গল্প: মূলা নির্যাতন

in hive-129948 •  last year 
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20231223_124929_0.jpg




হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


মূলার গল্প:


তখন আমি ছিলাম অনেক ছোট। সম্ভবত প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয়ত অথবা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ছোট থেকে আমি আর মারুফ দুই বন্ধু। আর সেই কারণে আমাদের ফসলের মাঠ বাদ দিয়ে মারুফের দাদা যে মাঠে শাকসবজি সহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতো তাদের মাঠে মারুফের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করতাম ছাগলের ঘাস কাটার জন্য। শীতের সময় মারুফের দাদা একটি পাঁচ কাটা জমিতে সরিষা বলুনতো, পাশাপাশি একটু অংশে মূলার বীজ বপন করত। ওই জায়গাতে বেশ ভালো মূলা হতো কারণ মাটিটা বেলে দো-আঁশ মাটি ছিল। যাইহোক এমন একটি দিনের ঘটনা। আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু ছাগলের জন্য ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে ওই মাঠে উপস্থিত হলাম।

IMG_20231201_104248_0.jpg

আমরা সবাই মারুফদের সে মূলার জমির নিকটে উপস্থিত হলাম। এমন সময় লক্ষ্য করছি মারুফের দাদা রাগে গজগজ করছে আর কি জানি গালাগালি করছে। এরপর আমাদের সবার দিকে না তাকাতেই কিভাবে যেন গালি দিয়ে উঠলো আর বলল মূলা চুরি করে নিয়ে যাবে যাক। তাই বলে এভাবে নষ্ট করে থুয়ে যাবে। আমরা একটু ভয় পেয়ে গেলাম দাদা হঠাৎ এভাবে রাগের মাথায় গালিগালাজ করছে না জানি আমাদের আবার মারে নাকি। তবুও আমরা দাদার কাছে এগিয়ে গেলাম। তখন মারুফের দাদা দুঃখের সাথে আমাদের দেখাচ্ছে 'দেখ হারামজাদাদের কাজ দেখ, মূলা নায় সস্তা তাই বলে এভাবে নষ্ট করে থুয়ে যাবে'? আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো! সেই সময় মূলার দাম ছিল আট আনা অথবা এক টাকা কেজি। দাম নাই থাক তবে অন্যের ফসল নষ্ট করবো কেন। হয়তো আপনারা এখনো বুঝতে পারেননি মূলার কি ক্ষতি করেছে।

IMG_20231201_113220_842.jpg

দেখলাম মূলার জমি থেকে অনেকগুলো মূলা উঠিয়েছে। কিছু মূলা ইচ্ছামত হাইসু দিয়ে চুরাইছে। কয়েকটা মূলা সুন্দর করে কেটে ঢেঁকি তৈরি করেছে। আপনারা ঢেকে চেনেন কিনা জানিনা ধান ভাঙ্গার জন্য আগে এই জিনিস তৈরি করা হতো। সেগুলা আবার সুন্দর করে জমির আইলের উপর রেখে গেছে। কিছু কিছু মোলা চিড়েছে মাঝখান দিয়ে। কয়েকটা মোলা লক্ষ্য করলাম দাঁতের কামড় লাগাইছে আর উগলাইছে। এরপর কিছু মুলার গায়ে এবিসিডি লিখেছে। এ বি সি ডি বলতে বোঝাচ্ছিলাম ভালোবাসার চিহ্ন। এ প্লাস বি এম প্লাস এস এই জাতীয়। তখনই বোঝা গেল সেয়ানা বেয়াদপে এসবগুলা করেছে। স্যালো মেশিনের ডেলিভারির নিচে চিকন একটা নল থাকে ট্যাংকে পানি যাওয়ার জন্য। যারা চেনেন তারা বুঝতে পারবেন। সে মালটা কাদা দিয়ে আটকাতে হয় কি বলে পানি ধরানোর সময়। দেখা গেল সেই নলের মধ্যে একটা মূলা আটকে রেখে গেছে।

IMG_20231221_134616_774.jpg

যাইহোক এমন দৃশ্য সত্যি খুবই খারাপ লাগলো। মারুফের দাদা তখন রাগে রাগে মোলাগুলো হাইস্যু দিয়ে সব কেটে সাফ করে ফেলল। জমিতে তখন অনেক মূল ছিল। আমরা জানি মুলা সাধারণত যখন বড় হয়ে যায় মাটির উপর অংশে বের হয়ে আসে প্রথম ফটোতে বুঝতে পারছেন। ঠিক এবং হাইব্রিড জাতীয় ভালো মানের মূলা। সারা জমিতে যা ছিল একবারে হাইসু দিয়ে সাফ করার মত কাটতে কাটতে কেটে ফেলেছিল। আর ওই মুহূর্তে বারবার বলতে থাকলো 'শালা হারামজাদারা তোদের যে কয়টা লাগবে তুলে নিয়ে যা নষ্ট করবি কে তাও তো জানতাম খাওয়ার জন্য তুলে নিয়ে গেছে'। আর আমাদের বলছিল যার ইচ্ছা সে নিয়ে যা বাড়িতে। কিন্তু আমরা কেউ সে মূলায় হাত দিলাম না। কারণ মূলা কি করবো আমরা। শুধুমাত্র দেখলাম মানুষের মূলার প্রতি এই অবিচার অত্যাচার। পাশাপাশি বৃদ্ধ একজন মানুষকে হয়রানি দিয়ে মনে কষ্ট দিয়ে মুলাগুলো নষ্ট করার কাজ করে দিয়েছে।

IMG_20231221_134406_037.jpg

অতঃপর পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম মারুফের আব্বা চাচা দাদাকে একটু বকেছিল। মুলাগুলো দিন দিন তুলে গরু বা ছাগলকে খাওয়ায়ে দিলেই তো ভালো হতো। ওভাবে কেটে নষ্ট করে কি লাভ হলো। সত্যি মানুষের যখন কষ্ট লাগে আর মাথায় রাগ ওঠে তখন কিন্তু অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে। তবে আমরা যা বুঝলাম মারুফের দাদার বেশ কষ্ট হচ্ছিল মনের মধ্যে, যার জন্য সম্পূর্ণ মূলাগুলো কেটে নষ্ট করে ফেলল কারণ বাড়ি থেকে মুলার জমিটা অনেক দূরে। হয়তো মূলা উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে বেশি। আর সেই তুলনায় দাম অনেক কম। এদিকে মানুষের নষ্ট করে ফেলছে তাই রাগটা খুব সুন্দর করে মিটিয়ে ফেলল। যাইহোক আশা করব আমরা কেউ কারো এভাবে কোনদিন ক্ষতির কারণ হব না। যেন সামান্য বোকামির জন্য একজনার বড় আকারে ক্ষতি হয়।

IMG_20231221_134759_010.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কখনোই অন্যের জিনিস নষ্ট করা উচিত নয়, আমার কাছে এটার মূল্য নাও থাকতে পারে কিন্তু কোন একটা মানুষ কষ্টের ফসল ছিল এটি, হয়তো তারা মজার ছলে করেছিল কিন্তু আপনার বন্ধুর দাদা খুবই কষ্ট পেয়েছে।

একদম ঠিক বলেছেন ভাই মারুফের দাদা খুবই কষ্ট পেয়েছিল।

সত্যি বলতে ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে আমার নিজের কাছেও বেশ খারাপ লাগলো। যারা নিজের চেষ্টায় কোন একটি কাজ করার উদ্যোগ নিয়ে থাকে তারাই সব সময় বুঝে কষ্ট কাকে বলে। যেমন আমি এখন আমার হাজবেন্ডের সাথে এক হয়ে এই প্লাটফর্মে কাজ করতেছি আমি বুঝি কষ্ট না করলে পরিবারটা কিভাবে চালাবো। তেমনি মারুফের দাদাও তখন বেশ অসহায় হয়ে পড়ল। আসলে আমাদের সমাজে এরকম হাজারো মানুষ আছে যারা অন্যের ক্ষতি করে আনন্দ পায়। কিছু বলার নেই তাদেরকে নিয়ে শুধু দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া।

হ্যাঁ অনেক মানুষ রয়েছে মানুষের ক্ষতি করে হাসাহাসি করে কিন্তু এই হাসাহাসি যে একজনের বুকে লাথি দেওয়া হয় সেটা বোঝেনা।