হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আমি একদম ছোটবেলায় পাড়ার চাচাতো ভাইদের সাথে মাঠে ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে উপস্থিত হতাম। কথায় আছে মানুষ দেখা দেখি শিখে। আর আমি ছোট থেকে যে কোন বিষয়ে বেশ একটিভ। কাউকে যদি কোন কিছু করতে দেখি তার দেখাদেখি আমিও করার চেষ্টা করতাম। যেটা আমার কাছে সহজ মনে হতো সেটা আমি আয়ত্ত করে ফেলতাম। ঠিক তেমনি বুদ্ধি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে পাড়ার চাচাতো ভাইদের সাথে মাঝেমধ্যেই উপস্থিত হতাম মাঠের দিকে। তবে মানুষ হাইসু দিয়ে ঘাস কাটতো, আমি হাত দিয়ে ছিড়তাম। অনেকে আমার দেখে হাসাহাসি করতো। তবুও আমি হাতের মাধ্যমে যতটুকু পারতাম ছিঁড়ে আনতাম। কারণ কাটারি জাতীয় জিনিস ভয় পেতাম। যাই হোক ঘটনার দিনটা ছিল এমন।
চাচাতো ভাইরা ঘাস কাটছেন,তাদের দেখাদেখি আমিও তাদের সাথে গেছি কিন্তু সেই দিন ঘাসের কোন প্রয়োজন ছিল না। মাত্র একটা ছাগল, বাড়িতে ঘাস রয়েছে তবুও সাথে চলে গেছি। সম্ভবত প্রাইমারি থ্রি ফোরে পড়ি এমন সময় হতে পারে। মোটামুটি গাছে ওঠা বেশ শিখে গেছি। বুঝতেই পারছেন নতুন কোন কিছু শিখলে সে বিষয়ে ঝোক থাকে বেশি। যেমন সাইকেল চালানো শিখলে বারবার সাইকেল চালাতে মন চায়। যাই হোক চাচাতো ভাইদের অতিক্রম করে আমি একটি পুকুর পাড়ের পাশে উপস্থিত হলাম। যেখানে লক্ষ্য করে দেখলাম একটি পেয়ারা গাছে অনেক পেয়ারা ধরে আছে। তবে ছোট থেকে আমার একটা অভ্যাস, কারো কোন জিনিসে আমি হাত লাগাই না। বদ অভ্যাস, লোভ, ভয়, অহংকার এগুলো আমার মধ্যে কখনোই কাজ করে না। তবে উপস্থিত ভয় পেলে কিছু করার নেই, আর পেয়ারা গাছ তো আমাদের বাড়িতে ৬-৭ টা ছিলো তখন। চাচাতো ভাইরা আমাকে বলল পুকুর পাড়ের ওদিকে থাকিস না নিচে নেমে আয়। পুকুর আলারা তাদের পুকুর পাড়ে উপস্থিত হতে দেখলে বকে, কারণ অনেকেই পেয়ারা বা অন্যান্য জিনিস চুরি করে থাকে তো এমনটাই হবে। ভাইয়েরা আরো বলেছিল 'পুকুর আলাদা কুকুর পোষে,কুকুর ধরিয়ে দেবে'। আমি তাদের এই সমস্ত কথাগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম সৌন্দর্য দেখে। আমি পুকুর পাড়ে উঠে বেশ ভালো লাগছিল পুকুরের সুন্দর দৃশ্য দেখে আর বাড়ি থেকে অনেক দূরে এই পুকুরপাড় এজন্য, তাই সামনে এগিয়ে যেতেই থাকলাম । অচেনা জায়গা, নতুন স্থান, বাড়ি থেকে অনেক দূরে তাই যেন নতুন জায়গার প্রতি একটু ভালো লাগার কাজ করছিল। স্থানটার নাম "পদ্মা বিল" তিন গ্রামের বিলের মাঠ, সেখানে নতুন নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে এবং পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ফল গাছ শাকসবজি ছিল।
পুকুরের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার পাখি মাছ খাওয়ার জন্য এসেছে। গাছের ডালে ডালে বড় বড় অচেনা পাখি। দূর থেকে বালি হাঁস, সাড়োস পাখি, চোই পাখি সহ বিভিন্ন পাখি দেখে আমার খুব ভালো লাগছিল। আমি চাচাতো ভাইদের কথা না মান্য করে এ সমস্ত পাখিগুলো দেখার জন্য পুকুরপাড়ের এদিক থেকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখছি। কারন আমার মনের মধ্যে তো খারাপ কোন চিন্তা নাই যে গাছ থেকে কোন ফল ছুড়াবো বা কোন কিছু চুরি করবো। আমি এই পুকুরপাড়ার সুন্দর্য পাখিগুলো বিলের কিছু ফুটে থাকা ফুল এ সমস্ত কিছু দেখেই মুগ্ধ। পুকুরপাড় বুঝতে পারছেন বন জঙ্গল রয়েছে। আর সে পুকুরগুলো ছিল পাশের গ্রাম "১৬ টাকা" দের। গ্রামের রাস্তা দিয়ে সোজা মাঠে নেমে পড়লেই এই পুকুরগুলো আর জায়গাটা বেশ দারুণ। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে যে একদল কুকুর আমাকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসবে কে জানে।
কুকুরগুলো আমাকে দেখে দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার দিয়ে চলে আসতে থাকলো। এদিকে আমিও দৌড়াতে থাকলাম ব্যাক করে। আশেপাশে বেশ কিছু গাছ রয়েছে মেহগনি, ইপিলিপিল, পেঁপে গাছ, আম গাছ, পেয়ারা গাছ। কিন্তু কোন গাছ সুবিধার ছিল না যে উঠে পড়বো। কুকুরগুলা বেশ একটু দূরত্বে। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে এসেই পেয়ারা গাছটার সুবিধার মনে হল। কারণ নিচ থেকে দুই ডাল বের হয়ে এরপর আরো ডাল আর এভাবেই গাছটা। যে গাছে উঠতে জানেনা বা মেয়ে মানুষ, খুব সহজেই সে গাছে উঠে পড়তে পারবে; গাছটার এমন ভাবেই ডালপালা। আমি মুহূর্তের মধ্যে গাছের উপরে উঠে চলে গেলাম। চার পাঁচটা কুকুর গাছের নিচে ঘেউ ঘেউ করতে থাকলো। দূর থেকে আমার চাচাতো ভাইয়েরা দেখছে কিন্তু তারা এই মুহূর্তে সেখান থেকে কি করবে। ওখান থেকে চিৎকার করে কুকুর তাড়ালেও, কুকুরের মুখে যদি পড়ে যায় কিচ্ছু করার থাকবে না। ততক্ষণে তো আমি গাছের আগায়। বাম পায়ে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ছোট থেকে দৌড়াতে বেশি ভালোই পারতাম। যাই হোক কুকুরগুলা গাছের নিচ থেকে যেন যাচ্ছে না। আমি তো প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম আর বুক ধরফর করছে। দৌড়েছি,গাছে উঠেছি প্রচন্ড হাপিয়ে গেছি। কুকুরগুলা নিচে এদিক-সেদিক ঘুরছে আর ঘেউ ঘেউ করছে। গাছের গোড়া থেকে দূর হচ্ছে না।
তখন আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই পুকুর আলারা কুকুরগুলা শিকার করে পোষ মানিয়েছে। ভয় ভয় লাগছিল, লোকের গাছে উঠেছি কি না ভাবে। না জানি তারা এসে আমাকে মারধর করে। হালকা ভীতু হয়ে গেলাম। কিন্তু পাশের গ্রামের সেই পুকুরআলা লোকজন নেই। তখন উপস্থিত বুদ্ধি মাথায় খেলল আমার। আমি অনেকগুলো পেয়ারা ছড়ালাম। ছোটবেলায় হাফপ্যান্ট পড়তাম। প্যান্টের দুই পাশে দুইটা পকেট থাকতো। অনেকগুলো পেয়ারা ছুড়িয়ে পকেট বোঝাই করলাম। এরপর পেয়ারা গাছের একটু নিচের দিকে নেমে আসলাম। তখনো কুকুরগুলোর নিচে রয়েছে। কেউ ঘেউ ঘেউ করছে কেউ থেমে রয়েছে। ওদিকে চাচাতো ভাইয়েরা আসতে গিয়ে ভয় পাচ্ছে কুকুরগুলো দেখে। কারণ সবাই তো ছোট ছিলাম তাই না। কারণ ফসলের মাঠ তারপর একটু ডোবা পগার মত জায়গা, তারপর সেই জায়গা ক্রস করে পুকুর। তারা দূর থেকে চেচিয়ে আমাকে বলেছিল তুই গাছে বসে থাক। কিন্তু ততক্ষণে আমি কুকুরকে লক্ষ্য করে পেয়ারা ছুড়ে মারতে থাকলাম। হাতের কাছে থাকা পিয়ারা ছুড়াতে থাকলাম কুকুরের গায়ে ছুঁড়তে থাকলাম। এদিকে দুই পকেটে অনেকগুলো রেখেছি হাতিয়ার হিসেবে। আর এভাবেই অনেকক্ষণ কুকুরকে উদ্দেশ্য করে পেয়ারা ছুড়তে থাকি।
একটি পর্যায় লক্ষ করলাম কুকুরগুলা এই পাড় হতে ওই পাড়ের দিকে চলে যেতে থাকলাম। তখন আমার মনের মধ্যে বেশ সাহস আসলো। আমি কিছুক্ষণ গাছে অবস্থান করলাম। এরপর অনেক দূরে পুকুর পাড়ে মানুষের আনাগোনা দেখলাম। তখন ভাবলাম দ্রুত গাছ থেকে নেমে চলে যেতে হবে, না হয় তারা আমাকে গাছে দেখে মারতে পারে। আর আমি তো অনেকগুলো পেয়ারা নষ্ট করে ফেলেছি। গাছ থেকে নেমে পড়লাম। দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করলাম যেদিকে চাচাতো ভাইয়েরা রয়েছে। লক্ষ্য করে দেখলাম দূর থেকে কুকুরগুলো আবার ঘেউ ঘেউ শুরু করেছে আর আমার দিকে আসার চেষ্টা করছে। ততক্ষণে আমি দৌড়াতে দৌড়াতে সমস্ত কিছু অতিক্রম করে ছুটে চলে গেলাম চাচাতো ভাইদের কাছে। হাতিয়ার স্বরূপ যেই পেয়ারাগুলো পকেটে ছিল একটাও খাওয়ার মত না। তবে চিন্তার বিষয় দুই পকেট বোঝাই পেয়ারা নিয়ে দৌড়ালাম কিভাবে? পরবর্তীতে পেয়ারাগুলো ফেলে দেয়া হলো পানি যাওয়া ড্রেনের মধ্যে। আর এভাবেই একটা মুহূর্তে আমরা সেই জায়গা ত্যাগ করে বাড়ির দিকে চলে আসি। আর ঐদিন বেশ নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম যা পরবর্তীতে অনেক কাজে এসেছে।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | ডগ |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
গল্পটা কিছুট ভীতিকর এবং কিছুটা মজাদার। তখন আপনি কোন মজা পাননি এটা নিশ্চিত। কিন্তু এত বছর পরে ঘটনাটা মনে পড়ায় নিশ্চয় হেসেছেন কিছুক্ষণ মনে মনে!
ধন্যবাদ সুন্দর একটা গল্পের জন্যে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গল্পটি পড়ে ভীষণ মজা পেলাম তার সাথে অনেক ভয় পেয়েছি কিন্তু। কুকুর দেখলে এমনিতেই আমার ভয় পায় আর অনেকগুলো কুকুর একসাথে আপনাকে তাড়া করেছিল। তারা খেতে খেতে পেয়ারা গাছে উঠে পড়লেন। আর বুদ্ধি করে পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পেরে কুকুরের দিকে ছুঁতে থাকলেন। যখন এরকম ভয় বা আতঙ্কে থাকি তখন তো কোন বুদ্ধি মাথায় আসে আমার। আপনার যে এই অসময়ে এত সুন্দর বুদ্ধি মাথায় এসেছিল এটা জেনে অবাক হলাম। তবে শেষে যে কুকুরগুলো চলে গেছে এটাই অনেক। বলতে হবে আপনার অনেক সাহস।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোট থেকে উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাহস আমার দুইটাই রয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আপনার আজকের গল্প পড়ে আবার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আসলে ভাইয়া যখন কাউকে টার্গেট করে তারে তার জন্য পালানো মুশকিল হয়ে যায়। আপনি যেমন গাছের আগায় উঠে পড়লেন। আসলে ভাইয়া একবার আমারও এভাবে তাড়া করেছিল পুকুরে। আমি ভয় করে সোজা বাড়িতে দৌড় দিয়েছিলাম এবং বাড়িতে এসে ঘর লক করে দিয়েছিলাম। যাই হোক আপনার গল্পটি পড়ে কেউ একটু সতর্কতা অবলম্বন করার বিষয়টা বুঝতে পারলাম। তাছাড়া এই কুকুর থেকে দূরে থাকাই ভালো কেননা এটা কামড় দিলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ ভালো একটা বিষয় জানা হয়ে গেল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ ভয়ানক একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার গল্প পড়ে বেশ গাছ শিউরে উঠলো। ছোটবেলায় কুকুর তাড়া করেছে, আপনি দৌড়ে গাছে উঠে পড়েছেন। আসলে ছেলেরা গাছে উঠতে পারে কিন্তু সে জায়গায় মেয়েরা হলে তো বিপদ হয়ে যেত। তবে মেয়েরা মাঠে খাটে তো যায় না কিন্তু রাস্তায় অনেক সময় কুকুরের সম্মুখীন হয়ে যায়। যাই হোক ঘটনাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভয়ানক হলেও এখন ভাবতে ভালো লাগে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কুকুরকে আমার বেশ ভয় লাগে। আপনি দেখতেছি কুকুরের ভয়ে পেয়ারা গাছের উপর উঠে গেলেন। এবং কুকুরকে পেয়ারা মারতে লাগলেন। আসলে অচিন জায়গায় গেলে তখন নিজের কাছেও ভয় লাগে। আপনি ভালো করেছেন পেয়ারা গাছ থেকে নেমে আপনার চাচাতো ভাইয়ের কাছে গিয়ে। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit