আসসালামু আলাইকুম / নমস্কার
বন্ধুগণ,
আপনারা কেমন আছেন? আশা করি,সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক অনেক ভালো রয়েছি।
এই 'আমার বাংলা ব্লগ' কমিউনিটির বাংলাদেশ-ভারত এর ভাই-বোন,ফাউন্ডার,মডারেটর সহ সকল সদস্যবৃন্দকে আমার পক্ষ থেকে জানায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। শুরু করতে যাচ্ছি আজকের বিশেষ ড্রাই পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে মেকানিক্স এর কাজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। পুরনো নষ্ট জিনিস এর মধ্য থেকে কিভাবে নতুনে রূপ দেওয়া যায়। কিছু নষ্ট ও পুরনো লাইটের সার্কিট,বাল্ব তার ও কেচিং এবং ল্যাপটপের পুরনো নরমাল ব্যাটারি দিয়ে নতুন করে একটি লাইট তৈরি করা দেখাতে চলেছি। চলুন তাহলে এখন শুরু করা যাক।
অনেকদিন যাবত আমার বাসাতেই একটি লাইটের কাচিং পড়েছিল। যার ভেতরের সার্কিট ও ব্যাটারি পুড়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন মেরামত করবো ভেবে করা হয়ে ওঠে না সার্কিট না থাকার জন্য। ভাংড়ি লাইট থেকে সার্কিট ম্যানেজ করি। কিছু তার ম্যানেজ করি এবং ইলেকট্রনিক্সের ঘর থেকে পুরাতন ল্যাপটপের পেন্সিল ব্যাটারি ম্যানেজ করি। আর লাইটের বাল্বটা এই ক্যাসিংয়ের ভেতরে ছিল।
ধাপ :-১
প্রথমে লক্ষ্য করুন বন্ধুগণ,একটি লাইট তৈরি করতে যে সমস্ত উপকরণ গুলো প্রয়োজন তা সিরিয়াল বাই সিরিয়াল ছবি দেয়া হলো।
- কিছু নর্মাল তারের টুকরা
- কিছু ওয়াইফাই লাইনের ক্যট-সিক্স তারের টুকরা
- এসি-পিন
- ল্যাপটপের পুরনো পাঁচটি ব্যাটারি
- পুরানো লাইটের বাল্ব
- পুরনো লাইটের ক্যাসিং
- ভাংড়ি লাইট থেকে খুঁজে পাওয়া একটি ভাল সার্কিট
ধাপ :-২
লাইটটি তৈরি করতে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সে সমস্ত যন্ত্রপাতির একটি চিত্র। আপনারা লেখা ও চিত্রে লক্ষ্য করুন
- একটি সিরিজ বোর্ড
- একটি তাতাল
- রাং
- রজন
- কাইচি
- একটি পাওয়ার ব্যাংক (আমার নিজের তৈরি)
- একটি কেবল
- একটি মাল্টিমিটার
- একটি এসি কড চার্জার
- একটি টেস্টার
- একটি ব্লেড
ধাপ :-৩
এখানে ভালোভাবে খেয়াল করুন। বাল্বটি ভালো আছে কিনা তাই চেক করার জন্য একটি ক্যাবলের প্লাস-মাইনাস তার লাগিয়ে নিলাম ততাল দিয়ে বাল্বের উপরাংশের প্লাস-মাইনাস দাতে। এবং চেক করে দেখলাম পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে। বাল্বটি ভাল রয়েছে এবং ইহা জ্বলে উঠেছে। তারপর মাল্টিমিটার দিয়ে সার্কিটটি চেক করে দেখলাম সার্কিটটি পুরোটাই ভালো। যাহা এতদিন নষ্ট বলে সবাই জানত,তাই ভাঙ্গিতে পড়েছিল।
ধাপ :-৪
এবার বাল্বের পিছনে তিনটি তার সোল্ডারিং করার দৃশ্য। একে একে তিনটি তিন-কালারের তার,তিনটি স্থানে লাগিয়ে নিলাম বাল্ব এর পিছনে থাকা বোডটিতে। প্লাস মাইনাস ও এক্সট্রা তার।
ধাপ :-৫
এবার তাতাল দিয়ে বাল্বের তারগুলো সার্কিট বোর্ডে একটি একটি করে লাগানোর দৃশ্য। লক্ষ্য করুন সার্কিটের প্লাস-মাইনাস অংশে নির্দিষ্ট স্থানে তারগুলো সোল্ডারিং করছি তাতাল দিয়ে। এরপর ডিসি অংশ থেকে দুইটা নীল কালারের তার সোল্ডারিং করলাম ব্যাটারি লাগানোর উদ্দেশ্যে। এরপর এসি-পিন এর তার দুটি লাগালাম তাতাল দিয়ে সার্কিট বোর্ডের যথাস্থানে।
ধাপ :-৬
ল্যাপটপ এর পুরাতন ব্যাটারি গুলো ওয়াইফাই লাইনের ক্যট-ছিক্স দুইটা তারের মাধ্যমে প্লাস-মাইনাস অংশগুলো সোল্ডারিং করেনি। ক্যট-সিক্স তার দিয়ে কেন ব্যাটারি সংযুক্ত করছি এটা জানা একান্ত জরুরী সবার জন্য। কারণ ক্যট-সিক্স তার পুরোপুরি তামার হয়ে থাকে। যাহা পেন্সিল ব্যাটারি পিছনের অংশে ওয়াইরিং করা সহজ। অন্যান্য তার পেন্সিল ব্যাটারিতে লাগতে চায় না। তাই এই তার সবচেয়ে বড় উপযুক্ত। তাই তাতালের দাত রজনে লাগিয়ে পরিষ্কার করে নিলে, রাং দিয়ে সোল্ডারিং করার সহজ হয়ে যায়। এবং কারেন্ট সরবরাহ করাতে উপযোগি।
ধাপ :-৭
কেসিং এর মধ্যে যথেষ্ট পরিমান জায়গা না থাকায় তিনটা বড় আর ছোট মোট চারটা ব্যাটারি একসাথে প্লাস ও মাইনাস আলাদা ভাবে সোল্ডারিং করে নিলাম এবং সার্কিট এর সাথে ব্যাটারিগুলোর প্লাস ও মাইনাস যুক্ত করলাম।
ধাপ :-৮
লাইট এর ভেতরের অংশ পুরোপুরি সংযুক্ত করা হয়ে গেছে। এবার জ্বালিয়ে দেখি আলো জলে কিনা। হ্যাঁ ব্যাটারীতে কিছু পরিমাণ চার্জ থাকায় সার্কিট বোর্ড এর সুইচ অন করার সাথে সাথে বাল্ব জ্বলছে।
ধাপ :-৯
লাইট এর ভেতরের অংশ গুলো পুরা কমপ্লিট করা হয়ে গেলে কেসিং এর ভেতরে নির্দিষ্ট জায়গা অনুসারে বাল্ব,সার্কিট,ব্যাটারি এবং এসি-পিন জায়গামতো বসায়। এবং ক্যাসিং দিয়ে সমস্ত বডিটাকে আটকে ফেলে।
ধাপ :-১০
এবার লাইটটা সম্পূর্ণ রূপ দেওয়ার পরে নাট বল্টু লাগাই। লাগানো হয়ে গেলে পরিপূর্ণ একটি লাইট এর মত দেখা যাচ্ছে। বাজার থেকে কিনলে যেমন লাগে। এবার সুইচ অন করে দেখি! ওয়াও! ওয়াও!! ওয়াও!! লাইট দেখতে পুরো নতুনের মত লাগছে। ল্যাপটপের ব্যাটারির কারণে বাল্বের আলো অনেক উজ্জ্বল হচ্ছে। আলোর ফোকাস চোখে লাগছে। পুরাই মাথা নষ্ট,অবিশ্বাস্য ব্যাপার। নিজেকেই নিজের ইচ্ছে করছে সবাস দিতে।
ধাপ :-১১
এবার লাইকটি পরিপূর্ণ কমপ্লিট ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে কিনা চার্জ করে দেখার পালা। হ্যাঁ বন্ধুরা এসি-কড চার্জার তার লাইট এর পিছনে লাগিয়ে কারেন্টের সিরিজ বোর্ড কানেকশন দিয়ে দেখি। আপনারা লক্ষ্য করুন লাইটের মাঝ বরাবর একটি লাল বাতি জ্বলছে। যদি লাইটটা পরিপূর্ণ সমাপ্ত না হতো ভেতরে কোন সমস্যা বা গন্ডগোল থাকলে সিরিজ বোর্ড এর একশ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলে উঠত। যেহেতু বাল্বটি জলে ওঠেনি সেহেতু পরিপূর্ণভাবে লাইটটি ঠিক হয়েছে। আর এরই মধ্য দিয়ে পুরাতন নষ্ট যন্ত্রপাতি থেকে জিনিস বাছাই করে নতুন একটি লাইট তৈরি করা হয়ে গেল। আমার পনেরো বছরের অভিজ্ঞতার সাফল্য এটাই।
আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আপনারা যারা কারেন্ট সম্পর্কে কিছুটা বুঝেন, তাতাল ব্যবহার করেছেন,তারা চাইলেই এমনভাবে পুরনো নষ্ট লাইট গুলো থেকে একটি লাইট তৈরি করতে পারেন।
কেমন ছিল উপস্থাপনা,কতটুকু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি আপনাদের মাঝে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আমার এই লাইট তৈরিটা আপনাদের পছন্দ হলে রিস্ট্রিম করে বন্ধুদের মাঝে দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন।
সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
🌺💞💞🌺
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
মোবাইল | itel vision 1 |
ক্যামেরা | Al dual camera |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | যথাসময়ে স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |