হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। এ পোষ্টের মাঝে আমি প্রায় দুইটি ছোট ছোট গল্প তুলে ধরতে চলেছি যে গল্পগুলো ছোট হলেও বেশ কষ্টদায়ক আর আকর্ষিক। চলুন আমার জীবনের এই গল্প দুইটা করে কিছুটা ধারণা লাভ করি।
ছোটবেলায় সাইকেলে আটকে যাওয়ার ঘটনা |
তখন আমি খুবই ছোট সম্ভবত ক্লাস ফোর অথবা ফাইভে পড়ি। আমি আমার সমবয়সী বন্ধুদের সাথে খুব কম চলেছি। তারা বিভিন্ন বিষয়ে এডভান্স ছিল। তবে আমি একটু দেরিতেই এক এক বিষয় সম্পর্কে অবগত হতাম। এই ধরুন সাইকেল চালানোর বিষয়। আমি লক্ষ্য করেছি আমার বয়সী সকল বন্ধুরা যখন সম্পূর্ণরূপে সাইকেল চালানো শিখে গেছে তারপরে আমি নিচে সাইকেল চালানো শিখেছি। সেটা হতে পারে এক দেড় বছর পরে। আমি আর মারুফ ছোট থেকে বড় হচ্ছি একসাথে সে আজ দীর্ঘ ১৫ বছর মোটরসাইকেল চালাতে পারে। আমি মাত্র এক বছর শিখেছি। যাইহোক মূল ঘটনায় যাই। সাইকেল চালানো শেখার পর সাইকেল চালাতে বেশ ভালোই লাগতো। তবে মনের মধ্যে ভীতু সহজে কাটতো না। আমরা বন্ধুরা মিলে সবাই শাপলা ফুল তুলতাম শাপলা ফুলের নিচে থাকা ঢ্যাপ খাওয়ার জন্য। ঠিক এমনই একটা সময় যখন বন্ধুরা শাপলা ফুল তুলতে যাবো তার আগে আমি সাইকেল চালানো প্র্যাকটিস করেছিলাম যেহেতু নতুন চালানো শিখেছি তাই ভালো লাগলো বেশি। সাইকেল প্রাকটিস করে বাড়ি ফিরছি। আমাদের গেটের পাশে তিনটা জাম গাছ ছিল। কেন জানি জাম গাছের সাথে সাইকেল নিয়ে একটু খেলছিলাম সময় কাটানোর জন্য। একটু দেরি হলে বা সময় গড়ালে তারপর বন্ধুদের সাথে মাঠের দিকে যাব এমন আশা। তবে আমি জামগাছ ধরে সাইকেলের সিটে বসে সাইকেল নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ করে সাইকেলের হ্যান্ডেল বেকে গেল। আমি সাইকেল আর জাম গাছের মাঝখানে কিভাবে যেন আটকিয়ে গেলাম রডের সাথে। তখন আমি সিটে বসা ছিলাম না মাঝখানের রডে বসা ছিলাম। কিছুতেই আমি বের হতে পারছি না হঠাৎ আত আতঙ্কে পড়ে গেলাম যেহেতু ছোট ছিলাম তাই এতটা ভীত হয়ে গেছিলাম জোরে জোরে মা মা করে চেঁচানো শুরু করে দিয়েছে! আমার কান্দার সুরে মা মা শব্দ আমার মায়ের কানে পৌঁছে গেল। বাড়ির মধ্য থেকে মা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে আমি সাইকেল আর জাম গাছের মাঝখানে আটকে গেছি বের হতে পারছি না। আমার মা আমার এমন অবস্থা দেখে কান্না করে ফেলল এবং আমাকে বের করার চেষ্টা করল। যাই হোক মা যখন সাইকেলটা ধরলো আমি খুব সহজে কিন্তু বের হয়ে পড়লাম। তবে ওই মুহূর্তটা আমার আর মায়ের জন্য এতটা ভয়ংকর ছিল তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মা যদি আমাকে সরাতে না পারতো তাহলে না জানি কতটাই আর্তনাদের মরতে হতো দুজনার। কারণ হয়ে মুহূর্তে বাড়িতে কেউ ছিল না শুধু আমি আর মা।
সাইকেলের চেনের মধ্যে মায়ের আঙ্গুল আটকে যাওয়ার ঘটনা |
দ্বিতীয় ঘটনাটা ছিল সাইকেল নিয়েই। আমি আমার সাইকেল চালিয়ে এসে ঘরের এক কোণে রেখে দিতাম। আমাদের আগের ওই ঘরটা মাটি দিয়ে ভরাট করা মাটি দিয়ে নেপা পোষা হত যেহেতু শান ছিল না। মা ঘরের মধ্যে ঝাড়ু দিচ্ছিল। সাইকেলের নিচে পড়ে থাকা বিভিন্ন ময়লা এটা সেটা হাত দিয়ে ছাপ করছে। আমি দেখলাম মা তার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। আমি কি যেন একটা কাজ করার জন্য গেটের বাইরে জাম গাছ ছিল সেই জায়গায় দাঁড়ালাম। আমি আমার কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎ বাড়ির মধ্যে থেকে মায়ের ভাঙ্গা কন্ঠে আর্তনাদ আর সুমন সুমন বলে ডাকার শব্দ। আমি তো এতটাই ভয় পেয়ে গেলাম মা এভাবে চিৎকার করে উঠছে কেন। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করছে কারেন্টে হাত চলে গেল নাকি। যেহেতু আমাদের বাড়িটা একলা আর মাত্র ৪ জন মানুষ আমরা। হঠাৎ কারো কোন বেকায়দা হলে দেখার লোক নেই বলেই চলে। পাশে বাড়ি রয়েছে কিন্তু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। যাইহোক আমি আমার কাজ ফেলে দৌড়েঘরে উঠে পড়লাম। চেয়ে দেখি আমার মা কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল সাইকেলের চেনের মধ্যে চলে গেছে। মা বারবার চেষ্টা করেছিল এতে আঙ্গুল আরো ভেতরে চলে যাচ্ছে কিন্তু বাইরের দিকে আসছে না। এমন অবস্থায় আঘাত লাগা আর ভয়ে আম্মা জোরে চিৎকার করছে। ভাগ্য ভালো আমি গেটের পাশেই ছিলাম, যদি খেলতে চলে যেতাম তাহলে বিপদ হয়ে যেত। আমি মায়ের এমন অবস্থা দেখে মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম 'মা ভয় নেই, ভয় নেই মাগো' এমন বলতে বলতে আমিও কান্না করে বসে পড়েছি মায়ের কষ্ট দেখে। তবে আমি জানি সাইকেলটা উঁচা করলেই পিছন দিকে সাইকেলের পিডেল ঘুরালে মার আঙ্গুল বের হয়ে যাবে। আমি ঠিক এভাবেই দ্রুত এসে সাইকেলটা উঁচা করে ফেলে উল্টা পেডেল করানোর সাথে আম্মার আঙ্গুল বের হয়ে গেল। তবে আমি লক্ষ্য করে দেখলাম মায়ের আঙ্গুল বেশ জায়গায় জায়গায় কাটা দাগ পড়ে গেছে। এমন দৃশ্য আমার যেন জান কাঁদিয়ে দিয়ে দিয়েছিল।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
বাহ্ ছেলেবেলার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বেশ সুন্দর সুন্দর দুইটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন দেখছি। আপনার দুটো গল্পই আমার বেশ ভালো লেগেছে। মায়ের আঙ্গুল সাইকেলে আটকে যাওয়া অবশেষে অনেক চেষ্টার পরে আঙ্গুল সাইকেলের চেন হতে বের করা। আবার নিজেই পা আটকে যাওয়া। বেশ দুষ্টুই মনে হয় ছিলেন ছেলেবেলায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
না আপু বেশি চালাক চতুর ছিলাম না কিন্তু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ছোটবেলায় এ ধরনের ঘটনাগুলো কম বেশি সবার সাথে হয়। আপনার দুইটা ঘটনায় পড়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে। যাইহোক অনেক চেষ্টা করার পরে আপনার মায়ের আঙ্গুল সাইকেলের চেইন থেকে ছোটাতে পেরেছেন বা বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি জেনে ভাল লেগেছে। এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছিল নাই আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম আম্মার ঘটনায়
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কম বেশি ছোটবেলায় এমন সাইকেলে নিয়ে ভয়ংকর ঘটনা আছে সবার।আসলে মা সন্তানের বিপদে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না হোক সে ছোট কিংবা বড়ো দূর্ঘটনা।ভাগ্যিস আপনি বাড়িতেই ছিলেন নইলে আন্টির তো খুব সমস্যা হয়ে যেত।ধন্যবাদ ভাইয়া মা ছেলের ভয়ংকর সৃতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ দুইটা ঘটনা মনে আসলে গা শিউরে উঠে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ছোটবেলায় এরকম ঘটনা অনেকের সাথে ঘটে থাকে যে কোন কিছু তলে চাপা পড়ে যাওয়ার। তবে আপনার আম্মুর ঘটনাটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো। তখন যদি আপনি কাছাকাছি না থাকতেন তাহলে হয়তো বা সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে আপনার আম্মুকে অনেকক্ষণ ধরেই কষ্ট পেতে হতো। যাই হোক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে ছোটবেলায় এই ভয়ানক ঘটনাগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি তো বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম সেই মুহূর্তে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সাইকেল শেখার সময় সবার ছোট খাটো দূর্ঘটনা ঘটেই।আমি আপনার মত অনেক দেরিতে সাইকেল চালানো শিখেছি।আন্টির দূর্ঘটনাটি পড়ে খারাপ লাগল।তাও যে আপনি চমৎকার উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়েছিলেন জন্য অল্পের উপর দিয়ে গেছে।নইলে অনেক বড় কিছু হতে পারত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই আমার এটা জানা ছিল সাইকেলের চাকা উঁচা করে উল্টা দিকে ঘুরাতে হয়
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit