ওয়াজ মাহফিলের মেলা ভ্রমন ও বিবরণ

in hive-129948 •  last year 
আসসালামু আলাইকুম

img_1697950403594.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে যখন ওয়াজ মাহফিল হচ্ছিল সে ওয়াজ মাহফিল এই অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম এবং পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, বাচ্চাদের খেলনা,এর দারুন মেলা বসেছিল। সেখানে ঘোরাঘুরি করে অনেক কিছু এনজয় করেছি। পাশাপাশি খাবারের দোকানগুলোতে সময় অতিবাহিত করেছি, সেই বিষয়ে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে এসেছি। আশা করি আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



আমাদের গ্রামের অতি নিকটে একটি গ্রাম,সেই গ্রামটার নাম হলো রুয়ের কান্দি। গ্রামটা নিকটে হওয়া সত্ত্বেও আমার এই জীবনে ওই গ্রামে প্রবেশ করা হয়নি। একদিন হঠাৎ এতটাই মন মানসিকতা খারাপ ছিল কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না তবে আমার একটা স্বভাব রয়েছে সেটা হচ্ছে দূরে হলেও সেখানে যেয়ে ঝাল মুড়ি খাওয়ার। হঠাৎ কানে আসলো ওয়াজ মাহফিল চলছে মাইকেল আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। আমি আমার বন্ধু মারুফকে ফোন দিলাম ওয়াজ হচ্ছে কোথায়। মারুফ বললো পাশের গ্রামে, গ্রামের মাঠ পার হলে। অবশ্য গ্রামটা আমাদের মনে হয় যেন বিপরীতে যার জন্য ওই গ্রামে কোনদিন প্রবেশ করা হয়নি। মারুফকে বললাম যাবি নাকি? মারুফ আমাকে বলল চল গেলে যাওয়া যায়,ঝালমুড়ি খেয়ে আসি। আর কিছু ওয়াজ শুনি, মনে হয় ভালো বক্তা আসতে পারে আজকে শেষ দিন ওয়াজের। তখন জানতে পারলাম তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল হচ্ছিল সেখানে। যাইহোক এভাবেই আমাদের দুইজনার সেখানে যাওয়া হল রাত আটটারটার দিকে। সময়টা ছিল মার্চ মাস তাই বেশ উষ্ণ আবহাওয়া। দুইজন চলে গেলাম মোটরসাইকেলে নতুনগ্রাম মাঠের রাস্তা দেখতে দেখতে। তবে পথে মধ্যে লক্ষ্য করলাম বেশ অনেক মহিলারা ওয়াজ শোনার জন্য ফাঁকা রাস্তা দিয়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম পার হয়ে আসছে, কয়েক জায়গায় লক্ষ্য করলাম যুবক যুবতী ছেলে মেয়েরা দাঁড়িয়ে গল্প করছে ফ্রি মাইন্ডে। তবে এটা আমার মোটেও গ্রহণযোগ্য মনে হলো না। এই মুহূর্তে তারা নষ্টামি দুষ্টামি করলেও দেখার কেউ নেই ধরার কেউ নেই। মোটরসাইকেল থেকে নেমে কিছুটা পথ হাঁটতে হলো। নতুনগ্রাম তাই যেন পা উঠতে চাচ্ছিল না। দুইজন হাঁটা শুরু করলাম সামনের দিকে। দেখলাম যেখানে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে সেই স্থানের পূর্বেই রাস্তার পাশে বসে গেছে দুই প্রকার দোকান এক হচ্ছে খাবারের দোকান আর এক হচ্ছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান অর্থাৎ মেলা। প্রথমে মারুফকে বললাম যে উদ্দেশ্যে আমারা এখানে এসেছি আজকে সেই জায়গাটা দেখে আসি ওয়াজ মাহফিলের পরিবেশটা কেমন করে গড়া হয়েছে সেটা দেখে আসি। দুজন মিলে নতুন জায়গা ধীরে সুস্থ দেখতে দেখতে যাচ্ছি অবশ্য মারুফের কাছে নতুন নয় সে একাধিকবার সেখানে গিয়েছে। তবে আমার কাছে তো নতুন। কিছুটা পথ হাঁটতে হাঁটতে সামনে ওয়াজ মাহফিলের জন্য যে ডেকোরেশন করা হয়েছিল তা চোখে পড়ল। এরপর সামনে আরেকটু এগিয়ে যেতে ওয়াজ মাহফিলের জন্য সুন্দর একটি গেট তৈরি করা হয়েছে সেটা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। নতুন স্থান দেখতে যেন কেমন লাগলো লাইটের আলোতে। ডান পাশে লক্ষ্য করলাম মহিলাদের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে পদ্মার আড়ালে। বেশ সুন্দরভাবে সাজানো গুছানো ওয়াজ মাহফিলের জায়গা তবে মাইকে একজন ব্যক্তি ইচ্ছামত হাদিসের কথা বলছে। তবে লক্ষ্য করে দেখলাম ওয়াজ মাহফিলের স্থানে যদি ১০০ জন লোকজন হয় তাহলে রাস্তার উপরে মেলা অথবা খাবারের দোকানগুলোতে ২০০ লোক হবে। আর এটা ভেবে আমার খুবই খারাপ লাগলো যে মানুষ ওয়াজ শুনতে আসে নাকি খাবার খেতে আসে নাকি মেলায় এটা সেটা কিনতে আসে। তাহলে ওয়াজ মাহফিলের কি দরকার গ্রামের মেলা বসালেই তো হয়। যাই হোক আমরা হারিয়ে গিয়ে গেলাম এবং ওয়াজ মাহফিলের স্থানটা দেখলাম এবং কিছুটা সময় অবস্থান করলাম।

IMG_20230315_205644_885.jpg

IMG_20230315_210319_532.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



হঠাৎ মাথায় আসলো মেলা ভ্রমন করতে এসেছি নিজের একটা সেলফি না তুললে নয়। অন্ধকারে নিজেকে ভালোভাবে চিনিতে পারিলাম না, মনে হল বাঁশ ঝাড় থেকে কোন ভূত নেমে এসেছে আমার ক্যামেরার সামনে। এদিকে মাঝেমধ্যে গ্রাম্য বক্তা ঝিকিমের কথা বলে উঠছে তাই মনে হল না জানি সেলফি তুলতে দেখে কে কি বলে ভালোভাবে সেলফি তোলার চেষ্টাও আর করলাম না। বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম কিছু কথা শুনলাম এরপরে ভাবলাম আমরা তো ওয়াজ শোনার জন্য আসিনি কিছুটা শুনবো কিছুটা খাওয়া-দাওয়া করব তারপর চলে যাব যেহেতু এখনো অনলাইনে আমার কাজ করা হয়নি। পোস্ট কমেন্ট বাকি ছিল ঐদিন। পূর্বেই বলেছি মন খারাপ ছিল তাই বাইরে বের হয়েছি। যাই হোক এরপর সেখান থেকে চলে আসলাম বাজারের দিকে।

IMG_20230315_210227813_BURST0001_COVER.jpg

IMG_20230315_210157_692.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



রাস্তায় এসে লক্ষ্য করে দেখলাম একজন ব্যক্তি ফুচকা বিক্রয় করছে, প্রতি পিসের মূল্য ৬ টাকা। ইতিপূর্বে একটা বিষয় আমার খুবই খারাপ লাগে বাইরের খাবার শুধু ঝাল মুড়ি ছাড়া অন্যান্য কিছু আমি খেতে চাই না কেমন জানি অরুচি অরুচি লাগে নোংরা পরিবেশ লক্ষ্য করলে। কিছুক্ষণ চেয়ে দেখলাম বেশ কিছু জিনিস দিয়ে ফুচকা তৈরি করছে তবে না খেলেই নয়। কিছু ফুচকা নেয়া হলো খেয়ে দেখলাম বেশ ভালো লাগলো তারপরেও মনের অরুচিটা থেকেই যাচ্ছিল। যাই হোক ওয়াজ মাহফিল বেশকিছু মানুষের জন্য ব্যবসার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে চারিপাশের লক্ষ্য করে দেখলাম ঠিক আমাদের মত করেই হয়তো এসে খাওয়া কেনাকাটা করার জন্য মানুষজন মেলায় ভিড় জমাইছে কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের স্থান তো দেখে আসলাম ফাঁকা। যতক্ষণ ফুচকার জায়গায় অবস্থান করলাম অনেক মেয়ে মানুষেরা হাসি আড্ডা নিয়ে চলাচল করছে এটা আমি মোটেও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না। যদি এই যদি হয় মেয়েদের অবস্থা তাহলে পদ্মার আড়ালের কি প্রয়োজন। অবশ্য সবাই তো আর এমন বেহায়া নাও হতে পারে। তবে একটা বিষয় ওয়াজ মাহফিল আমরা কতই শুনেছি নিজেকে শুধরাতে পারি না এটাই আফসোস। এইজন্য তো আমাদের ছেলেমেয়েরা খারাপের দিকে যাবেই কারণ বাবা খারাপ হলে সন্তান খারাপ হয়।

IMG_20230315_212012_082.jpg

IMG_20230315_212009_849.jpg

IMG_20230315_212112_022.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন



এরপর ভাবলাম কয়েকটা জিনিস কেনা যায় কি মেলা থেকে যেমন ইলেকট্রনিক্সের জিনিস কেনা আমি বেশি পছন্দ করি এছাড়া তেমন কোন কিছু নয় ইয়ারফোন হেডফোন যাই বলুন এ জাতীয় কিছু জিনিস দেখার চেষ্টা করলাম কারণ মেলাতে বিভিন্ন প্রকার অচেনা অজানা জিনিস এসে থাকে। ভাবলাম কিছুটা জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখব তবে বেশি সময় দিব না যেহেতু অনলাইনের কাজ বাকি রয়েছে তাই কয়েকটা ছবি তুলে চলে আসব তবে মানুষ এতটাই বেহায়াপনা এই বিষয়ে আমার ধারণা ছিল না। কেন ধারণা ছিল না সেটা আপনাদের জানার প্রয়োজন রয়েছে। দীর্ঘ হয়ে ২৭ বছর জীবনে সন্ধ্যা লাগলেই দেখেছি গেটে তালা পড়ে যায় আর আমরা কোনদিন পাঁচ মিনিটের জন্য কোন দোকানপাশায় বসি নাই। এইজন্য অনেক কিছু শুনতেও জানতে বাকি রয়ে গেছে আমাদের দুই ভাইয়ের। পাশের গ্রামের ওয়াজ মাহফিলের কথা দূরে থাক নিজের গ্রামের ওয়াজ মাহফিল যাত্রা বলুন কোন আড্ডাখানা বলুন সেখানে আমি কোনদিন তাকাতে যাই নাই তবে এখন প্রয়োজনে বের হতে হয়। যেমন ফটোগ্রাফি গুলো এখানে পোস্ট করতে পারছি। তবে দুই বন্ধু একসাথে অনেক দূরে মাঝেমধ্যে ঝালমুড়ি খেতে চলে যায়। তবে এসব গুলো চোখে বাধে না যেমন মেলার এই জায়গাতে দুইটা ছবি তুলব বলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু মেয়েরা যেন সরছে না রাত তখন সাড়ে আটটা নয়টা। এর মধ্যে যদি ছবি তুলতে দেখে কেউ ভুল বুঝে তাহলে তো সমস্যা। তবে চেষ্টা করেছি কোন মহিলা মানুষ আমার ক্যামেরার মধ্যে যেন না আসে। যাই হোক দেখলাম অনেক জিনিসই রয়েছে যা ফটোগ্রাফিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ওদিকে ওয়াজ মাহফিলে নতুন বক্তার আগমন বার্তা কানে আসতে লাগলো। কিছুটা ওদিকে আবার যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পূর্বের মতো এখনো লোকজন নেই সুযোগ লক্ষ্য করলাম চেয়ারম্যান আসলো ওয়াজ মাহফিলে চেয়ারম্যানের সাথে ১০-১২ জন মানুষ। মারুফকে বললাম আর এখানে বেশিক্ষণ অবস্থান করার সময় আমার নেই বাড়িতে যেতে হবে পোস্ট কমেন্ট বাকি রয়েছে। এভাবেই আরো আধা ঘন্টা অবস্থান করে চলে আসলাম বাড়ির দিকে। বিস্তারিত সামনে পোস্টে পাবেন।

IMG_20230315_211624_632.jpg

IMG_20230315_211238_422.jpg

IMG_20230315_211323_334.jpg

IMG_20230315_211327_666.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
লোকেশন


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ওয়াজ মাহফিলের মেলাতে গিয়ে অনেক সুন্দর একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন মনে হচ্ছে। আসলে কোথাও মাহফিল তাহলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে যাই। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে খেলনা সাজগোজ বিভিন্ন জিনিস সেখানে বিক্রি করতে দেখা যায়। আজকে অনেক সুন্দর একটি ভ্রমণ পোস্ট করেছেন।

হ্যাঁ ওয়াজ মাহফিলের এখানে বিভিন্ন প্রকার খেলনা পাওয়া যায়

আমাদের গ্ৰামে এমন হয় আর মাঝে মাঝে দেখলে মনে হয় মাহফিল হচ্ছেনা বরং মেলা বসেছে। সবার আড্ডা থাকে চায়ের দোকানে। এজন্য গতবার বলা হয়েছে এবার যেন মেলা বসতে দেওয়া না হয়। ছোট বাচ্চারা না হয় খেলনা কিনতে যেতে পারে কিন্তু বড়রা কেন সেখানে গিয়ে বসে থাকে। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

আমি মোটেও গ্রহণযোগ্য মনে করি না ওয়াজ মাহফিল এর কাছে আড্ডাখানা

শীতকাল আসলেই ভাইয়া ওয়াজ মাহফিলের ধূম পড়ে যায় এবং বেশ ভালই লাগে শীতকালের সময় মানুষের একসাথে জড় হয়ে ওয়াজ মাহফিলে যায় এবং আপনি আপনার মেলার ভ্রমণের কাহিনী আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আমরাও জানতে পারলাম। দুই বন্ধু মিলে প্ল্যান করে আপনারা ওয়াজ মাহফিলে গেছেন। যাক বেশ ভালই লাগলো। হাহাহা পোস্ট কমেন্ট বাকি রয়েছে এই কথাটি অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। যতই হোক দিন শেষে আমাদের পোস্ট করতে হবে। কমেন্ট করতে হবে কারণ এটা আমাদের সবকিছু। সব মিলিয়ে ভালো ছিল

ওয়াজ মাহফিলের পাশাপাশি মেলার উৎসব শুরু হয়ে ওঠে

ভাইয়া শীত শুরু হয়েছে সেই সাথে ওয়াজ মাহফিলও শুরু হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামের দিকে ওয়াজ মাহফিলটা বেশি লক্ষ করা যায়। আপনি মেলায় গিয়ে দারুন কিছু মুহর্ত ক্যামেরা বন্দি করেছেন। আসলে মাহফিল হলে ফুচকা,মেলা এগুলো জমে থাকে। আর তাতে ছেলে মেয়েরা আনন্দ করে। তবে আমাদের পর্দার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ধন্যবাদ।

হ্যাঁ ভাই অনেক জায়গায় ওয়াজ মাহফিল শুরু হয়েছে তবে এটা অনেক আগের