আত্মহত্যা ২

in hive-129948 •  10 days ago 

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লক বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করছি ভাল আছেন আমিও ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো একটি প্রেমে ব্যার্থ হয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনা।আপনারা হয়ত সিডিরও নাম দেখে অবাক হচ্ছেন যে আত্মহত্যা ওয়ান টু এগুলো আবার কেমন। পর্ব নয় কিন্তু এগুলো ভিন্ন ভিন্ন আত্মহত্যার ঘটনা কারণ আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় এত পরিমাণ আত্মহত্যা করেছে মানুষ যে আত্মহত্যা ১,২, ৩,৪ দিতে বাধ্য হচ্ছি

pexels-chxmwala-19125898.jpg
ইমেজ সোর্স

তো চলুন দেখা যাক ঘটনাটি কেমন।

পাঁচ বোনের দুই ভাই সাজানো গুছানো সুখী পরিবার। কোন এক সময় জোরদার থাকলেও এখন তাদের আর্থিক ততটাও ভালো নয় কিন্তু তবুও সুখের অভাব নেই পরিবারটিতে।
পাঁচ বোনের দুই ভাই বেশ আদরের ভাই দুটো ছোট তবে দুই ভাইয়ের ছোট একটি বোন আছে। আমি এখানে ছেলেটি ও মেয়েটির ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। খুব সুন্দর দেখতে সুদর্শন ছেলেটি ওর নাম জীবন আর পাশের বাড়ির মেয়ে ওর নাম অঞ্জনা। এইক গ্রামে বড়ো হওয়া ও খেলার সাথী ছিলো দুজনা।কখন যে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নিজেরাই জানতো না।দুজনার গভীর প্রেম। এক সেকেন্ড কেউ কাউকে ছারা বাঁচবে না এরকম অবস্থা। দুজনার ঘনিষ্ঠতা দিনের পর দিন এতোটাই বেড়ে গেছে যে গোপন কথাটি আর রয়নি গোপনে।তাদের প্রেমকাহিনী সবার মুখে মুখেই রটে গেছে।
ছেলের বাড়ি ও মেয়ের বাড়ি অব্দি কথাটি পৌঁছে গেছে। মেয়ের বাড়িতে নরমাল শাসন থাকলেও ছেলের বাড়িতে একদম কঠোর শাসন করেছে ছেলের মা। ছেলেটির বাবা ছিলনা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। তাই মা প্রতিটি ছেলে-মেয়ের ভালো-মন্দ দেখাশুনা করেন এবং মা ছিল একটি রাগি প্রকৃতির মহিলা। তিনি কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নিতে চাইলেন না। ছেলেকে অনেক বোঝালেন যে সে মরে গেলেও এই সম্পর্ক মেনে নেবে না মেয়েকে তুমি ভুলে যাও। কিন্তু ছেলেটি তো অনেক ভালবাসে মেয়েটিকে সে কি করে ভুলে যাবে।
মায়ের সাথে মাঝে মাঝেই অনেক ঝামেলা করতো ছেলেটি ।লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতো মেয়েটির সঙ্গে। গ্রামের মানুষজন তো একটু কুটনি টাইপের হয়ে থাকে তাই যদি ওদের দুজনকে একসঙ্গে দেখত তাহলে ছেলেটির মাকে গিয়ে বলে দিত আপনার ছেলে তো ওই মেয়ের সঙ্গে এখনো কথা বলে সম্পর্ক রয়ে গেছে।
এরকম দিনের পর দিন চলতে থাকতো বাড়িতে অশান্তি ছেলেটির। ছেলেটির মায়ের এক ওই কথা মরে গেলেও সে ওই মেয়েকে ঘরে তুলবে না। একদিন তো ছেলেটির মা ছেলেটির হাত তার নিজের মাথায় তুলে দিয়ে প্রতিজ্ঞাও দিব্যি করায় ওই মেয়েকে যেন সে ভুলে যায়। এই কথাটি ছেলেটি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি একদিকে মায়ের দিব্যি আর অন্যদিকে প্রেমিকার অসহায় মুখ।
ছেলেটি সিদ্ধান্ত নিল নিতে পারছিল না সে কি করবে।বাড়ির পাশের একটি বিলে মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছে এবং তাকে সিঁদুর পড়িয়ে বলেছে আমাকে ক্ষমা করে দিও । মেয়েটি ভুল করেও ভাবে নি যে আজকেই তাদের শেষ দেখা শুধু কি শেষ দেখা একদম চির জীবনের জন্য শেষ দেখা হবে। মেয়েটি মনে মনে খুশি হয়েছিল যে আমাকে সিঁদুর পরিয়েছে তার মানে সে আমাকে কোনদিন ভুলে যাবে না আমাকে ছেড়ে যাবে না আমার পাশেই থাকবে আমার হাত কখনো ছাড়বে না।
ছেলেটি প্রেমিকার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসেছে এবং বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।বিষ খেয়ে যখন ঘরে ছটফট করছিল তখন গ্রামের ছেলেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে যাওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ছেলেটি।এই ঘটনা শোনার ও দেখার পর থেকে মেয়েটি পাগলের মত হয়ে যায় । সে ছেলেটির বাড়িতে আসে এবং তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।ছেলেটিকে যখন শ্বাশানে নিয়ে যায় মেয়েটি সাদা শাড়ি পড়ে। মেয়েটি তো জানতো আজকেই তাকে সিঁদুর পরিয়ে গেছে ছেলে। এভাবে মেয়েটি পুরা একমাস নিরামিষ খেয়ে থাকে হিন্দু ধর্ম অবলম্বীদের কেউ মারা গেলে যেমন নিরামিষ খেতে হয় ক্রিয়া পালন করতে হয় মেয়েটি সব করে। মেয়েটিও হত্যা করার চেষ্টা করে বেশ কয়েকবার বাড়ির লোক জনের চোখে চোখে রাখার কারনে আত্মহত্যা করতে পারেনি । এভাবে কেটে যায় অনেকগুলো বছর মেয়েটির চোখের জল শুকায় না।
অন্য কোথাও মেয়েটিকে বিয়ে দিতে না পেরে বাবা-মা অসহায় হয়ে গিয়েছিল ।অনেক বোঝানোর পর মেয়েটি যদিও বিয়েতে এতে রাজি হয়ে গেল কিন্তু কেউ তাকে বিয়ে করছিল না ঘটনাটি শুনে।
এরপর হঠাৎ ছেলের বাড়ি থেকে একটি সমন্ধ আসে ছেলের বাবা পুলিশের জব করতেন এক মেয়ে একমাত্র ছেলে। অনেক সুন্দর এবং শিক্ষিত ছেলেটি। কেয়া কোম্পানি নিতে জব করে। বোবাদের জন্য কেয়া কোম্পানির জব এর ব্যবস্থা আছে। তার সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় ছেলেটি বোবা হওয়াতে তারও বিয়ে হচ্ছিল না এজন্যই এত সব জেনেও ওই মেয়ের সঙ্গেই তার বাবা মা বিয়ে দিতে রাজি হয়।
খুব ভালো পরিবার টাকা পয়সার অভাব নেই তার মেয়ের বাড়ি থেকে রাজি হয়ে যায় এবং ধুমধামে বিয়ে হয়ে যায়। তবে মেয়েটির ভিতরে চাপা কষ্ট এখনো কুড়ে কুড়ে খায়। এখনো মেয়েটি ছেলেটির কথা বলে কান্না করে। আমরা ভাবি হয়তবা সৃষ্টিকর্তার এটাই চাওয়া জীবন নামের ছেলেটি ভালোবাসি বলেছিল বর্তমান যে স্বামী তার মুখের একটি কথাও সে শুনতে পারে না। ছেলেটির মা কিছুদিন আগে মারা গেছেন।মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত ছেলের জন্য কান্না করেছে। কিন্তু মৃত্যুর শেষ দিন অব্দি মেয়ের পরিবারের একটি দুধের সন্তানের সঙ্গে ও কথা বলতেন না। ছেলেটির মায়ের জেদের কারণেই কিন্তু ছেলেটি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। হায়রে মানুষ কি হতো তাদের দুজনের প্রেমের পরিণিতি ঘর বাঁধানো হলে।
আসলে আমরা মানুষ অনেক সময় ছোট ছোট জেদের কারণেই অনেক বড় ধরনের দূর্ঘটনার সমূখী হই তবুও আমরা বুঝতে চাই না। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আবারো দেখা হবে অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240622_011007.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে আপু সন্তান বড় হলে আমাদের সবার উচিত তাদের আবদার মেনে নেওয়া। ছেলেটির মা যদি তাদের ভালোবাসকে মেনে দিত তা হলে হয়তো ছেলেটিকে আর হারাতে হতো না। যাইহোক অবশেষে বিয়েটির বিয়ে হয়েছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। যদিও মেয়েটির বুকে অনেক কষ্ট জমে আছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

ঠিক বলেছেন আপু সন্তান বড়ো হলে তাদের ইচ্ছের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

আত্মহত্যা দুই গল্পটা পড়ে সত্যি চোখে জল চলে এসেছে। প্রথমদিকে গল্পটা পড়তে অনেক ভালোই লাগছিল। কিন্তু শেষে এরকম কিছু হবে এটা ভাবতেই পারিনি। তারা দুজন একে উপরকে এত বেশি ভালোবেসেছিল, এটা দেখে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। জীবনের মা যদি তাদের দুজনের সম্পর্কটা মেনে নিতো, তাহলে হয়তো এখন জীবন বেঁচে থাকতো। এবং খুব সুন্দর একটা জীবন যাপন করতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কিছু করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে দেখে অনেক খারাপ লেগেছে। এটাই কামনা করি যেন এরকম কিছু আর কারো সাথে না হয়। সবার যেন ভালোবাসা পূর্ণতা পায়।

সত্যি চোখে জল আসার মতোই ঘটনা আপু আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকার ঘটনা। ধন্যবাদ সাবলীল মন্তব্য করার জন্য।

আসলে সত্যি কারের ভালোবাসা সব সময় এরকমই হয়ে থাকে। তবে আমি মনে করি আত্মহত্যা সব কিছুর সমাধান হয় না। কিছু কিছু ফ্যামিলির জন্য সন্তানদের জীবনটাই একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আর তেমনি জীবনের মায়ের এরকম ডিসিশন এর জন্য তাদের দুজনের জীবনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে একেবারে। জীবন আত্মহত্যা করেছে আর এই শোকে মেয়েটাও এত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে দিয়েছে কিন্তু সে সুখী নয়। তার মা মেনে নিলে হয়তো এত কিছু হতো না তাদের জীবনে। দুজনে ভালোভাবে এখন সংসার করতো।

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া সত্যি কারের ভালোবাসা এরকমই হয়ে থাকে। ঠিক বলেছেন কিছু কিছু ফ্যামিলির জন্যই সন্তানদের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

আসলে কিছু কিছু বাবা মায়ের জন্য কিছু জীবন এভাবে অকালেই চলে যায়। হয়তো বাবা-মা ভালই চায় সন্তানের তারপরও সন্তান যাতে খুশি থাকবে সেটাই করা উচিত। আমার তো খুবই কান্না পাচ্ছিল তাদের প্রেম কাহিনী পড়ে। তারা তো অন্যায় করেনি ভালোবেসে একে অপরের সাথে থাকতে চেয়েছিল। কি আর করার হয়তো এটাই নিয়তি।

কান্না পাওয়ার মতোই ঘটনাটি।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

চোখে পানি চলে এসেছে ঘটনার বর্ণনায়। আসলে, এমনই হয়। জেদি বাবা/মায়ের জন্য সন্তানরা অকল্পনীয় কাজ করে ফেলে। পরবর্তীতে বাবা/মাই ভোগে। খুব কষ্ট লাগলো। বর্ণনা দারুণ হয়েছে।

আরেকটা কথা বলি 😉, এই লেখায় কিন্তু বানান ভুলের পরিমাণ নেই বললেই চলে। এটা দেখে আরও ভালো লেগেছে।

ধন্যবাদ ভাইয়া পুরা পোস্ট টি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

স্বাগতম, দিদি।