বড্ড দেরিতে খবর পেলাম

in hive-129948 •  2 years ago 

frustrated-g48a96dd3b_1920.jpg
source

রাত তখন দুটো বাজে, এমন অস্থিরতায় আনিসুর সাহেব এর আগে কখনো ভোগে নি। বুকের বাম পাশ থেকে চিনচিন ব্যথাটা যেন ক্রমশ পিঠ ও পেটের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। কোন রকম ওষুধের বক্স থেকে দুটো গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট দ্রুত খেয়ে ফেলল।

ভাবছিল গত সন্ধ্যায় যে তেলে ভাজা খাবার খেয়েছিল, হয়তো সেই কারণে তার গ্যাস্ট্রিকের চাপটা মনে হয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছিল, আনিসুর সাহেবের বুকের ব্যথাটা যেন ক্রমাগত এদিক সেদিক ছড়িয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তার বুকটা যেন ছিঁড়ে যাবে।

এমনটা তো তার আগে কখনো হয়নি, যদিও দীর্ঘ সময় থেকে সে উচ্চ রক্তচাপের ঔষুধ সেবন করে, তবে এমন ঘটনা তার এই প্রথম। বিগত সময়ে যদিও সে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিল তার উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে, তখনই সেই ডাক্তার বলেছিল, সময় সুযোগ করে একটা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নেওয়ার জন্য। তবে এই সময়টাই কোনভাবে আনিসুর সাহেব বের করতে পারছিল না।

কিছুদিন আগেই তার চাকরি জীবন শেষ হয়েছে। সে এখন রিটায়ার্ড জীবনযাপন করেছে। টুকটাক পুরো দিনটা তার বাড়িতেই সময় কেটে যায়। আর এইভাবেই সে তার রিটায়ার্ড জীবনের সময় গুলো অতিবাহিত করছিল। তবে হুটকরে বুক ব্যাথাটা যেন তার জীবনটাকে একদম দুর্বিষহ করে ফেলেছে।

মাঝরাতে এই মফস্বল এলাকায়, ডাক্তার পাওয়া বেশ মুশকিল। তবে বুকের ব্যথাটা তার এতোটাই তীব্র হয়েছে যে,কোনভাবেই যেন আর বাড়িতে টিকে থাকতে পারছিল না। তার মেজো ছেলে তাকে বহুকষ্টে উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছিল। তবে তাৎক্ষণিক কর্তব্যরত ডাক্তার আনিসুর সাহেবের অবস্থা দেখে, কোনোভাবেই সেখানে রাখতে রাজি নয় এবং দ্রুত বগুড়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল।

ইসিজি মনিটরে তখনও বারবার লম্বা লম্বা দাগ উঠা-নামা করছিল। স্বাধীনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার বাবার দিকে। বেশ কয়েকটা দিন হলো তার বাবা আইসিইউ তে ভর্তি হয়ে আছে। তার বাবার হৃদপিন্ডে যে ব্লক ধরা পড়েছিল, তা মোটামুটি এখন অনেকটাই ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন হৃদপিণ্ডে বেশ ভালই রক্ত চলাচল করছে। তবে ডাক্তার বলে দিয়েছে, কম করে হলেও চার সপ্তাহের মতো তাকে আইসিইউ তে থাকতে হবে।

সেই মফস্বল এলাকা থেকে সরাসরি বগুড়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে, ততক্ষণে দুই তিনবার যাত্রাপথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল আনিসুর সাহেব। বগুড়া মেডিকেলে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে,তার খুব একটা উন্নতি হয়নি। তবে সেখানেই মূলত প্রাথমিকভাবে ডাক্তার শনাক্ত করেছিল তার হৃদপিন্ডে ব্লক আছে।

অবশেষে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের অনুমতি সাপেক্ষে, বিশেষজ্ঞ হৃদরোগ ডাক্তারের মাধ্যমেই তার হৃদপিন্ডের অপারেশন করা হয়েছে এবং ব্লক ক্লিয়ার করা হয়েছে।

স্বাধীন আমার বাল্যবন্ধু। ওদের বাসায় ছোট বেলা থেকেই আমি কারণে অকারণে বহু গিয়েছি। ওর বাবা বেশ স্নেহ করতো আমাকে।

আজ যখন আমি খবরটা শুনলাম, তখন নিজের কাছে নিজেকে বেশ দোষী মনে হচ্ছিল। যে মানুষটা শৈশবে আমাকে এতোটা পরিমাণ স্নেহ করতো, তার এই কঠিন সময়ে তাকে আমি একটি বারের জন্য দেখতে যেতে পারিনি এবং স্বাধীনের সঙ্গেও ঠিক সেই ভাবে যোগাযোগ করতে পারি নি।

আজ অনেকটা দিন পরে যখন স্বাধীনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন হঠাৎই ওর বাবার ঘটনাটা শুনলাম। ভদ্রলোকের চেহারাটা বারবার আমার চোখের সামনে ভাসছিল। মুহূর্তেই চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে, খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাকে।

যেহেতু অপারেশন সফলভাবে হয়েছে আর কদিন পরেই হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে, তাই আপাতত দুশ্চিন্তার পরিমাণটা কিছুটা কমিয়ে দিলাম। যদিও বড্ড দেরিতে খবরটা শুনেছি, তাই কিছুটা খারাপ লাগছিল। তবে তাকে দেখার ইচ্ছা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়তো সে বাড়িতে ফিরলেই তাকে দেখতে যাবে।

Banner-8.png

ডিসকর্ড লিংক

https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার বন্ধুর বাবা এখন ভালো আছেন জেনে ভালো লাগলো। আমি তো প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। আসলে সঠিক সময় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলেই তিনি এখন বিপদমুক্ত আছেন। আশা করছি তিনি বাড়ি ফিরলে আপনি সময় করে উনাকে গিয়ে দেখে আসবেন। আসলে অনেক সময় অনেক কাছের মানুষের খবর রাখা হয় না। হঠাৎ করে সেই খারাপ খবর গুলো শুনলে সত্যি অনেক খারাপ লাগে।

হুম আপু দেখা করার বড্ড ইচ্ছে জেগেছে ভদ্রলোক কে। বাসায় ফেরত আসলেই দেখা করতে যাবো।

যাক আপনার বন্ধু স্বাধীনের বাবা অবশেষে সুস্থ হয়েছেন,তাকে রিলিজ দেওয়া হবে।আসলে সময় সুযোগের অভাবে অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়ে ওঠে না।এতো বড় একটা পৃথিবী এখানে অনেকেই আমাদের আপন কিন্তু সবার সাথে যোগাযোগ নেই।আপনার ক্ষেত্রেও তাই ভাইয়া এতে নিজেকে দোষী মনে করার কিছু নেই।আপনার তার জন্য খারাপ লেগেছে,মনে আপনি তাকে ভুলে যাননি।ভালো লেগেছে ব্লগটি ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ভাইয়া, আপনার বন্ধুর বাবার সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে ঠিক ঐরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল আমার অর্ধাঙ্গিনীর কলিগের হাজবেন্ডের সাথে। পুরো ঘটনা যেন হুবহু মিলে গেল। তাই আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী শেষ পর্যন্ত ঢাকা গিয়ে সেই দুলা ভাইকে দেখে এসেছিলাম। যাক সেসব কথা, বর্তমানে আপনার বন্ধুর বাবা সুস্থ আছেন এটাই পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যেহেতু ছোটবেলায় আপনার বন্ধুর বাবা আপনাকে খুবই স্নেহ করত, তাই হৃদয়ের কোণে তার জন্য ভালোবাসা জমা ছিল। আর সেই ভালোবাসার কারণেই হয়তো আপনার চোখে অশ্রু এসেছিল। যাইহোক ভাইয়া, আপনার বন্ধুর বাবা ঢাকা থেকে ফিরে আসলে, একদিন সময় সুযোগ করে দেখে আসবেন। ধন্যবাদ

ঘটনা গুলো এমনি ভাই, শুধুমাত্র স্থান কাল পাত্র ভেদে। ধন্যবাদ আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।