সময়ের ব্যবধান

in hive-129948 •  3 days ago 

1000029946.jpg
source

সাত বছরের ডাক্তারি প্র্যাকটিস ক্যারিয়ারে, হাতেগোনা কয়েকটা খুবই খারাপ কেস দেখে ছিলাম। যেহেতু দন্ত চিকিৎসক ছিলাম, তাই খারাপ কেস বলতে মুখের ক্যান্সারের ভুক্তভোগী রোগীদের কথাই বুঝিয়েছি।

শহরের চেম্বারে যে রোগী গুলো দেখেছিলাম, তাদের কথা খুব একটা বেশি মনে নেই। তবে প্র্যাকটিস ছেড়ে দেওয়ার শেষ সময়ের দিকে গ্রামের চেম্বারে এরকম একটা খারাপ কেসের রোগী দেখেছিলাম। মূলত অজ্ঞতার কারণেই এই সমস্যা বাধিয়ে ফেলেছিল সেই রোগী।

যেহেতু গ্রামের চেম্বার এলাকা সংলগ্নই সেই রোগীর বাড়ি ছিল, তাই মাঝে মাঝেই আসতো আমার কাছে। ইনফেকশন গুলো এত দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছিল যে, কোনভাবেই তা সারানো যাচ্ছিল না উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে নানারকম ওষুধ খেয়ে খেয়ে তার অবস্থা এমনটাই নাজুক হয়ে গিয়েছিল যে, তার শরীরে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছিল না। তাছাড়া সে পান-সুপারি খাওয়া ছাড়তেই পারছিল না। মুখে প্রচুর ইনফেকশন থাকা অবস্থাতেও সে প্রতিনিয়ত পান খেয়েই যাচ্ছিল।

কিছু বিষয়ে শুরুতেই আন্দাজ করা যায়, তার বিষয়টা সেই সময়ই বুঝতে পেরেছিলাম তবে তাকে আগে থেকেই কিছু বলিনি। শুধু মানসিক সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম আপনার চিকিৎসা এই মফস্বলে নেই। যদি সম্ভব হয় মেডিকেল কলেজে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

দিনশেষে আসলে এদের ঠিকঠাক মতো খাবারই জোটে না, তার উপরে মুখের এত বড় চিকিৎসার জন্য এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করবে , এভাবেই যেন গড়িমসি করে সময় অতিবাহিত করছিল। তবে একটা সময়ের পরে শেষ যেবার রোগীটা চেম্বারে এসেছিল, তখন সে কিছুতেই আর মুখে খেতে পারছিল না কোন খাবার, শুকিয়ে গিয়েছিল তার পুরো শরীরটা।

সেবারেও বলেছিলাম, আমার কাছে সত্যিই আপনার কোন চিকিৎসা নেই। দয়াকরে এখনো মেডিকেল কলেজে যান। কে শোনে কার কথা, সেবারেও তিনি আমার কথা শোনে নি। মুখের ক্যান্সার কিন্তু খুবই ভয়ানক, যদি শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা নেওয়া যায়, তাহলে তাও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে অবহেলা করলে শেষ পরিণতি বড্ড ভয়ঙ্কর হয়ে যায়।

রোগী ভীষণ শারীরিক জটিলতায় ভুগছিল, তারপরেও বড্ড সাবলীল ভাবে বলছিল, ধুর ডাক্তার বাবু, এখানে ওখানে যেতে পারব না। একদিন তো চলেই যেতে হবে, তার জন্য কিসের এতো তাড়াহুড়ো। যখন কেউ নিজের থেকে এমন কথা বলে, তখন আর তাকে কিছু বলার থাকে না।

কয়েকদিন যেতে না যেতেই শুনলাম, রোগীর করুণ দশা। মৃত্যুর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল, মানে শুরুতেই যেমনটা আন্দাজ করেছিলাম, সেটাই হলো তবে কিছু সময়ের ব্যবধানে ।

1000020537.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আসলে ভাইয়া গ্রামের মানুষ গুলো একটু নিজের প্রতি উদাসীনতায় থাকে।তাদের মুখে যাইহোক পানের নেশা তাদের পিছু ছারবে না।খারাল লাগলো শেষে এসে সময়ের ব্যবধানে নিজেকেই হারিয়ে ফেললো।

জীবনটাই তো এরকম, কখন কে কিভাবে হারিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল, তবে সচেতনতা বড্ড জরুরী।

বেশ খারাপ লাগলো লোকটির কথা শুনে।আসলে গ্রামের মানুষ তো আর যাই হোক মরে গেলে মরে যাবে তাও পান খাওয়া ছাড়বে না।আসলেই যারা ঠিক মত খেতেই পায় না সে আবার কি করে চিকিৎসা করাবে।মরতে তো হবেই।এই পৃথিবীতে মানুষ আসলেই অসহায়। ধন্যবাদ

গ্রামের মানুষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, তারা এখনো সচেতন না। যার কারণেই এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।

গ্রামের কিছু কিছু মানুষ আসলে এমনই। এই যে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো,তখনও গ্রামের কিছু কিছু মানুষ একেবারেই সতর্ক ছিলো না। মাস্ক ব্যবহার করতো না,এমনকি কেউ মাস্ক ব্যবহার করতে বললে বলতো, মৃত্যু এভাবে লেখা থাকলে এভাবেই মারা যাবো। যাইহোক লোকটার জন্য খুব খারাপ লাগলো। তবে সেক্ষেত্রে আপনার কিছুই করার ছিলো না। কারণ কন্ডিশন দেখে আপনি তো আগেই বলে দিয়েছিলেন মেডিকেল কলেজে যাওয়ার জন্য। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

সচেতনতা বৃদ্ধি বড্ড জরুরী, তবে গ্রামের মানুষজনের জন্য বড্ড খারাপ লাগে মাঝে মাঝে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের অবস্থা এমন। তারা নিজের শরীর অবস্থাকে কখনও গুরুত্ব দেয় না। তাদের অবস্থা টা এমন যে যা হবার হবে দেখা যাবে। কিন্তু এটা পরবর্তীতে এইরকম মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত সচেতনতার অভাব অর্থের অভাবে এই ঘটনা গুলো ঘটে।