শায়ানের প্রথম ঈদ || @shy-fox 10% beneficiary

দেখতে দেখতে বেটার বয়স নয় মাসে পড়ল । বাপজান আমার বেশ বড় হয়ে উঠছে, মানিয়ে নিয়ে ফেলছে পরিবেশ প্রকৃতির সঙ্গে । ওকে যত দেখি ততই ভালো লাগে। হয়তো এটা অতিরিক্ত মায়ার কারণে । কারণ ও আমার এক মাত্র ছেলে, আমার কলিজার টুকরা ।

ওকে নিয়ে আমার মাঝে মাঝে বড্ড চিন্তা হয় । এই দূষণযুক্ত পরিবেশে কিভাবে ওকে বেড়ে তুলব, এটা নিয়ে ভাবলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলি । খুব চেষ্টা করছি, ডুয়েল সিটিজেনশিপ নেওয়ার জন্য । হয়তো এদেশে কালেভদ্রে বেড়াতে আসবো নতুবা অন্যত্র কোন জায়গায় নিজস্ব একটা আবাসন ব্যবস্থা করে ফেলবো ।

আশেপাশে যখনই আমি একটু চোখ খুলে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করি, তখনই এই দূষণযুক্ত পরিবেশ ও এই নোংরা সামাজিক ব্যবস্থা আমাকে মানসিকভাবে বারবার আঘাত করে । আমি ওর বাবা । আমি এই প্রতিকূল অবস্থার ভিতরে নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত করে মানিয়ে নিয়েছি । তবে আমি চাইনা ও এখানে বেড়ে উঠুক । এটা আমি মন থেকেই চাই না ।

আমি এই দেশের কোন দোষ দিব না । হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছুই আজ আমার বিপরীতে চলে গিয়েছে । আমি মুক্তমনা মানুষ, মুক্তভাবে বাঁচতে চাই । অনেকটা নিজের মতো করে । তাই হয়তো অবলীলায় কথাগুলো বলে ফেলেলাম নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ।

ঘুম থেকে উঠেই দেখি,বেটা আমার লাল পাঞ্জাবী পড়েছে সঙ্গে সাদা পায়জামা ও মাথায় ছোট্ট একটা টুপি । দেখেই বেশ ভালই লাগলো । ঘুমকাতুরে চোখে কোন রকম, চোখ মুছেই ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম । তারপরে যখন জানালার কাছে গেলাম, দেখলাম বাহিরে বেশ জোড়ালো বৃষ্টি হচ্ছে ।

গতরাতেও ভেবেছিলাম, ওকে নিয়ে ঈদগাহে যাব । তবে তেমনটা সৌভাগ্য আর হয়ে উঠলো না । অনেকটা সময় বারান্দায় পায়চারি করলাম,ওকে নিয়ে । ওকে বাইরের পরিবেশটা দেখাচ্ছি, ও যতবার দেখছে ততবার আমাকে আরো যেন জড়িয়ে ধরছে । এমনিতেই প্রচুর বাতাস সঙ্গে ভারী বর্ষণ । হালকা হিমশীতল বাতাসে ও যেন আমার বুকের মাঝে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে ।

আসলে যেমনটা সবসময় ভাবা যায় তেমনটা যে হয়ে ওঠে না , এটা একদম বাস্তব কথা । কোথায় ভেবেছিলাম , বেটাকে নিয়ে দুজনে পাঞ্জাবি পড়ে আজ হয়তো মাঠের কোণায় বসে সব মানুষের ঈদ আনন্দ দেখব কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না । অতঃপর বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি পড়া দেখছিলাম আর মুহূর্তটা উপভোগ করছিলাম বাপ বেটা মিলে ।

শায়ানের প্রথম ঈদ কিন্তু হয়েই গেল। হয়তো সেটা ঈদগাহে গিয়ে হলো না। সেটা হলো আমার বুকের মাঝে জড়িয়ে থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখে । আমি তখনো দেখছিলাম কিছু মানুষ কাকভেজা হয়ে ফিরছিল বাড়ির পথে ঈদগাহে থেকে । আসলে যে যেভাবে জীবনটা কে দেখে আর কি ।

অতঃপর ঘরের ভিতরে এসে বাপ বেটা মিলে হালকা মিষ্টিমুখ করে , হীরাকে পাঠিয়ে দিলাম নিচে আম্মুর বাসায় । বললাম মিষ্টান্ন গুলো আম্মুকে দিয়ে আসো আর গলির ভিতরে যদি কোনো নিরীহ হতদরিদ্র মানুষজন দেখো, তাদেরকে কিছু মিষ্টান্ন ও পারলে সঙ্গে কিছু খুচরো পয়সা দিও । ভালোবাসা গুলো ছড়িয়ে যাক এই ভাবেই সর্বত্র।

আমার জায়গা থেকে তো এমনটাই মনে হয় । সর্বোপরি আমার এবং শায়ানের প্রথম ঈদের সকালটা এভাবেই কেটে গেল । বেড়ে উঠুক বাপজান আমার এই ধরণীর বুকে যেকোনো প্রান্ত থেকে , মুক্তমনা হয়ে । এমনটাই প্রত্যাশা রইল , এই ঈদ উৎসব বেলায়।

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht

|| Join the Discord Server for more Details ||