একটি ভূতের গল্পঃ " সন্ধ্যা রাতে ভূতের গন্ধ"(শেষ পর্ব )

in hive-129948 •  2 years ago 

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে গল্পের অন্তিম পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। চলুন শুরু করা যাক।

IMG_20220904_092651.jpg

হঠাৎ চোখ ফিরিয়ে দেখি মেয়েটার পড়ে থাকা জামাকাপড় গুলো আর নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
মালিক কাঁপতে কাঁপতে কোনরকমে উঠে দাঁড়ালো। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবার আমাকে ধরে টান মারল বলল: " চল, চল, ঘরে চল- জলদি।"
ভয় পাওয়া খরগোশের মত আমরা দুজনে তাড়াতাড়ি করে ঘরে চলে গেলাম। মালিক বলল, " পাপ্পি আজ তুই আমার কাছে ঘুমাবি।"
এরপর আমি আর মালিক দুজনে ঘুমিয়ে পরলাম।

এভাবে আমাদের দুজনের দিন চলে যাচ্ছিলো। আবার একদিনের কথা বলি।আমি আর মালিক আবার গঙ্গার ধারে হাঁটতে গেলাম। আমি আর মালিক গঙ্গার ঘাট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা তখন নির্জন হয়ে গেছে। হালকা কুয়াশা কালো সন্ধ্যা কে ধীরে ধীরে ঘোলাটে করে দিচ্ছে। আমি মালিকের পিছু
পিছু লেজ দুলিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ করে এমন সময় একটি মেয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
লম্বা স্মার্ট চেহারা চোখে চশমা কাঁধে ঝুলানো সাইড ব্যাগ, হাতের মুঠোয় একটা রুমাল।
রাস্তার আলোয় মেয়েটির শাড়ির রং গারো বলেই মনে হল। আর গায়ে চাদরটা সাদাটে। ঠান্ডায় গায়ের চাদরটাকে প্রায় আঁকড়ে ধরেছে মেয়েটি। কষ্ট হলেও মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে মালিককে জিজ্ঞেস করল," শোভাবাজার কিভাবে যাব একটু বলে দেবেন? আমি এদিকের পথ সেরকম ভাবে কিছু চিনি না।"আবার রাস্তাটা অন্ধকার অন্ধকার... কী বলবো.... মানে একটু ভয় ভয় করছে...।"
আমি শুধু আগের মতো সেই পঁচা গন্ধটা পাচ্ছি না, শুধু পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছি। তার সঙ্গে আর কোন গন্ধ ছিল না। তাই মালিককে বললাম," এটা পেত্নী নয় সাধারণ মানুষ । নাও, হেল্প করো। আমাদের সঙ্গে ডেকে নিয়ে চলো মালিক।আমরাও তো অনেকটা সেদিকে যাবো।"
আমার কথা বলা মানে, ঘেউ ঘেউ করা - মেয়েটা আমাকে খেয়াল করল, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "কি সুন্দর দেখতে কুকুরটি।"
"নাও, নাও, শুরু করো তোমার " কুকুর" রচনা।"
মালিক পাথরের মতন নিথর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মালিকের মুখ থেকে কোন কথা বেরোচ্ছে না আর হাতের আঙ্গুলগুলো অল্প অল্প করে কাঁপছে।
বুঝলাম, মালিক মনে এখনো ভয় রয়ে গেছে।
আমি চেঁচিয়ে মালিককে বললাম, " তুমি ভুল করছ, মালিক। তুমি যা ভাবছো তা নয়।
"আপনার কুকুরটা ভীষণ চেঁচাচ্ছে!"একটু মজার সুরেই বললাম মেয়েটা, " কী নাম ওর?"
মালিক মেয়েটির কথায় জবাব না দিয়ে শুধু আঙ্গুলের ইশারা করে বলল, পাপ্পি জাম্প, জাম্প!"
মালিকের সে কথায় আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। লাফ
দেবো! কিন্তু কেন? এই মেয়েটি তো তোমারই মতো রক্তমাংসের গড়া। আপনি যা ভাবছেন তা নয়।"
কিন্তু মালিক আমার এ কথা বুঝলে তো!
মালিক আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আঙ্গুলের ইশারা করে মেয়েটিকে দেখিয়ে আমাকে শক্ত গলায় বলল,"লাফ দে, কথা বলছি কানে নিছিস আমার কথা -!"
কিন্তু কি করি আমি এখন? সামান্য কুকুর হয়ে কি মালিকের আদেশ অমান্য করা যায়?
তাই লাফ দিলাম! একেবারে নেটের গায়ে গিয়ে পড়লাম। শরীরের ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম রাস্তায়।
কারো সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি হাউমাউ করে লাফিয়ে উঠলো। কাঁদো কাঁদো গলায় মালিক কে বলল, " কি বাজে লোক আপনি। বিপদে পড়ে হেল্প চাইলাম আর আপনি আমার দিকে কুকুর লেলিয়ে দিলেন!"ছিটেফোঁটা ভদ্রতা শেখেননি আপনি? দাঁড়ান ,আপনার নামে আমি পুলিশ কমপ্লেন করব।
দেখলাম মেয়েটি চোখে জল এসে গেল। শাড়িতে চাদরে কাদামাখা পায়ের নোংরা ছাপ। বারবার নিজের পোশাকের দিকে তাকাচ্ছে আগে বলছে, "দেখলেন, আমার কি অবস্থা করলো আপনার কুকুরটা! আর আমার চাদরটার কি সর্বনাশ করলো!"
আমি মালিককে বললাম," আপনাকে বারবার বললাম তাও তো আপনি শুনলেন না।
মালিক তখন মুখ নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে মেয়েটির চিৎকার শুনে দূর থেকে দু চারজন লোক এগিয়ে আছে। ওরা যদি কাছে এসে বলে তাহলে আর আমাদের রক্ষা নাই। এবার হয়তো পাবলিকের মার আমাদের ভাগ্যে আছে।
এরপর আমি মালিকের প্যান্ট কাপড়ে কামড়ে ধরে হ্যাচকা টান মারলাম। বললাম," বাঁচতে চাও তো শিগগিরই পালিয়ে চলো -।"
মালিক আমার এই কথাটা পুরোপুরি বুঝতে পারলাম। কারণ, আর দেরি না করে ছুটে পালালাম।
ছুটতে ছুটতে একটা কথা ভেবে হাসি পেলো। ভূতের কাছ থেকে না পালিয়ে মানুষের ভয়ে ছুটে পালাতে হচ্ছে।
এবার ভাবতে পারছেন একেই বলে কুকুরের কপাল -।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

যাক,শেষটা যে এমন হাসির হবে ভাবতেই পারিনি। 😂😂আহা বেচারা মালিকটা,একদম ফেঁসে যাচ্ছিলো প্রায়।দারুণ লিখেছেন বৌদি।আরো গল্প চাই।

অপেক্ষায় ছিলাম।এই মালিক সিঙ্গেল মরবে। এর জন্মেও গার্লফ্রেন্ড, বিয়ে কিছু হবে না। মানুষ নাকি গাধা? 🤣🤣তবে ভেবেছিলাম পেত্নী প্রতিশোধ নিতে আসবে।

মানুষই ভূতের থেকে ভংকর। মালিকের এত ঝামেলাই হত না যদি বেচারা কুকুরের ভাষা বুঝতে পারত।যাই হোক এখন মালিকের উচিত কুকুরের ভাষা শেখা।আর আজকের পর্ব অনেক মজার হয়েছে।

ছিটেফোঁটা ভদ্রতা শেখেননি আপনি? দাঁড়ান ,আপনার নামে আমি পুলিশ কমপ্লেন করব।

হা হা হা। আজকের পর্বটা পড়ে বেশ হাসলাম বৌদি 😂😂😂। আসলেই ভুতের থেকে না পালিয়ে মানুষের থেকে পালালো হা হা। চমৎকার ছিল সবগুলো এপিসোড।।

এই পর্বে বেশ মজা লাগলো পড়ে। বিশেষ করে মালিক যদি কুকুরের কথাটা সহজেই বুঝে যেত তাহলেই অনেক ভালো হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি। আর ভূত থেকে মানুষকে বেশি ভয়। গত পর্ব টাও বেশ দারুন ছিল। আজকের পর্ব টাও পরে ভীষণ আনন্দ পেলাম।

ভূতের গল্প শুনতাম আগে ঠাকুমাদের কাছ থেকে আর রাতে একা একা ঘর হতেই বের হতাম না। কিছু কিছু সময় হয় ভূতের সাথে দেখা হলেও মনে হয় না ভূত। কিন্তু যখন ভূত যাওয়ার পরে শুনি ভূত ছিলো, তখনই ভয় করে। আমার সাথে এমন একটা হয়েছিলো।
কিছু কিছু সময় হয়ে যায়, ভূতের চেয়ে মানুষকেই বেশি ভয় করে।

আজকের পর্বটা বেশ মজার ছিল। গল্পটা গত পর্বেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আজকের পর্বটা পরে গল্পটা আরো একধাপ বেশি ভালো লাগলো। যেই মালিক মেয়েদের দেখলেই কথা বলতে চায় সে কিনা আজ কুকুরকে লাগিয়ে দিলো। ভুতের ভয় বেশ জোরসরেই ভর করছে মালিককে। আজকের এই ঘটনায় আবার ভয় কিছুটা দূর হতেও পারে। খুব ভালো লাগলো।

হাহাহা , বেশ হাসালেন বৌদি । এবার মালিক মানুষের ভয় পেয়েছে । যদিও অতীত অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল না ।

হেহেহে,,, মালিক বেটা বেশ চমকে গিয়েছে। আকাশ থেকে পরী নেমে আসলেও আর বিশ্বাস করবে না 😉। শেষ টা বেশ মজার ছিল দিদিভাই। ভূত পেত্নী নিয়ে ভয় পাওয়া ছেলেটাও সব গুলো পর্ব পড়ে ফেললো 🤗। এরপর অন্যরকম একটা গল্প চাই কেমন। অপেক্ষায় রইলাম।

কথায় আছে চুন খেয়ে দই দেখেলেই ভয় হয়,এই হচ্ছে মালিকের অবস্থা। ভালো লাগলো ভুতের গল্পটা।😀বেশ ভয় পেয়েছে লোকটি।হা হা।

হি হি,সত্যিই অদ্ভুত ।কুকুর রচনা করা মালিক এখন মেয়ে দেখেও কথা বললেন না তার উপরে মানুষকে ভূত ভেবে পালানো।পেত্নীর ভয়ে মালিকের প্রেম আলাপ করার চিন্তা মাথা থেকে উধাও হয়ে গেছে।ভালো ছিল গল্পটি,বেশ মজার।ধন্যবাদ বৌদি।

বৌদি, গল্পটি শেষ পর্যন্ত এতটা হাসির হবে বুঝতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মালিক মানুষকেই ভয় পেয়ে গেল, সত্যি এটা দারুন হাসির ছিল। দারুন লিখেছেন বৌদি। আরও এরকম অসাধারণ গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।