মৃত্যুই জীবনের সবথেকে বড় সত্য।

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।



আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।


বেশ কিছুদিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। বিশেষ করে মন খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছি তারপরও শরীর ভালো হচ্ছে না। গত দুইদিন ধরে খুবই খারাপ অবস্থা। বিছানা থেকে উঠতেই কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাব এমন অবস্থা। সেদিন আপনাদেরকে বলেছিলাম কেন যেন পরিচিত লোকজনের মৃত্যুর খবর খুব বেশি কানে আসছে। তার জন্য মনটাও কেমন অস্থির হয়ে আছে। যতই চাচ্ছি মনকে স্বাভাবিক করতে কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছি না। তার ফলে শরীর ও সুস্থ হচ্ছে না। যাও মোটামুটি একটু ভালো হয়েছিল কিন্তু গত পরশুদিন থেকে আবারও খুব খারাপ যাচ্ছে। গত পরশুদিন আমার এক চাচা শ্বশুর মারা গিয়েছেন। তিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন।


grief-5501796_1920.jpg

Link


শরীর খারাপ হওয়ার কারণে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসা করানোর জন্য। তার হার্টে অনেকগুলো ব্লক ছিল। ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে। রংপুর থেকে এসেছিলই ওপেন হার্ট সার্জারি করার সব প্রিপারেশন নিয়ে। কিন্তু এখানে আসার পর হঠাৎ করে তার রক্তের সমস্যা ধরা পড়ে। তার শরীরে রক্ত খুবই কম ছিল । একমাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ট্রিটমেন্ট করে গিয়েছে। তখন রক্তের সমস্যার কারণে এনজিওগ্রাম করতে পারেনি। ডাক্তাররা এক সপ্তাহের ঔষুধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এক সপ্তাহ পর আবারও এসে খুব বেশি উন্নতি হয়নি জন্য আবারও এক মাসের ওষুধ দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার কিছুদিন পরেই তার ভালো লাগছিল না । এজন্য আবারো ঢাকায় এসেছিল। এইবার বাড়ি থেকে ঠিক করে এসেছিল যত যাই হোক সে একবারে ওপেন হার্ট সার্জারি করেই বাড়িতে ফিরবে। তাতে যতদিন লাগে লাগবে।


কিন্তু আবার যখন স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি হলো তখন টেস্ট করে দেখা গেল যে তার হিমোগ্লোবিন খুবই কম। সাড়ে পাঁচ এ নেমে এসেছে। তাছাড়া তার রক্তের সমস্যা থাকার কারণে রক্তের গ্রুপ মিলছিল কিন্তু ক্রস ম্যাচিং এ গিয়ে আর মিলছিল না। প্রথম দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে কিছুতেই রক্ত মিলাতে পারছিল না। এই নিয়ে আমার হাজবেন্ডও খুব টেনশনে ছিল। খুব দৌড়াদৌড়ি করছিল তার এই চিকিৎসা করানো নিয়ে। তারপর সিদ্ধান্ত নিল যে আরেকদিন দেখবে তা না হলে হসপিটাল চেঞ্জ করে ইউনাইটেড অথবা অ্যাপেলোতে নিয়ে আসবে। পরের দিন বিকেল বেলায় তার একটু উন্নতি হলো এবং রক্ত পাওয়া গেল। সন্ধ্যার পরে রক্ত দেয়া শুরু হল। আমরাও একটু নিশ্চিন্ত হলাম যে যাক রক্ত পাওয়া গেছে এখন কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেল। এখন ধীরে ধীরে আরো কিছু রক্ত ম্যানেজ করা যাবে। কিন্তু রাতের বেলায় যখন আমরা ঘুমাতে যাব ঠিক ১১:৩০ টার দিকে হসপিটাল থেকে আমার হাজবেন্ড এর মোবাইলে ফোন আসলো হাসপাতাল থেকে। যে উনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন অবস্থা ভালো না ওনাকে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে। আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। তখন ওনাকে যেই ডাক্তারের আন্ডারে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে ফোন করা হলো উনি খোঁজ নিয়ে জানালো যে উনার মারা যাওয়ার মতনই অবস্থা তারপরও ওনারা একবার লাস্ট চেষ্টা করবে। কিন্তু সে লাস্ট চেষ্টা আর হলো না কিছুক্ষণ পরে তারা জানিয়ে দিল মারা গিয়েছেন। এত কাছ থেকে বিষয়গুলো দেখেছি শুনেছি যে হঠাৎ করে এমন খবর কিছুতে মেনে নিতে পারছিলাম না। এটাও একটা কারণ আমার আবারও অসুস্থ হওয়ার।
তাছাড়া কেন যেন উনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে উনি হয়তো আর বাঁচবেন না। সন্ধ্যার দিকে যারা দেখা করতে গিয়েছিল তাদেরকে বলেছিল যে আমি আজকে রাত টুকু পার করতে পারব না হয়তো। উনার ধারনাই সঠিক হলো।
আমাদের জীবনের এক সেকেন্ডেরও ভরসা নেই। তারপরও আমাদের কত বাহাদুরি। আমরা কেউ জানিনা যে আগামী পাঁচ মিনিট পর আমরা বেঁচে থাকব কিনা। তারপর আমাদের পরিকল্পনার কোন শেষ নেই। বছরের পর বছরের পরিকল্পনা করে বসে থাকি। আসলে কাছের মানুষজনের মৃত্যু দেখলে তখন জীবনের প্রতি মায়া কমে যায়। এই মৃত্যু গুলো দেখেও যদি আমরা কিছুটা হলেও পরকালের চিন্তা করতাম তাহলে কতই না ভালো হতো। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুন। আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। নিজের এবং পরিবারের যত্ন নেবেন।



ধন্যবাদ

@tania

আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি।

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

IMG_20220106_113311.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png


VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আমার শরীর টা তেমন ভালো যাচ্ছে না, বিছানা থেকে মাথা উঠাতে পারছি না,এতদিন পুরোপুরি রেস্ট নিয়েও কোন উন্নতি দেখছি না।যাই হোক আসলেই আমাদের এক সেকেন্ডের ভরসা নেই তাও আমরা মৃত্যু কে স্মরন করতে চাই না।অথচ মৃত্যু অস্বীকার করার উপায় নেই।আপনার চাচা শশুরের কথা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।আপু দোয়া করি খুব তাড়াতাড়ি যেন সুস্থ হয়ে উঠেন।ধন্যবাদ

এখনকার দিনে শরীর একবার খারাপ হলে সহজে ভালো হতে চায় না এটাই সমস্যা। যাই হোক আপু দোয়া করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপু আপনার পোস্ট পড়ে ইমোশনাল হয়ে গিয়েছি। আপনার চাচা শ্বশুর আগেই বিদায় নিচ্ছিলেন আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে এটা শুনে গা শিউরে উঠল এই ভেবে যে উনি হয়ত কিছুটা আলামত বুঝতে পেরেছিলেন। উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আপনার শরীর খারাপ শুনেও খারাপ লাগছে। নিজের প্রতি যত্ন নিন। এটা ঠিক বলেছেন পাঁচ মিনিট পর কি হবে আমরা জানিনা কিন্তু পরের বছর কি করব তার প্ল্যান ও করে ফেলি।

এসব কথা মনে পড়ে আমার নিজেরই শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। খুবই খারাপ লাগছে। যাইহোক ভাইয়া দোয়া করবেন। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

প্রথমে আপনার সুস্থতা কামনা করছি আপনি এরকম অসুস্থ এটা জেনে খুবই খারাপ লাগলো। অসুস্থতার মধ্যে দিয়েও আপনি আমাদের মাঝে একটিভ থাকতে পারছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। আপনার চাচা শ্বশুরের এরকম একটা ঘটনা শুনে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো এই বিষয়টি শোনার পর আপনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নিজের কাছের মানুষগুলো যদি এভাবে চলে যায় তাহলে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগে। যাইহোক আপনি যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পড়েন সেই কামনা করি। খাওয়া দাওয়া ভালোভাবে করবেন তাহলে ভালই হবে।

জ্বী আপু খাওয়া-দাওয়া তো ঠিকমতো করছি তারপরও শরীর সহজে ভালো হচ্ছে না। দোয়া করবেন আপু । ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে। আসলেই আপু মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত সত‍্য তারপরও আমাদের কত বাহাদুরি। কিন্তু আমরা এটার কাছে অসহায়। চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না কিন্তু আপনার চাচা। এটাই মানুষের জীবনের নির্মম সত‍্য। এইরকম অবস্থায় মন খারাপ থাকাটা স্বাভাবিক। যাইহোক আপনাকে ধৈর্য ধরতে বলব আপু।।

যেকোনো সময় মৃত্যু এসে হাজির হতে পারে। কিন্তু আমরা কেউ কি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত? আসলে আমাদের সবারই উচিত মৃত্যুর জন্য প্রিপারেশন নেওয়া।তারপরও কিন্তু মনে হলেই ভয় লাগে । যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার শরীরের অবস্থার কথা শুনে ভীষণ খারাপ লেগেছে। এখন তো অসুস্থ হলে কিছুই ভালো লাগেনা। আপনার চাচা শশুরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আসলে ভীষণ খারাপ লেগেছে আমার কাছে। অসুস্থতার মধ্যে এরকম একটা খবর শুনে আপনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। যাইহোক আপনার সুস্থতা কামনা করি। দোয়া করি যেন খুব তাড়াতাড়ি আপনি সুস্থ হয়ে পড়েন। ভালো থাকবেন।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া শরীর খারাপ থাকলে কিছু করতে ইচ্ছা করে না। তারপরও চেষ্টা করছি কাজটা চালিয়ে যেতে। যাতে একটু সময় পার হয় । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।