অতীতে একদিন ঘুড়ি উড়ানোর গল্প

in hive-129948 •  9 months ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


IMG_20240517_094501_9.jpg


ঘুড়ি উড়ানোর গল্প:



আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। সম্ভবত ক্লাস থ্রি অথবা ফোর এ পড়ি। ঠিক এই সময় বৈশাখ অথবা জৈষ্ঠ মাস। বউড়া গাছে বউড়া ফল থাকে তাই গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সেই ফল পাওয়া যায়। আর এই ফলের আঠা দিয়ে ঘুড়ি বানানোর সহজ হত। আমি একদম ছোট থেকে চিলি ঘুড়ি খুব তৈরি করতে পারতাম। ঠিক তেমনি একদিন খাতার কাগজ দিয়ে আর বউড়া ফলের আঠা দিয়ে অনেক সুন্দর একটি ঘুড়ি তৈরি করে ফেললাম। এরপর দোকান থেকে কাটিং সুতা, যে সুতা দিয়ে জামা কাপড় সেলাই করা হয়। সেই সুতা কিনে নিয়ে গেলাম। আমি ছোট থেকে মোটা কাটিং সুতা পছন্দ করি অর্থাৎ যেই কাটিং এর বেশি সুতা থাকে। যাইহোক ঘুড়ি আর সুতা বেঁধে নিয়ে চলে গেলাম মাঠের দিকে। এখন যে নতুন ধান উঠছে, এরপর মাঠের জমি গুলো ফাঁকা পড়ে থাকত। কিছু কিছু কৃষকেরা ফাঁকা পড়ে থাকা জমিগুলো টেকটার দিয়ে চাষ করে ফেলে রাখত, যেন ঘাস নষ্ট হয়ে যায়।


IMG_20240511_175654_171.jpg



এরপর আমি একা একাই আমার ঘুড়িটা ওড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। ঘুড়ি হাতে দৌড়ানো শুরু করলাম ফাঁকা মাঠে। এরপর কখন যেন সেই চাষ করা জমির উপর উঠে পড়েছি। ঠিক এমন অবস্থায় হঠাৎ আমার চোখের সামনে একটি ছোট সাপের বাচ্চা বাধলো। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি সাপটা দেখে যেন আতঙ্কে পড়ে গেলাম। বুঝতে পারছেন চাষ করার জমি মাটি কত শক্ত হয়ে থাকে। শক্ত এই চাষ করা মাটির উপর পড়ে বুঝতে পারছে হাত-পা বেশ কয়েক জায়গা কেটে গেল। আমি বেশ ব্যথা অনুভব করলাম। এরপর আবারও ঘুড়িটা ওড়ানোর প্রচেষ্টা। যেহেতু কষ্ট করে ঘুড়িটা তৈরি করেছি একা একা, না উড়িয়ে যেন শান্তি নেই মনে। একদিকে সাপ দেখে পড়ে গেছি আর একদিকে হাত পা কেটে গেছে তবুও যেন মন মানছে না, যতক্ষণ না ঘুড়ি উড়াতে পারছি।


IMG_20240414_150600_2.jpg



এরপর আমি আমাদের বাড়ির দক্ষিণ পাশের পুকুরের ওপারে এক ধানের জমিতে এসে উপস্থিত হলাম। কারণ পড়ে যাওয়ার কারণে বেশ খারাপ লাগছিল বলে দূর থেকে বাড়ির নিকটের দিকে চলে আসলাম। এখন অবশ্য সেই ধানের জমিগুলো সব পুকুর হয়ে গেছে। এরপর আমি আবারও একা একা চেষ্টা করছি ঘুড়িটা ওড়ানোর জন্য। যাইহোক ঘড়িটা বেশ উপরে উঠে গেল, আমিও একটু দৌড়াতে থাকলাম। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাসের কারণে ঘুড়িটা উপরের দিকে যেতে থাকলো। এই মুহূর্তে আমি বেশ আনন্দ পেলাম কিন্তু সারা শরীর প্রচন্ড ঘেমে গেছে। একদিকে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলো কপালে এসে লাগবে। আর একদিকে প্রচন্ড গরম। আর এই মুহূর্তে ঘুড়িটা উপরে উঠানোর প্রচেষ্টা। যাইহোক ঘুড়িটা আমার বেশ অনেক উপরে উঠতে থাকলো, আমিও সুতা গুলো কেড়িয়ে দিতে থাকলাম। একটি মুহূর্তে লক্ষ্য করলাম আমাদের পুকুরপাড়ের বাঁশ বাগানের উপর দিয়ে ঘুড়িটা উঠে গেছে। আমি বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম এবং আশেপাশের লক্ষ্য করে দেখছিলাম আমার ঘুড়ি ওড়ানো কেউ দেখছে কিনা। অর্থাৎ আমি খোঁজ করছিলাম কোন মানুষ আমার ঘুড়ি উড়ানো দেখছে কিনা। যেন লোকে আমার ঘুরে ওড়ানো দেখে এবং আমার এতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করবে। কারণ অনেক উপরে ঘুড়ি উঠাতে পেরেছি,নিজের হাতে তৈরি করা ঘুড়ি বলে কথা।


IMG_20240517_094503_4.jpg



কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুড়ির সুতা কেটে গেল। সুতা কেটে যাওয়ারই কথা যেহেতু এটা ছিল কাটিং সুতা। তখন আমরা ভালো মানের সুতা পাব কোথায়। এরপর মনটা আমার এতটা খারাপ হয়ে গেল, যা আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। তবে শেষমেষ ঘুড়ির সুতা এসে বেঁধে গেল আমাদের বাঁশ বাগানের উপর। আর বাঁশ বাগানের সুতা বেঁধে ঘুড়িটা উপরে উড়তে থাকলো। মনটা আমার ভীষন খারাপ হয়ে গেল। একদিকে পড়ে গেছিলাম শুকনো মাটির উপর, হাত পা ছুলে গেছে। এদিকে ঘড়িটা হারালাম। এরপর বাড়ির মধ্যে চলে আসলাম। বারবার তাকিয়ে দেখছিলাম ঘুড়িটা উড়ছে কিনা। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখলাম একটি মুহূর্তে ঘুড়ি আর উড়ছে না যেন লম্বা বাঁশ বাগানের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বেঁধে গেল। কোনভাবেই উচু বাঁশ বাগান থেকে পাড়া সম্ভব হলো না। আর এভাবে ঘুড়ির পানে চেয়ে থাকতে থাকতে রাত হয়ে গেল। এই মুহূর্তে আমাকে আমার নিজের কাছে বেশ অসহায় মনে হচ্ছিল।



গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিঘটনাস্থল এরিয়া
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ভাইয়া আপনার তো সাহস অনেক। আমি হলে তো সাপ দেখে হার্টফেইল করতাম। বেশ সুন্দর করে ছেলেবেলার ঘুড়ি উড়ানোর গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়তে পড়তে মন হচ্ছিলো যে আমি মনে হয় সামনা সামনি এই দৃশ্যগুলো দেখছি। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

ছোটবেলা থেকে আমার যথেষ্ট সাহস।

ছোটবেলা এভাবে ঘড়ি তৈরি করে বাতাস না থাকলেও উড়ানোর চেষ্টা করতাম। ঘুড়ি নিয়ে দৌড়ানো শুরু করতাম যতটুক উপরে উঠতো ততটুকুই মজা পেতাম। আপনি দেখছি সাপ দেখে ভয় পেয়ে পড়ে গিয়ে হাত পা কেটে গিয়েছিল। আসলে সেই বয়সে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতো। অনেক দৌড়াদৌড়ি করতাম আর হাত পা কেটে যেত পড়ে গিয়ে। সেই দিনগুলো আসলেই অনেক সুন্দর ছিল ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।

একদম ঠিক বলেছেন ভাই

ভাইয়া আপনার আজকের গল্প পড়ে কিছুটা সময় সেই ছেলেবেলায় চলে গিয়েছিলাম। বেশ সুন্দর করে আপনি আমাদের মাঝে ছেলেবেলার ঘুড়ি উড়ানোর গল্প উপস্থাপন করেছেন। তবে ভাবছি সাপ দেখার পরও আপনি কি করে আরও ঘুড়ি উড়ালেন। যাই হোক সব মিলিয়ে দারুন ছিল আপনার আজকের পোস্ট।

এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

ছোটবেলায় সবাইকেই দেখতাম এই সময়টাতে ঘুড়ি উড়াতে। আকাশে রংবেরঙের অনেক সুন্দর সুন্দর ঘুড়ি দেখা যেতো, যেগুলো দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগতো আমার কাছে। ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার কথাটা শুনে অনেক বেশি খারাপ লাগলো। তবে পড়ে যাওয়ার পরে আপনি আবারও ঘুড়ি উড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, যার কারণে অনেক উপরে ঘুড়ি উড়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু তারপরে সুতা কেটে গিয়েছিল শুনে আরো খারাপ লাগলো। ছোটবেলায় এরকম ছোট ছোট বিষয়গুলোর কারণে সত্যি অনেক মন খারাপ হতো। যাই হোক খুব ভালো লাগলো আপনার মুহূর্তটা আজকে জানতে পেরে।

আমার গল্প পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপু।

ভাইয়া আপনার এই ঘুড়ি উড়ানোর গল্পটা পড়ে আমার অনেক ভালো লাগলো। আর আমারও একটি গল্পের কথা মনে হয়ে গেল। প্রতিবছরই ঘুড়ি ওড়ানোর সময় আমার ছোট ভাইকে ঘুড়ি কিনে দি। আর সে ভালো করে ঘুড়ি উড়াতে পারে না। আকাশে তার ঘুড়ি উড়লেই ঘুড়ি হারিয়ে যাই। তখন বাড়িতে এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আপনার এই ঘুড়ি উড়ানোর গল্পটা পড়ে আমার ছোট ভাইয়ের কথা মনে হয়ে গেল। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য

আমার এই গল্প পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।