জীবনে প্রথম বজ্রপাতের সম্মুখীন হওয়ার গল্প

in hive-129948 •  9 months ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক সেভাবেই স্মৃতিচারণ করতে উপস্থিত হলাম বজ্রপাতের এক ঘটনা নিয়ে। আশা করি আমার এই ঘটনা পড়ে আপনারা বেশ সুন্দর একটা বিষয়ে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে, আমার জীবনে প্রথম বজ্রপাতের কঠিন একটা মুহূর্তের গল্প পড়ি।


IMG_20240323_141325.jpg


বজ্রপাতের গল্প:



আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। সময়টা ছিল বর্ষার কাল। তখন আমাদের বাড়িতে একটা গাই গরু ছিল। গাই গরুর পেটে অস্ট্রেলিয়ান একটি আইড়ি বা ষাঁড় গরু হয়েছিল। ছোট থেকে গরুটা বেশ আদর যত্নে বড় করছিলাম। এরপর আমাদের লক্ষ্য ছিল এই গরুটা বেশি বড় করে বিক্রয় করব। ঠিক এমনই একটা দিন। আমাদের বাড়ির পাশে একটি কাঁঠাল গাছ ও বেলগাছ রয়েছে বর্তমান। তার মাঝের স্থানে একটি নারিকেল গাছ ও একটি শিশু গাছ ছিল। ঘটনার দিন সেই শিশু গাছের সাথে গরুটা বাধা ছিল। আমরা সবাই অবগত রয়েছি, ২০০৭ সালের দিকে বিটিভিতে সিনেমা হতো বৃহস্পতিবার শুক্রবার অথবা শুক্রবার শনিবার। অর্থাৎ সপ্তাহে দুইটা করে সিনেমা হতো। আর এই সিনেমা দেখার জন্য পাড়ার মানুষ ভিড় করতো একে অন্যের বাড়িতে। কারণ তখন হাতেগোনে কয়েকটা টিভি থাকতো পাড়ায়। ঠিক এমনই একটা দিন হবে আমরা সিনেমা দেখার জন্য প্রস্তুত আমাদের ন্যাশনাল টিভিতে। আমি আমার বড় ভাই বিদ্যুৎ এবং খালাতো ভাই চঞ্চল, যাদের বাসায় বর্তমান রয়েছি একমাস। এবার হঠাৎ আকাশে প্রচন্ড মেঘ জমে উঠল। উঠানে ও খোলাতে অনেক খড়ি শুকাতে দেয়া ছিল। আমরা তিনজন মিলে তাড়াহুড়ো করে সেগুলো খড়ি ঘরের মধ্যে তুললাম। কিন্তু গরুটা আমরা তিনজন দেখে ঘরে উঠালাম না। কারণ ওই মুহূর্তে আব্বু বাড়ি ছিল না বাজার করতে গেছিল। বেশিরভাগ সময় আব্বা গরুটা ঘরে তোলেন।


IMG_20240508_124421.jpg



আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বৃষ্টি হবে না হালকা বৃষ্টি হলে গরু ভিজলে সমস্যা নেই। তবে বারবার আমার আম্মু বলেছিল গরুটা উঠাতে, সন্ধ্যা বেলায় গরু ভিজাতে হয় না,সারা রাত গা ভেজা থাকে সর্দি লাগে। গরুটা একটু বড় হয়ে গেছে,আর খুব বেয়াদব। যখন তখন লাফায়, ঢিপ মারতে যাই এমন করে, হাত থেকে ছুটে দৌড়ে চলে যায় পাড়ার ভেতরে খুঁজতে যাবে কে এমন মেঘাচ্ছন্ন মুহূর্তে। এদিকে আমার সিনেমা দেখার জন্য প্রস্তুত। মাঝে মাঝে এমন সিনেমা হতো বিটিভিতে দেখার কোন রুচি থাকতো না কিন্তু সিনেমার শুরু হওয়ার পূর্বে শিরোনাম দিত আজকে এই সিনেমা হবে। ঐদিন দেখার মত ভালো একটি অ্যাকশনের মুভি হবে তাই আমরা আগে থেকেই রেডি হয়ে রয়েছি সিনেমা দেখার জন্য। কিন্তু মাঝেমধ্যে এমনভাবে মেঘ ডেকে উঠছে আর ঝড়ো হাওয়া বয়ে আসছে আমরা তিনজন সিদ্ধান্ত নিলাম গরুটা যে করে হোক গোয়ালে তুলব।

এরপর আমরা সবাই লাঠি হাতে নিলাম এবং গরুর দড়ি আমি নিজেই খুললাম, কারণ আপনারা জানেন ছোট থেকে আমার খুব সাহস। আর গরুটা বেশিভাগ আমি দেখাশোনা করতাম। তবুও ঝামেলা করবে বলে ভয় লাগতো। ঠিক এমন মুহূর্তে বার বার মেঘ ঝিলিক মারছে। মেঘ ডেকে উঠছে। ভয় ভয় লাগছে আমাদের সবার। আর গরুটা মেঘ ডাকা মেঘ ঝিলিক মারাতে অর্থাৎ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তাই লাফিয়ে উঠছে। যেহেতু বাড়ির বাইরে খোলার পাশে সেই গাছে বাঁধা ছিল গরুটা। গরুটাও বেশ ছটফট করছে ঘরে আসার জন্য। আমি গরুর দড়ি খুলতেই গরু লাফাতে লাফাতে সোজাসুজি গেট এর মধ্য দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ল। এক দৌড়ে এসে সে তার গোয়ালে। আমরা বেশ খুশি হয়েছিলাম গরু উল্টাপাল্টা পথে না গিয়ে নিজের ঘরে এসেছে তাই। এ মুহূর্তে আমার ভাই আর খালাতো ভাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গরু যেন লাফ দিয়ে বাইরে না চলে আসে। এই মুহূর্তে আমি গোয়ালের মধ্যে খুটির সাথে গরুটা বাঁধছি। আর সাথে সাথে চারিপাশে এতটা আলো হয়ে উঠলো চোখে আমরা কিছু দেখতে পারছি না। এমন তীব্র আলো কোন দিন দেখি নাই। আমার চোখের সামনে গরু জেনো আর চোখে বাধছিল না, কেমন জানি চোখ মুখ আলোকিত হয়ে গেল আলোতে, আমাদের আশেপাশের কোন জিনিস চোখে বাঁধলো না। পুরোটাই অনুভব করা যাবে অন্ধকার রাতে চোখ বুজলে যেমন আঁধার দেখা যায়, ঠিক তেমনি আলোর মধ্যে তাকালে কোন কিছু দেখা যায় না এমন একটা। তারপর পরেই বিকট সাউন্ড। মনে হল ডাক পড়লো আমাদের বাড়িতে। আমার ভাই ও খালাতো ভাই চোখে কোন কিছু দেখতে না পারায় আতঙ্কে ভয়ে চেঁচিয়ে দৌড়ে ঘরের দিকে। এরপর আম্মাকে লক্ষ্য করলাম গোয়াল ঘরের পরে রান্নাঘর, রান্না ঘরের মধ্যে খুঁটি ধরে বসে।

আমি এই মুহূর্তে গোয়াল ঘর থেকে বের হয়ে পড়েছি। তবে কোন দিকে দৌড় দেয় নাই এখনো। শুধু নীরবে দাঁড়িয়ে গেছি। মনের মধ্যে একটাই ভয় আব্বা বাজার করতে গেছে। বাজ কোথায় পড়ল? মা আমাকে বকতে থাকলো, আমি একটু গেটের বাইরের দিকে তাকালাম আব্বা আসছে কিনা। আম্মা আরো বকতে থাকলো তাই আমিও ঘরের মধ্যে চলে গেলাম। ১০ মিনিট পর বাইরে বের হলাম। ওই মুহূর্তে কারেন্ট গেছিল না। বিকট শব্দের পর কারেন্ট অফ হয়ে গেল,হয়তো শুধু আমাদের পাড়ায় বা গ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে আর এই অবস্থা। তাই কারেন্ট বন্ধ হয়নি। তবে বাজ পড়ার সাথে সাথে আমাদের কাটআউট কেটে গেছিল। আর মজার বিষয় সেই সময় তো টিভিতে এন্ট্রিনার থাকতো। খালাতো ভাই বলল টিভিটা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেল এবার, এন্টিনারে ডাক টেনে টিভিতে নিয়ে আসেন। এরপর পাড়ার লোকজন সব রাস্তায় আসলো কোথায় ডাক/ বাজ পরল দেখার জন্য। অতঃপর জানা গেল আমার বন্ধু মারুফদের কারেন্টের মিটারের উপরে ডাক পড়েছে। আমাদের বাড়ির দুই ঘর পরে তার বাড়ি। আর ওদের বাড়ির সব কারেন্টের লাইন পুড়ে গেছিল। একই সাথে ওদের একটা বড় নারিকেল গাছ কিছুদিনের মধ্যে মারা গেল। আর এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম সজোরে বজ্রপাতের কবলে পড়ার মুহূর্ত।



IMG_20240511_102233.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিঘটনাস্থল এরিয়া
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আসলে অনেক সময় বজ্রপাত ঘর থেকে শুনেছি বা কিছুটা দেখেছি তবে আপনার মতো এমন ভাবে কখনো দেখিনি। সত্যি এমন টা দেখলে ভয় লাগা স্বাভাবিক। যাক অবশেষে আপনারা বিপদ মুক্ত হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন

বজ্রপাতের একটি আতংকের নাম।বর্তমানে বজ্রপাতের খুব ভয়ংকর ভাবে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে যাচ্ছে। আমিও আপনার মতোই বজ্রপাতের সমমুখী হয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

আমি বেশ কয়েকবার বজ্রপাতের সম্মুখীন হয়েছি

বজ্রপাতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং তার প্রভাব আপনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা পাঠককে সেই মুহূর্তে নিয়ে যায়। আপনার বর্ণনাশৈলী অত্যন্ত জীবন্ত এবং চিত্রাত্মক, যা পাঠকের মনে দৃশ্যটির এক স্পষ্ট চিত্র এঁকে দেয়। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

পরবর্তীতে আবারও শেয়ার করতে চলেছি বজ্রপাতের বিষয়

কথা ঠিক ভাই আলো যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আলোর মধ্যে তাকালেও কিছু দেখা যায় না। ব‍্যাপার টার স্বীকার আমি নিজেও হয়েছি। বিশেষ করে হঠাৎ বজ্রপাত এর আলো আমাদের চোখে পড়লে এমনটা বেশি হয়ে থাকে। আপনার ছোটবেলার এমন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পেরে বেশ ভালো লাগল ভাই। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

আমি বেশ অনেক কয়েক বার শিকার হয়েছি ভাই।