম করে যখন আপনি সেই কাঙ্ক্ষিত ছবিটি তুলতে পারেন, তখন সেই ছবি হয়ে ওঠে এক অনন্য স্মৃতি, যা আপনাকে সেই মুহূর্তের সাথে সবসময় সংযুক্ত করে রাখে। জানিনা আমার তোলা ছবি গুলো কেমন হয়েছে -?


প্রবন্ধ - "পূর্ণিমার চাঁদ"

কলমে- সেলিনা সাথী

💞-


1000015605.jpg

রাতের আকাশে ট্রেনের জানালায় একটি পূর্ণিমা চাঁদের জ্যোৎস্নার মৃদু আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। যেন প্রকৃতি তার সাদা শাড়ি পরে বসে আছে। রাতের গভীরতা আর নিস্তব্ধতা যেন এই চাঁদের আলোকে আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে। একদিকে রাতের কালো আবরণ, অন্যদিকে চাঁদের সাদা আলো—এই দুইয়ের মিশ্রণে এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রাতের এই নির্জনতার মধ্যে চাঁদের আলো যেন এক সান্ত্বনার প্রতীক। যখন সারা পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে, তখন চাঁদ তার আলো দিয়ে জাগিয়ে রাখে প্রকৃতিকে। চাঁদের আলোয় নদীর পানিতে ঝিকিমিকি খেলা করে, গাছের পাতাগুলো সাদা আলোয় ভিজে উঠে। মনে হয় যেন পুরো পৃথিবীই একটি রূপকথার জগতে পরিণত হয়েছে।

জ্যোৎস্নার আলোতে বসে থাকা, মনে করিয়ে দেয় আমাদের জীবনের নানা অন্ধকারের কথা। জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে আমরা যখন হারিয়ে যাই, তখন এই চাঁদের আলো আমাদের নতুন করে বাঁচার শক্তি দেয়। যেমন চাঁদ তার পূর্ণতায় আসে, আমাদের জীবনেও এমন পূর্ণতার মুহূর্ত আসে, যা আমাদের সব দুঃখ-কষ্টকে দূরে সরিয়ে দেয়।

এই রাতের নীরবতা এবং চাঁদের আলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, অন্ধকারের পরেই আলো আসে। জীবনের সব চ্যালেঞ্জের পরেই এক নতুন সূচনা হয়। আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হয় সেই পূর্ণিমার চাঁদের জন্য, যা আমাদের জীবনে নতুন আলো নিয়ে আসে।

শেষ কথা

জ্যোৎস্নার আলোয় রাতের এই নীরবতা প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, শুধু আমাদের দেখতে জানার দরকার। রাতের এই চাঁদ যেমন প্রতিনিয়ত আমাদের আলোকিত করে, তেমনি আমাদের জীবনেও এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা আমাদের সব অন্ধকারকে দূর করে দেয়।

1000015603.jpg



বন্ধুরা আমার আজকের প্রবন্ধটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।

আমি সেলিনা সাথী।
💞

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

photo_2023-07-07_17-27-00.jpg

আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ট্রেনে বসে আপনি দারুন প্রবন্ধ লিখেছেন আপু। আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। প্রিয় আপু আপনি অনেক প্রতিভার অধিকারীনি। তাই তো যেকোনো সময় যে কোন কিছু লিখে ফেলতে পারে। রাতের সৌন্দর্য দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো আপু।

বিষয়টা হচ্ছে একা একা থাকলে অনেক কিছুই খুব দ্রুত করা সম্ভব। কালকে তো একা একা জার্নি করছিলাম। তাই মনের ভেতর অন্যরকম সব অনুভূতিগুলো দোলা দিচ্ছিল। আর ঠিক সেই সময় চাঁদ দেখতে দেখতে প্রবন্ধটি লিখে ফেললাম। আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

রাতের আকাশে ট্রেনে জানালার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমা রাতের ছবি তোলার অনুভূতি বিশেষ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, আসলে পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য অনেক। অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যি আমার অনেক ভালো লেগেছে ,আসলে ট্রেন চলার সময় জানালার ফাঁক দিয়ে ছবি তোলা সত্যিই সহজ ব্যাপার নয়। তারপরেও আপনি অসাধারণভাবে ফটোগ্রাফি করে আমাদের মাঝে পোস্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

একদম ঠিক বলেছেন। চলন্ত ট্রেনে রাতের অন্ধকারে জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের ছবি তোলা, সত্যি অনেক দুর্বুদ্ধ বিষয়। আর সেটা গতকাল বুঝতে পেরেছিলাম। আমার লেখা এবং ফটোগ্রাফি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

দুর্দান্ত তুলেছ পূর্ণিমার চাঁদের ছবি। চলন্ত ট্রেনের জানলা থেকে হাত স্থির করে এমন ছবি তোলা ভীষণ কঠিন। তবে পূর্ণিমার চাঁদ সত্যিই যেন এক জীবনদর্শনের প্রতীক। এই চাঁদের আলো কত কিছু বলে দেয়। চোখের দৃষ্টিটুকু নিয়ে এর কত কি আদান-প্রদান যেন বুঝে নেয় প্রতিদিন। অসাধারণ লিখেছ প্রবন্ধটি। চাঁদের আলোকে কল্পনায় ধরে কিভাবে যে সাহিত্যের জট খোলা যায় তা তুমি বেশ সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলে।

চলন্ত ট্রেনের জালানায় হাত স্থির করে অনেকগুলো চাঁদের ছবি তুলেছিলাম।
তার মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি অন্যতম।

যেগুলো আমি পোস্টটি শেয়ার করেছি।
কবি,লেখক, সাহিত্যিকরা, কল্পনায় অসাধ্যকে সাধন করে। হাজারো জট,হাজারো বাধা, উপেক্ষা করে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রবন্ধটি তার একটি উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। 🙏