মাছ বিক্রয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গা আড়তের উদ্দেশ্যে যাত্রা || দ্বিতীয় পর্ব

in hive-129948 •  2 months ago 


আসসালামু আলাইকুম




হাই বন্ধুরা!

কেমন আছেন সবাই? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি চুয়াডাঙ্গায় মাছ বিক্রয় করতে যাওয়ার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। আশা করবো এই পর্বের মাধ্যমে বেশ অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং সেই দিনের অনুভূতি জানবেন। তবে বলে রাখি এখানে আপনারা প্রত্যেকটা ফটোতে হয়তো ড্রাইভার এর মাথা লক্ষ্য করবেন। আশা করব এতে কিছু মনে করবেন না। এই পর্বে আমি ড্রাইভার এর সাথে যে সমস্ত আলোচনা করেছিলাম, তার মুখ থেকে যে গল্প শুনেছিলাম তার কিছু শেয়ার করব। আর এখানে দীর্ঘ রাস্তার ভিউ থাকবে। আশা করি সম্পন্ন পোস্ট করলে বেশ অনেক কিছু জানতে পারে বেন এবং ভালো লাগবে। তাহলে চলুন শুরু করি।

IMG_20240823_140547_7.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


যাত্রা পথের,না জানা গল্প:


হাট বোয়ালিয়া রাস্তা পার হলাম। এরপর নগর বোয়ালিয়া। যার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা নদী। সে রাস্তা পার হয়ে ফাঁকা পরিবেশের দিকে আমাদের গাড়ি অগ্রসর হল। আমরা জানি বর্ষার সময় রাস্তার চারিপাশে বিভিন্ন আগাছা জন্মায়। এজন্য আশেপাশের এরিয়া গুলো দেখতে বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ মনে হয়। আমাদের দেশের মাটি এতটাই উর্বরশীল যে বর্ষার সময় একটু বৃষ্টির পানি পেলেই বিভিন্ন প্রকার আগাছা বৃদ্ধি পেতে পেতে মানুষ সমান হয়ে যায়। আমরা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম এবং ড্রাইভার জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে বলছিলেন এই যে বন জঙ্গল, রাত্রী বেলায় জোরে গাড়ি চালিয়ে আসতে গেলে শিয়ালের কারণে ঝামেলায় পড়তে হয়। শিয়াল পার হয় রাস্তা দিয়ে। মাঝেমধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি হন দিলে কিছু মনেই করে না। অনেক সময় দেখা যায় গাড়িতে ধাক্কা লাগে। তবে মাছের গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলেও গাড়ি ওয়ালার কোন সমস্যা হয়ে ওঠেনা। কিন্তু মোটরসাইকেলের সাথে শিয়াল ধাক্কা লাগলে সেই গাড়িওয়ালা গুরুতর আহত হয় এমনকি হাত পা ভেঙে যায়। আমি যেমন মাছের ড্রামের উপর বসে মাছ বিক্রয় করতে যাচ্ছিলাম, অনেক মাছের মালিক থাকে মাছের গাড়ির পিছে অথবা আগে মোটরসাইকেল নিয়ে আড়তে যায়। আর এমন ঘটনা তাদের চোখের সামনে নাকি ঘটেছে এটাও বলেছিল। আসলে যারা দিনে বা রাতে মাছ বহন করে বিভিন্ন আড়তের দিকে তাদের সাথে কয়েকদিন চলাচল করলে তাদের বেশ অনেক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

IMG_20230712_071520_637.jpg

IMG_20230712_071541_869.jpg

IMG_20230712_071634_175.jpg

IMG_20230712_071646_551.jpg

IMG_20230712_071656_010.jpg

IMG_20230712_071800_786.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


আর এভাবেই গল্প করতে করতে আমাদের গাড়ি নগর বোয়ালিয়া থেকে ভাংবাড়িয়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। এই গ্রামটা আমার বেশ পরিচিত। কারণ আমার বিবাহের মুহূর্তে যিনি কাজী ছিলেন তার বাড়ি এবং অফিস এই গ্রামে। অনেক আগে থেকে গ্রামটা আমার পরিচিত তবে বিয়ের পর থেকে যেন আরো একটু বেশি পরিচয় লাভ করেছে। আমরা সেই গ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম। দেখলাম সকাল হয়ে যাচ্ছে মানুষজন রাস্তার দিকে বের হয়ে আসছে। অনেকে অনেকের কৃষি কাজের জন্য মাঠের দিকে। আবার অনেক মানুষ সকালে হাঁটাহাঁটি করছে ব্যায়াম করার জন্য শরীর ভালো রাখার জন্য। আর এরি মাঝে মাঝে যখন ফাঁকার পরিবেশে গাড়ি অগ্রসর হচ্ছিল তখন ড্রাইভার গাড়ি চালানোর মাঝখান থেকে আমার সাথে গল্প বলছিল। আর আমি তো মাছের ড্রামের উপর বসে চারিপাশের সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করছি এবং মাঝেমধ্যে তার গল্প শুনছিলাম।

IMG_20230712_071802_330.jpg

IMG_20230712_071926_274.jpg

IMG_20230712_071937_335.jpg

IMG_20230712_071944_548.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


আড়তে মাছ বিক্রয় করতে গেলে অনেক সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় গাড়িওয়ালাদের। এই যেমন পথে ঘাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি গাড়ির তলে পড়ে। তবে হাঁস মুরগির গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলে জরিমানা দিতে হয় গাড়িওয়ালাদের। কিন্তু উনি বলেছিলেন আমরা তো আর শখ করে এ সমস্ত পশুপাখি গাড়ির তলে চাপা দেয় না। কারণ আমরা মানুষ আমাদের তো এসব জিনিসের প্রতি মায়া দয়া রয়েছে আমরা তো বাড়িতে এই সমস্ত পশুপাখি পুষে থাকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পথে-ঘাটে গাড়ি চালানোর সময় এ সমস্ত পশুপাখি গোলা একদিক থেকে আরেক দিকে দৌড়াতে থাকে অকারণে গাড়ির শব্দ পেয়ে। আর ঠিক এমন মুহূর্তে এক্সিডেন্ট হয়ে যায় পশুপাখির। ঠিক এমনই একদিনের ঘটনা ছিল। একজন মানুষের একটি মুরগি মারা গেছিল তাই নিয়ে কত কান্ড কলার সৃষ্টি করেছিল। কেউ গাড়ি ভেঙে দেবে কেউ টাকা কেড়ে নেবে। অনেকেই বলতে থাকে এরা দ্রুত গাড়ি চালায় পদঘাট দেখে চালায় না। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে গাড়ি কেন দ্রুত চালাতে হয় সে বিষয়টা তাদের মাথায় থাকে না তাই তারা না বুঝে অনেক কথা বলে। আর এ বিষয়গুলো আমরা তো জানি।

IMG_20230712_072000_806.jpg

IMG_20230712_072009_186.jpg

IMG_20230712_072010_641.jpg

IMG_20230712_072021_126.jpg

IMG_20230712_072025_810.jpg

IMG_20230712_071308_373.jpg

IMG_20230712_071309_581.jpg

IMG_20230712_071327_151.jpg

IMG_20230712_071505_240.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


মাছের গাড়ি বহন করার ড্রাইভাররা দ্রুত গাড়ি চালায় তার পিছনে কারণ আমরা এবং আড়তদারেরা। সব সময় মাছের মালিক গাড়ির সাথে যায় না,অনেকে লেবার পাঠায়। এদিক থেকে আমাদের মত মাছ চাষিরা যারা বাড়িতে থাকেন তারা খোঁজ নিতে থাকে ড্রাইভার কতদূর অগ্রসর হলো আড়তে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে। আমাদের মাছের গাড়ির আগে যদি অন্য মাছের গাড়ি নির্দিষ্ট আড়তের ঘরে উপস্থিত হয়ে যায়, তাহলে আমাদের মাছের দাম কম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ বেশি মাছ জুটে গেলে মাছের বাজার কমে যায়। ওদিকে আড়ত থেকে ডাইভারদের কাছে ফোন দিতে থাকে সব সময় ভাই আপনার গাড়ি পৌঁছাতে কতটা সময় লাগবে নাকি অন্য গাড়ির ভেতরে আসতে চাচ্ছে সেই গাড়িটা রিসিভ করব। দূর থেকে মাছ নিয়ে গেলে আড়তদাররা চেষ্টা করে দূরের মাছটা দ্রুত বেঁচে দেওয়ার, কারণ দূরের মাছ ড্রামের মধ্যে অনেক মারা যায় দীর্ঘ পথ আসার কারণে। আর সেই কারণে মাছের দাম লসে পরিণত হয়। মরা মাছের দাম তাজা মাছের অর্ধেক দাম হয়ে যায়। তাই এখানে বিভিন্ন কারণ থাকে বলেই মাছ বহনকারী গাড়িরা দ্রুত চলেন রাস্তায়। আর এই সমস্ত বিষয়গুলো তো পাবলিক এবং অন্যান্য এলাকার মানুষের জানেনা যার জন্য মন্তব্য করে থাকেন মাছের গাড়িওয়ালারা দ্রুত গাড়ি চালায়। উনার ঘটনার দিন এই সমস্ত বিষয়গুলো যখন ভেঙে বলা হয়েছিল তখন পাবলিকরা বুঝতে পেরেছিল কথা সত্য। আর সামান্য একটা মুরগি গাড়ির তলে পড়ে মারা গেছে এজন্য তার সাথে এত খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। তারা খেয়ে না খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে বা না ঘুমিয়ে প্রতিনিয়ত মাছ বহন করছে আড়তের দিকে। তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করাটা ঠিক না। তারা আছে বলেই তো হাজার হাজার মানুষের মুখে মাছ জুটে। ঠিক এমনিভাবে সেখান কার কোন এক ব্যক্তি বুঝিয়েছিলেন। তাই পরবর্তীতে তার গাড়িটা তারা ছেড়ে দেয়। যাহোক এভাবে বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন রকমের গল্প শুনতে পাওয়া যায় মাছের গাড়ি বহন করা ড্রাইভারদের মুখে। আর ওই সময় আমি ঠিক এভাবে তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফাকা রাস্তায় চলার মুহূর্তে গল্প করছিলাম এবং অনেক কিছু জানছিলাম। আর এভাবে আমরা 'ভাংবাড়িয়া বাজার' পার হয়ে 'আসমান খালির' দিকে রওনা দিলাম। আরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো আগামী পোস্টে।

IMG_20230712_071229_729.jpg

IMG_20230712_072150_1.jpg

IMG_20230712_072159_1.jpg

IMG_20230712_072311_7.jpg

IMG_20230712_072325_7.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif



পোস্ট বিবরণ


বিষয়মাছ বিক্রয়
ব্লগারsumon09
ডিভাইসInfinix Hot 11s-50mp
লোকেশনWhat3words
দেশবাংলাদেশ


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন ভ্রমণ বিষয়ক পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকবেন সবাই। সকলের জন্য শুভকামনা রইল,আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করার জন্য চুয়াডাঙ্গা আরতে যাওয়ার খুব সুন্দর একটি মুহূর্ত। আসলে এই মাছগুলো ভালো দাম তার জন্যই বড় বড় আরতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আপনিও গিয়েছিলেন বিষয়টা ভালো লাগলো। আপনার পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ধন্যবাদ।

হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছ

মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই চমৎকার একটি পোস্ট লিখে শেয়ার করেছেন। আপনাদের পুকুরের মাছ আপনি চুয়াডাঙ্গা আড়তে বিক্রয় করতে গিয়েছিলেন জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। আসলে আমিও এভাবে অনেকবার মাছ বিক্রয় করতে গিয়েছি এই অনুভূতিগুলো বেশ দারুন। যাত্রা পথে আপনি খুবই সুন্দর কিছু ছবি তুলে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ ড্রামের উপর বসে ছবি তুলেছি।

মাছ বিক্রির জন্য চুয়াডাঙ্গা আড়তের উদ্দেশ্যে যাত্রা অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতা আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।সত্যি যখন কোন গাড়ির সাথে হাঁস মুরগি এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। আর জরিমানা গাড়ির মালিকের দিতে হয়। তবে এই ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক অনেক সুন্দর কথা বলেছে শুনে বেশ ভালো লাগলো। আপনার পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম।

পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মাছ বিক্রয় করতে যাওয়ার পোস্ট করে অনেক কিছু জানতে পারলাম। পথের মধ্যে গাড়িতে এমন এক্সিডেন্ট হয় সেটা আমি শুনেছি। আসলে সবকিছুর পরেও দ্রুত গাড়ি চালানো নিরাপদ নয়। সবকিছু বিষয়ে চিন্তাভাবনা রেখেই রাস্তা চলাচল করা উচিত।

মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ