জামাই ষষ্ঠী পূজার ব্রতকথা

in hive-129948 •  5 months ago  (edited)

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই।কর্তার কৃপায় আমি ভালোবাসি সুস্থ আছি আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের স্পেশাল দিন জামাই ষষ্ঠী জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষে এই জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানিত হয়। আজ ছিল সেই দিনটি। জামাই ষষ্ঠী। এই দিনকে ঘিরে পূজা অর্চনা খাওয়া-দাওয়া হয়ে থাকে।জামাইদেরকে আজকের দিন পঞ্চ ব্যঞ্জন রান্না করে খাওয়ায়ে থাকেন শাশুড়িরা এই জামাই ষষ্ঠী নিয়ে কিছু ব্রত কথা আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো।

InShot_20240612_162540014.jpg

এই ব্রত শতবারা পোয়াতি হতে করে থাকে। আইবুড়ো বন্ধ্যা নারীদের এই জামাই ষষ্ঠী ব্রত করিতে নেই। এই ব্রত একবার শুরু করলে আর ছাড়তে নেই।

ব্রতের নিয়ম:

যে স্থানে পূজা হয় সেখানে আলপনা দিয়ে একটি বটের ডাল পাতা সহিত একটু মাটি দিয়া বসিয়ে এবং তার সামনে একটি জলপূর্ণ ঘট বসাতে হবে ঘাটের মুখে দই, পান,কাঁঠালি কলা দিতে হয়।ঘটে সিঁদুর মানে সিঁদুর গোলা দিয়ে মা ষষ্ঠী আঁকতে হবে।

IMG_20240612_162042.jpg

পাটুলির কঙ্কন গঠন করে পাতায় রাখতে হয়,পিটুলি দিয়ে কালো বিড়ালী গঠন করে দিয়ে একটি নতুন ডালায় পাত্রে না প্রকার ফল গোটা গোটা দিতে হবে।
একটি থালায় ছয়টি পান ছয়টি সুপারি ছয়টি কলা ৬ টি ক্ষীরের নাড়ু ও ৬টি বাতাসা দিতে হবে।তুই থালায় নৈবেদ্য সাজাতে হবে।
এভাবে পূজা শেষ করে মা ষষ্ঠীর ধ্যান করতে হবে।

PhotoCollage_1718187880541.jpg

পূজার জন্য যে ফলের বাটা দেওয়া হয় তা জামাইয়ের পাওনা। যদি জামাই না থাকে তাহলে বড় ছেলেকে দিতে হবে। পূজা শেষে ব্রত কথা শোনার জন্য আগ্রহে থাকতাম ছোটবেলায়।

চলুন দেখা যাক কি আছে ব্রত কথায়।

ষষ্ঠীর ব্রতকথা :

এক রাজাও রানী ছিলেন, সাত ছেলে সাত বউ। ছেলে মেয়ে হয়নি কারো। তবে ছোট ছেলের বউয়ের দুটি ছেলে।ছেলে দুটি সকলের প্রিয়। তবে ছোট ছেলেটি রাজার খুব প্রিয় দিন রাত রাজার কোলে থাকতো। একদিন রানী,রাজাকে বলল দেখো আমাদের একটা পুকুর কাটিয়ে দিলে ভালো হয়। কারণ রাজ্যে অনা বৃষ্টি হয়েছে।প্রজারা জলের কষ্ট পাচ্ছে ষষ্ঠী পূজা র ডালা ভাসাতে হয় নদীতে বৌমাদের স্নান করতে যেতে হয় লজ্জা করে আমার। সে কথা শুনে রাজা কাউকে কিছু না বলে পর দিনেই মজুর ডেকে মস্ত বড় পুকুর কাটালেন তার ঘাট বাঁধলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় পুকুরে এক ফোটা ও জল উঠলো না। বাড়ির সকলে ভাবলো যে এত বড় পুকুর কাটা হলো জল হল না বোধহয় আষাড় শ্রাবণের বর্ষায় জল উঠবে। কিন্তু ভাদ্র মাসে বর্ষায় মাঠ ভেসে গেল তবুও পুকুরে জল উঠল না। রাজার তো মাথায় হাত দিয়ে বসলো। রানী দুঃখ করে রাজাকে বলল এমন বরাত আজ বাদে কাল ষষ্ঠী পুজো ভেবেছিলাম এবার নিজের পুকুরে বউদেরকে নিয়ে পূজা করবো। এমনি পোড়া কপাল তা আর হবেনা এমনই আমার ভাগ্য।

গ্রামের লোকজন এদিকে বলাবলি করতে লাগলো রাজা মহাপাপী তাই তার পুকুরে জল নেই আর রাজার পাপের ফলে প্রজারা জলের কষ্ট পাচ্ছে । মনের কষ্টে রাজা রাত্রে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লো। আজ রাতে স্বপ্ন দেখল যে মা ষষ্ঠী শিওর এর কাছে দাঁড়িয়ে বলছে কাল তো আমার পূজা তোর পুকুরে তো জল নেই। এমন স্বপ্নের মাঝেই মা ষষ্ঠীর কাছে কাকুতি-মিনতি করছিল রাজা জলের জন্য তখন মা ষষ্ঠী রাজাকে বললো যে তোর ছোট নাতিকে যদি কেটে জলে দিতে পারিস তাহলে এখনই তোর পুকুরে জল হবে নইলে কোনদিনও জল হবে না। হঠাৎ রাজার ঘুম ভেঙ্গে গেল।প্রাণটা হু হু করে উঠলো খানিক সময় কাঁদল তারপর কুল দেবতা কে মনে মনে স্মরণ করলো।

এদিকে ভোরে বামুনকি মেরে দেখে ছোট বইয়ের ঘর খোলা। রাজাকে দেখে ছোট নাতি ঝাপিয়ে কোলে এলো। থাকে বুকে নিয়ে খানিক আদর করলো চুমু খেলো কাঁদলো। এরপর মনকে সান্ত্বনা দিয়ে রাজ্যের কথা ভেবে প্রজাদের কথা ভেবে নাতিকে কেটে পুকুরে দিয়ে দিলো।অমনি কুল কুল করে একপুকুর জল হলো।তা দেখে রাজা রানীকে গিয়ে খবর দিলো । রানী তখনই পুরোহিত দেখে পুকুর প্রতিষ্ঠা করল আর বউদের দিয়ে ষষ্ঠী পূজা করতে বসলো।

PhotoCollage_1718187854413.jpg

ব্রত কথা শেষে ছোট বউ আঁচলে কলা বেঁধে আঁচল জলে ডুবিয়ে চাপড়া ভাসালো। ছেলের নাম ধরে ভাসালো সকাল থেকে উপরে উঠবে রাজার ছেলের বউ এমনি সময় ছোট বউএর আচোল ধরে রাজার নাতি জল থেকে উঠে এলো। বউ ওমনি তাড়াতাড়ি ছেলে কোলে নিয়ে গা-মোচিয়ে চুমু খেয়ে বসলো। বলতে লাগলো ষাট ষাট ষষ্ঠীর আজ তুই জলে এলে কি করে বাছা।সুরিয়ার যায়রা এই কান্ড দেখে অবাক। রাজা পিছু পিছু গিয়ে ছিলো।গাছের আড়ালে এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল। রাজা নাতিকে কোলে ধরে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিল এবং খানিক পর স্বপ্নের কথা ও কথা খুলে বলল সবাইকে। ছোট বউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে কথা
শুনে ।

তাকে জ্ঞান ফেরালো চোখে মুখে জল ছিটিয়ে এবং ছোট বউ তখন মন প্রাণ ভরে মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে ঘরে ফিরলো ছেলেকে নিয়ে।
এদিকে রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল রাজার নাতি কে কেটে দিয়ে পুকুরে জল এনেছে রাজা এবং মা ষষ্ঠীর বরে ছেলে মায়ের কোলে ফিরেছে । আর সেই থেকে মা ষষ্ঠীর পুজো প্রচার হয়ে গেলো।
ছিল আমার আজকের ষষ্ঠী পূজার নিয়ম ও ব্রত কথা আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবারও দেখা হবে অন্য কোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81R9xb8zggU37UzVYqnXz8f7AkPCh2dKcgSUjDQow8xJAKc78nzJZWmub3GxKAnXndJFTdh2tKXNWkjkqSJ6wGxv.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপু আজকে আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।আজ জামাই ষষ্ঠী ছিল। আমাদের এখানে সেভাবে কোন পূজা হয় নি তবে আমার মা উপাস ছিল।ধন্যবাদ আপু আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট করার জন্য।

ওও আচ্ছা অনেকেই উপোস করেও ব্রত পালন করেন।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হলো যে আপনি জামাই ষষ্ঠী পূজার ব্রতকথা ও এর প্রচলনের ইতিহাস নিয়ে অনেক গভীর জ্ঞান রাখেন। আপনার লেখায় ব্রতের নিয়ম, পূজার পদ্ধতি, এবং ব্রতকথার বিবরণ অত্যন্ত সুন্দর ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আপনার লেখনীর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই পূজার মর্মার্থ ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ধন্যবাদ এমন একটি মূল্যবান পোস্ট ভাগ করার জন্য।

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর সাবলীল মন্তব্য করার জন্য।

আসলে আপু এই উৎসব সম্পর্কে তেমন আমার কোন আইডিয়া নেই। তবে আপনারা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেন এই জন্য বেশ কিছু জানার সুযোগ মিলে। আজকে অনুষ্ঠানটা খুব সুন্দর ভাবে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখার আর বর্ণনা সাথে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন তাই অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমার সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এই উৎসব সম্পর্কে একটু হলেও ধারনা পেয়েছেন জন্য।

জামাই ষষ্টীর ইতিহাস আজকে জানলাম। ভালো লাগলো। এসব ঐতিহাসিক বিষয় আমার খুব ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে।