মৃত্যু ||দুখজনক ঘটনা

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমারো ভাল থাকার কথা। কিন্তু মনের দিক থেকে ভাল নেই৷ কেন ভাল নেই সেটাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

IMG_20221215_183704.jpg

মানুষ মাত্রই মরণশীল।জন্ম যখন হয়েছে তখন মৃত্যু একদিন হবেই। এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে কখনো না কখনো বিদায় নিতেই হবে।দুইদিন আগে আর পরে। সব মৃত্যুই দু:খজনক তবে সব মৃত্যু কিন্তু আমাদের মনে সমান প্রভাব ফেলে না। কোনটা মন কে সারাজীবনের জন্য আচ্ছন্ন করে রাখে আবার কোনটা মানুষ দুইদিন পরেই ভুলে যায়।

যাই হোক গত ৩০তারিখ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে আমারো পরীক্ষা তিন তারিখ থেকে।সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।২৯তারিখ সন্ধ্যায় ভাবলাম যাই ছোট দের কিছু উপদেশ দিয়ে আসি সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারন পরীক্ষার আগে সবাই নার্ভাস থাকে,অনেক প্রশ্ন থাকে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ পেলে তা তাদের চাপ অনেক খানি কমাবে।

যেই ভাবা সেই কাজ, কিন্তু ঢুকেই এমন একটি খবর দেখলাম যা মনটা খুবই বিষন্ন করে দিল। আমাদের পাশের এলাকার একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।খুবই শক পেলাম খবরটা দেখে। প্রথমত যে ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে সে বেশ শান্তশিষ্ট,কোন রকম রিলেশনেও ছিল না যে তার জন্য ব্যাথা পেয়ে এই কাজ করবে।

যাই হোক শোকের বাড়িতে তৎক্ষণাৎ কারন খোজা মানবেতর একটি কাজ।পরে সৎকার সম্পন্ন হলে আসল ঘটনা জানা গেল। ছেলেটির সিলেবাস কমপ্লিট হয়নি,অথচ পরের দিন থেকে পরীক্ষা।সে নাকি পরীক্ষা দিলে নিশ্চিত ফেল করত। অথচ তার জমজ অন্য ভাই এর প্রস্তুতি ভাল। অর্থাৎ এবার পরীক্ষা দিলে সে ফেল করবে,আর জমজ ভাই পাশ করবে এটা সে মানতে পারছিল না।

তাই সে তার বাবা মাকে জানায় সে এবার পরীক্ষা দেবে না।সে হয়ত ভেবেছিল পরিক্ষা দিয়ে ফেল করার থেকে পরেরবার ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া ভাল। কিন্তু তার বাবা মা তার এই কথায় দ্বিমত পোষন করে এবং একটু তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু বিষয়টি তখনকার মত মিটে যায়।তারপর বিকেলে তার মা পাশের বাসায় বেড়াতে গেলে সে এই কাজ করে বসে।

আসলে এক্ষেত্রে দেখলাম অনেকেই ছেলেটাকে বোকা বলছে আবার অনেকেই বাবা মাকে দোষ দিচ্ছে। আমি যেটা বুঝলাম না এখানে ছেলেটা কে বা পরিবার কে দোষারোপ করার কি আছে? দোষ যদি কাউকে দেওয়াই লাগে তাইলে দিতে হবে সমাজব্যবস্থার আর পাশের বাড়ির কাকা কাকিমার।

২বেলা না খেয়ে থাকুক কেউ খোজ নিবে না,কিন্তু যেই রেজাল্ট বের হবে ওমনি যে আত্মীয়কে কখনো দেখেননি সে পর্যন্ত ফোন দিয়ে খোজ নেবে আর শুধু খোজ নয়,তার প্রতিবেশীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় যে ভাল রেজাল্ট করেছে তা পর্যন্ত জানিয়ে দেবে।ফলে শান্তনা তো পাবেই না উলটা মন খারাপ হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করুন মানষিক ভাবে এগুলো নিয়ে কতটা ভীত থাকলে একটা বাচ্চা পরীক্ষা দেওয়ার থেকে আত্মহত্যা কে সহজ ভাবে।

যাই হোক ছোট দের জন্য একটাই উপদেশ থাকবে,দেখো জীবন সব থেকে বড়।একবার গেলে আর কখনো আসবে না।কিন্তু পরীক্ষা একবার গেলে হাজার বার আসবে। আজ খারাপ হলে কাল ভাল হবেই।মানুষ হয়ত দুই একদিন কথা শুনাবে তারপর দিব্যি ভুলে যাবে।কিন্তু এই দুই দিনের কথার ভয়ে জীবন দিলে তোমার ক্ষতি।তোমার বাবা মার কথা টা চিন্তা করো।তারা তোমার খারাপ রেজাল্ট মানতে পারবে কিন্তু তোমার মৃত্যু কোনভাবেই মানতে পারবে না।

আর বাবা-মা কে কিছু পরামর্শ। যদিও কথায় বলে বাপ কে শেখাতে নেই।কিন্তু তারপরেও বলি,আপনার সন্তানের কথা শুনুন।তাকে সাপোর্ট দিন। মনে রাখবেন আপনি তাকে জন্মদিয়েছেন।তাই অন্যের কথা শোনা বন্ধ করুন। তার ট্যালেন্ট হয়ত পড়াশোনা নয় অন্যকিছু। তাই তার যা ট্যালেন্ট তাকে তাই করতে দিন।সফলতা একদিন আসবেই।

আর সমাজের লোকদের বলি রেজাল্ট খারাপ হলে তাকে অন্যদের রেজাল্ট না শুনিয়ে তাকে উৎসাহিত করুন।মনে রাখবেন ব্যার্থতাই সফলতার চাবি কাঠি।

দুখ ভরা মন নিয়ে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। আপনার ভাই-বোন,ছেলে-মেয়েদের প্রতি খেয়াল রাখুন।তাদের এতটাও চাপ দিয়েন না যাতে তারা মৃত্যু টাকেই সহজ ভাবে।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

সত্যি ঘটনাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। জীবন থেকে বড় আর কিছু হতে পারে না। ছেলেটি হয়তো রাগ কিংবা অভিমানে এমন একটি কাজ করে বসেছে। সমাজ ব্যবস্থার কথা আর কি বলব সেটা তো আমরা নিজ চোখেই দেখতে পারছি। যাইহোক খুব সুন্দর ভাবে পুরো ঘটনাটি বিশ্লেষণ করেছেন পড়ে ভালো লাগলো।

খুবই মন খারাপ হয়ে আছে ভাই।আর সমাজের উপর প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে। একটি তাজা প্রাণ হারিয়ে গেল। দোয়া করবেন ওর বিদেহী আত্মার জন্য।

প্রথমত ঘটনাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের সমাজে এখন অনেকেই রয়েছে সমস্যা হলে তার সমাধান না করে আত্মহত্যা বেছে নেয়। আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন পরীক্ষা একবার ফেল করলে আবার দেওয়া যাবে কিন্তু জীবনে একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। খুবই শিক্ষামূলক একটি পোস্ট করেছেন আপনি। আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তবে সিলেবাস শেষ করতে না পেরে ছোট ভাই ভালো পাস করবে সেই আশঙ্কা ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে এই বিষয়টি শুনে অনেক বেশি খারাপ লাগলো।

এই ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো সত্যি খুব কষ্ট দেয়। তবে আমি একটা দিক ভীষণ বিশ্বাস করি যে ভগবান মৃত্যু যেভাবে লিখে রেখেছেন সেটা সেভাবেই হবে। হয়তো মা-বাবার সাথে তর্কাতর্কি বা পরীক্ষার প্রিপারেশনের অভাব, এগুলো শুধুমাত্র উপলক্ষ্য একটা। তবে একদিক দিয়ে এটাও ঠিক এখনকার মা-বাবা ছেলেমেয়েদের মনের অবস্থাটা খুব কমই বুঝতে চান। জোর করে মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়াটা এক রকমের অভ্যেস হয়ে গেছে সব খানে। আসলে কি লিখবো এটাই বুঝতে পারছি না। ভগবান এই পরিবারটাকে দেখে রাখুক, এত বড় একটা শোক সামলানোর ধৈর্য দিক এটাই চাওয়া।