বিত্তি দিয়ে মাছ ধরার গল্প

in hive-129948 •  5 months ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20241010_161102.jpg

photography device:
Huawei P30 Pro-40mp

What3words Location


মাছ ধরার গল্প:


আমরা তখন অনেক ছোট ছিলাম। দুই ভাই একসাথে চলতাম। কোন কিছু করলে একসাথে। ঠিক এমন আশ্বিন মাস চলছিল। প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়ে গেল দুই দিন ধরে। আমাদের বাড়ির রাস্তার পাশ দিয়ে অনেকগুলো পুকুর ছিল। পাড়াগাঁয়ের অন্যান্য পুকুর এর পানি বৃষ্টির পানি সব আমাদের পুকুর দিয়ে একটি ছোট পুলের নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রস করে মাঠে চলে যায়। আর আমাদের পুকুরের পানি বের করার জন্য আমাদের বাড়ির রাস্তার পাশ দিয়ে চারটা সিমেন্টের ৮ ইঞ্চি পাইপ ছিল। সে পাইপের নিচ দিয়ে ড্রেন দিয়ে রাস্তার পুলের নিচ দিয়ে পানি বের হয়ে চলে যেত। ঠিক তেমনি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লক্ষ করে দেখলাম দুই ভাই, আমাদের পুকুরের পাইপ দিয়ে প্রচন্ড বেগে পানি বের হয়ে চলছে, তবে পাইপের অর্ধেক অংশ বন্ধ করা ছিল আমাদের পুকুরের দিকে। আর সেই পানির স্রোতের উজানে অনেক ছোট ছোট পুটি মাছ দাড়কি মাছ দীর্ঘ কুড়ি পঁচিশ হাত ড্রেনের ভেতরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন দৃশ্য দেখে তো আমার অভাব। এত মাছ লাইন দিয়ে রয়েছে। আমরা যদি আমাদের সেই পাইপের মুখ বন্ধ করে দেয় আর ওদিকে লাস্টে ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পানি বের হওয়ার ড্রেন এর পানিগুলো ছেঁকে দিতে পারি তাহলে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কেজি মাছ হবে। কিন্তু এদিকে তো বাড়ির চারিপাশে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। পাড়াগাঁয়ের পানি আমাদের পুকুর দিয়ে ক্রস করছে।

IMG_20241013_171930.jpg


কিন্তু আমাদের সম্ভব হলো না মুখ বন্ধ করে দিয়ে মাছগুলো ধরার। তখন সকাল ভোরবেলা সম্ভবত ছয়টা বাজেনি। এদিকে সকাল ভোর বেলা, মানুষজনের চলাচল কম। আমরা দুইটা ভাই বুদ্ধি করলাম। দুইটা বিত্তি এবং দুইটা টিপজাল নিয়ে আসলাম। এরপর আমরা আমাদের মত করে পাইপের মুখে ড্রেনের লাস্টে পুকুরের ধারে বিত্তি পেতে দিলাম। এবং মধ্যবর্তী দুই জায়গাতে টিপজাল পেতে দিলাম। এখন মাছগুলো সব আবদ্ধ হয়ে গেল ড্রেনের মধ্যে। একটা মাস পাইপ অতিক্রম করে আমাদের পুকুরে আসতে পারছে না আবার ড্রেনের লাস্টের পাশের চাচাদের পুকুরে যেতে পারছে না। ড্রেনের দুই পাশে ছিল বেশ জঙ্গল। যাইহোক মানুষজন কেমন বেশি একটা দেখতে পারার কথা নয়। তবে ড্রেন টি ছিল রাস্তার পাশ দিয়েই। আর মানুষের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পূর্বেই আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে সকাল সকাল আমাদের দুইটা বিত্তি এবং টিপজাল ছোট মাছে মাছে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। আমি তো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম এত মাছ এভাবে ধরতে পারবো কখনো ভাবিনি, সম্ভবত ২ কেজি ছোট মাছ হবে।

IMG_20241013_171935.jpg


এরপর মাছগুলো বাড়িতে রেখে আবারো বিত্তি আর টিপজাল পাততে গেছি। এমন মুহূর্তে হঠাৎ লক্ষ্য করে দেখলাম ড্রেনের লাস্টে যে পুকুর সেই কুকুর আলার নাতি ছেলে এবং তার এক বন্ধু আমাদের এই মাছ ধরার কৌশল দেখে ফেলেছে। তারা দীর্ঘক্ষণ ড্রেনের মধ্যে মাছ দেখে অবাক হয়ে গেলেন। এরপর বলতে থাকলেন ড্রেনের মধ্যে যে মাছ আসছে মাছ তো উজানে আসে। তাহলে কি এই ছোট মাছগুলো আমাদের নানাদের পুকুর থেকে আসছে। তার বন্ধু বলল আরে না এই দিক থেকে স্রোত আসছে এদের পুকুরের মাছ এভাবে বের হয়ে এসেছে। উনি বললেন আমি তো জানতাম মাছ উজানে যায়। তারপর তারা দুইজন তর্ক বিতর্ক শুরু করলো। এরপর কথায় কথায় কথা আসলো, বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট মাছ চলাচল শুরু করে দেয়। তখন ও বলল আমার নানাকে তো বলার দরকার। কারণ তার নানাও বৃত্তি পেতে বেড়ায়। কিন্তু যে এতক্ষণে আমরা অনেকগুলো মাছ পেয়ে গেছি দুই ভাই এটা তো তাদের জানা নাই।

IMG_20241010_161102_1.jpg


এরপর আস্তে আস্তে অনেক মানুষ যারা রাস্তা দিয়ে চলাচল করলো, আর জানাজানি হয়ে গেল ড্রেনের মধ্যে অনেক ছোট মাছ এসেছে। এর মধ্যে টাকি মাছের বাচ্চা রয়েছে পুঁটি, দাড়কি, খোলসি,বালি,গোচুই, সহ বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট মাছ। যাহোক এরপর লক্ষ্য করে দেখলাম অনেকেই আমাদের এই মাছ ধরা নিয়ে হিংসা শুরু করে দিল। পরবর্তীতে আমাদের আর বিত্তি দিয়ে মাছ ধরতে দিল না। তাদের মধ্য থেকে বিত্তি পাতা শুরু করল। কিন্তু পানি তো আমাদের পাইপ দিয়ে বের হচ্ছে। আর পাইপটা অর্ধেক অংশ খোলা ছিল। যখন আমাদের আর মাছ ধরতে দিল না, প্রথম অবস্থায় মনটা খারাপ হলো দুই ভাইয়ের। এরপর আমরা দুই ভাই একটা বুদ্ধি করলাম। পাইপের বাকি অংশটা আমাদের পুকুর এর এই পাশ থেকে খুলে দিলাম। তারা যে বিত্তি পাতলো এতে আর কোন কাজ হলো না। কারণ এত দ্রুত পানি বের হতে থাকলো। সেই পানির স্রোতের কাছে বিত্তি বা মাছ টিকে থাকা সম্ভব নয়। তারা মাঝে মাঝে দেখতে এসে লক্ষ্য করে দেখল আগের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে পানি বের হয়ে চলে যাচ্ছে। আর ড্রেনের মধ্যে মাছ নেই। তারো ধারণা করলো দিনের বেলা তাই মাছ চলে গেছে। আর হয়তো আমাদের পুকুরের ওই পাশ থেকে পানির চাপ বেড়ে গেছে তাই পাইপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি গতিতে বের হচ্ছে বিত্তি পেতে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু কৌশলটা তো ছিল আমাদের দুই ভাইয়ের। আমাদের যখন মাছ ধরতে দেওয়া হলো না তাই আমরা ৮ ইঞ্চি পাইপ এর মুখসম্পন্ন খুলে দিয়েছিলাম। আর এভাবেই সকাল সকাল আমাদের অনেক মাছ ধরা হয়ে গেল এবং যারা হিংসা করল তাদের কিছুই মাছ হলোনা।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিমাছ ও বিত্তি
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন বিত্তি দিয়ে মাছ ধরার গল্প। বেশ কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় প্রচুর পানি হয়েছিল আমিও আমাদের বিলে বিত্তি দিয়ে মাছ ধরেছিলাম। সত্যি ছোট ছোট মাছগুলো যখন বিত্তির মধ্যে পড়ে বেশ ভালো লাগে দেখতে। ছোট মাছ প্রত্যেকটা মানুষের শরীরের জন্য বেশ উপকার খেতে বেশ সুস্বাদু। ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে একটি পোস্ট লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ মামা একদম ঠিক বলেছ তুমি

আমাদের এলাকার মধ্যে এই বিত্তি টি ঢ়োড়কো নামে পরিচিত। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত এই জিনিস। তবে, বেশিরভাগ মানুষ এই বিত্তি রাতের বেলা পানির মধ্যে বসিয়ে রাখেন, আবার সকাল বেলা তুলেন। আসলে বিত্তির মাধ্যমে খুবই সহজে মাছ ধরা যায়।

হ্যাঁ ভাই ঠিক বলেছেন আপনি

বিত্তি দিয়ে মাছ ধরার গল্প গল্পটা শুনে খুবই ভালো লাগলো। গ্রামে বসবাস করার ফলে এই ধরনের সুযোগটা আমাদের সকলেরই খুব ভালোভাবে চলে আসে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে এইভাবে মাছ ধরাটা সকলের জন্যই অনেক সহজ হয়ে যায়। এটা দেখে ভালো লাগলো আপনি অনেকগুলো মাছ একসাথে ধরেছেন।

হ্যাঁ একদম ঠিক কথা

আমাদের এদিকে এগুলোকে বানা বলে। অন্য নামও থাকতে পারে আমি সঠিক জানিনা। ছোটবেলায় এগুলো অনেক দেখেছি। আর এগুলো দিয়ে অনেক রকমের মাছ ধরা যায়। বিশেষ করে ছোট ছোট মাছ ধরা যায়। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট দেখে।

এখনো আমাদের বাড়িতে দুইটা আছে

বৃত্তি দিয়ে মাছ ধরার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো সে পুরনো দিনের স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল ভাই। ছোট বেলায় আমার দাদা আমাকে একটা বৃত্তি বানিয়ে দিয়েছিল। আমার জীবনের সেই প্রথম বৃত্তি দিয়ে মাছ ধরা অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছিলাম। ধন্যবাদ ভাই অনেক সুন্দর একটি গল্প মাঝে মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলে ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করতে ভালো লাগে

জ্বি ভাই মনের ভেতর এক রকম প্রশান্তি অনুভব হয়।

ভাইয়া আপনার বিত্তি দিয়ে মাছ ধরার গল্প শুনে ভালোই লাগলো। আমাদের দিকে এই মাছ ধরার যন্ত্রটাকে আন্তা বলা হয়। এটাতে দারুন মাছ ধরা পড়ে। ছোট ছোট মাছ গুলো খুব সুন্দর ভাবে এটাতে প্রবেশ করে। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ