বন্ধু বন্ধুর জন্য

in hive-129948 •  3 years ago 

বন্ধু বন্ধুর জন্য.png
আস সালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। ব্যস্ততা এবং নানা সমস্যার কারণে অনেক দিন কোন কিছু পোস্ট করতে পারি নি। তাই আজ আমার নিজের লেখা একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। একটু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

আমার বন্ধু আকাশ একজন ইঞ্জিনিয়ার। সে ঢাকায় একটি কন্সট্রাকশন সাইটে চাকরি করে। বেতন বেশ ভালো। আকাশের পরিবার আকাশকে বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে ঠিক করে। তার নাম ছিল শিউলি। শিউলি ছিল অনেক সুন্দরী তাই প্রথম দেখেই আকাশ তাকে ভালোবেসে ফেলে। চাকরিতে ছুটি না থাকার করণে ছয় মাস পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। তাদের দুই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় আকাশের বিয়ের আয়োজন করা হয় অনেক ধুমধাম করে। কিন্তু আকাশের হবু বউ এই বিয়েতে রাজি ছিল না। অন্য একটি ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। তাই শিউলি পরিবারের মুখে চুনকালি দিয়ে বিয়ের দুই দিন আগে সেই ছেলেটির সাথে পালিয়ে যায়। তার পরের দিন আকাশের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। এদিকে উভয় পরিবার তাদের আত্নীয়দের দাওয়াত দিয়েছে।
একটা কথা বলা হয় নি , আকাশের শশুরের দুটি মেয়ে ছিল। ছোট মেয়েটির নাম তিশা। সে ক্লাস টেনে পড়ে। সে শিউলির চেয়ে আরও বেশি সুন্দরী ছিল। আকাশের শশুর ও তার দুই মেয়ে একবার ঢাকায় আসছিল বেড়াতে তাই আকাশ আর আমি ছিলাম তাদের সাথে। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে নিয়ে যায়। তিশাকে দেখে আমি ভালোবেসে ফেলি। তিশাকে আমার ভালোবাসার কথা বলি আর তিশাও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু একটা শর্ত দেয় যে আমাদের ভালোবাসার কথা আকাশকে বলা যাবে না এমনকি কাওকে বলা যাবে না। এরপর থেকে আমরা শুধু ফোনে কথা বলি আর কখনো সরাসরি দেখা করি নি।
তিশার বড় বোন যেহেতু পালিয়ে গেছে আবার সবাইকে দাওয়াত করা হয়ে গেছে তাই উভয় পরিবার তাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে একমত হয় যে তিশার সাথে আকাশের বিয়ে হবে। তিশা রাতে আমাকে ফোন করে সব ঘটনা বলে। আকাশের বিয়ের তিন দিন আগে আমি আকাশের বাড়িতে আসি। আকাশের পরিবার আমাকে অনেক ভালোবাসে। আকাশের বাড়িতে আসার পর থেকে আমার গায়ে ভীষন জ্বর। তিশা বলে সে আমাকে ছাড়া বাচবে না। আমি যেন তাকে নিয়ে পালিয়ে যায় নাহলে আকাশকে সব বলে দেই । আমিও যে তাকে ছাড়া বাচতে পারবো না। কিন্তু আমি কি করবো কিছু বুঝতে পরছি না। আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার গায়ের জ্বর কমে গিয়ে ঘাম ঝরা শুরু করেছে। আধা ঘন্টা পর আবার তিশার ফোন আসলো ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বললো আমি তিশার মা বলছি। আমি তিশার কাছ থেকে সব শুনেছি। তিশার মা আমাকে অনেক বুঝায় আর বলে আমি যেন তিশাকে ভুলে যায় । আর তিশা ও আকাশের বিয়েতে কোন বাধা না দেই। কারণ এই বিয়ে যদি না হয় তাহলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। আর তুমি যদি তিশাকে নিয়ে পালাও তাহলে তিশার আব্বাকে বাচানো যাবে না। আমি তিশা ও তোমাকে আর কিছু বলবো না যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো। আমি তিশার মায়ের সাথে কোন কথা বলতে পারলাম না। তিশার কাছে ফোন দিয়ে তিশার মা চলে গেল। তিশা ফোন ধরে শুধু কাঁদতে লাগলো। আমরা দুজনে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। তারপর আমি তিশাকে বললাম তুমি আকাশকে বিয়ে করো। আমাদের দুজনের সুখের চেয়ে দুটি পরিবারের সুখ অনেক বড়। এ কথা শুনে তিশা আরও বেশি কাঁদতে লাগলো। আমি বললাম আকাশের সাথে তোমার বিয়ে হলে তুমি সুখে থাকবে আর দুটি পরিবারও সুখি হবে তখন আমিও সুখি হবো। তিশা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল আমাকে ছাড়া তুমি সুখি হতে পারবে আর আমি আকাশের কাছে কখনো সুখি হতে পারবো না। আমি তিশাকে অনেক বুঝালাম কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চাই না। এভাবে অনেকক্ষন কেটে গেল মসজিদে ফজরের আজান শোনা গেল। আমি তিশাকে ফোন রাখতে বললাম। কিছু সময় পর আকাশ আসলো আমার রুমে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য।
নামাজ পড়ে আসার সময় আকাশ আমাকে বললো বন্ধু আজ যদি আমার বিয়ে না হতো তাহলে আমি কারো কাছে মুখ দেখাতে পারতাম না। আমি আকাশকে বললাম কোন চিন্তা করার দরকার নেই আল্লাহ যেটা করে ভালোর জন্য করে।

বাড়িতে অনেক লোকের সমাগম। চারিদিকে নাচ গান আর বাজি ফাটিয়ে সবাই আনন্দ করছে। আজ তাদের সাথে আমারও আনন্দ করার কথা। কিন্তু এই আনন্দ আমার জীবনে সহ্য হলো না। আমি কোন দিকে যাব কিছু বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে আবার তিশার ফোন আসলো। আমি ছাদে চলে আসলাম। তিশা কেঁদে কেঁদে বললো আমি আর সহ্য করতে পারছি না হয় আমাকে নিয়ে যাও না হলে আমি আত্মহত্যা করবো। আমি তিশাকে অনেক বুঝলাম কিন্তু সে বুঝতে চাই না। অবশেষে তিশা আমাকে বললো ঠিক আছে আমি আকাশকে বিয়ে করবো কিন্তু কখনো ভালোবাসতে পারবো না। আর আমি যেন কখনো ওর সামনে না আসি বলেই ফোন কেটে দিল। আমি শুধু কাঁদতে লাগলাম। আমার গায়ে আবার জ্বর চলে আসলো। ডাক্তার নিয়ে আসা হল। বাড়ির সবাই আমার অনেক যত্ন নিল। আকাশ আমাকে বিয়েতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার ঘরে আসলো। সে আমাকে না নিয়ে যাবে না। তবে শেষ মেষ আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আকাশ চলে গেল। আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি বের হচ্ছে কিন্তু এত পানি কোথা থেকে আসছে জানি না। প্রায় এক ঘণ্টা পরে একটা নতুন নাম্বার দিয়ে আমার কাছে ফোন আসলো। ফোন ধরতেই একটা মেয়ে বললো ভাইয়া আমি তিশার বান্ধবী। আপনি বিয়েতে আসেন নি কেন? আমার গায়ে জ্বর তাই যেতে পারি নি। এবার তিশা ফোন নিয়ে বললো আমার সামনে আসতে নিষেধ করেছি বলে তুমি আস নি তাই না। আমি কোন কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম আর ফোন বন্ধ করে রাখলাম। সন্ধ্যার দিকে আমার ঘুম ভাংলো আকাশের মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনে। আমি তাড়াতাড়ি একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে বাইরে এসে বললাম কি হয়েছে সবাই কাঁদছেন কেন? বাবা আকাশের বিয়ের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে তুমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাও আমার আকাশকে নিয়ে এসো। আমি এ কথা শুনে পাগলের মত হয়ে গেলাম কি করবো, কোথায় যাব, কিছু বুঝতে পারছি না। একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম। একজনের কাছে শুনলাম একটা বিয়ের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে আর সবাইকে মেডিকেলে নিয়ে গেছে। আমি মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মেডিকেলে গিয়ে দেখি বেডের বাইরে তিনটি লাশ পড়ে আছে তার মধ্যে একটি মহিলা আর দুটি বাচ্চা। তারা ঘটনাস্থলে মারা গেছে। আমি ডাক্তারকে জিঙ্গাসা করলাম আকাশ কেমন আছে। ডাক্তার আমাকে কিছু বললো না বেডের ভিতরে চলে গেল। পাশে দেখলাম কয়েকজন কান্না কাটি করছে। একজনকে বললাম এরা কারা? সে বললো এরা তিশার মা বাবা আর আত্মীয়। কিছু সময় পর ডাক্তার এসে বললো আমরা অনেক চেষ্টা করেও আকাশকে বাচাতে পারলাম না। আর তিশাকে আই সি ইউ নেওয়া হয়েছে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। সবাই হাও মাও করে কাঁদতে লাগলো। আমি দৌড়ে বেডের ভিতরে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি একটা সাদা কাপড়ে আকাশের দেহ ঢাকা। মুখ দেখে মনে হচ্ছে আকাশ আমার দিকে চেয়ে হাসছে। আমি আকাশের মুখ ধরে বুকের কাছে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আকাশ আমাদের মাঝে নেই। রাতে আকাশের লাশ বাড়ি নিয়ে আসা হলো আর সকল আত্মীয় বাড়িতে থাকায় কাউকে আর খবর দেওয়া লাগেনি।
পরের দিন যোহরের নামাজের পর জানাজা দাফন সম্পূর্ণ করা হলো। পুরা পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এলো। এদিকে তিশাকে আই সি ইউ থেকে সাধারন বেডে নেওয়া হয়েছে। আমার ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে আমাকে ঢাকায় ফিরে আসতে হবে। আমি আকাশের পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আকাশের মা আমাকে বললো বাবা আজ থেকে তুমি আমার ছেলে যখন সময় পাবে আমার বাড়িতে চলে আসবে। আমি চলে যাব এমন সময় মনে হল তিশাকে একবার দেখে যায়। এই কয় দিনের মধ্যে একবারও দেখতে যাওয়া হয় নি। হাসপাতালে গেলাম তিশাকে দেখতে । আমাকে দেখেই তিশা কেঁদে ফেললো। তিশাকে বললাম আমি ঢাকায় চলে যাচ্ছি তুমি ভালো থেকো। তিশা বললো আমিও যাব তোমার সাথে আমি আর আব্বুদের বাসায় ফিরে যাব না। আমি বললাম তুমি কি পাগল হয়ে গেছ। প্রায় এক ঘন্টার মত আমরা কথা বললাম তার পর আমি চলে আসলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। তিশা সব সময় আমার সাথে কথা ফোনে কথা বলে। আমরা বন্ধুর মত কথা বলি। আমি তিশাকে অনেক বার বলি সে যেন বিয়ে করে নেয়। তাহলে সব কিছু ভুলতে পারবে। কিন্তু সে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না বলে প্রতিঙ্গা করেছে। অবশেষে আকাশ ও তিশার মা বাবা আমার মা বাবার সাথে আমাদের বিয়ের বিষয় কথা বলে এবং প্রায় এক বছর পর তিশা ও আমার বিয়ে হয়। আমরা ঈদের সময় আকাশের কবর জিয়ারত করতে যায় আর সব সময় নামাজ পড়ে আকাশের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করে। আমিন!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  3 years ago (edited)

এই মুহূর্তে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তে কোনো নিউ মেম্বার নেওয়া হচ্ছে না।

আপনাকে আমি এর আগেও মন্তব্য করেছি। আপনি আমার বাংলা ব্লগে পোস্ট করতে হলে অবশ্যই প্রথম একটি পরিচিতিমূলক পোস্ট লিখতে হবে। এবং আপনি কার মাধ্যমে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তে এসেছেন তার নাম আপনার পোস্টে উল্লেখ করতে হবে। আর অবশ্যই আপনার রেফারাল কমিউনিটির ভেরিফাই মেম্বার হতে হবে। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

আরো কিছু জানতে জয়ের করুন আমাদের discord সার্ভারে।
লিংক : https://discord.gg/5aYe6e6nMW

কত বার পরিচয় দেওয়া লাগবে বললেন দয়া করে?