ছেলে হাতে নির্যাতন বাবার আত্মহত্যা -১

in hive-129948 •  2 months ago 

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।

pexels-photo-6008970.jpeg

ইমেজ সোর্স

আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো ছেলের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বাবা সেই সত্যি ঘটনা অবলম্বনে আত্মহত্যার ও মা,ভাই,বোনদের নির্যাতনের গল্প।

তো চলুন মূল ঘটনায় যাওয়া যাক।

ঘটনাটি আমার বাবার বাড়ির পাশের বাড়ির ঘটনা। যদিও বা আমি এই পুরা ঘটনার সাক্ষী নই তবে কিছু কিছু ঘটনার সাক্ষী। যখন মা,দিদুকে ও পাশের বাড়ির বয়স্কদের প্রশ্ন করতাম কেন ঐ বাড়ির লোক টি আত্মহত্যা করেছে তখন সবার মুখেই এই গল্প শুনতাম আর এই আত্মহত্যার কথা জানার আগ্রহ ছিলো কারণ যে লোকটি আত্নহত্যা করেছিলেন তার বউ ও ছোট বাচ্চাদের নির্যাতনের স্বিকার হতে হতো বড়ো ছেলের দারা আর তখনি সবাই বলেন যে এই ছেলের নির্যাতনের জন্য অপমান সহ্য করতে না পেরে বাবা আত্মহত্যা করেছে এখন মাকেও নির্যাতন করে। আর তখনি আত্মহত্যা কেন করেছেন জানতে চাইতাম এবং শুনতাম পুরাগল্পটি।

প্রায় প্রতি দিনই নাকি চিৎকার চেঁচামেচি হতো পাশের বাড়িতে।আত্মহত্যাকারীর নাম পাগালু ওনার তিন মেয়ে ও তিন ছেলে। সবার বড়ো মেয়ে আর দ্বিতীয় সেই অত্যাচারী ছেলে আর দুটো ছেলে সবার ছোট।পাগালুর জমিজমাও বেশ অনেক।চাষাবাদ, হালের গরুও ছিলো বেশ কয়েক প্রকারের। লোকটি না কি হিংসুটে স্বাভাবের ছিলো কারো ভালো কিছু সহ্য করতে পারতেন না।আমাদের না কি অনেক ফসল নষ্ট করতেন। রাত্রি বেলায় চুপি চুপি ওনার গরু লাগিয়ে দিয়ে ফসল খাওয়াতেন গরুকে দিয়ে ও নষ্ট করতেন।

পাগালুরা ছিলো তিনভাই।এক ভাইয়ের নাম পুলিশ, আর এক ভাইয়ের নাম দারোগাও ওনার নাম তো পাগালু।পুলিশ, দারোগা কিন্তুু পেশাদার নাম নয় ওনাদের গ্রামের মানুষের রাখা নেক নাম ছিলো।স্বাভাবে ওনারা পাগালুর মতো হিংসুটে না হলেও সবার বিষয়ে একটু জানার আগ্রহ বেশি ছিলো এবং সবার বিষয়ে একটু বেশি মাথা ঘামাতেন জন্য ওনাদের নাম রেখেছে আমার দাদু পুলিশ ও দারোগা।পরবর্তীতে পুলিশ দারোগা ওনাদের পরিচিত নাম হয়ে গিয়েছিল।

পাগালুর বড়ো ছেলে পাগালুকে মাঝে মাঝেই চাপ দিতো জমি বিক্রি করে তাকে টাকা দেয়ার জন্য। এই নিয়ে বাবা,ছেলের নিত্যদিনের ঝামেলা লেগেই থাকতো।একদিন চরম অপমান করেন। ছেলে জমি বিক্রি করতে চায় কারণ ছেলে জুয়ায় আসক্ত আর বাবা বিক্রি করে দেবে না আর এই কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছেলে না কি পাগালুকে ধাক্কা দেয় আর পাগালু সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন সবার অজান্তেই গোয়াল ঘরে।

আত্মহত্যা করেছে তাই লাশ কেউ না নামিয়ে থানায় খবর দেয় এবং থানা থেকে পুলিশ, দারোগা আসেন লাশ নামাতে এবং লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যেতে।লাশ দড়ি থেকে নামানোর পর রেখেছে এখন বিয়ে যাবে ময়নাতদন্তের জন্য তখন গ্রামের মানুষজন বলতে থাকে স্যার দাঁড়ান পুলিশ ও দারোগা একটু আসুক দেখুক তারপর নিয়ে যাবেন। এই কথা শোনার পর সত্যিকার পুলিশ দারোগা তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে যে আমরা তো এসেছি আর কোন পুলিশ দারোগা আসবে।
ক্লিয়ার হওয়ার জন্য প্রশ্ন করেন কি বলেন আপনারা পুলিশ দারোগা আসবে মানে।তখন বাড়ির লোকজন ও পাড়া প্রতিবেশিরা জানান যে আসলে অরিজিনাল কোন পুলিশ দারোগা নয় ওনার দুই ছোট ভাইয়ের নাম পুলিশ ও দারোগা।তখন না কি এতো দুঃখের মাঝেও অরিজিনাল পুলিশ দারোগা হেসে ফেলেন এবং প্রতিবেশীরাও কেউ কেউ কষ্ট চাপা দিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসেন।

আসলে অপরাধীর অপরাধ ধামাচাপা দেয়া অপরাধ এবং আরো বড়ো অপরাধের দিকে অপরাধী চলে যায় তার প্রমাণ এই ঘটনাটি কারণ পাগালুর আত্মহত্যা কারণ হিসেবে ছেলেকে কেউ দায়ী না করে পুলিশকে বলেছে যে মানসিক অসুস্থ ছিলেন পাগল তাই সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেছে। আর এই জন্য পাগালুর খুনি ছেলে তার মা সহ অন্যন্য ভাইবোনের সাথে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল ও সাহস বেড়ে গিয়েছিলো।পর্বতীতে মৃত্যুর পর অন্য দুই ভাই যেহেতু নাবালক ছিলো তাই তাদের জমি বিক্রি না করতে পারলেও বন্ধক রাখতো এবং নিজের জমি বিক্রি শুরু করে জুয়ার আসর বসাতো প্রতিরাতেই।

রাত দুটা একটায় বাড়িতে আসতেন জুয়া খেলে আর যেদিন হেরে আসতেন সেদিন খাবারে লবন বেশি কিংবা স্বাদ হয়নি এসব বলে বলে মাকে পিটাতেন।ছোট ভাই বোনদের কে অমানবিক নির্যাতন করতেন সেই পাগালুর ছেলে।পাগালুর কুলাঙ্গার ছেলের নাম ছিলো গোপাল।সে মানুষ হিসেবে ভীষণ খারাপ। এমন কোন বাজে নেশায় নেই যে তার মাঝে নেই।মাকে দিনের পর দিন নির্যাতনের ফলে আমার দাদুর কাছে এসে পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করেন নির্যাতিত মা আর আমার দাদু গন্যমাণ ব্যাক্তিদেরকে নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বারকে নিয়ে সালিসি বসায় গোপালের নামে এবং সালিসিতে নাকখর দেওয়ায় এবং এক মণ মাটি গোপালের পেটে বস্তা দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং গলায় জুতার মালা পুড়িয়ে দিয়ে পুরা গ্রাম ঘুড়িয়ে বেড়ানো হয় গোপাল কে। মাটি ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণ মা দশমাস দশদিন যে পেটে করে নিয়ে বেড়িয়েছেন তা একটু হলেও উপলব্ধি করানো এবং মাকে নির্যাতনের শাস্তি।
আজ এ পর্যন্তই পরবর্তী পর্ব নিয়ে আসবো খুব তারাতারি। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।

টাটা

(চলবে)

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240726_103551.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কারো নাম দারোগা বা পুলিশ হতে পারে এটা আপনার পোস্ট না পড়লে জানতে পারতাম না দিদি। আসলে এখনকার যুগের যে ছেলেমেয়ে গুলো বাজে নেশায় আসক্ত, তারা অধিকাংশই বাবা মায়ের উপর অত্যাচার করে। তবে মায়ের উপর অত্যাচার করার ফল পাগলুর ছেলে আশা করি ঠিকঠাক মতই পেয়েছে। গল্পটা পড়ে বেশ খানিকটা কষ্ট লাগলো দিদি।