গল্প: শৈশবের স্মৃতি স্মরণ-বন্ধুত্বের বন্ধন

in hive-129948 •  14 days ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। স্মৃতিচারণ মূলক গল্প গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে ভালো লাগে। ঠিক তেমনি একটা অতীত স্মৃতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। এই গল্পটা পড়ে আপনারা বেশ অজানা কিছু জানতে পারবেন। তাহলে বন্ধুরা আর দেরি না করে ফিরে যাই অতীত জীবনে। জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার মধ্য থেকে একটা ঘটনা স্মরণ করি। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করি আমাদের শৈশব বয়সের বন্ধু,টুটুলের একটি ঘটনা।

Picsart_24-12-08_17-05-24-955.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


বাল্য বন্ধুর গল্প:


ক্লাস থ্রিতে পড়াকালীন একটা ঘটনা। আমাদের একটা চাচাতো ভাই টুটুল। সে ছোট থেকে একটু বেয়াড়া টাইপের ছিল। পারিবারিক বিভিন্ন কারণে সে কেন জানি একটু ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছিল। তবে মনটা তার অনেক ভাল ছিল। ছোট থেকে প্রচন্ড রাগ আর অভিমান। হঠাৎ একদিন সে আমাদের পাশ দিয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। কেন জানি কি একটা কথা মনে পড়ে আমি তাকে ডাক দিলাম। আমাদের কাছে আসলো। তারপর বললাম আর দরকার নেই, চলে যাও। সে বেশি দূর নয়, বড়জোর দশ হাত দূর থেকে আমাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু ফিরে যেতে বলাই তার রাগ হয়ে গেল। বলে উঠলো আমার এই ফিরে আসার মূল্য দিতে জানিস। আমি তখন একটু ভীতু হলাম। কারণ তার মুখের ভাষা ভালো না। যখন তখন যার তার গায়ে হাত উঠিয়ে ফেলে। বয়সেও আমার চার বছরের বড় হবে। তবে যাই হোক আমার আর আমার বন্ধু মারুফের মুখপানে তাকিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। এরপর আবার ফিরে চলে গেল। তখন আমার বন্ধু মারুফ বলল ওর সাথে কথা না বলাই ভালো। যখন তখন খারাপ ব্যবহার করে। চুপ মেরে আমি আর মারুফ, মারুফের দাদার দোকানের মাচায় বসে থাকলাম। তখন তাকে নিয়ে ভাবতে থাকলাম আর এটা সেটা বলতে থাকলাম।


বেশ কয়েকটা দিন পার হয়ে গেল। হঠাৎ জানতে পারলাম আমাদের সেই রাগী বন্ধুটা বেশ অসুস্থ। আমি হঠাৎ করে খেলতে খেলতে তাদের বাড়ির উঠানে উপস্থিত হলাম। দেখলাম তার প্রচন্ড জ্বরে হাত-পা কাঁপছে। ঘরটা ছিল ঝাপের বেড়া। কোনরকম একটি পুরাতন চাদর গায়ে দিয়ে বসে রয়েছে। তার প্রচন্ড ডাবের পানি আর ডাবের শাঁস খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ এই মুহূর্তে ডাব গাছে উঠে কে পেরে দিবে। এখনকার মত ঔষধের ব্যবস্থা তত ছিল না। শুধুমাত্র পাড়া গা থেকে তুলসী পাতার রস খাওয়ানো হয়েছে। অন্যান্য দিন সে নিজেই গাছে উঠে ডাব পেড়ে খায়। মাঝেমধ্যে গাছ থেকে ডাব পাড়ার কারণে তার বাবার সাথে ঝগড়া হয়। তার বাবা তাকে মারতে পারে এমনকি ভাত বন্ধ হয়,এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এই দিন তার জন্য ডাব পেড়ে দেওয়ার লোক নেই। তার অবস্থা দেখে আমার প্রচন্ড মায়া লাগলো। আমি শুনতে পারলাম অনেক খোঁজাখুঁজি করে কেউ ডাব পেড়ে যায়নি। আমি ছোট থেকে গাছে উঠতে পারি। তবে কোনদিন কারো গাছে উঠি নাই, শুধু নিজেদের গাছে। আর ডাব গাছের ছোট থেকে উঠা শিখেছিলাম, তবে নিজেদের ছোট গাছগুলোতে বেশি উঠতাম।


যাইহোক আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে ডাব পেড়ে দেবো। তার আম্মা কিছুতেই আমাকে গাছে উঠতে দিবে না। তার আম্মা বলতে থাকলো যদি তোমার আব্বা আম্মার শুনে তোমাকে দিয়ে আমরা ডাব পেড়ে নিয়েছি, তাহলে তোমার আব্বা আম্মা আমাদের উপর রাগ করবে। কারণ তার আব্বা চাচারা আমাদের কাজ করে দিত। কিন্তু এ সমস্ত বিষয়গুলো আমি কিছুই মনে করি নাই। আমার প্রচন্ড মায়া লেগেছিল তার উপরে। বন্ধুটা যতই রাগী হোক বয়সে যতই বড় হোক না কেন, বন্ধু বলে কথা। সে আমাদের সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছে, কারণে অকারণে মেরেছে। কিন্তু ওইদিন তার অবস্থা দেখে আমার খুব মায়া করছিল। তাই আমি কারো কথা শুনলাম না। গাছ পানে তাকিয়ে দেখলাম গাছটা বেশ বড়। মাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তবুও মনের সাহস নিয়ে আমি গাছে উঠে পড়লাম। গাছে বেশ অনেক ডাব ও দো মালা নারিকেল ছিল। সবাই জানেন দো মালা অর্থাৎ যে ডাবের সাস হয় সেই ডাবগুলো খেতে ভালো লাগে। একদিকে লবণাক্ত পানি আর একদিকে সাদা সাস। বন্ধু বলল ওই ডাব পেড়ে দিলে ভালো হবে।


আমি গাছে লক্ষ্য করে দেখলাম তিন চার কাইন ডাব রয়েছে পাড়ার মতো। বন্ধু যেটা দেখালো আমি সেইটা পাড়া শুরু করলাম। প্রায় দশটা মত দোমালা ডাব পেড়ে দিলাম। এরপর গাছ থেকে নেমে এসে কেটে দিলাম। ডাব থেকে সাস বের করে দিলাম। কেন জানি তার প্রতি এতটা মায়া লেগেছিল। আমি তার অসুস্থতা দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। আমার এমন কার্যকলাপ দেখে তার মা অনেক খুশি হল। আমার বন্ধু তার পাশে বসিয়ে নিয়ে আমাকেও ডাবের পানি সাস খেতে দিল। আর এভাবেই তার সাথে আমার এমন একটা আলাদা সুসম্পর্ক স্থাপন হল। আর কোনদিন কোন কারণে সে আমার সাথে রাগারাগি করেনি বা অকারণে আমার গায়ে হাত উঠায়নি। এমনকি সে জীবনের শেষ একটা মুহূর্তে আমার সাথে তার কষ্ট লাগা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গল্প করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হলেও সত্য ২০১৩ অথবা ১৪ সালের দিকে আস্তে আস্তে সে মানসিকভাবে ভারসাম্য হারাতে থাকে। এখন পাগল অবস্থায় পথে পথে ঘুরে। তবে আমি ছোটবেলায় তার মায়ের মুখে প্রায় শুনতাম, কারণে অকারণে তার মা বলতো পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে পারিস না। আমরা প্রত্যেকদিন তাদের বাড়িতে খেলাধুলা করতে যেতাম। তার মায়ের মুখে প্রায় দিন এ কথাই শুনতাম। এখন জানিনা কেন এমনটা হল,এটা কি মায়ের সেই বদদোয়া কাজে লাগল নাকি অন্য কোন কারণে। তবে অনেকেই বলে চাচাতো ভাইরা নাকি মাথায় আঘাত করেছিল তারপর থেকে ব্যালেন্স হারা হয়ে গেছে। এখনো মন থেকে দোয়া করি বন্ধুটার জন্য, আল্লাহ যেন তাকে পুনরায় সুস্থ স্বাভাবিক করে দেয়।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিপ্রাথমিক বিদ্যালয়
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
Photo editingPicsArt app
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

08-12-24

Screenshot_20241208-192019.jpg

Screenshot_20241208-191618.jpg

Screenshot_20241208-191805.jpg