মাছ ভাজা শেখার গল্প🥰

in hive-129948 •  4 days ago  (edited)

হ্যালো

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।

IMG_20250126_205801.jpg

আজকে আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো মাছ ভাজা আমি কিভাবে শিখলাম সেই গল্প।

আমি কোনদিন বিয়ের আগে রান্না করিনি সখ করেও কখনো খুন্তি ধরিনি আর সেজন্য আমার মা মোটেও চিন্তিত ছিলো না।অনেক মা দেখা যায় মেয়েরা যদি রান্না করতে না পারে তাহলে তাঁকে রান্না শেখায় এবং গুরুজনদের বলতে শোনা যায় বিয়ের আগে রান্না না শিখলে কবে শিখবে।রান্না না পারলে শ্বশুড় বাড়িতে কথা শুনতে হবে।আসলে অনেক মেয়েকে শ্বশুড় বাড়িতে কাজের জন্য বা রান্নার জন্য কথা শুনতে হয় জন্য এই ধারনা।

আমার মাকে কখনো এসব বলতে শুনিনি বা এসব বিষয়ে চিন্তিত হতে দেখিনি।কোনদিন বলেওনি যে রান্না করতে হবে।আর সেজন্য মূলত রান্না শেখা হয়নি।বিয়ের পরেও শ্বশুড়ি পেলাম ঠিক মায়ের মতোই কখনো কোন কাজের অর্ডার করতো না এবং রান্না করতে পারতাম না জন্য রান্না করতেও দিতো না।

যাইহোক আমার বিয়ের এক বছর হওয়ার আগেই আমার বর শান্তিরক্ষী মিশনে চলে যায় এবং তখন বাবার বাড়িতে থাকি বেশি ও শ্বশুড় বাড়িতে কোন অনুষ্ঠানে আত্নীয়র মতো এসে থাকতাম এবং দু একদিন বা সপ্তাহ খানেক থেকে চলে যেতাম।

এরপর বর যখন মিশন শেষ চলে আসলো এবং খাগড়াছড়িতে পোস্টিং হলো তখন আমি বাসায় চলে গেলাম।নতুন সংসার সংসার করার কোন অভিজ্ঞতা নেই। রান্না পারি না তবুও সমস্যা হয়নি কারণ আসলে পারি না পারবো না এসব কথা মানুষের শোভা পায় না করলেই পাওয়া সম্ভব যে কোন কাজ আর ঠিক সেরকম ভাবে আমিও ভুলভাল ভাবে হলেও সংসার গোছাতে লাগলাম।

ফোন করে করে মায়ের কাছে ও শ্বশুরির কাছে রান্না শিখে শিখে করতাম।তবে সমস্যা হতো মাছ ভাজা নিয়ে। কখনো মাথায়ও আসেনি যে মাছ ভাজতে পারবো না।কারণ মাছ ভাজা সে তো অতিসহজেই পাওয়া যায়।কড়ায়ে তেল দেবো লবন, হলুদ দিয়ে মাছ মেখে নেবো তারপর কড়ায়ে দিয়ে মাছ ভেজে ফেলবো।

এই ভাবেই মাছ ভাজছিলাম তবে সমস্যা হলো মাছ ভাজলে মাছ পুরাই ভেঙ্গে ভর্তা হয়ে যেতো।একদমই মাছ আস্ত ভাজা হতো না।এভাবে চলতে থাকলো।মাছ কড়ায়ে দিলে উল্টাতে গিয়ে ভেঙ্গে যায় এবং লেগে যায় লেগে যাওয়া মাছ খুন্তির সাহায্য তুলতে গিয়ে আর আস্ত থাকে না।

মহা টেনশনে পড়ে গেলাম বরকে বল্লাম বর তো আরো রান্নার কিছু বোঝে না।এবার বরকে বল্লাম এই কড়াইয়ে দোষ এই কড়াই চলবে না,কড়াই বাদ দিয়ে ফ্রাইপ্যান নিয়ে আসলো সেখানেই একই অবস্থা কিছুতেই মাছ আস্ত থাকে না কি করি কি করি মহা চিন্তা এভাবেই কেটে গেলো মাসখানেক।এভাবেই চলতে লাগলো টোনাটুনির সংসার।বর কখনো কোন অভিযোগ করতো না যা দেয়া যেতো তাই সোনামুখ করে খেয়ে নিতো।

একদিন রান্না বসিয়েছি। রান্না ঘরে রান্না করছি মাছ ভাজবো চুলায় ফ্রাই পেন বসিয়েছি ও তাতে তেল দিয়েছি। মাছে লবন হলুদ মেখে নিয়েছি ও তাতে লক্ষ্য করলাম হলুদ কম হয়েছে আর মাছে হলুদ দেয়ার জন্য মসলাদানীতে হলুদের কৌটা হাতে নিয়ে মুখ খুলে দেখলাম হলুদ নেই কৌটায়।হলুদ আছে আলমারিতে আমি হলুদের কৌটা হাতে নিয়ে হলুদ আনতে গেলাম এবং হলুদ নিয়ে আসতে আসতে দেখলাম তেল অনেকটা গরম হয়ে উঠেছে। তেল অনেক গরম হয়েছে দেখে তারারাতি মাছ কড়াইয়ে ছেরে দিলাম।

একি দেখছি আমি আমি তো কল্পনাও করতে পারিনি এরকম দৃশ্য দেখবো। ওমা আমার মাছ ভেঙ্গে যাচ্ছে না। খুন্তি দিয়ে মাছ উল্টাতেই চটচট করে উল্টে যাচ্ছে। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে বিশ্ব জয় করে ফেলেছি এরকম ভাব। আনন্দে মনটা নেচে উঠলো।

আমি পেরেছি মাছ আস্ত ভাজতে পেরেছি।কি যে ভালো লাগছিলো তা বলে বোঝাতে পারবো না। এভাবেই আমি মাছ ভাজা শিখে গেলাম।

বর এসেছে টেবিলে খেতে বসেছি আস্ত মাছ দেখে বর বললো কড়াই পাল্টিয়ে কি মাছ ভাজা ঠিক হয়েছে। আমি হেসে হেসে পুরা ঘটনাটি খুলে বল্লাম এবং দুজনে হাসতে লাগলাম।মাছ ভাজা হচ্ছিলো না জন্য তিন তিনটি কড়াই কিনে ফেলেছিলো সে এটা আমার জীবনের ইতিহাসের মতো হয়ে রইলো।আসলে আমি তেল ঠিক মতো গরম না হতেই মাছ দিয়ে দিতাম আর সেজন্যই মাছ প্যানে আটকে যেতো। এবার তেল গরম হয়েছে ঠিকঠাক মতো আর সেজন্য মাছ গুলো আটকে যায় নি।এরপর মাছ ভাজার আসল কৌশল ধরতে পারলাম আর

এভাবেই আমি মাছ ভাজা শিখে ফেলেছিলাম।
এই ছিলো আমার মাছ ভাজা শেখার গল্প।অনেকদিন পর হঠাৎ দুপুর বেলা মাছ ভাজতে গিয়ে ঘটনাটি মনে পড়ে গেলো। মাছ ভাজতে গেলেই মজার ঘটনাটি মনে পড়ে আমার।আজকে যখন ঘটনাটি মনে পড়লো তখনি ভেবে নিলাম ঘটনাটি আজকে আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোষ্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

আমার গল্পটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।এরকম ঘটনা কি আপনাদের সাথে ঘটেছিলো কি না জানাবেন।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে।
সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20250123_234044.png

IMG_20250123_234029.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমি মনে করি, প্রথম বার মাছ ভাজা শেখাটা অনেকটা একটা ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চারের মতো। আমি নিজেই একবার চেষ্টা করেছিলাম, ভাবছিলাম।"এটা তো খুব সহজ " কিন্তু মাছটা যখন তেলে ফেলা হলো, তখন তো পুরো রান্নাঘরেই ধোঁয়া আর তেলের ছিটানো।তবুও, শেষমেষ যখন ভাজা মাছের গন্ধ উঠতে শুরু করল, তখন মনে হয়েছিল, এত কষ্টের পরও একদম মজার কিছু তৈরি হয়েছে। একটু সতর্কতা আর ধৈর্য্য থাকলে প্রথমবার মাছ ভাজা সবার জন্যই সম্ভব। ধন্যবাদ আপু আপনার গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

আপনার মাছ ভাজাও ঘটনাও তো দেখছি বেশ চমৎকার একদিন আমাদের সাথে শেয়ার করিয়েন পুরা ঘটনাটি বেশ ভালো লাগবে।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

PhotoCollage_1737908319148.jpg

বেশ অনেক ঘটনা জানতে পারলাম মাছ ভাজা নিয়ে। কিন্তু আমি কবে কখন কিভাবে যে শিখেছি নিজেরই মনে নাই। আপনার মাছ বাজারে ঘটনাটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

হ্যাঁ আপু পারি না পারব না এই কথাটা আসলেই শোভা পায় না। মানুষ চাইলে সব কিছুই করতে পারে। সত্যি মায়ের মত শাশুড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।কাজ করতে করতে কাজ শিখে নেওয়া যায়। আপনার মাছ ভাজা শিখে ওঠার গল্প করে বেশ মজা পেলাম। এরকম ঘটনা আমার সাথে হয়েছিল। আমি মেসে আসার পর আমার রুমমেট আমাকে মাছ ভাজা শিখিয়েছে। সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।

ঠিক বলেছেন পারি না পারবো না শোভা পায় না আমাদের।

পারবো না বলে কোন কিছু নেই। ইচ্ছা হলে সব কাজই পারা যায়। আর মাছ ভাজা ও রান্না প্রতিটা মেয়েরই একটি আর্ট। এই কাজগুলো প্রতিটা মেয়েদের জন্য আল্লাহ তাআলার দিকনির্দেশক। আমি মনে করি এ রান্নাবান্নাগুলো কঠিন কিছু নয় যে, প্রতিনিয়ত শিখতে হবে। একবার দেখলে পারা যায়। আসলে আমি মনে করি মার মত শাশুড়ি ও একজন মা ও বন্ধু। আপনার শাশুড়ির কাছ থেকে মাছ ভাজা শিখেছেন যেনে অনেক ভালো লাগলো।

ঠিক বলেছেন শ্বশুড়ি মা ও বন্ধুই হয়।

আমারও এমনটা প্রথম প্রথম হতো আপু। মাছ ভাজতে পারতাম না কড়াইয়ে লেগে যেত। এরপর শাশুড়ি মায়ের কাছে শিখেছি তেলটা একদম বেশি করে গরম হয়ে গেলে মাছ ছেড়ে দিতে হবে তেলে। তাহলে আর লেগে যাবে না। যাইহোক আপনার মাছ ভাজতে শেখার অভিজ্ঞতা পড়ে বেশ ভালো লাগলো আপু।

শ্বশুড়ির কাছে শিখেছেন জেনে ভালো লাগলো।

কোন মা চায় না তার সন্তান হাত পুড়িয়ে রান্না করুক আর এভাবেই দিন দিন মেয়েরা অলস হয়ে ওঠে। 😅মাওয়াইমা তো খুবই কাজের মানুষ সে অন্যকে যতক্ষণে হুকুম করবে তার মধ্যে সে নিজেই করে ফেলবে।টোনাটুনির সংসারে মাছ ভাজার যে করুণ দশা হয়েছিল তা খুবই ভয়ংকর!🤣যাক একটু ভুলের জন্য হলেও কড়াইয়ের তেল গরম হয়েছিলো
বলেই তুমি সফল হতে পেরেছিলে!🤣 মজার একটা গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

এটা ঠিক মা হুকুম করতে সময় ব্যায় না করে নিজেই করে ফেলে কাজ।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।