আমরা পরিশ্রমে || দুই বন্ধু মিলে পুকুরপাড়ে সবজি চাষ - দ্বিতীয় পর্ব

in hive-129948 •  last year 
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230721_184832_117.jpg



হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি বন জঙ্গল কেটে পুকুর পাড়ে সবজি চাষ করার নতুন কৌশলে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আশা করি আমার এই পদ্ধতি দেখে অনেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন এবং বন জঙ্গলের বুকে ফলাতে পারবেন নিজের প্রয়োজনীয় ও ভালোলাগার সবজি। যে জায়গা পতিত জায়গা হিসেবে পড়ে রয়েছে যেখানে কোন কিছু ভালোভাবে জন্মানো সম্ভব নয় বা উৎপাদন করা সম্ভব নয় ঠিক সেই জায়গাগুলো কিভাবে কাজে লাগানো সম্ভব সম্পূর্ণটাই বুঝতে পারবেন আমার এই পোস্টগুলোর মধ্যে। তাই চলোনা দেরি না করে এখনই বিস্তারিত পর্যায়ে চলে যাওয়া যায়।


ফটোগ্রাফি সমূহ:


১ নং ফটোগ্রাফি

ইতোপূর্বে আপনারা আমার এই কার্যক্রমের প্রথম পর্ব দেখেছেন। যেখানে আমি আর আমার বন্ধু মারুফ দুজন মিলে সবজি চাষ করার জন্য প্রথমে কম্পোস্ট সারের ব্যবস্থা করেছিলাম। এদিকে আমরা পুকুরপাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট জায়গা গুলো কোদাল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে কুপিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছি। আর যেই জায়গাগুলোতে সবজির বীজ বপন করা হবে সেই জায়গাগুলোকে আমাদের এলাকায় গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় 'থানা'। আশা করি আপনারা মনে রাখবেন এখন থেকে আমি যেখানে বীজ বপন করার জন্য জায়গা নির্বাচন করেছি সেগুলোকে থানা হিসেবে সম্বোধন করব আর আপনারা তা বুঝে নিবেন। যাইহোক থানার মাটি গুলো একটু ভেঙে দিতে হবে আর তার মধ্যে থেকে আগাছাগুলো ছাপ করে ফেলে দিতে হবে।

IMG_20230224_121023_109.jpg

IMG-20230303-WA0000.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

২ নং ফটোগ্রাফি

কম্পোস্ট সার নিয়ে যাওয়া হয়ে গেলে এবার সবজি বপনের থানাগুলোতে মাটির ঝুরঝুর করে দিলাম। আর মোটা মোটা মাটির ঢেলাগুলো ফেলে দিলাম। থানা গুলোর মধ্যে জমে থাকা বিভিন্ন প্রকার ঘাস অর্থাৎ আগাছা পরিষ্কার করে দিতে থাকলাম। আর এভাবে সবজি চাষ করার জন্য যে সমস্ত থানা গুলো করেছি অর্থাৎ ১০-১২ টা থানা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিলাম দীর্ঘক্ষণ ধরে। থানার ভেতরকার আগাছা দমন করা হয়ে গেলে তার চারিপাশের জমে থাকা আগাছাগুলো সহ মাটি কেটে ফেলে দিলাম। এতে থানার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেল এবং আগাছা জন্মাতে একটু দেরি হবে। যেহেতু প্রচন্ড গরমের সময়, সাবমারসিবল পাম্পের সাহায্যে পানি দিতে হবে তাই পানি কিছুটা সময়ের জন্য থেকে যাবে যদি এভাবে ঢেলা জাতীয় মাটিগুলো দূর করে কিছুটা নিচ করে দেওয়া হয়।

IMG-20230303-WA0012.jpg

IMG-20230303-WA0013.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


৩ নং ফটোগ্রাফি

এই পর্যায়ে কিছু সিমেন্টের বস্তা অথবা মাছের খাবারের বস্তা আর নিজের কিছু জামা কাপড় খুব সুন্দর ভাবে সাইজ করে কেটে নিলাম থানার উপর দেওয়ার জন্য। প্রথম পোস্টেই বলেছি আমি কিছুটা ব্যতিক্রম আকারে সবজি চাষ শুরু করেছি, যেন আগাছা দমন আর সবজি গাছের গোড়ায় পানি ধরে রাখার নতুন কৌশল করার জন্য। যেহেতু এটা পুকুরপাড় এখানে পানি দাঁড়িয়ে রাখা কঠিন তাই প্রতিনিয়ত তো পানি দেওয়া সম্ভব নয় কৌশল করে একটু গাছের গোড়া ভিজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একদিকে আগাছা কম জন্মাবে অন্যদিকে গাছের গোড়া ভিজিয়ে রাখা যাবে এই প্রক্রিয়ায়।

IMG-20230303-WA0004.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


৪ নং ফটোগ্রাফি

বস্তাগুলো সঠিকভাবে কেটে নিয়ে প্রত্যেকটা থানায় স্থাপন করলাম। যত বড় বীজ বপনের থানা, কাগজ দিয়ে পুরোটাই ঢেকে দিলাম। আর এভাবে প্রত্যেকটা থানা খুব সুন্দর ভাবে কাগজ দিয়ে ঢেকে দিয়ে চারিপাশের আগাছা জন্মানোর সুযোগ বন্ধ করে দিলাম।

IMG-20230303-WA0005.jpg

IMG-20230303-WA0006.jpg

IMG-20230303-WA0015.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


৫ নং ফটোগ্রাফি

এবার কমপোস্ট সারের বস্তাগুলো প্রত্যেকটা বীজ বপনের থানায় নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ করে স্যার ঢেলে দিলাম। যত মাটির হেলা তুলে ফেলে দেয়া হয়েছিল ঠিক সেই পরিমাণ করে দিয়ে মাটির সাথে ভরাট করে দেওয়া হল। আমরা জানি কম্পোস্ট হওয়ার ব্যবহার করলে সবজির গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।

IMG-20230303-WA0017.jpg

IMG-20230303-WA0016.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


৬ নং ফটোগ্রাফি

এবার প্রত্যেকটা থানার কম্পোস্ট সারগুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে ভেতরের অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলো বের করে ফেলে দিলাম এবং মাটি সমান করে সাট করে দিলাম। যেহেতু বীজ বপন করতে হবে তার আগে রোদের আলোয় একটু শুকিয়ে নেওয়া ভালো, যেহেতু বস্তাবন্দী ছিল এই কমপোস্ট সারগুলো, এর মধ্যে কিছুটা বিষাক্ত বা জীবাণু থাকলে দিনের আলোয় তা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কম্পোস্ট সারগুলো গাছ বৃদ্ধির উপযুক্ত হতে পারবে। কম্পোস্ট সার ভালোভাবে আউলিয়া দিয়ে রোদের শুকালে সেগুলো ঝরঝরে হয়ে যাবে এবং মাটির সাথে ভালোভাবে মিশতে পারবে, যখন এর ওপর মাটি প্রয়োগ করা হবে। আর মাটির প্রয়োগ করার পূর্বে বীজ বপন করে তা চারা গাছ হওয়ার সুন্দর সুযোগ হয়ে যাবে।

IMG-20230303-WA0023.jpg

IMG-20230303-WA0022.jpg

IMG-20230303-WA0029.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


৭ নং ফটোগ্রাফি

নির্দিষ্ট পরিমাণের কম্পোস্ট সার দিয়ে প্রত্যেকটা থানা পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। আর কম্পোস্ট সারগুলো বস্তা অথবা জামার উপরে এভাবে রাখা হয়েছিল যেন বীজ থেকে চারা বের হলে আগাছা তেমন একটা ক্ষতি করতে না পারে এবং প্রচন্ড রোদ গরমের সময় যতটুক পানি দেব সেই পানিতেই যেন ভালোভাবে গাছগুলো বেড়ে উঠতে পারে। আর এভাবেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম সামনে পোস্টে দেখতে পাবেন আশা করি এভাবেই পাশে থাকবেন এবং নতুন কিছু শিখতে পারবেন।

IMG-20230303-WA0019.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

R6TbvATub8MquGoqJZ4SE2UCpaUQzmNnWQxvJGwvYApXWE4KsVzC8vNNXWgtz7hrfoYPSrjupZgj7VtKhrH935ua1PLs4Vr7KiYnVAy3oD...tCNiac63XNuwJJZPbTjHfGPYJH4BJoHgX8HdohSPrSasKvArV8wiiFV7ntYqz66tLZiqG67BKrPAveZFRs3vaqucpJgsaE3qA6Rwasb2fYDx3U5dXGLwwRdyH8.png


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

পুকুরের ধারে যে এত সুন্দর ভাবে সবজি চাষ করা যায় তা আগে আমার জানা ছিল না। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে পড়ে থাকা জায়গা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শিখে গেলাম। তবে ছোটখাটো সবজি আমরা ছাদের উপরেও চাষ করতে পারি। এরকম একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করা যায় পুকুর অথবা ছাদে

মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দুই বন্ধু মিলে পুকুরপাড়ে সবজি চাষের দ্বিতীয় পর্ব। আসলে পুকুরের উপরে জায়গা সব সময় পড়েই থাকে কিভাবে এই জায়গাগুলো আপনি কাজে লাগিয়ে সবজি তৈরি করছেন সেগুলো বেশ ভালোভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনি আর মারুফ মামা দুজন মিলে বেশ সুন্দর একটি সবজি চাষ এর বাগান গড়ে তুলেছেন। আসলে উর্ধ্বমুখী বাজারে সবজি কিনে খাওয়ার থেকে চাষ করে খাওয়া অনেক বেশি ভালো। ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

চেষ্টা করছি মামা এই সময়ে আমি আর আমার বন্ধু দুজনে মিলে টাটকা সবজি তৈরি করা

ভাই আপনার এই উদ্যোগ আমি সাধুবাদ জানাই। বর্তমানে আমাদের সমাজে যুবকরা চাকরি পেছনে ছুটি কিন্তু ইচ্ছে করলেই এ ধরনের উন্নয়নমূলক কাজগুলো করতে পারে। বাড়ির আঙিনায় বা পুকুর পাড়ে সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুলো বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। আপনি এবং আপনার বন্ধু মিলে বেশ ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। সার তৈরি করা থেকে সকল সিস্টেম বুঝিয়ে দিয়েছেন খুবই ভালো লাগলো।

আশা করি সামনের পোস্টগুলো দেখবেন