বাবুর ছয় মাস বছর বয়স পর্যন্ত আমার শাশুড়ি আমাদের বাসাতেই ছিল। তবে একটা সময়ের পরে বাবু যখন বেড়ে উঠছিল, তখন আমার শাশুড়ির সংসারের কথা চিন্তা করেই মোটামুটি তাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ঠিক সেই সময়েই আমাদের বাসার নতুন অতিথি হিসেবে এসেছিল জোসনা খালা।
৫০ ঊর্ধ্ব বয়স, শারীরিক গঠন হালকা পাতলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে প্রতিনিয়ত বেশ কঠিন শারীরিক পরিশ্রম যায় তার উপর দিয়ে। কিন্তু তারপরেও সে কাজ করতে চায়। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে কাজে রাখতে হয়েছিল। তার অবশ্য তেমন কোন কিছু চাওয়ার ছিলনা, শুধু সকালবেলা করে কাজ শেষে খেতে দিতে হবে এবং মাস শেষে মাইনে। ঘন্টা খানিকের মতো কাজ করতো সে আমাদের বাসায়। যেমন ঘর মোছা, কাপড় ধোঁয়া ও হীরাকে রান্নার কাজে টুকটাক সহযোগিতা করা।
যাইহোক এভাবেই কয়েকটা মাস কেটে গিয়েছিল আর জোসনা খালার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছিল। তবে খুব খারাপ লাগতো, যখন তার কাছ থেকে কিছু কথা শুনতাম মানে অন্য যে সকল বাসায় কাজ করতো তাদের আচার-আচরণের কথা যখন সে বলতো সেগুলো শুনে।
এমনও আচরণ নাকি করতো, যেটা অনেকটাই পাশবিক। পারলে পুরো মাসের কাজ যেন একবারে তারা করে নিতে চাইতো। অথচ বয়সে যে সে বৃদ্ধা সেদিকে কারোই যেন কোন খেয়াল থাকতো না।
আসলে জায়গা ভেদে একেক জনের জীবন-জীবিকা ও মানসিকতা একেক রকম। যাইহোক জোসনা খালা আসলে পেটের তাগিদে এই ভবনের অনেকের বাসায় কাজ করতো। একটা সময় পরে, আমি স্বচক্ষে তার হাতে ঘা দেখেছি এবং তার শরীরে ক্রমাগত চুলকানি হয়েছিল। আসলে অতিরিক্ত নোংরা পানি ধরে ধরে তার এই অবস্থা হয়েছিল।
হিরা ও আমি বেশ কয়েকবার জোসনা খালাকে বলেছিলাম, সে যেন অন্যত্র কাজ করে। কারণ নিজের শারীরিক অবস্থা ভালো না। কারণ সে অন্য বাসায় কাজ করে এসে তার শরীরের এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যেটা দেখতেও আমার সেসময় বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তখন তো ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। স্যাম্পলের ওষুধ যেগুলো ভিজিটে পেতাম, সেগুলোও তাকে বেশ কয়েকবার দিয়েছিলাম। কারণ হাজার হলেও সে মানুষ, সবার আগে তার সুস্থতা, তারপরে কাজ।
যদিও পরবর্তীতে তাকে অনেক বুঝিয়ে আমাদের বাসায় কাজ করতে আসতে নিষেধ করেছিলাম এবং সে একটা সময় গিয়ে রাজিও হয়েছিল, তবে মন খারাপ করেছিল। তারপরেও আমার কিছু করার ছিল না।
যদিও পরবর্তীতে তার বদলে সোহাগী দিদি আমাদের বাসায় এসেছে এবং সত্য কথা বলতে গেলে কি, জোসনা খালার পরবর্তীতে এতটাই শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, তাকে এ বাসার কেউ আর কাজেই রাখেনি। যাইহোক আজ আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম সকালবেলার দিকে, তখন সে আমাদের বাসায় এসেছিল।
আন্তরিকতার খাতিরে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কারণ জোসনা খোলা এক সময় আমার বাবুর দেখাশুনা করেছে এবং সে আমাদের টুকটাক কাজ করে দিয়ে ছিল, সেটা আমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না।
সে আসলে কি জন্য এসেছে, তা আমি জানি। আমি বুঝতে পেরেছি ঈদের আগে সে কিছু বকশিস নিতে চায়। সে এসেই বলছিল যে, অমুক বাসার লোক এতো দিয়েছে, তমুকরা সেটা দিয়েছে মানে অনেকেই তাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তবে সত্য কথা বলতে গেলে কি, সে আসলে যেভাবে বলছে, এতটা কিছু সে পায়নি। সে আসলে আমাদের কাছ থেকে একটু বাড়তি পাওয়ার জন্য এই কথাগুলো বলছে, আমি ব্যাপারটা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছি।
তার আসলে কোন দোষ নেই। কারণ এই ইদে সেও হয়তো চেষ্টা করবে যে তার পরিবারকে নিয়ে বেশ ভালো একটু সময় কাটানোর জন্য। তাই একটু-আধটু কথা বাড়িয়ে বলছে, যা নিতান্তই স্বাভাবিক। তবে তাকে ডেকে বললাম, জোসনা খালা তোমার এখন কি খবর, এখন তোমার হাতগুলো দেখি। দেখলাম আগের থেকে অনেকটাই ঠিক হয়েছে। তবে তার কোমড় ব্যাথা আগের মতোই আছে।
দেখো খালা,আমি নিজেই যতো সমস্যার ভিতরে জড়িয়ে আছি,তারপরেও সকাল-সকাল তুমি এসেছো তোমাকে তো আমি খালি হাতে ফিরিয়ে দেবো না। যেহেতু তোমাকে অনেকেই অনেক কিছু দিয়েছে, তাই আর নতুন কাপড় কেনার পয়সা তোমাকে দিতে পারবো না। তবে তোমার কোমড় ব্যাথার জন্য যে ব্যাথার ওষুধ ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে, সেটা কেনার পয়সা দিয়ে দিচ্ছি। ওষুধ ঠিকমতো খেয়ে নিও।
বেঁচে থাকলে জীবনে বহু উৎসব পালন করতে পারবে। তবে তার আগে তোমার শারীরিক সুস্থতা খুবই জরুরী । শরীরের উপর থেকে চাপ কমাও, আগে সুস্থ হও, তারপর আবার কাজে মনোযোগ দিও। ভালো থেকো তুমি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
সবাই যদি আপনার মত সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিত তাহলে তো কোনো কথাই ছিল না ভাই। যাইহোক এই ঈদ ভ্রাতৃত্বের হোক সাম্যের হোক এবং জোসনা খালাদের জন্য খুশি বয়ে আনুক। 🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি আহামরি কিছু করি নি রে ভাই, আমি শুধু তাকে ওষুধ কেনার পয়সা দিয়েছি। কারণ তার কাপড়ের থেকে ওষুধ খাওয়াটা খুবই জরুরী।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার মত সবাই যদি মানবিক গুণে মানুষ হতো তাহলে জোসনা খালার মত মানুষকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কাজ করতে হত না। বরঞ্চ সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত। আসলে এসব অসহায় বয়স্ক মানুষদেরকে পরিশ্রম করতে দেখলে অনেক খারাপ লাগে। হয়তো তাদেরকে সাহায্য করার মত সামর্থ্য নেই আমাদের। তবে আমরা যে যার জায়গা থেকে যতটুকু পারি এসব অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মানুষ মানুষের জন্য, চাইলেই আমার মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে পারি সহজেই। ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জীবন জীবিকা তাগিদে কত কিছুই না করতে হয় ৷ জসনা খালা ঈদের জন্য এসেছে কিছু পাবার আশায় ৷ তবে একটা জিনিস ভালো লাগলো সেটা হলো তাকে ওষুধ দিয়েছেন ৷খুব ভালো কাজ করছেন ৷ কারন সব কিছুর আগে সুস্থ তা খুবই জরুরি ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগে জীবন তারপরে অন্য কিছু। সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরী।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ সুন্দর একটি পোস্ট দেলেন। সমাজে কত যে এমন খালা আছে তা আর গুনে শেষ করা যাবে না। তবে সমাজের বয়স্ক লোকদের কাজ করে খেতে দেখলে কিন্তু আমি বেশ কষ্ট পাই। সমাজের বৃত্তবানরা যদি এসব খালাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয় তাহলে হয়তো অনেক বৃদ্ধ আর অভাবী মানুষ একটুকু শান্তি পায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
চেষ্টা করুন আপনার পাশে থাকা দরিদ্র মানুষের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit