বহুদিন পরে খালেক মিয়ার সঙ্গে || @shy-fox 10% beneficiary

in hive-129948 •  2 years ago 

মনে আছে খালেক মিয়ার কথা। যার সঙ্গে আমার দীর্ঘ দুটো বছর সময় কেটেছিল । যখন আমি গ্রামের চেম্বারে প্র্যাকটিস করতাম তখন তিনি আমার রিসিপশনিস্ট ছিলেন । বলতে গেলে সেই সময় তিনি আমাকে দেখাশোনা করত এবং মোটামুটি চেম্বারের ছোটছোট কাজ গুলো করতেন ।

20220910_115806.jpg

দীর্ঘদিন হলো যেহেতু গ্রামে যাওয়া হয়না । তাই মোটামুটি খালেক মিয়ার সঙ্গে আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছিল । আমি ব্যাপারটা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিলাম । তবে কিছুই করার ছিল না আমার । তারপরেও চেষ্টা করছিলাম সম্পর্ক গুলোকে জীবিত রাখার জন্য ।

যাইহোক সে যেহেতু আমার সম্পর্কে জ্যাঠা শ্বশুর হচ্ছিল , সেই সূত্রেই চেম্বারের দায়িত্বটা তিনি নিজেই সেই সময় নিয়েছিলেন । এখন তো আর চেম্বার করি না । সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছি , তাই চাইলেও আর আগের মতো সব কিছু হয়ে ওঠে না । তাই ক্রমাগত সম্পর্কটাতে যেন দূরত্বের ছাপ পরে যাচ্ছিল, হয়তো পৃথিবীর নিয়মটাই এমন ।

20220910_115820.jpg

বেশ খারাপ লেগেছিল চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ার সময় । কারণ এখন দুজনার গন্তব্য সম্পূর্ণ আলাদা । দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করা ও একসঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছিলাম । এখন সেগুলো শুধুইমাত্র অতীত । গতকাল গ্রামে এসেছি আর এসেই মূলত চেষ্টা করেছি খালেক মিয়ার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য । কারণ তার কাছে আমি ঋণী ।

যখন তার বাড়িতে গিয়েছি সে দেখি একদম সম্পূর্ণ ব্যস্ত সময় পার করছে । কারণ সে চেষ্টা করছে তার গরুর খামারে কাজ করার জন্য । যদিও সে চেম্বারে থাকা অবস্থাতেই বেশ কিছু পয়সা কর্জ নিয়েছিল আমার কাছ থেকে যদিও সেগুলো পরে পরিশোধ করেছিল । মূলত সেই সময় সে গরু কিনে ছিল । যদিও ব্যাপারগুলো সেই সময় শুনেছিলাম তবে দেখতে আসতে পারিনি ।

20220910_115339.jpg

আজকে দেখলাম বেশ ভালোই লাগলো । আগের থেকে তার বয়সের ছাপটাও বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে আর এখন তো তার কাজের ধারা অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে । আগে চেম্বারে শুয়ে বসে থাকতো আর এখন প্রতিনিয়ত সে নিজেই খামারে নিজের মতো করে সময় ব্যয় করছে । এটা একদিক থেকে অবশ্য ভালো কারণ বেশ শারীরিক পরিশ্রম হয় । সারাদিন খামারে কাজ করার পর মূলত বিকেল বেলায় বাজারে যায় দুধ বিক্রি করতে । প্রতিদিন প্রায় আট থেকে দশ লিটার দুধ বিক্রি করে । এখন তো দুধের যে দাম, তাতে বেশ ভালো ভাবেই চলে যায় খালেক মিয়ার সংসার ।

একটা জিনিস বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছি, খালেক মিয়ার কাছে যখন দুপুরবেলার দিকে আমি গিয়েছি সে আমাকে দেখেই অনেকটা আনন্দিত হয়েছিল। সে তার খামারের কাজ ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছে এবং চেষ্টা করছে খাতির করার জন্য । আমি বললাম, আপনি তো বেড়াতেই যান না । ভুলেই গিয়েছেন আমাকে । কোন খোঁজখবরও নেন না । তাই আমি আপনাকে দেখতেই চলে এসেছি ।

আসলে তার যে পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম যায় এতে আসলে তার পক্ষে আমার খোঁজ-খবর নেওয়া কিছুটা কষ্টকর। এটা আমি আসলে দেখেই বুঝতে পেরেছি । এই মানুষগুলোর জীবন সত্যিই অনেকটা আলাদা । প্রচুর পরিশ্রম করে তারপরে পয়সা আসে তাদের কাছে ।

20220910_115535.jpg

দুটো বছর বেশ আরামেই ছিলাম আমরা । তার সঙ্গে বেশ ভালোই সময় কেটেছিল বিকেল বেলা করে । রোজ বিকেলে রোগী দেখতে যেতাম চেম্বারে তখন খালেক মিয়ার সঙ্গে গল্প হতো । বিগত সময়েরও তাকে নিয়ে লিখেছিলাম আমি ।

সে যখন আমার কাছ থেকে পয়সা নিয়েছিল তখন মূলত মাঝারি সাইজের গরু কিনেছিল । দীর্ঘদিন লালিত পালিত করার কারণে এখন সেগুলো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে । হয়তো সেই সময় আমার পয়সা গুলো তার ভালোই কাজে লেগেছিল । এখনতো মোটামুটি খামারটাও বেশ পরিপক্ক হয়ে গিয়েছে । হয়তো এইদিকে আমারও চেম্বারটা বন্ধ , আমিও নিজেকে অনেকটাই পরিবর্তন করে ফেলেছি কর্মের দিক থেকে, তারপরেও দুজনেই বেঁচে আছি এই উর্ধগতির দ্রব্য মূল্যের বাজারে।

আমাকে তো দুপুর বেলা তার বাড়ি থেকে না খেয়ে আসতেই দেবে না । ইচ্ছা করেই দাওয়াত গ্রহণ করলাম। বহুদিন পরে তার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোই লাগছিল। তার কার্যকলাপ দেখে বেশ একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চারণ হলো নিজের কাছে । তাকে তো এক ফাঁকে বলেই ফেললাম হয়তো যখন বুড়ো হয়ে যাব , তখন আপনার মত খামার দিব আর এভাবেই নিজেকে ব্যস্ত রাখবো ।

খালেক মিয়ার সঙ্গে আমার বয়সের তফাৎ অনেক । তবে আমাদের যে একটা আত্মারটান আছে, সেখানে অবশ্য বয়স বা অন্য কোন কিছু দিয়ে বাঁধা দেওয়া যাবে না । যদিও চেম্বার বন্ধের পরে প্রথমদিকে অনেকটাই তাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম । তবে আজকে যখন তাকে স্বচক্ষে দেখলাম এবং তার জীবিকা সম্পর্কে জানলাম , তখন মোটামুটি বেশ হালকা বোধ করলাম নিজের থেকে ।

Banner-3.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমি আপনার চেম্বারের লাষ্ট পোষ্টে খালেক মিয়ার কথা পড়ে ছিলাম। দেখার অনেক ইচ্ছা হয়েছিল লোকটাকে,কিন্তুু আপনি তো ঐদিন শুধু আপনার আর আপনার বন্ধুর ছবি সেয়ার করেছিলেন। আজ দেখে ভালেই লাগলো। আপনার থেকে টাকা নিয়ে গরুর খামার করেছে,টাকা গুলো কাজে লাগিয়েছে। আর আপনি তো এখন শশুড় বাড়িতে ভাল ভাল খাবার খাচ্ছেন। ভালই সময় কাটতেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

মোটামোটি কেটে যাচ্ছে সময় ভাই । তবে খালেক মিয়ার প্রতি আমি নিজেই বেশ কৃতজ্ঞ, দুটো বছর তো দীর্ঘ সময় ।

ভাইয়া আমি জানতাম না আপনি চেম্বার ছেড়ে দিয়েছেন। মনে হচ্ছে আপনার উপর বেশি চাপ কাজের তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ‌ এভাবে একজনের সাথে অনেকদিন কাজ করলে অটোমেটিক্যালি একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। যাই হোক আপনার জ্যাঠা শ্বশুরের বর্তমান অবস্থা ভালো দেখে প্রশান্তি পেয়েছেন। পোস্টটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া।

তিন মাসের মতো হয়ে গেল আপু চেম্বার ছেড়ে দেওয়ার। লেখালেখি করছি জীবন দেখছি যাচ্ছে সময় ।

🙏🙏

কিছু কিছু মানুষের সাথে সত্যিই আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়। অনেকদিন পর খালেক চাচাকে দেখে ভালই লাগলো। আপনি গ্রামে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং তার সাথে সময় কাটিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। এই মানুষটি আপনার অনেকদিনের সঙ্গী ছিল। বেঁচে থাকার জন্য সবাই প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। তাইতো খালেক চাচাও নিজের মতো করে লড়াই করে যাচ্ছে। যাই হোক ভালো থাকুক সবাই এই কামনা করি।

অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম তার ব্যবহারে , বেশ খাতির করেছিলেন।

ভাইয়া খালেক মিয়ার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগল। আসলে কথায় আছে না চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়।ক্রমাগত সম্পর্কটাতে যেন দূরত্বের ছাপ পরে যায় হয়তো পৃথিবীর নিয়মটাই এমন ।যাইহোক বর্তমান খালেক মিয়ার অবস্থা ভালো বলে অনেক ভালো লেগেছে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ গল্পটা শেয়ার করার জন্য।

কিছুই করার নেই আপু জীবন এমনি খালি থেমে থেমে রুপ বদলায় ।

আপনার থেকে খালেক আঙ্কেলের অনেক গল্প শুনেছি। তবে আপনার দেখা আজকে খালেক চাচার অবস্থান দেখে সত্যিই আনন্দ অনুভব করছি। আর আপনাকে দেখেও খালেক চাচা কতটা খুশি হয়েছে সেটাও অনুভব করছি। তবে এটা অন্তত বিশ্বাস করতে হয়, আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকটা মানুষকে যে কোনভাবে না কোন ভাবেই রিজিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অনেকদিন পর আপনাকে এবং খালেক চাচাকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের মাঝে আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করার জন্য, আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা ও অভিনন্দন।

সবারই একটা না একটা ব্যবস্থা হয়ে যায় , শুধুমাত্র সময়ের ব্যবধানে ।

ভাই অনেক দিন পর আপনি খালেক মিয়ার সাথে দেখা করলেন ৷যে মানুষটার সাথে একসময় আপনি দুটি বছর কেটেছিলেন ৷কিন্তু সময়ের তাগিদে দুই জন দুই দিকে ৷দেখে ভালো লাগলো এই বয়সেও তিনি খামার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে ৷আসলে কর্ম সবাইকে করতে হবে ৷
আর বয়সটা যেমনই হোক যে মানুষ গুলোর সাথে আত্মার টান এগুলো থেকেই যায় ৷

আমি তো তেমনটাই ভাবি ভাই বয়স যেমনই হোক না কেন , সম্পর্ক গুলো টিকে থাকুক সতেজ ভাবে ।

ভাইয়া আপনার লেখা পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম খালেক মিয়ার সাথে আপনার আত্মার দারুন একটি টান রয়েছে এবং আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। যাহোক অনেক পরিশ্রমের মাঝেও খালেক মিয়া যে আপনাকে অনেক খাতির করার চেষ্টা করেছে সেটা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো আমার। আসলে ভাইয়া কর্ম এবং সময় মানুষকে দূরে থাকতে বাধ্য করলেও কাছের মানুষকে মন থেকে কখনো দূরে রাখা সম্ভব নয়। ভাইয়া আপনার এবং খালেক মিয়ার সম্পর্ক চির অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক এটাই আমি প্রত্যাশা করি।

হুম ঐ দিন বেশ ভালোই খাতির করেছিল খালেক মিয়া ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে কাছের মানুষের সঙ্গে ও দূরত্ব তৈরি হয়।যাইহোক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মের ও পরিবর্তন হয়।তাছাড়া আপনার জ্যাঠা শ্বশুরের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জেনে ভালোই লাগছে।গরু পুষতে আমারও বেশ ভালো লাগে পূর্বে ছিল আমাদের বাড়িতে এখন নেই।ধন্যবাদ ভাইয়া।

কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যেটা মনের মধ্যে আজীবন লালন করা যায়। সেখানে স্বার্থের কোন দেন দরবার থাকেনা। ওই সময় আপনার চেম্বার ছেড়ে দেওয়ার পোস্টটি পড়ে। আমি নিজেও একবার হলেও খালেক চাচার কথা চিন্তা করেছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম এই বয়সে তিনি কি করবেন। আজকে আবারো ওনার গরুর খামারের কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। খালেক চাচাকে দেখে আমাদের সকলেরই এই শিক্ষা নেয়া উচিত। কখনো অলস বসে না থেকে নিজেকে কর্মমুখর রাখা। এতদিন পর আপনি উনার খোঁজখবর নিতে যাওয়াতে নিশ্চই অনেক খুশি হয়েছিলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।