হ্যালো,
আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।
ভালো লাগে না আর এতো গরম। দিনে ইদানীং যদিওবা বিদুৎ থাকে রাতে একদমই থাকে না।কি যে এক অবস্থা বলে বোঝাতে পারবো না।ঘরে নেটওয়ার্ক পায় না তাই বাইরে বসে আছি।বাইরে বসে বসে দেখছিলাম পাট কাঠি ও পাট রোদে দেয়া।
ছোটবেলায় কতো পাটকাঠির ঘর বানিয়ে বউ পুতুল, খুটি মালসা খেলতাম।আজ বসে বসে সেই দিন গুলোকে খুব মিস করছি।গ্রামের মানুষের পাটকাঠি খুব পছন্দের ও দরকারী উপকারী একটি জিনিস। মাটির চুলা জ্বালানোর জন্য পাটকাঠির প্রয়োজনীয়তা অনেক।
শুধু কি চুলা জ্বালানো গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষেরা পাটকাঠি দিয়ে বাড়ির দেয়ালের কাজ করে থাকে।ছোট বেলায় দেখতাম পুরা গ্রাম জুড়ে শুধুই আমাদের পাট ও পাটকাঠি রোদে দিতো।এমন কি গ্রামের অনেকেই পাটকাঠি বাড়িতে এনি দিয়ে কিছু পাটকাঠি নিয়ে যেতো।
পাটকাঠি যখন দাড় করিয়ে রোদ্রে দিতে তখন তার নিচে অংশটি গোলাকার হতো আর আমরা সেই পাটকাঠির ঘরের ভীতরে বসে বসে খেলতাম।অনেক পাটকাঠি দাড় করিয়ে রোদে দেয়ার কারণে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলতাম সব বাচ্চারা মিলে।
পাটকাঠি ও পাট রোদে দিলে মনের ভীতরে আনন্দ হতো খেলতে পারবো বলে।পাটকাঠি গুলো যখন শুখানো হয়ে যেতো তখন সব পাটকাঠি একত্রে করে মটকা দিয়ে রাখতো।সব পাটকাঠি এক জায়গায় বিশেষ কায়দায় রাখলে তাকে মটকা বলা হয়।মটকা দেয়ার পর পাঠকাাটি দিয়ে গাড়ি বানিয়ে খেলতাম।
পাট কাঠি দেখে এক টা গল্প মনে পড়ে গেলো আমার শ্বাশুড়ির কাছে শুনেছি গল্পটি।আমার মাসি শ্বশুড়ির মেয়ে পাটকাঠির নিয়ে খেলছিলো।আট বছর বয়স ছিলো মেয়েটির। মেয়েটি প্রতিদিন পাটকাঠির মটকার নিচে বসে খেলতো।আসলে পাটকাঠির মটকা দিয়েছিলো মাচার উপরে আর সেজন্য নিচটা ফাকা ছিলো আর সেখানে বসে খেলা করতো। একদিন খেলার সময় তার মাথায় কু বুদ্ধি হয় এবং পাটকাঠির নিচে সে গ্যাসলাইট নিয়ে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করে খেলছিলো।
হঠাৎ পাটকাঠিতে আগুন লেগে যায় এবং পাটকাঠির মধ্যে যে আঁশ থাকে নিমিষেই সেগুলোতে আগুন ধরে যায়।আগুনের লেলিহান শিখা চার পাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মেয়েটি আর বাইরে আসতে পারে না।
আগুন লেগেছে আগুন লেগেছে চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ির লোকজন তবে কেউ জানতে পারে না যে হতভাগা মেয়েটি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আগুন একদমই নেভানোর সুযোগ পায়না কেই পুরা পাটকাঠির মটকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে যখন আমার মাসি শ্বশুড়ি মেয়েকে খুঁজে পায় না তখন গ্রামের এক বাচ্চা বলে আমারা দুজনে তো পুড়িয়ে যাওয়া পাটকাঠির ভীতরে খেলছিলাম আমি বাড়িতে চলে এসেছি।
একথা শুনে সবার মাথায় বজ্রপাত হয় এবং কান্নার রোল পড়ে যায়।সবাই তখন পুড়িয়ে যাওয়া পাটকাঠির মটকার ছাই গুলো খুজে পায় ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটির পোড়া অল্প পরিমানে হার গোড় ও পায়ের রুপার নুপুর।
গল্পটি শুনে নিজেকে ধরে রাখা যাই নি এসব ঘটনা নাটক সিনেমায় ভালো লাগে বাস্তবে নয়।বাস্তব এমন ঘটনা শুনে হার হীম হয়ে গিয়েছিল আমার।
নিজের ছোটবেলায় পাটকাঠির ঘরে গল্প করে গিয়ে হঠাৎ এই গল্পটি মনে পড়ে গেলো তাই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
আসলে কখন কার জীবনে ভয়ংকর দূর্ঘটনার সমূখীন হবে তা কেউ বলতে পারবে না।আমাদের বাড়ির পাটকাঠির মটকার ভিতরে থেকে কখনো কখনো সাপ বেড়িয়ে আসতো কখনো কখনো বিড়াল বাচ্চা দিতো তলায়।আবার কখনো বা মটকার মাথায় বসে মুরগি ডিম পড়ে রাখতো।
ইদানীং পাটকাঠির অনেক দাম। ৩৫০ টাকা মন কিন্তুু আগের দিনে মানুষ পাটকাঠি একদমই কিনতো না।গ্রামের কারো পাটকাঠি হলে চেয়ে নিতো।আমাদের বাড়িতেই দেখতাম বিলিয়ে দিতো যতোক্ষণ না মটকা দেয়া হয়েছে।
এখানকার দিনে একে তো দাম বেশি অনেক তার উপরে মানুষ এখন হিংসুটে। কেউ আর কাউকে কিছু দিতে চায় না এবং কেউ কারো কাছে কিছু চায় না।ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে আমি দেই না সে ও দেবে না বা আমি দেব না কারো কাছে নেবো ও এরকম অবস্থা।
এই ছিলো আমার আজকের পোস্ট পাটকাঠি নিয়ে কিছু কথা।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।
আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে আমার গা শিউরে উঠলো আপু। এত ভয়ঙ্কর একটি গল্প যেটা পড়তে শেষের দিকে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। একবার ভাবুন যখন মেয়েটির মা শুনতে পেরেছে যে তার মেয়ে ওই পাট কাঠির আগুনের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তখন কি অবস্থা। তবে পড়ে গিয়ে যদি ওর দেহটা পাওয়া যেত তাও অনেকটা সান্ত্বনা দেওয়া যেত।। সব সময় দোয়া করি সবাই যেন সুস্থ থাকে ভালো থাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু আমারও যতোবার এই ঘটনা মনে পড়ে আপনার মতোই অবস্থা হয়।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার পাটকাঠি দিয়ে খেলার গল্প পড়ে আমারও ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে গেল। আমিও ছোটবেলায় আপনার মতো এভাবে পাটকাঠির ঘরে বসে খেলাম। বর্তমানের ছেলেমেয়েরা কিন্তু এগুলো কিছুই বুঝে না আর তারা তো খেলাধুলা করার সময়ই পায় না। আপনার মাসি শ্বাশুড়ির মেয়ের এমন মৃত্যুর কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। মেয়েটির মৃত্যু হয়তো এভাবেই লেখা ছিল। ধন্যবাদ আপু শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমান বাচ্চারা এসব খেলে না আপু ফোন ও টিভি নিয়ে ব্যাস্ত।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি ছোট বেলা থেকেই গ্ৰামের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আমিও ছোট বেলায় আপনার মতোই পাঠের গাছ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি তৈরি করেছিলাম, এছাড়া ও আরো রকম ঘর বাড়ি তৈরি করেছিলাম। আপনার ছোট বেলার পাটকাঠি দিয়ে খেলার গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোট বেলায় আপনি গ্রামে বেড়ে উঠেছেন এবং পাটকাঠি দিয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের অসাবধানতাবশত এমন অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। ব্যাপার টা বেশ হৃদয়বিদারকম। যেহেতু এখন পাটকাঠির সময়। গ্রামে গেলেই রাস্তার পাশে এইরকম সারি সারি পাটকাঠির দেখা পাওয়া যায়। বেশ চমৎকার একটা ব্যাপার এটা। আপনার পোস্ট টা পড়ার মাধ্যমে বেশ কিছু স্মৃতিচারণ আমারও হয়ে গেল। দারুণ লিখেছেন আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন ভাইয়া অসাধানতার কারণে এরকম ঘটনা ঘটে।ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit