হাই বন্ধুরা!
প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন আমাদের একটা শিক্ষক ছিলেন। আমাদের শিক্ষকের নাম ছিল "নুরুল মাস্টার", আমাদের পাশের "সহড়াবাড়িয়া" নামক গ্রামে উনার বাসা। আলহামদুলিল্লাহ! উনি এখনো বেঁচে আছেন সুস্থ আছেন। উনি অনেক জ্ঞানমূলক কথা বলতেন, শিক্ষা দিতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন মুহূর্তে পিতা-মাতার মুখ থেকে অনেক নৈতিক শিক্ষা, নীতির বোধ, জ্ঞান মূলক কথাবার্তা শুনেছি। পাশাপাশি আমাদের সেই শিক্ষকের মুখে অনেক কিছু শুনেছি জেনেছি। এক কথায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকের তুলনায় উনি অনেক সুন্দর জ্ঞানমূলক কথা বলতেন,যেগুলো মানুষের নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। তার মধ্যে একটা গল্পপ্রায় আমাদের বলতেন এবং বুঝাতেন। আজকে আমি সেই গল্পটা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।
Infinix Hot 11s
আমরা থ্রি ফোর ফাইভে পড়াকালীন উনি প্রায় গল্পটা বলতেন। বর্তমান বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে, গল্পটা প্রতি সপ্তাহে একবার না একবার মনে আসবেই। বলেছিলেন প্রাইমারি ছেড়ে হাই স্কুলে চলে যাবে। তোমাদের সাথে দেখা হতে পারে কিন্তু দশ মিনিট বসে গল্প হয়তো না হতে পারে। তাই গল্প করতেন। আগে সুন্দর করে বুঝিয়ে নিতেন এরপর গল্প বলতেন। একটা গল্প তোমরা মাথায় রাখবা।
মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতেন,মেয়েরা বিয়ে হলে স্বামীর বেশি বেশি অনুগত্য স্বীকার করবা। এতে তোমাদের সৌভাগ্য আসবে। স্বামী যদি খারাপও হয়,চেষ্টা করবা তার হাতে তোমার হায়াত শেষ হোক তবুও তার সাথে খারাপ আচরণ করবে না। স্বামী যখন যেটা বলবে সেটাই শোনার চেষ্টা করবে। কখনো লাভ ক্ষতির হিসাব করতে যাবে না। মাথায় চিন্তা রাখবা আমি শুধু একজন মানুষের জন্য দুনিয়াতে এসেছি। সে আমার মঙ্গল চায়, আমার কঠোর কষ্ট হলেও তার কথা মান্য করে চলতে হবে। তার মাথাটা নিচ রেখে স্বামীর কথা মত চলতে থাকবে। দেখবা কষ্টের মধ্যেও প্রচুর সুখ রয়েছে। কারণ তুমি স্বামীর অনুগত্য করে চলো। আর যখনই স্বামীর অনুগত্য ছেড়ে অবাধ্য হয়ে চলবা তখনই তোমার ধ্বংস আসবে। আর যাই হোক তুমি সুখী হতে পারবে না। সাময়িক সুখ পেতে পারো কিন্তু তাতে তোমার শান্তি থাকবে না। কারণ পিতা-মাতা তোমাকে খুব জোর ১৮ ২০ বছর আগলিয়ে রাখে। এরপর তোমাকে তোমার স্বামীর হাতে তুলে দিবে। জীবনের মহামূল্যবান সময়টা পিতামাতা ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। একটি মেয়ের সকল চাহিদা মেটানো এবং সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য তার স্বামী বেস্ট। তাই তোমাদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ থাকবে বিয়ের পর স্বামীর একটা কথার উল্টো পথে চলবে না। তোমার ব্যবহারে তোমার স্বামীর শান্তিতে থাকবে, তোমার বেবুজ ব্যবহার তোমার স্বামীকে কান্দাবে। আর স্বামীর চোখের জল ঝরালে, তোমার জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। মেয়েরা প্রথমে বাবার খেয়ে পড়ে মানুষ হয়, পরবর্তীতে স্বামীর কাছে খেয়ে পড়ে জীবন যৌবন পার করে, এরপর নিজের সন্তানদের মুখপানে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। এখানে অহংকারের কিছু নেই, যদি অহংকারের কিছু থেকে থাকে সেটা তার স্বামী। স্বামী বেঁচে আছে যার, তার মান সম্মান সব থাকবে।এছাড়াও আরো অনেক সুন্দর ভাবে বলতেন।
ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলতেন, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় এটা সমাজের রীতি। মেয়েদের যতই নিরাপত্তা দেওয়া হোক না কেন সবকিছুর পরেও তাদের অনেক নিরাপত্তার ভয় থাকে। তাই উপযুক্ত বয়স হলেই দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। তবে তোমরা কখনো মেয়েদের দেখাদেখি অকালে বিয়ে করার চিন্তা মাথায় নিবে না। নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারো বা না পারো তোমাদের চিন্তা থাকতে হবে নিজের পায়ে চলতে পারা, যে পিতা মাতা কষ্ট করে মানুষ করেছে তাদের খাওয়ায়ে পরায়ে বাকি জীবন পার করিয়ে দেওয়া, নিজের বিয়েটা করে বউ সন্তানদের খাওয়ানো পরানো ইত্যাদি। তাই ছেলেদের জীবনটা অনেক সংগ্রামীময়। মেয়েরাও কঠোর পরিশ্রম করে তবে তাদের ছায়া দেওয়ার মত অনেক সহযোগী থাকে। কিন্তু ছেলেদের মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কেউ থাকেনা। এমনকি তাদের কঠিন মুহূর্তে মনের কষ্ট বোঝার লোক থাকে না। তাই তোমরা মানুষের মত মানুষ হও সেই দোয়া করি। জীবনে চলার পথে এটুকু মাথায় রাখবা একান্ত নিজের জ্ঞানে তোমাদের চলতে হবে এবং সঠিক জ্ঞানে তোমাদের সংসার করতে হবে। যখনই তোমরা নিজের জ্ঞান বাদ রেখে অন্যের জ্ঞানে চলবা তখনই জানবা তোমরা হেরে যাচ্ছ। কারণ বিয়ের পর তোমার সম্মুখীন হতে হবে নিজের পরিবার আত্মীয়র পরিবার সবকিছু ব্যালেন্স করে রাখার। কিন্তু সেই মুহূর্তে তোমার স্ত্রী এ বিষয়টা কখনোই বুঝতে হবে না। তুমি কঠোর পরিশ্রম করে দুই পয়সা আয় করবে, তোমার স্ত্রী সন্তান কখনো তোমার সেই কঠোর পরিশ্রমের মূল্যায়ন করতে চাবেনা। তবুও তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে, মাথা গরম করা যাবে না। কারণ তুমি একটা পরিবারকে টিকিয়ে রাখবে সবকিছু ব্যালেন্স করে, সেখানে অনেকজনার দৈনন্দিন সকল চাহিদা তোমার উপর নির্ভর করবে। তাই চেষ্টা করতে হবে সবকিছুর মাঝে মানিয়ে চলার।
মহামূল্যবান গল্পটা: সকল ভালো ছেলেদের কপালে বউ ভালো জোটে না। তবে মানিয়ে চলতে হয়। একটি ভদ্র ছেলে বিয়ে করেছে। সে যখন নিজের ভালো, বউয়ের ভালো, নিজেদের ভালো উপলব্ধি করে বউকে কিছু বলতো; তখন তার বউ তার কথার উল্টো চলত। সে বিয়ের পর থেকে এমনটাই লক্ষ্য করে আসছে। মাঝে মাঝে বউয়ের ব্যবহারে সে অতিষ্ঠ। প্রথমত বউয়ের উপর প্রচন্ড রাগ হতো, পরবর্তীতে সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কারণ ছেলেটা খুবই ভদ্র ধৈর্যশীল এবং জ্ঞানী। ছেলেটা ঘুম থেকে উঠেই তার প্রয়োজনীয় কাজে হাত লাগাতো। মাঝেমধ্যে নিজের কাজের জন্য বাইরে চলে যেত। কিন্তু তার বউ স্বামীর চিন্তা না করে সময় মত খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করত না। বউয়ের উপর রাগ করে বসে না থেকে খেয়ে না খেয়ে ছেলেটা তার কর্মস্থলে চলে যেত। এভাবেই দুজনার মধ্যে মাঝেমধ্যেই মনোমালিন্য হত। একদিন স্বামী জানতে পারে মেয়েটার বাবার গ্রামে একটি মানুষ মারা গেছে। বউটা সে মরা দেখার জন্য নদী পার হয়ে যাবে। নদীতে প্রচুর পানি। স্বামী মানা করেছিল এই মুহূর্তে নদীতে নৌকা চলছে না। বাড়িতে অনেক কাজকর্ম পড়ে রয়েছে। সে যদি বাবার গ্রামের লাশ দেখতে যায়। বাড়ির কাজকে সামলাবে। আপনজন যে মারা গেছে তাও না, গ্রামের মানুষ। কিন্তু বউ স্বামীর কথা শুনল না। সে একটু ছুতনো পেলেই বাপের বাড়িতে উঠে। আর এখন তো সুযোগ পেয়েছে একটা অজুহাতের। স্বামীর অবাধ্য বউ বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসলো, নদীতে কোন নৌকা নেই। নদীতে মাথা ডুবা পানি। যখন পানি ছিল না। তখন এপার থেকে ওপারে গরু চরাই করার উদ্দেশ্যে যেত। কিন্তু পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবুও গরুর অভ্যাস রয়েছে এপার থেকে ওপারে চরাই করতে যাওয়ার। মহিলাটা দেখল কিছু গরু এবার থেকে ওপারে চরাই করার উদ্দেশ্যে নদী পার হচ্ছে। তখন সে ভাবলো গরু হয়ে যদি নদী পার হতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না। স্বামী পিছন থেকে বার বার মানা করছে তুমি নদীতে নেম না। তুমি পার হতে পারবে না। নদীতে স্রোত বয়ে চলছে। তুমি সাঁতার জানো না। তুমি ডুবে যাবে। ফিরে আসো আমার কথা শোনো। স্বামী যত মানা করতে থাকে, বউ ততো দ্রুত নদীতে নেমে পার হওয়ার চিন্তা কর। কারন সে স্বামীর অবাধ্য বউ,কখনো স্বামীর কথা শুনে না। নদীর মধ্যে নেমে পড়ে মেয়েটা তার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলতে থাকে। একটি পর্যায়ে পিছনে ফিরে আসতে পারে না আবার সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এক পর্যায়ে সে গরুর লেজ ধরে। কিন্তু লেজ হাত থেকে ছেড়ে যাবে এমন পরিস্থিতি। একদিকে গরু লাফিয়ে পার হওয়ার চিন্তা আরেকদিকে স্রোত। বেশ কঠিন পরিস্থিতি দেখে, স্বামী উপর থেকে বলে: বউ তুমি গরুর লেজ ছেড়ো না, লেজ হাত থেকে ছেড়ে গেলে তুমি স্রোতে ভেসে যাবে। আমি তোমাকে ঠেকাতে পারবো না এই কঠিন স্রোতে। কিন্তু স্বামীর অবাধ্য বউটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গরুর লেজ ছেড়ে দেয়। গরু ঠিকি পার হয়ে ওপারে চলে যায় কিন্তু অবাধ্য বউ পার হতে পারল না। নদীর প্রচন্ড স্রোতে ভেসে গেল। স্বামীর সাধ্য হলো না সে বউকে নদী থেকে উদ্ধার করার। আর এভাবেই অবাধ্য স্ত্রী স্বামীর কথা না শুনে বিপদের সম্মুখীন হল।
জানি এত বড় গল্প পড়তে গিয়ে আপনারা বিরক্তি ফিল করেছেন। তবে এই গল্পের মধ্যে রয়েছে জীবনের সঠিক পথ নিদর্শন। যেই নৈতিক শিক্ষা প্রদানের দক্ষতা বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে খুব কমই রয়েছে। এত সুন্দর গল্প বলার মধ্য দিয়ে আমাদের নুরুল স্যার আমাদের সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন ভবিষ্যৎ নিয়ে। উনার বেশ কিছু নৈতিক শিক্ষা আমাকে আজও পরিচালনা করে। তাদের সুন্দর শিক্ষাগুলো আমার মধ্যে এখনো সজাগ ও সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি করে রেখেছে। যার জন্য নিজের বিবেককে কখনো বিকৃতি করি না। আমাদের শিক্ষকের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শ্রদ্ধা রইল। আপনারা আমার শিক্ষকের জন্য দোয়া করবেন।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | কাঙ্খিত বিদ্যালয় |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
Photo editing | PicsArt app |
লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon09 |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
X-promotion
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
21-12-24
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit