আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির রচনা প্রতিযোগিতায় আমি প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। যদিও চিরাচরিত রচনার ফরমেটে এই লেখাটি লিখিনি। বরং আমার শহর এবং গ্রামের কিছু অভিজ্ঞতা এবং তুলনামূলক অনুভূতি শেয়ার করতে চাচ্ছি। একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা... এই আর কি। কেমন লেগেছে- আপনারা অবশ্যই জানাবেন।
আমাদের অধিকাংশেরই গ্রাম নিয়ে বেশ কিছু সুখস্মৃতি রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন শহরে থাকার কারণে সেই স্মৃতিগুলোতে মরচে পড়ে গেছে। কিন্তু মন থেকে একেবারে মুছে যায়নি কখনো। এখনো মাঝে মাঝেই আমাদের মনে পড়ে যায় শৈশবের গ্রামে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো। এখনো আমরা খুব মিস করি সেই সময়গুলোকে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরে আছি। চট্টগ্রামকে বলা হয়ে সাগরকন্যা। কারণ এটা বাংলাদেশ-এর উপকূলবর্তী অঞ্চল বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এছাড়াও এটি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই এখানে গড়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল।
চট্টগ্রাম শহর, এখনো আধুনিকতার পথে
যদিও ক্যাপিটাল শহরের মতো এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া অতটা প্রকটভাবে লাগেনি। তবে শহরটিতে এখন অনেকটাই কর্পোরেট কালচার জেঁকে বসেছে। এর পাশাপাশি আছে দালানকোঠার ভিড় আর কলকারখানা এবং গাড়ির কালো ধোঁয়ার হাহাকার। এসব কারণেই শহরটাকে ভালবাসলেও মাঝে মাঝে আমি ভেতরে ভেতরে খুব হাঁপিয়ে উঠি। মনে হয়, এর চেয়ে গ্রাম ভালো। তখন শৈশবে কাটানো গ্রামীন মুহূর্তগুলো মনে পড়ে যায়।
আমার শৈশবের একটা বড় অংশ কেটেছে আমার নানাবাড়ি, পেরিয়া নামক গ্রামে। এটা বাংলাদেশ-এর কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানায় অবস্থিত। এটি তখন ছিলো একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। যদিও এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক বদলে গেছে। এখন তাতে আগে আগের সেই অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশ খুঁজে পাইনা। তবুও তা শহরের জঞ্জালের চেয়ে অনেক ভালো, অনেক স্নিগ্ধ কোমল।
সেই শৈশবের কথা বলছি। তখন সেখানে বিদ্যুৎ পর্যন্ত যায়নি। সন্ধ্যে হলে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যেতো। শোনা যেতো বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত সব শব্দ- ব্যাঙের ডাক, ঝিঝি পোকার গুঞ্জন। দরজার বাইরে মনে হতো একটা ভৌতিক পরিবেশ দাঁড়িয়ে আছে। এ সকল কারণে গ্রাম নিয়ে আমার একটা দ্বৈত অনুভূতি কাজ করতো সেই ছোটবেলায়। দিনের বেলায় ইচ্ছামত ছোটাছুটির মজা, রাত্রিবেলা ভয়ঙ্কর পরিবেশের আতঙ্ক।
এখন সেসব স্মৃতি মনে পড়লে বরং ভালোই লাগে। মনে হয়- এরকম রঙিন শৈশব যদি আবার ফিরে আসতো। আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম এ শহরের জঞ্জাল, জমকালো আলো ছায়ার মায়া ফেলে নিসর্গের মুগ্ধতায়!
আমাদের অধিকাংশেরই আবার ইচ্ছে করে গ্রামে ফিরে যেতে। শহরের ইট কাঠের দেয়ালে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। নিজেকে খাঁচার মধ্যে বন্দী মনে হয়। তখন সেই গ্রামের স্মৃতিগুলো কিছুটা সান্তনা জোগায়, কিছুটা আশ্বাস দেয়- আবার কোন একদিন আমরা ফিরে যাব গ্রামে। কিন্তু ফেরা আর হয়ে ওঠে না।
গ্রামে, নানার বাগানে। চার বছর আগে
এই টানাপোড়েনের চিরায়ত অনুভূতি নিয়ে আজ একটা কবিতা লিখলাম। যাদের এরকম সুন্দর স্মৃতি আছে গ্রাম নিয়ে, তারা এই কবিতার মাঝে খুঁজে পাবে তাদের শৈশবকে। হয়ে যাবে কিছুক্ষণের জন্য নস্টালজিক।
কবিতার শিরোনাম: ফেরা
আমার আবার ইচ্ছে করে
গ্রামে যেতে ফিরে
শহরের এই দালান ফেলে
ছোট্ট কুটির নীড়ে..
তোমাদের এই শহরে
হাঁপিয়ে গেছি ভাই
এসির হাওয়া ভাল্লাগে না
গাছের ছায়া চাই।
ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানি
আর লাগে না ভালো
চাপ-কলের ঐ শীতল জল
কন্ঠে আমার ঢালো।
ইচ্ছে করে- খেতে আমার
গাছের পাকা ফল
সাঁতরে আবার পার হতে
নদীর গহীন জল
এই শহরে বৃষ্টি এলে
হয় হাঁটুজল পানি
শুনি না আর টিনের চালে
জলের ঝনঝনানি
বাজার থেকে হরেক রকম
আম আনি রোজ কিনে
কত মজায় আম কুড়াতাম
ঝড় বাদলের দিনে।
তোমাদের এই শহরে
হাঁপিয়ে গেছি ভাই
এই শহরে সবই আছে
শুধু শান্তি নাই।
শহরগুলোতে সন্ধ্যা নেমে আসে, কিন্তু আমাদের আর গ্রামে ফেরা হয়ে ওঠে না
খুব সুন্দর উপস্থাপনায় ব্লগটি শেয়ার করেছেন, আমার কাছে ভালো লেগেছে, ছবিগুলো অনেক পুরনো কিন্তু ভালো শট ছিলো। ধন্যবাদ কবিতাটির জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই। আসলে গ্রামের রিসেন্ট ছবি আমার কাছে নেই, তাই পুরাতন ছবি শেয়ার করেছি। তবে শহরের ছবিগুলো নতুন, একেবারে টাটকা তাজা..
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শহরের ইট বালু পাথর আসলেই ভাল লাগেনা মনে হয় গ্রামে ফিরে গিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে আবার হইহুল্লোড় করে খেলাধুলায় মেতে উঠি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হয়ত একদিন সত্যি চলে যাব
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit