অনলাইন থেকে প্রথম ইনকামের গল্প

in hive-129948 •  2 days ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি অনলাইনে ইনকাম করার প্রথম অনুভূতি আপনাদের মাঝে ব্যক্ত করতে চলে এলাম। আশা করব এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে আপনারা অনেক কিছু জানার সুযোগ পাবেন। তাহলে চলুন গল্পটা শুরু করি।

Picsart_25-01-05_12-29-50-846.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


অনলাইনে প্রথম ইনকাম


২০১৬ সাল, প্রথম অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কিনেছি সাত হাজার টাকা দিয়ে। বেশ কয়েক মাস পরে হঠাৎ শুনতে পারলাম আমার গ্রামের বেশ কয়েকজন মানুষ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে অনেক ইনকাম করছে। এর আগের মোটামুটি জানতাম অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে আমার গ্রামের মানুষ ইনকাম করছে কিভাবে? বিষয়টা জানার জন্য খুবই উৎসাহিত হলাম. বেশ কয়েকজনের শরণাপন্ন হলাম। অনেক জানাজানির পর আসল রহস্য জানতে পারলাম। অনলাইনে একাউন্ট খুলে ইনকাম করা যাচ্ছে। ৬০০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। যার মাধ্যমে ইনকাম করা হবে সে বিষয়ের নাম "ভিউ ক্যাশ ও ক্লিক মানে" এই দুইটা মাধ্যমে পাড়া গায়ে অনেকেই, অনেক অনেক ইনকাম করেছে। বিষয়টা আরো নিশ্চিত হলাম আমার চাচাতো বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। আর দেরি করলাম না আব্বুর কাছ থেকে যেভাবে হোক ভাইয়ের মাধ্যমে ৬০০০ টাকা চেয়ে নিলাম।

প্রথম ইনভেস্ট করলাম পাড়াগাঁয়ের ভাইদের মাধ্যমে। ৬০০০ টাকা ইনভেস্ট করে কাজ শুরু করলাম। কি কাজ করতে হবে সেটাও জেনে নিলাম পাড়াগাঁয়ের ভাইদের কাছ থেকে। প্রত্যেকদিন ত্রিশটা করে এড আসবে। অ্যাড ওপেন করতে হবে। এড সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত দেখতে হবে। একটার পর একটা এড ওপেন করতে হবে এবং টাইম দিতে হবে। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত চলতে থাকলো। এরপর আরো একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হল। তখন আমার হাতে আরও একটি মোবাইল ম্যানেজ করা হয়ে ছিল। দুইটা অ্যাকাউন্ট ১২০০০ টাকা খরচ হল। পাশাপাশি ক্লিক মানিয়ে নামে সেটাতেও একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছি তিন হাজার দিয়ে। যাইহোক এভাবে ১৫০০০ টাকা খরচ হল। কাজ চলতে রয়েছে। এদিকে শুনতে পারছি পাড়াগাঁয়ের অনেকজন বেশ বড় এমাউন্ট করে ফেলেছে, টাকা তুলেছে, কয়েকজন টাকা তুলে দেখালো আমাদের।

আরো উৎসাহিত হয়ে পড়লাম। এই কাজে আরও আসক্ত হলাম। বেশ অনেকদিন পর আমার আসল টাকা উঠাতে পারলাম তুহিন ভাইয়াদের মাধ্যমে। বিষয়টা আমার কাছে আরও ভালোলাগার হয়ে উঠলো। কুষ্টিয়াতে কম্পিউটার ট্রেনিং এর জন্য উপস্থিত হলাম। সেখানে চুয়াডাঙ্গার একটা ছেলে আমাদের সাথে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিত। সে ছেলেটাও দেখছি বেশ অনেক টাকা ইনকাম করে ফেলেছে অনেক টাকা উঠিয়েছে। তার ইনভেস্ট যত ছিল তার ডবল টাকা উঠিয়ে ফেলেছে একাউন্টে বেশ অনেক টাকা রয়েছে এমনটা ডলার আমাকে দেখালো। কম্পিউটার ট্রেনিং এর উপস্থিত আমাদের ব্যাচের সবাই এই বিষয়ে ইন্টারেস্টিং মনে করল। অনেক মানুষকে সে ভাইটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিল। আমি একদিন কম্পিউটার ট্রেনিং থেকে বাসায় আসলাম। আমার একাউন্টে প্রায় ১৫ হাজার মত টাকা রয়েছে। টাকা উঠাব উঠাবো। কিন্তু এই মুহূর্তে টাকা উঠানো হচ্ছে না। একদিন তুহিন ভাইয়ের কাছে বললাম টাকা উঠানোর বিষয়ে। জানতে পারলাম কিছুদিন পরে টাকা উঠানো যাবে। অপেক্ষায় থাকলাম এদিকে প্রত্যেকদিনের কাজ চলছে ডলার বাড়ছে। আনুমানিক ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে গেল ভিউ ক্যাশ একাউন্টে।

এই ১৭ হাজার টাকা কিভাবে উঠাবো এমন চিন্তা প্রতিনিয়ত আমার হতে থাকলো। তখন আমার ইচ্ছা ছিল ১৭ হাজার টাকা যদি হাতে পাই তাহলে আমার বেশ কিছু চাহিদা পূরণ হবে। তাই প্রতিনিয়ত পাড়াগাঁয়ের যে সমস্ত মানুষেরা ভিউ ক্যাশের কাজ করতো তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলাম। মাঝেমধ্যে কাজ হওয়ার সময় পার হয়ে যেত, কাজ আসতো না দেরি হতো। কখনো দুপুরবেলায় কখনো রাত্রিবেলায় কখনো রাত এগারোটার সময় কাজ আসতো দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করতাম। তখন ইন্টারনেট কিনে কাজ করতে হতো। ইন্টারনেট সেবা খুবই স্লো। রাত ১১ঃ০০ টার সময় ঘর থেকে বের হয়ে চলে যেতে হতো মাঠে পুকুরের দিকে কাজ করার জন্য। অন্ধকার রাতেও বৃষ্টির রাতেও কষ্ট করে কাজ করেছি। যেখান থেকে ইন্টারনেট ভালো চলে সেখানে উপস্থিত হয়েছি। এমনকি ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেও কাজ করেছি ফাঁকা পরিবেশে গিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় একদিন জানা গেল ভিউ ক্যাশ একাউন্টে আর টাকা উঠছে না। টাকা উঠছে নাতো উঠছেই না। সবাই দেখলাম হতাশায় পড়ে গেল। আমাদের মত সকল ইউজারদের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার ত্রিশ হাজার করে টাকা রয়েছে। একটা মুহূর্তে জানা গেল কাজ আশা বন্ধ টাকা উঠাও বন্ধ। আর সেই প্রথম জানতে পারলাম অনলাইনে ইনকাম রয়েছে কিন্তু বাটপারি রয়েছে বেশি। তাই এভাবে ইনভেস্ট করার আগে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে।তবে পরবর্তীতে যারা একাউন্ট খুলেছিল তারা সবাই ধরা খেয়ে গেল। অর্থাৎ যারা 6000 টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলেছিল তাদের একাউন্টে কিছু করে টাকা জমা হলেও টাকা উঠাতে সক্ষম হয়নি। আর এভাবে বুঝতে পারলাম প্রাথমিক পর্যায়ে যারা একাউন্ট খুলে কাজ করে তারা কিছুটা টাকা হাতে পেতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে যারা একাউন্ট খুলে তাদের টাকা এভাবেই নষ্ট হয়। মাছ ধরতে যেমন টোপ ব্যবহার করে থাকে,কোন বিশেষ চক্র ঠিক তেমনি অনলাইনে টোপ ব্যবহার করে থাকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। দশটা টোপ গেলে একটা মাছ আসবে, ঠিক তেমনি নিজের টাকা অন্যের হাতে অন্যের টাকা আরো অন্যের হাতে, এভাবে একটা সময় বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব অনলাইনের মাধ্যমে। তখন বুঝতে পারলাম এই ধারণা। তবে আলহামদুলিল্লাহ নিজের আসল টাকা উঠাতে পেরেছিলাম। শুধু কষ্ট খাটাখাটনির মূল্যটা বৃথা গেছে।

গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিটাকা
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
Photo editingPicsArt app
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

অনলাইন কাজ করা খুব রিস্কি। আপনার মত ঘটনা অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে আমি আগেও শুনেছি। কোথা থেকে কিভাবে যে মানুষটাকে চুরি করে নিয়ে চলে যায় এবং আমরাও তোকে পা ফেলে দিই বুঝিনা। আসলে আমাদের দেশে যে অনেক সহজ সরল মানুষ রয়েছে এবং তাদের টুপি পরানো খুবই সহজ সে কথা বেশ কিছু ধরনের ব্যক্তি জানেন। এবং তারই সুযোগ নেয়।

একদম ঠিক বলেছেন আপনি

05-01-25

Screenshot_20250105-193228.jpg

Screenshot_20250105-193348.jpg

Screenshot_20250105-190341.jpg