জমিদার বাড়ির স্বর্ণ অলংকার এর লোভে ডাকাতি শেষ পর্ব

in hive-129948 •  last year  (edited)

হ্যালো,

কেমন আছেন বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ডাকাতির দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

PhotoCollage_1701057142578.jpg

ডাকাতের একটি দল আসে ডাকাতি করতে। মূলত ডাকাতিটি সংঘটিত হয়েছিল শত্রুদের দাঁড়া। শত্রু বলতে জমিদার বাড়ির যে জমি গুলো দাদুর তত্ত্বাবধানকে ছিলো সেগুলো কোন কোন বর্গাচাষিরা খুব অল্প টাকার বিনিময়ে দলিল করে চাইত।দ্বিতীয়ত গ্রামের এক পরিবারের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিলো।তাদের জমি কিনেছিলেন দাদু পরবর্তীতে আর দলিল করে দিতে টালবাহানা করছিলেন। তাই ওনারাই ডাকাতদের কে বলেছিলেন জমিদার বাড়ির জামাই ওনাদের অনেক স্বর্ণালংকার ও দামী দামী তৈজসপত্র আছে।ডাকাতি করেন আমরা সহযোগিতা করবো বিনিময়ে আপনারা পরিবারের সবাইকে ভয়ে ফেলতে হবে যাতে করে ভয় পায় আর আমাদের কথা মতো কাজ করে। আমরা কোন মালামালের ভাগ নিবো না।পরবর্তীতে ডাকাত দলের এক সদস্য সব বলে দিয়েছিলো বছর কয়েক পরে।ওই সদস্য ছিলো আমাদের গ্রামের। যাই হোক একদিন অমাবস্যার রাত অন্ধকার। গ্রামে তখন বিদুৎ ছিলো না।আমার মা ছিলো না বাবার বারিতে গিয়েছিল। আমার দিদি আমার মায়ের কাছে থাকতে না।আমার দিদুর কাছেই অলটাইম থাকতো জন্মের পর থেকেই।দিদি তাই বাড়িতেই ছিলো।প্রতি দিনের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ সবাই যার যার ঘরে ঘুমিয়ে পরে।হঠাৎ রাত দুটা।দরজার লাথির পর লাথি।প্রথমে আমার বাবাকে আক্রমণ করে।বাবা অনেক শক্তিশালী ছিলেন।ডাকাতেরা তাই আগে বাবাকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।প্রথমে তরোয়াল দিয়ে ডাকাতেরা হাতে আঘাত করে যাতে করে আক্রমণ প্রতিহত করতে না পারে।অনেকটা হাতের কব্জি কেটে যায়। এরপর বিছানার চাদর দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে ফেলে বাবাকে।তারপর আক্রমণ করে দিদুর রুমে।দিদু ততক্ষণে কাকাও পিসিকে তার ডেকে নিয়েছে পাশের রুম থেকে। এবং দিদুর অনেক গহনা ছিলো আর সেগুলো রাখতেন জমিদার বাড়ি থেকে দেয়া খাটের গোপন সিন্ধুক ছিলো তার উপরে বিছানা। এদিকে আমার মায়ের বিয়ের গহনা ও দিদির মুখে ভাতের সব স্বর্নলংকার, বাসনপত্র ছিলো দিদুর সেই গোপন সিন্ধুকে।।আর ডাকাতদল মারমুখী সবাইকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। একমাত্র দাদুর কিছু হয়নি কারণ দাদু ডাকাতের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গোপন দরজা দিয়ে পালিয়ে গোয়াল ঘরে গরুর নিচে আশ্রয় নিয়েছিলো। আমার দিদিকে মারার জন্য তরোয়াল তুলেছে তখন আমার কাকা পা দিয়ে রোধ করেছে আর পায়ে আঘাত করেছিলো ডাকাতরা অনেকটা পা কেটে গিয়েছিল ।পিসির কানের দুল খোলারও সুযোগ দেয়নি টেনে ছিরে নিয়েছিলো কান কেটে রক্তাক্ত অবস্থা। দিদিকে নাকি তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে কাকা পরে খাটের নিচে ফেলে দিয়েছিল ডাকাতের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।মারামারি পর গোলা ঘরে গিয়ে বস্তাভরা গম ছিলো সেগুলো ঢেলে ওই বস্তাতে ডাকাতি করা মালামাল ভরিয়েছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ওদিকে গ্রামের সবাই বুঝতে পেরেছে ডাকাত পড়েছে বাড়িতে। আমাদের বাড়িতে কাজ করতো এক ছেলে সে পাশের গ্রামের সবাইকে গিয়ে বলেছে ডাকাত পড়েছে ওদের বাড়িতে আর পাশের গ্রামের সবাই এক সাথে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেছে তখন ডাকাত দল তরিঘড়ি করে চলে যাওয়ার জন্য রুমের বাইরে বের হয়েছে এবং রাস্তা ক্লিয়ারের জন্য কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।গুলির শব্দ পেয়ে আশেপাশের সবাই ভয়ে চুপ হয়ে গেছে। এর মধ্যে একজন ডাকাত বলে উঠেছে যে বিছানায় গোপন সিন্ধুক আছে ওটা তো নেয়া হয়নি।তখন আবার তাঁরা রুমে গিয়ে বিছানার সিন্ধুক ফাটিয়ে সব দিদুর জমিদার বাড়ি থেকে বিয়েতে দেয়া গহনা নিয়ে যায়।তখন বাড়ির সবাই বুঝতে পারে যে ডাকাত দলের সদস্য খুব পরিচিত ছিলো যে সবটা জানতো নইলে খাটের গোপন সিন্ধুকের কথা জানলো কি করে।এর পর ডাকাতদল সব মালামাল নিয়ে চলে যায়। তারপর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।বাড়িতে পুলিশ আসে আরো অনেক ঘটনা ঘটে যায়।এভাবেই ভয়ংকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে আমাদের পরিবারে।শুধু মাত্র ডাকাতেরা জমিদার বাড়ির স্বর্নলংকারের লোভেই আমাদের শত্রুদের কথা মতো ডাকাতি করতে আসে এবং সব লুটপাট করে নিয়ে চলে যায়।এই ছিলো আমার আজকের পোস্ট টি।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
ডিভাইসOppoA95
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবাংলাদেশ

হ্যালো,

কেমন আছেন সবাই।আশা করছি ভালো আছেন।আমি শাপলা দত্ত,বাংলাদেশ থেকে আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো ডাকাতির একটি ঘটে যাওয়া সত্যি ঘটনা।

PhotoCollage_1700972841648.jpg

ঘটনাটি যদিও বা আমার শোনা তবে দূরের কারো কাছে শোনা নয় এবং দূরের কারো সাথে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি বরং আমাদের বাড়িতে মানে আমার বাবার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা এটি।আর এই ডাকাতির ঘটনা শুনতে শুনতে এক প্রকার মুখস্থ হয়ে গেছে আমার।মনে হয় এমন যে আমার সামনে এমন ঘটনা ঘটে গেছে। তো চলুন মূল কথায় যাওয়া যাক।
ডাকাতির ঘটনাটা পরবর্তী পর্ববে জানতে পারবেন।কারণ এই কথা গুলো না লিখলে কেন জানি ডাকাতির ঘটনাটা পূর্ণতা পাবে না।আমাদের বংশ পরম পরায় একটি করে ছেলে সন্তান ছিলো।এমন যে একটি করে ছেলে সন্তান জন্মের পরেই বাবা মারা যেতেন। তাই আর কোন সন্তান হতো না ঐ একটি সন্তানই শুধু থাকতো এভাবে যুগের পর যুগ চলে গেছে একটি করে ছেলে সন্তান নিয়ে।আমার দাদু সেও জন্ম নেয়ার এক বছর পরেই বাবা হারা হয়।দাদুর অনেক চাষাবাদের জমি ছিলেন কারন দাদুর বংশের কোন ভাগিদার ছিলো না।একটি করেই সন্তান ছিলো তাই সব ধন সম্পদের মালিক ছিলো ঐ একজন করেই। দাদুকে তার মা শিক্ষিত করে তোলেন এবং ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে থাকে কিন্তুু ঘটনাক্রমে পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের জমিদার বাড়ির মেয়েকে দিয়ে বিয়ের সমন্ধ হয়। গাইবান্ধা জেলার কামারপাড়ার প্যারিধাম জমিদার বাড়ির মেয়ে।জমিদার বাড়ির মেয়ে বলতে জমিদার বাড়ির ভাগ্নি ছিলো আমার দিদু।আমার দিদুর জন্মের সাথে সাথেই আমার দিদুর মা মৃত্যুবরণ করেন এবং তখন না কি দিদুর বাবা সেই শোকে আমার দিদুকে প্যারিধান জমিদার বাড়িতে মানে দিদুর মামার বাড়িতে রেখে চলে যান ইন্ডিয়ায় গয়ার উদ্দেশ্যে।আর কোনদিন ফেরেননি ওনি।এদিকে জমিদার বাড়িতে বেশ আদর যত্নে বড়ো হতে থাকেন দিদু।দিদুর মায়ের এক ভাই এর কোন সন্তান ছিলো না তাই সেখানে সে পরম আদরে বড়ো হয়ে ওঠেন। দিদুকে নাম দিয়েছিলেন গীতা।গীতা নাম রেখেছিলে কারণ গীতা আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। গীতা নাম নিলে পূন্য লাভ হয়ে থাকে।দিদুর মামি নাকি বলতেন আমি যতোবার গীতা নাম ধরবো তত পূণ্য লাভ করতে পারবো।তো আমার দাদু নাকি সেই জমিদারের বোঝাই করা ধান সহ গরুর গাড়ি আটকিয়ে ছিলেন কোন এক কারণে। তার পর না কি দাদুকে পেয়াদা দিয়ে তলব করেছিলেন জমিদার বাড়িতে। আর আমার দাদু যথাযথ কারণ বলতে পেরেছিলেন গাড়ি আটকে দেয়ার।আর তার এই সাহসিকতার কারণে না কি জমিদার এর ছোট তরফ মানে দিদু যার কাছে মানুষ হয়েছে ঐ মামা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এই ছেলেকে দিয়েই গীতার বিয়ে দেব।যে কথা সেই কাজ শুভ দিন দেখে আমার দাদুর সাথে জমিদার বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।উপহার হিসেবে ভরি ভরি স্বর্ণ অলংকার ও অসংখ্য ভরি রুপা, অসংখ্য কাসারও পিতলের রান্নার হাড়ি,পাতিল,কলস,থালা বাটি ইত্যাদি। জোরদারী আরো অনেক সুযোগ সুবিধা এবং নানান রকম পদে বসিয়ে দিলেন দাদুকে। জমিদার বাড়ির জামাই বলে কথা।দাদুও বিশ্বাসের সহিত সব দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন।একারনে কিছু মানুষ শত্রুতে পরিনত হলো।এভাবেই কেটে গেলো অনেক বছর। অবশ্য পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা ছিলো না এবং জমিদার বাড়ির সবাই ভারতে চলে গিয়েছিল দিদুর মামা,মামি মারা যান তখন শুধু মাত্র একজন মাত্র জমিদার ছিলেন দিদুর সব ছোট মামা। তিনি সরকারি জব করতেন এবং দেশের মায়া না ছারতে পেয়ে যাননি ওপার বাংলায়। কিন্তুু ওনার বউ,বাচ্চারা ভারতে চলে যান।জমিদারি প্রাথা ছিলো না কিন্তুু সব কিছুই ছিলো। আর সব কিছুর দায়িত্বে ছিলো দাদু দাদুর বয়স হয়ে গেলে আমার বাবার উপরে সব দায়িত্ব পড়ে। বর্গাচাষীরা ফসল দিতেন টাকা দিতন আমার ,দাদুও আমার বাবাকে।পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্যারিধামের শেষ জমিদার দিদুর সব ছোট মামা ভারতে চলে যান এক প্রকার জোর করেই ওনাকে নিয়ে যান। ভারতে এবং যাওয়ার এক বছর পর পরলোক গমন করেন। এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আছে। প্যারিধ্যাম জমিদার বাড়ির কিছু অংশ।যে ফটোগ্রাফি দিয়েছি এই সেই জমিদার বাড়ির কিছু অংশ।
দাদুর ঘরে জন্মনিলো বাবা,কাকা,দুই পিসি।যখন আমার পিসির জন্ম হলো তখনি দিদুর শ্বাশুড়ি না কি বলেছেন এবার আমাদের অভিশাপ কেটে গেলো। আর ভয় নেই আমার ছেলেকে নিয়ে।ভয় করতেন এক ছেলের পর মৃত্যু হয় বাবার তাই এবার মেয়ে জন্ম নিয়েছে তাই মৃত্যু ভয় কেটে গেছে। জন্মনিলো বাবা,কাকা,পিসি সত্যি এবার মারা গেলেন না এক সন্তানের জন্মের পর।সত্যি প্রথম মেয়ে
সন্তান জন্ম নেয়ার কারণে মৃত্যু দোষ কেটে গেলো। বাবা,কাকা,পিসিরা বড়ো হয়ে গেলো। বড়ো পিসির বিয়ে এর পর আমার বাবার বিয়ে হলো।আমার কাকাও ছোট পিসি কলেজে পড়ে।আমার দিদির জন্ম হয়েছে মাত্র এক বছর বয়স।আর ঠিক তখনি একদিন ডাকাত পড়ে বাড়িতে।

(চলবে)

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এরকম বড় বড় ডাকাতির কথা আগে গুরুজনদের মুখে শুনতাম।আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আবারও ঢাকা দিয়ে সত্য ঘটনা জানতে পারলাম। গা শিউরে উঠছিল আমার। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

হ্যাঁ আগের দিনে এরকম ডাকাতির ঘটনা ঘটতো খুব।ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ে কমেন্ট করার জন্য।