দুর্গা মানেই লক্ষ্মী

in hive-129948 •  29 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা,


আশা করি সবাই ভালো আছেন।সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে আমি দুর্গা পুজো কিভাবে রাজ্যের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে সেটা ভাগ করে নিচ্ছি। আশা করি ভালো লাগবে ।

17285140441913412979155996089834.jpg

Image taken from Open AI


দুর্গাপূজা শুধু কলকাতার বা বাংলার নয় সমগ্র ভারতের অন্যতম বৃহৎ উৎসব।তবে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যে বিশাল আকারের ব্যবসা ও বাণিজ্য পরিচালিত হয় তা রাজ্যের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় রাজ্যের অর্থনীতি একটি উল্লম্ব প্রবৃদ্ধির সাক্ষী হয় যা নিম্নোক্ত কারণগুলোতে প্রতিফলিত হয়:

১. দোকান ও রিটেইল ব্যবসা:

দুর্গাপূজার আগে বিপুল সংখ্যক মানুষ পোশাক, অলংকার, ইলেকট্রনিকস এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনাকাটা করেন।বিশেষ করে পোশাক শিল্পে এই সময়ে ব্যাপক বিক্রি হয়।কলকাতার নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ, এসপ্ল্যানেডসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়।ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা এই সময়ে তাদের বার্ষিক আয়ের একটি বড় অংশ অর্জন করেন।পূজার সময় নতুন পোশাক ও গৃহস্থালির সামগ্রী কেনাকাটায় প্রচুর অর্থব্যয় হয়, যা রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GSDP) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

২. বিজ্ঞাপন ও বিপণন:

দুর্গাপূজা সময়কালে বিপুল বিজ্ঞাপন ব্যয় হয় বিশেষ করে পুজোর প্যান্ডেল, আয়োজন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পন্সরশিপের মাধ্যমে।বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং সংস্থাগুলো এই সময়ে প্রচুর বিজ্ঞাপন প্রচার করে যেহেতু এটি তাদের পণ্যের প্রচারের অন্যতম প্রধান সময়।বিজ্ঞাপন এবং বিপণন খাতে এই খরচ রাজ্যের অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলে।

৩. পর্যটন শিল্প:

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গে এবং কলকাতায় পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ।শুধু দেশীয় নয় বিদেশী পর্যটকরাও এই সময়ে কলকাতায় আসেন দুর্গাপূজার উৎসব উপভোগ করতে।এর ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন এবং অন্যান্য পর্যটন সংক্রান্ত ব্যবসার আয় বহুগুণ বেড়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও পর্যটন খাতের উন্নতিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে।

৪. কারুশিল্প এবং প্যান্ডেল শিল্প:

দুর্গাপূজা উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয় বিপুল সংখ্যক প্যান্ডেল যা নিজেই একটি বৃহৎ শিল্পখাত।বিভিন্ন থিমের প্যান্ডেল নির্মাণে কারুশিল্পী, শিল্পী, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান এবং অন্যান্য শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়।এই খাতে কয়েক হাজার মানুষ কর্মরত থাকে এবং এর মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়।

৫. খাদ্য ও রেস্তোরাঁ খাত:

খাবারও দুর্গাপূজার সময় বড় বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, স্ট্রিট ফুডের দোকান এবং ক্যাটারিং সার্ভিসগুলোর আয় এই সময়ে চরমে পৌঁছে যায়।মানুষ পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে যান,প্যান্ডেলে ঘুরতে ঘুরতে বিভিন্ন খাবারের দোকানে ভিড় জমে।এই সময় রেস্তোরাঁ এবং হোটেলগুলোর আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।

৬. মৃৎশিল্প ও প্রতিমা তৈরি:

কলকাতার কুমারটুলি এলাকার মৃৎশিল্পীরা দুর্গাপূজা উপলক্ষে মূর্তি তৈরি করে থাকেন।প্রতিমা তৈরির শিল্পটি রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।দুর্গা প্রতিমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাটির কাজ, রঙ, পোশাক অলংকার সবই স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় যা স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্পখাতকে উৎসাহিত করে।

৭. বিনোদন ও সংস্কৃতি:

দুর্গাপূজার সময় কলকাতায় এবং সমগ্র বাংলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, কনসার্ট এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, মঞ্চকর্মী এবং অন্যান্যদের কর্মসংস্থান হয়।এই উৎসবকালীন বিনোদন খাত রাজ্যের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৮. পরিবহন ও লজিস্টিকস:

উৎসব চলাকালীন কলকাতা এবং আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে যাতায়াত বেড়ে যায়।স্থানীয় ও দূরবর্তী স্থান থেকে পর্যটকরা শহরে আসে যার ফলে পরিবহন খাতে আয় বৃদ্ধি পায়।ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি এবং অটোরিকশার ব্যবহারও এই সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় যা সংশ্লিষ্ট খাতগুলিতে প্রবৃদ্ধি আনে।

অর্থনীতির সামগ্রিক প্রভাব:

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি বেশ কয়েকটি খাত থেকে লাভবান হয়।প্রতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়।২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে প্রায় ৩২,০০০ কোটি টাকার অবদান রাখে যা রাজ্যের জিডিপির ২.৫-৩% অব্দি হতে পারে।

এটি কেবলমাত্র ব্যবসায়িক লাভের হিসাব নয় বরং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নতি এবং স্থানীয় পর্যটন বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পূজার সময়কালে বর্ধিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম সামগ্রিকভাবে রাজ্যের অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী ধাক্কা দেয় এবং এর প্রভাব সারা বছর ধরে টিকে থাকে।

দুর্গাপূজার বাণিজ্যিক সাফল্য কেবলমাত্র ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এটি এখন রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মাইলফলক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।



VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


ধন্যবাদ।সবাই ভালো থাকবেন।

BoC- linet.png
-cover copy.png

|| Community Page | Discord Group ||


Posted using SteemPro Mobile

1000158488.jpg

PUSS COIN:BUY/SELL

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ঠিকই তাই। বাঙালির সেরা উৎসবের দিনে গ্রামবাংলা থেকে যাওয়া ঢাকিদেরও খানিক বেশি উপার্জন হয়। এছাড়া হকারদেরও। কুমোরটুলির ব্যস্ততা যদিও অনেক আগে থেকে শুরু হয়ে যায়৷ আমার ভীষণ ইচ্ছে আছে পূজোর এক মাস আগে কুমোরটুলিতে ঢুঁ মারার। কবে হবে জানি না৷ বহু আগে যখন কলকাতায় থাকতাম তখন এসপ্ল্যানেড হাতিবাগানে পুজোর আগে যেতাম দরাদরি করে ইমিটেশনের গয়না কিনতাম। আপনার পোস্ট পড়ে সেইগুলো মনে পড়ছে।

নিঃসন্দেহে দূর্গা পূজা হচ্ছে বৃহৎ উৎসব। আর তাই এই বৃহৎ উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেকেই আলাদা করে বিভিন্ন ধরনের বাজেট রেখে দেয়। আর দূর্গা পূজা আসলেই কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে টাকা খরচ করা হয়। আমরা যেমন ঈদের সময় অনেক কিছু কেনাকাটা করি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে থাকি। এতে করে দেশের অর্থনীতির উপর দারুণ প্রভাব পড়ে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

যেগুলো পয়েন্ট দেখিয়েছেন দিদিভাই তা কিন্তু বেশ যৌক্তিক। আমি মনেকরি দিদিভাই, যে কোন বড় উৎসবেই এই বিষয় গুলো বেশ ভালো ভাবে পরিরক্ষিত হয়।
ভালো লাগলো লেখাটি।

বাঙ্গালীদের বিরাট উৎসব এই দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা উৎসবে কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে অনেক খরচ হয়।উৎসব মানে আনন্দ এই আনন্দের জন্য সবাই প্রচুর কেনাকাটা করে।আপনার পোস্টটি সত্যিকার অর্থে বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিকপূর্ণ্য।ধন্যবাদ দিদি আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু সম্পর্কে জানা হলো।