ছোটকালে তিনজন মিলে মুন্দাইল বিলে মাছ ধরার গল্প

in hive-129948 •  10 months ago 
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20231202_141318_162.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি গল্প পোস্ট। এটা আমার ছোটবেলার স্মৃতি থেকে নেওয়া সুন্দর একটি মাছ ধরার গল্প। আশা করি গল্পটা আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। চলুন গল্পটা মনোযোগ সহকারী পড়ি।

IMG_20231124_162220_228.jpg


ফটোগ্রাফি সমূহ:



তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। আমার বড় ভাই যখন যেটা উদ্দেশ্য করত ঠিক সে উদ্দেশ্যের পিছে আমিও দূরে বেড়াতাম। একদিন হঠাৎ সে আমাকে বলছে আজকে মুন্দাইল বিলে আমরা তিনজন মাছ ধরতে যাব। আমরা তিনজন বলতে আমরা দুই ভাই আর আমাদের ভাগ্নে মামুন বা মিঠু। আমরা সকালবেলায় খাওয়া দাওয়া করেছি এরপর দুপুরের দিকে মাছ ধরার জন্য চলে গেছি। এরপর দুপুরের খাওয়া দাওয়ার কোন চিন্তা নেই আমাদের উদ্দেশ্য মাছ ধরতেই হবে। বাড়ি থেকে এক কিলো দূরে। অনেক গভীরে প্রবেশ করলাম বিলের। আমার কিছুটা ভয় করতে লাগলো এতদূর চলে আসলাম তবে সাহস ছিল মনে যেহেতু ওরা দুইজন আমার বড় ওরা আমার সাথেই তো আছে। আরো সাহস লাগছিল পরের সাথে মাছ ধরতে আসেনি। তবে সবচেয়ে বেশি সাহস লাগছিল আমি সাঁতার কাটতে জানি। বিলের মধ্যে প্রবেশ করলাম তিনজন। কোথা থেকে কিভাবে মাছ ধরবে সেটা আমি জানি না কিন্তু ওরা মাছ ধরবে সেটাই জানে। মিঠুন নাকি এর আগে কার সাথে এই বিলে এসেছিল এবং দেখে গেছে অনেক মাছ রয়েছে বিলে।

IMG_20231121_071812_4.jpg

আমি দেখলাম সেই বিলে প্রচন্ড পরিমাণ পানি ওরা কতটুক জায়গা ছেঁকতে পারবে আর মাছ ধরতে পারবে। ঠিক এভাবে বিলে দুই থেকে তিন ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে কোন মাছ পেল না। এরপর দূর থেকে উঠে চলে আসলো কিছুটা বিলের কিনারে যেদিকে আমাদের স্কুল অর্থাৎ বিলের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম সাইডে। এখানে আসার পর প্রায় এক ঘন্টা ধরে তারা একটা জায়গার পানি ছেঁকতে থাকলো,আমি বসে বসে দেখতে থাকলাম আর তারা যখন যা হুকুম করছিল সে তা শুনতে থাকলাম। একটি পর্যায়ে পানি ফুরিয়ে গেল বেশ কিছু মাছ পেল তিনটা ভাগ হলো। তিন ভাগে মাছ হল তিনটা করে মোট ৯ টা। পাশাপাশি ছোট কয়েকটা মাছ ছিল, এতে মিঠুনের মনটা খারাপ হলো। তখন তারা অনুমান করল অনেক বেলা হয়ে গেছে বিকাল হয়ে গেছে বাড়ির দিকে যেতে হবে। এদিকে আমাদের দুই ভাগ মাছে মাছের সংখ্যা একটু বেশি মিঠুনের কম। তখন মিঠু বলল আমরা এই সোজা রাস্তায় উঠে চলে যাব, যেয়ে পুলের নিচে পানি বের হয় সে জায়গায় মাছ পাওয়া যেতে পারে। ওখানে একটু চেষ্টা করে মাছ ধরে বাড়ি চলে যাব। এ কথা শুনে ভাই রাজি হয়ে গেল কিন্তু আমার খিদের জ্বালায় পা উঠছে না। এতদূর পথ কিভাবে রাস্তায় উঠবো, সেটাই বুঝছি না। তারপরে আবার বাড়ি যেতে হলে অতটা পথ। যাইহোক কষ্ট করে আমরা রাস্তার দিকে অগ্রসর হলাম।

IMG_20231130_153855_463.jpg

অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে রাস্তার পুলের নিচে উপস্থিত হলাম। কিছুটা সময় ধরে ভাই আর মিঠু আলাদা আলাদা জায়গা ছেঁকা শুরু করে দিল। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম সারাদিন বিলে ঘুরে ঘুরে যা মাছ হয়নি তার ডবল মাছ হয়ে গেল কয়েক মিনিটের মধ্যে। এখানে শোল,টাকি, পাকাল, জিএল সহ অন্যান্য মাছ পাওয়া গেল। এতে নিঠুর মনটাও খুশি হয়ে গেল আমাদের অনেক মাছ হয়ে গেল। ওদিকে আমার আব্বা আমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আমরা কোথায় গেছি সারাদিন নিখোঁজের মত। কারণ বাড়িতে ভাই বলে আসেনি, আর আমি তো ছোট এদিকে হুশ নেই।

IMG_20231130_153901_029.jpg

আমার আব্বা চারিদিক আমাদের সন্ধান করেছে কোথাও খুঁজে পায়নি। আমরা ছোট থেকে জানি আমার আব্বার ডায়াবেটিসের রোগ রয়েছে, ওই মুহূর্তে আমাদের গ্রামে কারো ডায়াবেটিস ছিল না। বিকেল বেলায় আব্বা রাস্তায় হাটাহাটি করতে আসে,এই পুল পর্যন্ত হাঁটতে এসে বাড়ি ঘুরে যায়, তাহলে কত দূর বুঝতে পারছেন। আব্বা এসে আমাদের দেখল। দেখলাম আব্বা প্রচন্ড রেগে রয়েছে, যেহেতু আমাদের খুঁজে পায়নি। আমি আনন্দের সাথে আব্বার কাছে মাছগুলো নিয়ে দেখালাম। মাছ একটু বেশি দেখে রাগটা কমিয়ে বলো দ্রুত সব বাড়ি চলে যাও মাছ ধরতে হবে না। কি হবে এত মাছ? সন্ধ্যাবেলায় মাছকুটিবেকে, জানো না মার একলা কাজ করতে কষ্ট হয়। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম ভাই আব্বার কথা শুনে ভয়েতে দ্রুত মাছ ধরা বাদ দিয়ে উঠে চলে আসলো, আর এভাবে বাড়ি চলে গেলাম। তবে তিনজনা সন্তোষজনক অনেক মাছ পেয়ে গেছিলাম যা সারা দিনে পাইনি। মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে তার ডবল মাছ হয়ে গেছিল এখানে।

IMG_20231130_153852_084.jpg


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বড় ভাইয়ের সাথে বিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেই গল্পটি পড়ে আমারও সোনালী সেই ছোট্টবেলার কথা মনে পড়ে গেল। নদীতে এই মুহূর্তে পানি শুকিয়ে যেত বিভিন্ন ছোট্ট খালে এইভাবে মাছ ধরতাম কি সুন্দর মুহূর্ত । যখন অনেক মাছ পেতাম অনেক খুশি লাগতো। সেই দিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে ভাই। খুবই মিস করি। অনেক সময় আছে মাছ ধরতে ধরতে রাত হয়ে গেছে। যাইহোক, অবশেষে আপনারা অনেক মাছ পেয়েছিলেন। বাবা অপেক্ষা করছে আপনাদের
ওপর রেগে আছে হয়তো মাছ দেখে খুশি হয়ে গিয়েছিলেন।

Posted using SteemPro Mobile

হ্যাঁ ভাই ছোটবেলার সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে

আসলেই ছোটবেলায় বিলে মাছ ধরার মজাটাই অন্যরকমের ছিল। সারাদিন মাছ ধরতে অনেক ভালো লাগলো কিন্তু যখনই বাড়ি ফেরার সময় হতো তখনই ভয় করতো। কিন্তু অবশেষে যখন আব্বা বাড়িতে চলে যেতে বলত তখন খুশিতে মনটা ভরে উঠতো।

ছোটবেলার এই মাছ ধরা বড়ই মধুর একটা সময় ছিল

ছোট বেলায় মাছ ধরার সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন। আসলে বিলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রথমে মাছ না পেলেও পরবর্তীতে মাছ পেয়েছেন তিন ভাগ করেছেন। মিঠুর মন খারাপ হয়েছে। আসলে ছোট বেলায় একটুতেই মন খারাপ হয়ে যায়।আসার সময় আবার ব্রিজ এর নিচে মাছ পেয়েছিলেন এবার নিশ্চিই মিঠুর মনটা ভরে গেছে।আপনার বাবা আপনাদের কে খুঁজেছে।অনেক সময় থেকে নেই তাই চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে পোস্ট টি ভালো লাগলো।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ লাস্টে একদম রাস্তার পাশে এসে অনেক মাছ পাওয়ায় মিঠূর মন বেশ ভালো হয়েছিল

ছোটবেলার মাছ ধরার অনুভুতির গল্প খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। বাড়িতে না জানিয়ে যাওয়াটা সত্যিই ঠিক হয়নি। আপনারা নিশ্চয়ই অনেক বকা খেয়েছেন। যাক এত সময় পর অবশেষে অনেক গুলো মাছ ধরতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।

লাস্টে একদম রাস্তার পাশে থেকে অনেক মাছ ধরেছিলাম।