হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। হয়তো হাইস্কুলে সিক্স সেভেন এ পড়ি। একদিন লক্ষ্য করে দেখলাম বিকট শব্দ কানে ভেসে আসতে থাকলো। পাশাপাশি পাড়ার ছেলেমেয়েরা বলতে থাকলো হেলিকপ্টার যাচ্ছে। গ্রামের আকাশের অতি নিকট দিয়ে একটি হেলিকপ্টার যাচ্ছে। বুঝতে পারছেন গ্রামের মানুষ হেলিকপ্টার জাহাজ দেখলে চেয়ে চেয়ে থাকে, আবার দেখার চেষ্টা করে, চিল্লাপাল্লা করে, কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে বলাবলি করতে থাকে। দিনটা ঠিক তেমনি ছিল এবং সেভাবেই হেলিকপ্টার দেখা হয়েছিল। আর হেলিকপ্টার দেখার পর থেকে তো মাথায় আর অন্য কোন চিন্তা নেই। সারাক্ষণ যেন হেলিকপ্টার নিয়েই ভাবনা। এমনকি বিকেল মুহূর্তে বন্ধুদের সাথে খেলা খেলতে গিয়েও হেলিকপ্টার নিয়ে অনেক গল্প। যে যার মতো করে বলতে থাকলো আজকে হেলিকপ্টার গেল একদম মাথার উপর দিয়ে। মনে হচ্ছিল যেন ঢেলা মারলে হেলিকপ্টারে গিয়ে লাগতো। কেউ গল্প করে বল ছিল আমাদের নারিকেল গাছের উপর দিয়ে গেল। আবার বন্ধুদের মধ্যে কেউ বলল হেলিকপ্টারটা দেখতে লাল রং। কেউ গল্প করল তার মামা খালুরা হেলিকপ্টারে চড়েছে। আর এভাবে হেলিকপ্টার নিয়ে যেন মেতে উঠলাম সেই দিন হেলিকপ্টার দেখার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এরপর রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলাম। কিছু কিছু বিষয়ে আছে সারাদিন যা চিন্তা করা যায় স্বপ্নের ঠিক তা দেখায়। ওই রাতে আমারও ব্যতিক্রম হলো না। স্বপ্ন দেখি ঠিক দিনে যেভাবে হেলিকপ্টার যাচ্ছিল। ঠিক সে হেলিকপ্টারটা যেতে যেতে আমাদের গ্রামের ধানের মাঠে পড়ে গেছে। কি কপাল! তবে হেলিকপ্টারটা পড়েছে আমার অতি নিকটে। যেখানে পাড়াগার কোন মানুষ দেখেনি, একমাত্র আমিই সেই ব্যক্তি যে হেলিকপ্টারটা দেখেছি। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে হেলিকপ্টারের নিকটে গেলাম। উপস্থিত হয়ে দেখলাম বিদেশি দুইজন ছেলে ও মেয়ে মানুষ বের হয়ে আসছে হেলিকপ্টারের মধ্যে থেকে। আমি খুব টেনশন করছি তাদের নিয়ে, তারা এখন তাদের দেশে ফিরে যাবে কিভাবে। তাদের গাড়িটা তো নষ্ট হয়ে গেছে। তারা ইংরেজিতে কী জেনো বলছিল। কিছুই বুঝতেছি না। তবে ইঙ্গিতে ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে সাথে করে তাদেরকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসলাম। আমার বন্ধুদের ডেকে বললাম হেলিকপ্টারটা যেন দেখে রাখে। কেউ যেন হেলিকপ্টারের ভাঙ্গা অংশ নিয়ে না চলে যায়। আমি শুধু আশ্চর্য হলাম,এত উপর থেকে গাড়ি পড়লো কিন্তু এরা মরল না। হয়তো বিদেশি মানুষ তাই মরেনি।
আমার বন্ধুরা ঠিক সেভাবে প্রস্তুত হয়ে হেলিকপ্টার পাহারা দিচ্ছে, ইতোমধ্যে গ্রামের চারিপাশ থেকে মানুষ আসা শুরু করে দিয়েছে হেলিকপ্টার দেখার জন্য। কি সুন্দর মন মুগ্ধকর স্বপ্ন দেখতে ছিলাম। এরপর সেই দুই ছেলে মেয়ে মানুষ দুটোকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলাম। এরপর গ্লাসে পানি এনে আর পাড়ার দোকান থেকে কে যেন বিস্কুট এনে দিল, তাদের সামনে দিয়েছিলাম এবং ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। যাইহোক তারা বুঝতে পারল হালকা কিছু খাওয়া দাওয়া করছিল। অতঃপর হঠাৎ আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসে পড়েছে। পুলিশে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিল, আমি নাকি তাদেরকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আরো বলছিল আমি গাছের আড়াল থেকে ঢিলে মেরে হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছি। এরা বিদেশি মানুষ এদের কাছে অনেক সোনার গয়না টাকা পয়সা রয়েছে সেই লোভে।আর এগুলো বলছিল এবং পুলিশ আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছিল। আমি পুলিশকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার কথায় বলতে দিচ্ছিল না।
আমি তো সেই ঘুমের মুহূর্তে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। স্বপ্নের মধ্যে পুলিশের কথাবার্তা শুনে যেমন ভয় পাচ্ছি। এদিকে এরপর কি হলো জানিনা, বাড়ির পাঁচিলের মধ্যে মাঝখানে ছিল একটি গোলাঘর, আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছি পুলিশ আমার পিছু পিছু, আমি গোলাঘর বারবার রাউন্ড করছিলাম, আনুমানিক পুলিশকে ৫-৬ রাউন্ড দেওয়ানো হয়ে গেছে। আমি যে কখন কোন ফোর্সে দৌড়াচ্ছি সেটা নিজেও বুঝতে ছিলাম না, হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখছিলাম আমি পুরা ঘেমে গেছি। স্বপ্নটা আমার অচিরেই নষ্ট হল। কেন পুলিশ এসে ভিলেনের পাঠ করল। আজও আমার সেই স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তবে মনে হয় পুলিশ এসেছিল বলে আজ পর্যন্ত স্বপ্নটা মাঝেমধ্যে স্মরণ করতে পারি। গতকাল যখন ঢাকার গাবতলীর পথে মাইক্রোর মধ্যে জ্যামে আটকা ছিলাম হঠাৎ উপর দিয়ে হেলিকপ্টার যাওয়ার মুহূর্তে ভিডিও ও ফটো ধারণ করতেই অতীতের সেই কথা মনে পড়ল। আর সেই সুন্দর অনুভূতিটা আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করে ফেললাম।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | ঢাকা শহর ও হেলিকপ্টার |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
লোকেশন | ঢাকা,গাবতলী |
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ। |
অতীতে অনেক স্মৃতি আছে যা কখনো ভূলে যাওয়ার মতো না। স্বপ্নের ভিতরে ডিম কুড়িয়ে পাওয়া টাকা করে পাওয়া এমন অনেক স্বপ্ন দেখতাম। আপনি ভুলিয়ে ভালিয়া পুলিশকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন এবং ঢিল দিয়ে হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছেন এই বিষয়টা পড়ে অনেক মজা পেলাম। ধন্যবাদ ভাই অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক আনন্দ পেলাম। হেলিকপ্টার দেখার আপনার শৈশবের স্মৃতি এবং স্বপ্নের বর্ণনা খুবই মনোগ্রাহী হয়েছে। আপনার লেখনীর মাধ্যমে আমরা যেন সেই মুহূর্তগুলো নিজেরাও উপভোগ করতে পেরেছি। আপনার গল্পের শৈলী এবং বিবরণ সত্যিই অসাধারণ। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাই আপনি ঠিক কথা বলেছেন। কেননা আমরা যে জিনিসটি সারাদিন চিন্তা করি সে জিনিসটি আমরা রাতের বেলায় স্বপ্নেও দেখি। যদিও ছোটবেলায় আমরা আকাশ দিয়ে যখন প্লেন এবং হেলিকপ্টার উড়ে যেত তখন আমরা দেখতে দৌড়াতাম পিছু পিছু। এছাড়া সবাই মিলে অনেক বেশি চিৎকার এবং লাফালাফি করতাম। আসলে আপনার পোস্টটি করে আমার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। যদিও আপনার স্বপ্নটা বেশ ভাল ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit