এক সাহসী ব্যক্তির বোকামির গল্প

in hive-129948 •  4 months ago  (edited)


আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো বন্ধুরা,

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। বন্ধু মারুফ এর মুখে শোনা গল্প, একটু নিজের মত গুছিয়ে লিখলাম। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


IMG_20240624_145617.jpg


সাহসী ব্যক্তির গল্প:


মানুষের সাহস থাকা ভালো। তবে সাহসের বড়াই থাকা ভালো না। কারণ বেঁচে থাকতে হলে প্রচুর সাহসের প্রয়োজন রয়েছে, প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেই সাহস যদি বড়াইতে পরিণত হয়, যে কোন মুহূর্তে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। আর এমনটাই প্রতিনিয়ত হয়ে চলছে সমাজে। বলতেছিলাম এমনই এক সাহস বান ব্যক্তির ঘটনা। আমার বন্ধু মারুফ এর নানাদের গ্রামের নাম গোপালনগর। সেই গ্রামে একটি গোরস্থান রয়েছে গ্রামের শেষে। পাড়াগাঁয়ের দোকানগুলোতে বেশ সাহসিকতা নিয়ে গল্প শুরু হয়। একদিন একটা আড্ডা শুরু হলো, সেখানে কথা উঠলো কে রাত বারোটার সময় সারা গোরস্থান গোল চক্কর দিয়ে একটা চিহ্ন রেখে বাড়ি ফিরবে। তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। কোন মানুষ এই নিয়ে সাহস করতে চাইলো না। কারণ সে গোরস্থানে বিভিন্ন রকমের সমস্যার কথা উঠে। কেউ বলে থাকে যে গোরস্থানের লাশ দাফন করে আসলে তার পরের দিন লাশ উপরে পড়ে থাকে, অনেকেই বলে থাকে জায়গায় জায়গায় মানুষের লাশের হাড় পড়ে থাকে। এছাড়াও আরো ভৌতিক বিভিন্ন কাহিনী ওঠে ওই গোরস্থান নিয়ে। এইজন্য তেমন কোনো মানুষ সাহস করতে চাইলো না। তার মধ্য থেকে একজন মানুষ বলে উঠলো এটা কি কোন ব্যাপার। এ তো আমার কাছে খুবই সহজ। কারন সে মানুষটা ছিল বেশ সাহসী এবং কিছুটা রাত চরা প্রকৃতির। এক কথায় বলতে গেলে গ্রামের ডেঞ্জারাস পারসন। যাকে দেখে অনেকেই ভয় পায়।

IMG_20240628_183517.jpg


সারা গ্রামের মানুষ নিশ্চিত হল,নির্দিষ্ট একটা দিন ওই ব্যক্তি গোরস্থানে একটি চক্কর দিয়ে আসবে এবং নির্দিষ্ট একটি স্থানে চিহ্ন রেখে আসবে কিন্তু সে কোন প্রকার লাইট ব্যবহার করতে পারবে না। গ্রাম থেকে নির্দিষ্ট একটা ব্যানার তার হাতে দেওয়া হল। সারাদিন তাকে চোখে চোখে রাখা হলো। রাত দশটার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো এবং সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। অনেকেই তাকে মিথ্যা বলা যাবে না সঠিক সময় কাজ করতে হবে এভাবে নানান হাদিস ও ভয়-ভীতি দেখালো যেন সে সঠিক সময়ে তার সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাড়ি ফিরে। সে ব্যক্তি নিজ থেকে আরো সাহস দেখালো, রাত বারোটা কেন রাত একটার সময় হলেও আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়। যাই হোক গ্রামের ঘরবাড়ি থেকে গোরস্থানটা বেশ মাঠের মধ্যে। রাস্তার দিকে যেতেই সে দিকে তাকাতেই লাগবে ভয়। কিন্তু সেই সাহসী ব্যক্তি ১০:০০ টার পর বাড়ি ফিরে গেল। এরপর খাওয়া দাওয়া করেছে। বারোটা অবদি অপেক্ষা করেছে। এরপর সে হাতের ব্যানার টা নিয়ে চলে গেছে গোরস্থানের দিকে।

IMG_20240624_143810.jpg


সে বেশ সাহসিকতার সাথে বন জঙ্গল পেরিয়ে গোরস্থানের দিকে চলে যায়। ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য করে গোরস্থানের মধ্যে শেয়াল ডেকে উঠছে। তাতে সে কোন ভয় করল না, শিয়াল তো সামান্য বিষয়। কারণ কত রাত মাঠে ঘাটে পথে চলেছে, কত শিয়াল তার চোখে বেধেছে। এরপর আরো একটু মাঠের দিকে এগিয়ে যেতে শিয়ালের ডাক বন্ধ। গোরস্থানের নিকটবর্তী হওয়ার মুহূর্তে কেমন জানি বন জঙ্গলের মধ্যে দাবড়া দাবির শব্দ। যেন তার মধ্যে আরও সাহসিকতা ফুটে উঠছে তাই ভয় লাগলেও ভয় করছিল না। সে গোরস্থানের দিকে অগ্রসর হলো। সে মনে মনে ভাবছিল কয়েকদিন আগেই তো একটা লাশ কবর দেওয়া হয়েছে, পাড়াগার অনেক মানুষই তো এখানে উপস্থিত ছিলাম। যিনি মারা গেছেন সে তো সুপরিচিত মানুষ। সে মানুষটা লাশ হয়ে যদি এখানে শুয়ে থাকতে পারে আমি তো জীবিত, আমার আর কিসের ভয়।

IMG_20240710_091214.jpg


এমন সাহস নিয়ে গোরস্থানের পাশে যেতেই সাদা কি যেন চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে উধাও হয়ে গেল এক নিমিষে। কাছে কোন লাইট নেই, ভালো করে বুঝতেও পারলো না। ভয় তার কাছে ছমছম করে উঠলো। সে তোমাকে দাঁড়িয়ে গেল। এক পা সামনে দিলে দুই পা পিছনে আসে। তারপরেও সে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছে বলে কথা। মন স্থির করে আবারো হাটা শুরু করলো, সারা গোরস্থানের এরিয়া চক্কর দিতে হবে বলে কথা। যেতে যেতে কেন জানি সে যেই পাশে উপস্থিত থাকছে তার বিপরীত পাশে জোরের শব্দ হয়ে উঠছে। তার মনে হলো যেন ভূত দৌড়াদৌড়ি করছে, চমকে দাঁড়িয়ে যায় আবার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটতে থাকে। এরপরেও সে সাহস করে ভয়তে ভয়তে এগিয়ে যেতে থাকে। কিছুদিন আগে যেই লাশ দাফন করা হয়েছিল সে জায়গায় বন জঙ্গল একটু সাফ করা হয়েছিল। তাই সাহসী ব্যক্তি সে লাশের খবরটার দিকে বারবার লক্ষ্য করছিল। এমন মুহূর্তে হঠাৎ সেই কবর থেকে সাদা কি যেন দুইটা দৌড়ে শব্দ করতে করতে চলে গেল। এমন দৃশ্য দেখে সে জোরে হাটা শুরু করে দিল। ততক্ষণে তার গা দিয়ে ঘাম ছুটে গেছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে। সে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করছে। মনের মধ্যে আতঙ্ক চেপে বসেছে। সে ভয় পাচ্ছে আর ভাবছে ভূতে কি আমাকে মেরে ফেলবে। এমন অবস্থায় আরো দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করল এবং বন জঙ্গলে বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। সে ভয়তে নার্ভাস হয়ে গেছে। অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছে না ভালোভাবে। আবার উঠে হাঁটা শুরু করেছে এমন অবস্থায় পিছন থেকে তার লুঙ্গি যেন কে টেনে ধরেছে। সে দৌড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু লুঙ্গি ছাড়লো না। সে গোরস্থান চক্কর দেয়া তো দূরে থাক ব্যানার ও লুঙ্গি খুলে ফেলে উল্টাদিকে দৌড়ানো শুরু করলো। যতক্ষণ দৌড়াচ্ছিল মনে হচ্ছিল তাকে পেছন থেকে কারা যেন ধাওয়া করছে। এভাবেই রাতে বন জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াইছে এবং আছাড় খেয়েছে একাধিকবার। বহু কষ্টে বাড়ি ফিরে এসেছে।

IMG_20240722_214242.jpg


ফজরের আজান হয়েছে। গ্রামের মুসল্লি নামাজ পড়ে বীরের বীরত্ব দেখা এবং নতুন সেই মৃত ব্যক্তির পরিবারের মানুষ কবর জিয়ারতের জন্য গোরস্থানের দিকে গিয়েছে। বুঝতে পারছেন ফজরের দিকে কিছুটা অন্ধকার থাকে। যাওয়ার পথে বীর ব্যক্তির বাড়ির মহিলাদের কাছে সন্ধান নিয়েছে সে বাড়ি ফিরেছে কিনা। মহিলারা বলেছে হ্যাঁ সে রাতে বাড়ি ফিরে এসেছে। এবার গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি গোরস্থানে গিয়ে লক্ষ্য করল একটি বাঁশের খুঁটির আইকু বা কুঞ্চির সাথে সেই বীর ব্যক্তির লুঙ্গি আটকে রয়েছে। পাশেই পড়ে রয়েছে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যানারটা। তবে যে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যানারটা পুঁতে রেখে আসার কথা বলা হয়েছিল ওখান থেকে প্রায় একশ হাত দুরে। সেই ব্যক্তিরা কবর জিয়ারত করে বাড়ি ফিরে, তার বাড়িতে উপস্থিত হলো। ততক্ষণে বীর ব্যক্তি নিজ ঘরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা গায়ে প্রচন্ড জ্বর এসে গেছে এবং কোতরাচ্ছে। এরপর গ্রামবাসীর কাছে বিস্তারিত খুলে বলল। এই কথা শোনার পর গ্রামের মাচালে, দোকানে, বসার জায়গা গুলাতে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেল। এই থেকে সবাই একটা শিক্ষা পেল যে সাহস নিয়ে বড়াই করা বোকামি।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
অতীত ঘটনামেহেরপুর
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

লোকটি বেশি সাহস দেখাতে গিয়েই তো এই বিপত্তিতে পড়ে গেল। তাছাড়া এমন ভয় পেয়েছে যে গায়ে জ্বর চলে এসেছে। তারপরও যে ফিরে আসতে পেরেছে তাই তো অনেক। গল্পটি পড়ে আমারই নিজেরই খুব ভয় লাগছিল। ভালো লাগলো ভাইয়া গল্পটি পড়ে।

প্রচন্ড সাহস ছিল তাই বাড়িতে ফিরেছে