পাড়ার মোড়ে যে দোকানটাতে প্রতিদিন চা খেতে খেতে যাই, সেটা লিটন ভাইয়ের দোকান। তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে এই এলাকায় আসার পরেই। ঐ যে রোজ তার দোকানে চা খেতে আসি বিধায় আন্তরিকতাটা একটু বেশি। তবে হুট করে আজ সন্ধ্যার পরে তার দোকান বন্ধ দেখলাম।
অনেককেই জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ আসলে সঠিক উত্তর দিতে পারল না। কারণ এখানে সবারই দোকান ভাসমান। তারপরেও যেহেতু মোখলেস ভাই এখানে প্রতিনিয়ত লিটন ভাইয়ের দোকানের পাশাপাশি দোকান করে,তাই বাধ্য হয়ে মোখলেস ভাইকে লিটন ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। মোখলেস ভাইয়ের সহজ জবাব, গতরাতে লিটন ভাইয়ের মা মারা গিয়েছে। তাই আজ সে দোকান খুলতে পারে নি। কথাটা শুনে বেশ ব্যথিত হলাম।
যাইহোক আজ আর লিটন ভাইয়ের দোকানে চা খাওয়া হলো না। তবে ইচ্ছে করেই একটু যখন সামনের দিকে এগিয়ে চললাম অন্য চায়ের দোকানের উদ্দেশ্য , ফুটপাতের উপর দিয়ে যখন হাঁটছিলাম, হঠাৎই বাল্যবন্ধু আলামিনের সঙ্গে দেখা।
ওর চেহারাটা ঠিক এখনো আগের মতই আছে। যেহেতু দীর্ঘদিন পরে দেখা,তাই ওকে বললাম তোর হাতে সময় থাকলে, তুই আমার সঙ্গে চা খেতে বসতে পারিস। আমি জানতাম না, ওর মনের অবস্থা কি। তবে পক্ষান্তরে যে উত্তরটা এসেছিল, সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ও তো বলেই ফেললো, বন্ধু মনের অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, তোর আঙ্কেল গত সপ্তাহে মারা গিয়েছে, তাই মজলিসের দাওয়াত সবাইকে দিয়ে বেড়াচ্ছি, তুই শুক্রবারে মজলিসে আসিস।
কি হচ্ছে আজ সন্ধ্যেবেলা, যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, তারই কেউ না কেউ বিয়োগ হয়েছে,শুধু এমন খবর শোনা লাগছে । আসলে কাছের মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া অনেকটাই কষ্টদায়ক।
যাইহোক যেহেতু অনেকটা এগিয়ে এসেছি, তাই ফুটপাতের উপরে বসা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকে এক কাপ চা অর্ডার করে ফেললাম ।
খানিক বাদেই চা চলে আসলো, আজকাল একটা বড্ড বদঅভ্যাস আমার হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে চা খাওয়ার সময় মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে চেষ্টা করি সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিডটা একটু দেখার জন্য।
বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই এমনিতেই দুটো মৃত্যুর খবর শুনেছি এবং যা মনটাকে অনেকটাই ভারী করে তুলেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিড চেক করার সময়, সেই ফেলে আসা জীবনের বন্ধু, লিখনের বাবারও মৃত্যুর খবরটা শুনতে হল ।
সেই খোলাহাটি ক্যান্ট পাবলিকে পড়ার সময় থেকে লিখনের সঙ্গে পরিচয়। যদিও পথের দূরত্ব এখন বেশ বেড়ে গিয়েছে। কারণ লিখন আজ ভীষণ ব্যস্ত ওর নিজের জীবন নিয়ে, ওর নিজের পরিবার আছে, বাচ্চা আছে হয়তো আমিও একই রকম জীবনযাপন করছি। তবে আজকাল চাইলেও ওর সঙ্গে দেখা হয় না। শেষ দেখা হয়েছিল সম্ভবত কয়েক বছর আগে স্কুলের পূর্ণমিলনীতে।
তারপরেও টুকটাক কথাবার্তা সোশ্যাল মিডিয়াতেই হত, তবে আজ তার বাবার মৃত্যুর সংবাদটা সে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে এবং সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছে। এর আগের দুটো ঘটনা একদম সামনাসামনি শুনেছি আর তৃতীয়টা জানতে পারলাম সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সবকিছু মিলিয়ে আজ সন্ধ্যাবেলা মনটা একদম বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
তারপরেও এটা চিরন্তন সত্য যে, সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতেই হবে, সেটা আজ অথবা কাল। এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে যেতে হবে, তাই এখানে অহেতুক মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। হয়তো এই বিয়োগ সাময়িক কিছুটা কষ্ট দিচ্ছে, তবে আমি মনেকরি এটাই সত্য, এটাই বাস্তব ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
আসলে ভাইয়া মৃত্যুর খবরটা সত্যিই অনেক কষ্টদায়ক। আপনি তো একেবারে আজকের দিনটা শুধু মৃত্যুর খবর শুনেই চলেছেন। সত্যি চায়ের দোকানের লোকটার মা মারা গিয়েছে শুনে প্রথমে খুবই খারাপ লাগলো। তারপর আবার আপনার বাল্যবন্ধু আলামিনের বাবার মৃত্যুর খবর শুনেও খুবই খারাপ লেগেছে। শেষে আবার লিখনের বাবার খবরটা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলেন। আপনার পোস্ট পড়ে আমার নিজেরই অনেক খারাপ লাগছে। আর আপনি তো সামনাসামনি খবরগুলো শুনেছেন। আমরা কেউ চিরকাল বেঁচে থাকবো না। কিন্তু তারপরেও কেন জানি এই কথাটা খুবই কষ্টদায়ক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাস্তবতা বড্ড কঠিন, তা মেনে নেওয়াই শ্রেয় আপু। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এতগুলো মৃত্যু সংবাদে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক শুভ দা। আসলে স্বজন বিয়োগের শোক তারাই অনুভব করে, যাদের সাথে এগুলো ঘটে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হুম রে ভাই, গতকালের সময়টা বেশ ভালোই ব্যথিত করেছে আমাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একসাথে তিন তিনটি মৃত্যু সংবাদ ৷ সত্যি বলতে আমি নিজেই অবাক হলাম আপনার পোষ্ট টি পড়ে ৷
জি ভাই হঠাৎ মৃত্যু সংবাদ শুনলে যেগুলো মেনে নেওয়া খুবই কষ্ট লাগে ৷ কিন্তু ওই যে নিযতীর লেখা জন্ম যখন নিয়েছি মৃত্যু কে মেনে নিতেই হবে ৷
সন্ধার সময়টা যে অনেক খারাপ কেটেছে ৷ তা বুঝতে দেরি হলো না ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যে জন্মেছে সে মরবেই। যার সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবেই। এটা স্বয়ং ঈশ্বরের শাশ্বত চিরন্তন বিধান। এ অমোঘ বিধানের কোনো পরিবর্তন,পরিবর্ধন নেই। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে চির ও অনড় সত্য হলো মৃত্যু। মৃত্যু অবধারিত তাই একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে কেউ আগে কেউ পড়ে শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এই চিরন্তন সত্য কথাটি জানার পরেও কারো মৃত্যুর সংবাদ পেলে কেন জানি মন থেকে মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়।চা খেতে গিয়ে দুজনের মৃত্যুর সংবাদ শোনা সত্যিই অনেক দুঃখজনক বিষয়।কি আর করবেন মন খারাপ করে লাভ নেই এখন শুধু ঈশ্বরের কাছে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।আমিও ঈশ্বরের কাছে লিটন ভাইয়ের মা,এবং আলিম ভাইয়ের বাবার আত্মার শান্তি কামনা করছি।🙏🙏🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সৃষ্টিকর্তা তাদের ভালো ভাবে যত্নে রাখুক। এমনটা প্রত্যাশা আমিও ব্যক্ত করছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাসা থেকে বের হতেই পরপর তিনজনের মৃত্যুর খবর শুনলেন। আসলে এ বিষয়টা শুনে আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সকলকেই চলে যেতে হবে। তবে আপনার দুজন বন্ধুর বাবাই মারা গিয়েছেন আর এই খবরটা আপনি একসাথে শুনলেন ব্যাপারটা সত্যি খুব দুঃখজনক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই, বাস্তবতা সত্যিই কঠিন। কার কখন জীবনের শেষ মুহূর্ত চলে আসবে সেটা কেউ বলতে পারে না। তাই তো সবসময় মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে থাকাই উত্তম। যাইহোক ভাই আপনি অনেক চমৎকার ভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একসাথে যদি এমন তিনটি মৃত্যু সংবাদ শোনা হয় তাহলে মনটা খারাপ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক দাদা। আমরা যদি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের জীবনে কোন কিছু নিশ্চিত না হলেও, মৃত্যুই একমাত্র জন্মের সাথে সাথে নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই যা নিশ্চিত তা আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে না চাইলেও । সবকিছুর প্রতি এত মায়া বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। এই মায়ার সংসার ছেড়ে সবাইকেই চলে যেতে হবে একদিন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া গত সাপ্তাহ ধরে শুধু মৃত্যু তথা বিয়োগের খবর শুনতেছি। তুরস্ক আর সিরিয়ার ভূমিকম্পে মৃত্যুর মিছিলের কথা শুনতে শুনতে আপনার পোষ্ট পড়ে তিনজনের বিয়োগর কথা পড়লাম। জানিনা কখন আমার বিয়োগ হওয়ার খবর আসে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit