ব্যানার ক্রেডিট @hafizullah
সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের নতুন আয়োজন জীবনের গল্পের শো-তে । মূলত আমরা যেহেতু প্রথম থেকেই বলেছিলাম, রবিবারের আড্ডার কিছুটা ভিন্নতা হবে, ঠিক সেই ভিন্নতার জায়গা থেকেই, এই সংযোজন। মানুষের জীবনে কত গল্পই তো থাকে, কত সুখস্মৃতি থাকে, থাকে পাওয়া না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কিংবা হারিয়ে ফেলার তিক্ততা কিংবা থাকে সফলতার হাজারো গল্প, যা হয়তো অনায়াসেই, অন্য কাউকে অনুপ্রাণিত করে ফেলে মুহূর্তেই। এই গল্পগুলো হয়তো অজানাই থেকে যায়, আমরা আসলে কান পেতে থাকি, এই গল্পগুলো শোনার জন্য। এইজন্য বাংলা ব্লগ আয়োজন করেছে, জীবনের গল্প। যেখানে অতিথি তার নিজের জীবনের গল্প অন্যদের সামনে অনায়াসেই বলে ফেলবে এবং অতিথি নিজের থেকেও বেশ হালকা হবে, সেটা হয়তো মনের দিক থেকে।
আজকের অতিথিঃ @neelamsamanta
ভেরিফাইড সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ
ফেলে আসা জীবন থেকে যদি কিছু কথা স্মৃতিচারণ করতেন।
জীবন মানেই তো উত্থান-পতন, যেখানে অনেক হেরে যাওয়ার গল্প থেকে আবার জিতে যাওয়ার অনেক গল্প থাকে। তবে আমি মনে করি, হেরে গিয়েও আবার নতুন করে জেতার আগ্রহ তৈরি হয়। সবটা তো এই মুহূর্তে মনে নেই, তবে যতদূর মনে পড়ে, তাই টুকটাক বলার চেষ্টা করছি। আমি কিন্তু গ্রামের মেয়ে, বড় হয়েছি মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। সেই হিসেবেই আমি যখন প্রথম শহরে যাই, বলতে গেলে মফস্বল। তখনই হোস্টেলে উঠি। যদিও আমি বাংলা মিডিয়ামের স্টুডেন্ট ছিলাম, তাছাড়া গ্রামের। তারপরেও স্কুলে মানিয়ে নিতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে যখন কলেজে উঠি তখনই মূলত স্ট্রাগল শুরু হয়। কেননা আমি ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হই, আর যে কলেজে ভর্তি হই সেখানে সবাই হিন্দি আর ইংলিশে কথা বলে অভ্যস্ত। যদিও পশ্চিম বাংলায় কলেজ, তবে কলেজে ঢুকলে মনে হতো আমি মনেহয় অন্য জায়গায় চলে এসেছি। তবে কলেজে গিয়ে আমি একটা ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি শিক্ষকদের দ্বারা। মানে যারা পারছে তাদেরকে নিয়েই তারা ব্যস্ত, তবে যারা পারছে না তাদেরকে টেনে তোলার ক্ষেত্রে কেমন জানি অনীহা দেখছিলাম। যেহেতু আমি আগে থেকেই বাচ্চাদের পড়াতাম, তাই আমার মনে হতো যারা একটু দুর্বল, তাদের হাতটাই শক্ত করে ধরা উচিত। মূলত আমার অনেক কিছুই বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল কলেজ জীবনে, একদম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলাম।
তবে আমি একটা সময়ের পরে নিজেই নিজেকে ভেঙেছি আবার নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি। তারপর তো কলেজ জীবনের পরে বিয়ে হয়ে গেল, আমার স্বামী সিঙ্গাপুরে ছিল সেই সময়। অতঃপর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সময় বেশ ঝামেলায় পড়েছিলাম। তবে আমি ভাবছিলাম যে আমি পারবো, আমি হয়তো কিছুটা আটকে যেতে পারি, তবে আমি অতিক্রম করতে পারব, এই সাহসটুকু নিজের ভিতরে ছিল। অতঃপর ওদের ইমিগ্রেশনে গিয়ে আমাকে আটকিয়ে দিয়েছিল, কেননা আমার কাছে রিটার্ন টিকিট ছিলনা। আমি মূলত থাকার জন্য গিয়েছিলাম, যারা মূলত ট্রাভেল ভিসায় যায়, তাদের কাছে আগে থেকেই রিটার্ন টিকিট থাকে, এজন্য তাদের খুব একটা আটকায় না। যেহেতু আমার কাছে রিটার্ন টিকিট ছিল না এবং আমি ওখানে গিয়ে ডিপেন্ডেন্ট ভিসা করব, তাই ওরা আমাকে নানারকম প্রশ্ন করেছিল এবং আমার আঙ্গুলের ছাপ, পায়ের ছাপ, হাতের চাপ মুখের ছাপ নিয়েছিল। অবশেষে আমাকে যেতে দিয়েছিল। এছাড়াও আমার জীবনে আরও একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ঘটে, সেটা হচ্ছে আমি যখন প্রথমবার আমেরিকা যাই তখন, আমার জন্য যে ভিসা এসেছিল সেটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল এবং আপডেট ভিসা আমার মেইলে যেটা এসেছিল সেটা আমি এক্সেস করার সময়ই পাইনি, তার আগেই আমি প্লেনে উঠে গিয়েছিলাম। সেই সময় এয়ারপোর্টগুলোতে এতো ওয়াইফাই কিংবা ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না কিংবা স্মার্টফোন তেমনটা ছিলই না। জাপানিজ এয়ারলাইন্সে আমি উঠেছিলাম, ওঠা মাত্রই তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে আমি কি খাব, মানে ভেজ না ননভেজ। আমি তো ননভেজ বলে দিয়েছি, যার কারণে তারা আমাকে বীফ ও অন্যান্য খবর দিয়েছিল, যেগুলো আমি মুখেই তুলতে পারিনি। ভাগ্যিস পাশে আমার এক পাঞ্জাবি ভদ্রমহিলা বসেছিল বিধায় সে আমার অবস্থা দেখে আমাকে কিছুটা স্ন্যাকস খেতে দিয়েছিল। অতঃপর ১৪ ঘণ্টা জার্নির পরে এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমেই আমি খেয়েছি, কেননা আমার ক্ষুধা লাগলে একদম সবকিছু অস্থির লাগে। অতঃপর সেকেন্ড ফ্লাইট ধরে আমি পৌঁছালাম স্যান হোসেতে। সেখানে পৌঁছে মহাবিপদের সম্মুখীন হলাম, ওখানকার ইমিগ্রেশনের লোকজন আমাকে বলছিল আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ। আপনি এখান থেকেই বাড়ি ফিরে যান। আমি তখন আসলে মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কেননা এতটা পথ জার্নি করে এসেছি তার মধ্যে নির্ঘুম, সব মিলিয়ে এলোমেলো লাগছিল আমার কাছে। অবশেষে সাড়ে তিন ঘন্টার মত আমি এয়ারপোর্টের ভিতরে ছিলাম এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে আমার কাছে আপডেট ভিসা আছে কিন্তু আমি মেইল এক্সেস করতে পারছি না। অতঃপর আমি আমার স্বামীর মুখের বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম সে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে গিয়ে ডেকে আনুন। অবশেষে তারা আমাকে বিশ্বাস করে ফোন করতে দিয়েছিল এবং আমার স্বামী এসে যথাযথ প্রমাণ দিয়ে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে যায়।
আসলে বাঙালি মেয়েরা সব পারে। এটা মজার কথা বলি, যখন আমি গোয়াতে ছিলাম এক বছরের মত, তখন সেখানকার আমি কিছুই চিনতাম না। জীবন আসলে সব কিছু শিখিয়ে দেয়, এর মাঝে তো একদিন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমি নিজেই সেখানকার হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলাম এবং মেয়েকে বাসায় একা রেখে গিয়েছিলাম। যদিও আমি পরবর্তীতে একাই ফিরে এসেছিলাম ঝামেলাহীন ভাবেই। তারপরে তো একদিন মেয়েকে বিড়াল কামড় দিয়েছিল, সেই যাত্রাতেও আমি নিজেই হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম মেয়েকে এবং ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। তারপরে তো পুনেতে চলে আসলাম।
দেখুন লেখালেখি আসলে অনেকটা একাকীত্ব থেকে আসে, আমার জীবনেও হয়তো এমন অনেক কিছুই ছিল, তাই হয়তো লেখালেখির দিকে অগ্রসর হয়েছি। তাছাড়া হোস্টেলে থাকাকালীন সময় লেখালেখি করতাম, আমার বান্ধবী আমাকে উৎসাহিত করেছিল, পরবর্তীতে ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ভালো কবি বন্ধু পেয়ে যাই, যাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং লেখালেখির জগতে এভাবেই ঢুকে যাই। তবে আমি ভীষণ সোজাসাপ্টা মানুষ, এটাই আমার ব্যক্তিত্ব। আমি আসলে তেল দিয়ে কোন কিছু করতে পছন্দ করি না, আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যেটা আমি পাই ,তাতেই আমি খুশি । সত্য কথা বলতে গেলে কি, সাধারণ সাহিত্য জগৎ থেকে স্টিমিট জগৎটা সম্পূর্ণ আলাদা। এজন্য আমি সাথীদির কাছে কৃতজ্ঞ।
তাছাড়া ছোটবেলা থেকে আমি খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি, যেহেতু আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল তাই মোটামুটি একসঙ্গেই সবার থাকা হতো। আমার দাদু আমার বাবাকে তেমন একটা সহযোগিতা করেনি, তবে আমি মনেকরি আমার দাদু যা করেছে ঠিক করেছে, হয়তো ঠিক করেছে বিধায় পরবর্তীতে বাবা নিজের থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
সত্যিকার অর্থে আমার কাছে জীবনটা অনেকটা নদীর মতো, কি পেলাম কি হারালাম এসব নিয়ে এত চিন্তা করি না বরং মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম, সেটাই আমার মূল আত্মতৃপ্তির বিষয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি।
অতিথি ও উপস্থিত দর্শকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।
পুরস্কার বিতরণের সম্পূর্ণ অবদান @rme দাদার
উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বেশ ভালই উপভোগ করেছিল অতিথির জীবনের গল্প। তারা বেশ ভালই প্রশ্ন রেখেছিল এবং উত্তরগুলো খুঁজেও পেয়েছিল, অতিথির গল্পের মাঝে।
সব মিলিয়ে জীবনের গল্প চলছে, একদম দুর্বার গতিতে । পরবর্তীতে আমরা আসছি কিন্তু আপনার দরজায়, আপনি প্রস্তুত তো।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সাথে কথা বলে দারুণ ভালো লেগেছে শুভভাই৷ জীবনের অনেক গল্প বললাম, যা সচরাচর বলি না৷ আসলে না পাওয়াগুলো বা অপছন্দকগুলো অনেকক্ষেত্রে ঋণাত্বক তরঙ্গ তৈরি করে। আর আমি ধনাত্মকের পক্ষপাতি৷ তাই সবেতেই আলো খুঁজি৷ যেমন কাল আপনার সাথে কথা বলে আমি বেশ খুশিতেই রয়েছি। ভাবছি, ভাগ্যিস স্টিমিটে এলাম নইলে শুভভাইয়ের অপূর্ব পরিচালনা ও কথাবার্তা শুনতেই পেতাম না৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জীবন অনেকটা স্পিন বলের মত, কখন কোন দিকে ঘুরতে থাকে তা বলা মুশকিল, আপনার সঙ্গে কথা বলে আমারও বেশ ভালো লেগেছে, শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/sharifShuvo11/status/1802653335993905204?t=o2VUgMbkiPSNhYSns9480Q&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এবারের রবিবারের আড্ডা জীবনের গল্পে সত্যি অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি। নিলাম আপু অনেক সুন্দর করে নিজের সম্পর্কে উপস্থাপন করেছেন। আর উনার গান শুনে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। দারুন হয়েছে এই পোস্ট। প্রতিটি বিষয় সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমরাও বেশ ভালো সময় কাটিয়েছি গতকাল আড্ডায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গতকালকে সত্যি অনেক বেশি আনন্দ করেছিলাম। নিলাম আপুর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলাম এটার মাধ্যমে। রবিবারের আড্ডার মাধ্যমে সত্যি সবার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারছি। আর উনার গাওয়া গান তো আরো বেশি ভালো লেগেছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এই আড্ডাটা সবার মাঝে সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা মানতেই হবে, উনি বেশ ভালো রবীন্দ্র সংগীত গায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গতকালকে রবিবারের আড্ডা প্রোগ্রামটি এককথায় বেশ উপভোগ করেছি। নিলাম আপুর ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আসলে কোনো দেশে গিয়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করার সময় যদি কোনো ঝামেলায় পরতে হয়, তখন খুবই মেজাজ খারাপ হয়। এই ধরনের বাজে অভিজ্ঞতা আমারও রয়েছে। যাইহোক এতো চমৎকার ভাবে এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো যখন হুটহাট সামনে চলে আসে, তখন তা শুনে কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই আমিও আমার জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এরকমভাবে সময় কাটাতে সত্যি অনেক বেশি ভালো লাগে। রবিবারের আড্ডার কারণে একে একে সবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতেছি। আর গতকালকে ঠিক ওরকম ভাবে নিলাম আপুর সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারলাম। নিজের সম্পর্কে তিনি অনেক কিছুই আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, যেটা অনেক বেশি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ পুরোটা সবার মাঝে আবারো উপস্থাপন করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা সত্য যে গতকালকের আয়োজনটা বেশ ভালো ছিল এবং নিলাম আপু বেশ সাবলীল ভাবে গুছিয়ে কথা বলেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নীলম দিদির জীবনের গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।আপু অনেক ভালো মনের মানুষ,তার ব্যক্তিত্ব আমার বেশ ভালো লেগেছিল।আর সবচেয়ে বড় বিষয় দাদা আপুকে ভেরিফায়েড ব্লগার করে দিয়েছেন।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit