বাস্তব গল্প || আমার ভৌতিক অভিজ্ঞতা || ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। আজকে হঠাত করেই হিমেল আমাকে কল করেছে। হিমেল আমার বাল্য বন্ধু। আমার শৈশবের অনেক মজার স্মৃতির সাক্ষী আমার বন্ধু হিমেল। হিমেল আমার এলাকার বন্ধু৷ তার সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি। তবে এখন আর সেই রকম সময় কাটানো হয় না। ২০১৫ সালের দিকে হিমেল মালয়শিয়াতে পাড়ি জমিয়ে। যাইহোক আজকে সকালে হিমেল আমাকে কল দিয়ে অনেক কথাই বলছিলো৷ এর মধ্যে আমাদের ভূত দেখার কাহিনীটাও বলতে শুরু করে। ভৌতিক কাহিনীর সম্মখীন হয়েছিলাম তখন আমি স্কুলে পড়ি৷ আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার নিজের ভৌতিক অনুভূতি শেয়ার করবো। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

Source

তখন ছিলো বৈশাখ মাস। আমাদের গ্রামের একটা কালচার হলো বৈশাখী মেলা পালন। এই হিসেবে আমাদের গ্রামে বিশাল বড় মেলার আয়োজন করা হয়৷ এই মেলা থাকে বৈশাখ মাসের প্রথম তিন দিন। অন্যান্য গ্রাম থেকেও আমাদের গ্রামে মানুষ আসত মেলা দেখতে। এই মেলা ছিলো আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য।। আমার কাহিনীর সাথে এই বৈশাখী মেলার সূত্র রয়েছে। আমাদের গ্রামে যখন মেলা বসতো তখন পুরো গ্রাম মুখোরিত থাকতো।

এটি ছিলো ২০১৩ সালের দিকে আমাদের এলাকায় তখন অনেক বড় মেলা বসেছিলো। তবে অন্যান্য মেলার মতো এই মেলা একছিলো না। কারণ আমাদের মেলায় ৭ দিন আগেই সার্কাস খেলার আয়োজন করা হয়। আমার বাসা থেকে মেলার দূরত্ব ছিলো প্রায় ৬ কিলোমিটার। তাই চাইলেই সার্কাস খেলা দেখতে যেতে পারতাম না। আর বিশেষ করে প্রতিটি টিকেটের দাম ১০০ টাকা। যাইহোক, হিমেলের সাথে আমার কথা হয়, হিমেল আমাকে বলে, যে করেই হোক আমাদের সার্কাস দেখতে যেতেই হবে। এর পর আমার একজন চাচাতো ভাইও আছে সে বন্ধুর মতো বড় ভাই। যাইহোক, তিন জনে মিলে ঠিক করি বাসা থেকে মিথ্যে কিছু বলে আমারা সার্কাস দেখতে যাবো।

Source

এর পর সেই সময় আসে, হিমেল তার বাবার পকেট মেরে আমাকে বলে বন্ধু আমি তো কাজ করে ফেলছি৷ আমি বলি কি করলি? সে আমাকে জানায় তার বাবার পকেট থেকে ৫০০ টাকা মেরে দিছে। তবে সেই টাকা নিয়ে হিমেলের উপত চাপে পড়ে নাই, কারণ ৫০০ টাকা তখন অনেক বড় কিছুই ছিলো তবে যদিও এই কাজটা হিমেল মাঝেই করতো। যাইহোক মূল কথায় আসি। আমরা সেই চাচাতো ভাইকে বললাম ভাই টাকা রেডি তাহলে চলেন সার্কাস দেখতে যাই। আমি আম্মুকে বলি আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে রাতে থাকবো। এদিকে হিমেলও তার নানী বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। আমরা তিনজনই বাসা থেকে বের হই বিকাল বেলা।

আমরা মেলাতে ভালোই ঘুরাঘুরি করি, তবে আমাদের সেই কাঙ্খিত সার্কাস শুরু হয় সন্ধার দিকে। তিন জনে বেশ মজা করেই সার্কাস খেলা দেখি৷ আসলে সার্কাস খেলা বলতে অনেক কঠিন কাজ গুলো রপ্ত করে দর্শকদের মাঝে পদর্শন করাকে বুঝায়। যাইহোক আমাদের সার্কাস দেখতে দেখাতে বেজে যায় ১২ টা। আমাদের তিন জনের প্লান ছিলো আমরা তিনজন শাহিন ভাই অর্থাত আমাদের সাথে থাকা এই বড় ভাইয়ের বাসায় ঘুমাবো। আমরা বাসার উদ্দ্বেশ্যে বের হবো তখন মোটামোটি ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। যেহেতু তখন রাত অনেক তাই আমরা তেমন কিছু পাচ্ছিলাম না বাসায় ফেরার জন্য। যেহেতু কিছু পাচ্ছি না আবার এই দিকে আকাশের অবস্থা ও ভালো না, তাই চিন্তা করি মোববাতি কিনে হেঁটে যেতে থাকবো। যে কথা সেই কাজ, আমরা তিন জন তিনটি মোম নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি আমাদের গন্তব্যের দিকে। সত্যি বলতে মুহুর্তটা আমার ভালো লাগলো মোটামুটি আমার বড় ভাই ও হিমেল ভয় পাচ্ছিলো। আসলে গ্রামের রাস্তা তাই চারদিক একদম নীরব ছিলো, শুধু আমাদের পায়ের সাউন্ড পাচ্ছিলাম।

Source

এর মধ্যে দেখি হিমেল দোয়া পড়তেছে। মানে হিমেল একটু বেশি ভয় পাচ্ছিলো। আমারা যে পথ দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম সে রাস্তার পাশেই একটা পুকুর ছিলো। সেখানে মূলত প্রতি বছরই মানুষ মারা যায়। আমার মাথায় কেন জানি একটা খারাপ বুদ্ধি আসলো। আমি চাচ্ছিলাম যাতে বাতাসে আমাদের মোম নিভে যায়। মানে নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাচ্ছিলাম। আমার কেন ভয় লাগতেছিলো না। তবে কেন আমি জানি না। আমি যে ভূতে ভয় পাই না, তা কিন্ত নয়। মনে হয় আমার দোয়াই কবুল হলো বাতাসের পরিমান বৃদ্ধির ফলে আমাদের তিন জনের মোমবাতিই নিভে যায়। শাহিন ভাই যখন আবার মোম জ্বালানোর চেষ্টা করছিলো তখনও আমি নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম আস্তে আস্তে ফুঁ দিয়ে।

তবে এর পর যেইটা ঘটলো তা দেখার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি দুটো আগুনের ছোট টুকরো একে অন্যের সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আমরা তিনজনেই অবাক হয়ে যাই। আমি যদিও প্রথম থেকে মজা নিচ্ছিলাম তবে আমিও অনেক ভয় পাই এই জিনিস দেখার পর। আমিও মনে মনে দোয়া পড়তে থাকি। এর পর কিছুক্ষণ পর সে আগুনের টুকরোকে আর দেখতে পাই না। এর পর আমরা তিন জনেই ভদ্র ভাবে মোম জ্বালিয়ে সেই ভয়ংকর পুকুর পাড় পাড়ি দিয়ে বাসায় চলে আসি। আমাদের ফিরতে ফিরতে ২ টার মতো বেজে গেছিলো।

Source

আসলে হিমেল আজকে এই কাহিনীটা আমাকে মনে করিয়ে দিলো। হিমেল কল দিয়ে কথা খুঁজে না পেলে আমাদের কাটানো মুহুর্তের স্মৃতিগুলো নিয়ে কথা বলে। আমার কাছে ভালোই লাগে। আমার লাইফে আমি কখনো ভুত দেখি নাই। তবে এই স্মৃতি আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আমি মনে করি এই আগুনের টুকরো ভূত না হলেও জ্বিন হবে। যাইহোক এটাই ছিলো মূলত আমার ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্প। যারা সময় নষ্ট করে পড়েছেন, তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন।