হনুমানের গল্প

in hive-129948 •  5 months ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20240118_120150_8.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

what3words location:


হনুমানের গল্প:


তখন আমি বেশ ছোট। সম্ভবত ক্লাস সেভেনে পড়ি। বন্ধুরা মিলে খেলাধুলা করার জন্য আমাদের নিকটস্থ প্রিয় শিশু বাগানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা যখন শিশু বাগানে খেলাধুলা করার জন্য প্রস্তুত। তখন ওই বাগানের পাশের খোলা মাঠ, কোন ফসল ছিল না। ধান কাটা হয়ে গেছে, মাঠ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এমন এক বিকেল মুহুর্তে খেলাধুলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে খেলা শুরু করছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের সামনে দিয়ে একটা হনুমান দৌড়াতে দৌড়াতে একটি পাকুড় বা শিমুল গাছের পাশে দাঁড়ালো। প্রায় সময় লক্ষ্য করা যায়, বাইরে থেকে এমন হনুমান গ্রামের প্রবেশ করে। আর গ্রামের মানুষের দৌড়ানি দেয়। হনুমানটা সম্ভবত গাছে ওঠার চেষ্টা করত কিন্তু গাছের গায়ের কাটা দেখে উঠতে পারল না। কোথা থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে তা জানা ছিল না, তবে কিছুটা সময়ের পর লক্ষ্য করলাম গ্রামের ভেতর থেকে অনেক ছেলেমেয়েরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে হনুমান হনুমান বলতে বলতে। তখনই বুঝতে পারলাম গ্রামের মধ্যে হনুমান প্রবেশ করলেই তো তাকে দৌড়ানি দেওয়া হয়। হয়তো এই দৌড় খেয়ে হনুমান টা দৌড়াতে দৌড়াতে এতদূর এসে দাঁড়ালো কিন্তু এখানে কি তার স্বস্তি রয়েছে। কারণ আমরা প্রায় ১০-১৫ জন খেলাধুলা করছিলাম শিশু বাগানে।

হনুমানকে দেখে আমাদের দলের বন্ধুদের আর খেলাধুলার রুচি থাকলো না। তারাও তাদের হাতের ব্যাট বল এটা সেটা ফেলে ঢেলা তুলতে থাকলো আর হনুমানের দিকে ছুড়তে থাকলো। কিন্তু হনুমানের গা পর্যন্ত তো দূরেই থাক নিজের এরিয়ায় পার হলো না, সেই ঢেলাগুলো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম, খেলাধুলা বাদ দিয়ে কেন হনুমানের পান ঢেলা মারতে হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে থাকা অনেকেই খেলাধুলা বাদ রেখে হনুমান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পাড়াগাঁয়ে থেকে ছোট ছেলেমেয়েরা যারা ছিল তারা একটা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে গেল, তারা আর মাঠের দিকে আসলো না। শুরু করল আমাদের দলের বান্দর গুলা, হনুমানকে ঢিলা মারা আর সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমি চিন্তায় পড়লাম খেলাধুলার জিনিসগুলো কেউ যদি নিয়ে চলে যায়। তাই আমি বাগানে নক করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এছাড়া অন্যান্য ছেলেমেয়েরা বলতে থাকলো আরো একটা হনুমান পাড়ার মধ্যে রয়েছে। সেইটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো কোন গাছে উঠে পলিয়ে আছে। আমার তো বেশ ভয় ভয় অনুভব হলো।

আমার সাথে খেলাধুলা করা বন্ধুরা সবাই হনুমান তাড়াতে পিছু পিছু এগিয়ে মাঠ পার হয়ে গ্রামের অন্য প্রান্তের দিকে চলে যেতে লাগলো। আর যে সমস্ত ছোট ছেলে মেয়েরা দেখেছিল তারা আমার পর্যন্ত এসে থেমে গেল। এরপর এ সমস্ত ছেলে-মেয়েরা বাড়ির ভেতরের দিকে চলে যাওয়া শুরু করল। আমি একা পড়ে গেলাম। তখন আমার মনের মধ্যে প্রচন্ড ভয় সৃষ্টি হলো যদি গ্রামের মধ্যে থেমে থাকা সেই হনুমানটা আমাকে এসে কামড় দেয়। কি করবো নিজেও বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে মনে সাহস রাখলাম, আমার হাতে ব্যাট আছে। এরপর দেখলাম আমার বন্ধু মারুফ সে আমার সমবয়সী, পাড়া ঘায়ের মধ্য থেকে বের হয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। একটা কথা আছে বিপদের বন্ধু প্রকৃত বন্ধু। মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম এমন মুহূর্তে মারুফ এসে উপস্থিত হওয়ার অনেকটা সাহস পেলাম। এরপর আমরা দুইজন শিশু তলায় বসে গল্প শুরু করলাম, আর খেলনাগুলো পাহারা দিছিলাম। অনেকক্ষণ পর হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমাদের সাথে খেলাধুলা করা বন্ধুরা দূরের বাড়ি ঘরের পাশ দিয়ে মাঠে নেমে দৌড়াতে দৌড়াতে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।

তারপর মনের মধ্যে একটু স্বস্তি আসলো যাই হোক তারা তো ফিরে আসছে। তারা ফিরে আসতে আসতে বেশ হাপিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এসে যখন তারা উপস্থিত হল। তখন তাদের প্রশ্ন করলাম হনুমান কোথায় গেল। কেউ উত্তর দেয় না প্রচন্ড হাপায়। তাদের হাঁপানি দেখে বুঝতে পারলাম তারা পেরেশানি হয়ে গেছে হনুমান তাড়তে গিয়ে। অতঃপর তাদের মধ্যে একজন মুখ খুলল। হনুমান তাড়াতে তারাতে তারা আমাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে চলে গেছিল। সেখান থেকে আমাদের আত্মীয় হয় এমন একজন মানুষ এদেরকে তাড়া দিয়েছে। হনুমানের পিছু পিছু যেতে গিয়ে তারা কোথাও যদি হারিয়ে যায় তাহলে তো সমস্যা। তাই হনুমানটা একটা গাছে ওঠার পর সেই ব্যক্তি এদেরকে বকেছে এবং তাড়া করেছে। তারা উল্টা পথে বাড়ির দিকে ভয়ে পালিয়ে আসছে। অনেকে হয়তো বেশ কয়েকটা জায়গায় পড়ে গিয়েছে ফসলের শক্ত মাটিতে পড়ে হাঁটু কেলিয়ে ফেলেছে। এরপর তারা কোথায় কতদূর গিয়েছিল কি করল সবকিছু খুলে বলতে থাকলো আমাদের কাছে। তবে সেইদিন আর কোন খেলাধুলা হবে না। এভাবে বিকেল মুহুর্ত পার হয়ে গেল।

গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিহনুমান
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ভাইয়া আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুন একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আসলে ভাইয়া আপনার পোস্ট করে জানতে পারলাম আপনারা ক্রিকেট খেলা খেলছিলেন বাগানে। হঠাৎ হনুমান দেখে আপনাদের খেলা আর ভালো লাগলো না। তাছাড়া হনুমান দেখলে আমার খুবই ভালো লাগে।। গল্পটি খুবই দারুণ ছিল ধন্যবাদ শেয়ার করার।

সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ।

এই কন্টেন্টের সাথে জড়িত হুনো, আপনার মতামত দিন এবং ভালো থাকুন।