আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজ আমি আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছি আপনাদের সামনে। আজকে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মানুষের জীবনে অহরহ কত ঘটনায় ঘটে থাকে সব ঘটনায় তো আর মানুষ মানুষের সাথে শেয়ার করে না। এখানে সবার পোস্ট করার পরে দেখি বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি তারা শেয়ার করে থাকে। আজ আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
বেশ কিছুদিন আগে আমরা সবাই মিলে ফরিদপুরে আমার বাবার বাড়ি এবং শশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সপ্তাহ ১০ দিন সেখানে ছিলাম। সেখানে থাকার পরে আমরা আমাদের গন্তব্য মানে ঢাকাতে ফিরে যাই। অনেকদিন বাসায় না থাকার কারণে বাসাটা একেবারে এলোমেলো হয়েছিল। কাজের মেয়েটাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম। এজন্য সেদিন আর কাজের মেয়েকে ফোন দেওয়ার পরে ও আরো দুইদিন পরে আসবে বলে জানিয়েছে। এ কয়েকদিন বাসাটা একেবারে আটকা থাকার কারণে চারিদিকে ময়লা হয়ে রয়েছে। তাই আমরা দুজনে মিলে বাসা পরিষ্কার করতে লেগে গিয়েছিলাম। পরিষ্কার করতে করতে আমাদের বেডরুমের সাথে একটা বারান্দা ছিল সেই বারান্দায় গিয়ে দেখি বারান্দাটা একেবারে ময়লা পড়ে এলোমেলো হয়ে আছে। বারান্দাটা পরিষ্কার করার জন্য মাত্র বারান্দায় ঢুকেছি আর সাথে সাথে আমার ছেলেটাও আমাদের সাথে এসেছে। আমরা কাজ করছি ও যেন কোন ফাঁকে দরজাটা লক করে দিয়েছে ভেতর থেকে। আমরা তিনজনই বারান্দায় রয়ে গেছি হঠাৎ করে আমি তাকিয়ে দেখি দরজাটা বন্ধ। তখন আমি দরজাটা খুলতে গেলে কিছুতেই খুলতে পারলাম না দেখলাম যে দরজাটা ভেতর থেকে লক হয়ে গিয়েছে।
তখন আমার হাসবেন্ড অনেক চেষ্টা করল দরজাটা খোলার জন্য। কিন্তু ভেতর থেকে দরজার লক দেওয়া। এদিকে আবার বাইরের মেইন দরজা লক করা। আমর হাসবেন্ড দরজা ধরে অনেক টানাটানি করল কিন্তু কিছুতেই দরজা খুলতে পারল না। এখন তো আমার হাজবেন্ড বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। আমার শুধু হাসি আসছে যে বাচ্চাটা কি কাজ করল। আমি কিছুতেই হাসি বন্ধ করতে পারছি না। তখন হঠাৎ করে মনে হলো যে এত হাসছি কিন্তু আসলে আমরা বের হব কিভাবে। আমরা থাকি আট তলায়, আটতলার উপর থেকে বারান্দা দিয়ে নিচে লোকজন দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ডাক দেয়ার কোন উপায় নেই। আমার হাজব্যান্ড তো এদিক ওদিক খুব চেষ্টা করছে খোলার জন্য কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছি, আর ও বারান্দার উপরে অন্য সাইডের রুমের সাথে আমাদের এসির জন্য একটি জায়গা খোলা আছে। সেখানে হার্ডবোর্ড লাগানো এসি এখনো লাগানো হয়নি। সেই জায়গাটা বোর্ডটা অনেক কষ্টে টানাটানি করে খুলে ফেলেছে কিছুটা। কিন্তু খোলার পরে দেখল যে যে জায়গাটা খোলা ঠিক সেই জায়গাটার ভেতর থেকে একটা আলমারি রাখা। কোনভাবেই সে জায়গা দিয়ে বের হওয়ার কোন সুযোগই নেই। তারপরও সে অনেক কষ্টে উপরে উঠে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করল কিন্তু আলমারির কারনে ঢুকতে পারল না।
আমাদের পাশের বাসার ফ্ল্যাটের সাথে আমাদের মাঝখানের বারান্দার একটা পার্টিশন আছে। সেই পার্টিশনে একটা মোটা টিনের গেট আছে। এটা সব সময়ের জন্য আটকানো থাকে। আমি তারপর সেখানে অনেক জোরে জোরে আওয়াজ করতে লাগলাম, পাশের বাসা থেকে যাতে কেউ শুনতে পারে। জোরে জোরে আওয়াজ করার পরে পাশের বাসার ভাবি এসে গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে উঁকি দিলে তখন আমার হাজব্যান্ড দেখতে পায়। তখন বলে যে ভাবি আমরা বারান্দায় আটকা পড়েছি আপনি একটু রিসিপশনে ফোন করে জানিয়ে দিন। পরে পাশের বাসার ভাবি তো শুনে অবাক হয়ে গেছে বারবার জিজ্ঞাসা করছে কিভাবে হলো,আপনারা কিভাবে আটকা পড়লেন? আর উনি বললো আমিতো বিরক্ত হয়ে এসেছি ।মনে করেছি কোন বাচ্চা এভাবে শুধু শুধু শব্দ করছে দুপুর বেলা। কারণ উনারা আমাদের পাশের ফ্লাটে থাকলেও উনাদের সাথে আমাদের কখনো কথা হয়নি এই ফার্স্ট। তখন আমরা সব কাহিনী বললাম।
পরে ভাবি রিসিপশনে ফোন করার পরে রিসিপশন থেকে লোক আসলো। জিজ্ঞাসা করলে স্যার কি হয়েছে পরে আমার হাজব্যান্ড সবকিছু তাকে বলার পরে সে বুঝতে পারলো। আমরা বললাম যে আমাদের সামনের ফ্ল্যাটে যাদের সাথে আমাদের সব সময় চলাফেরা তাদের কাছে আমাদের একটা চাবি আছে, সেই চাবি চাবি দিয়ে মেইনগেট খুললে আমরা বের হতে পারব। তখন তাদেরকে ডাকা হয় তারা তো শুনে ঘাবড়ে যায় কারণ আমার ছেলেটা যে আমাদের সাথে আছে। আর আমার ছেলেটা পাশের বাসার ভাইয়ের জান সে আটকা পড়েছে। তারপর ভাই ও রিসিভশনের লোকেরা সেই চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই সেটা খুলছিল না। পরে আমার হাজবেন্ড ওই পাশের বাসা ভাবিদের গেটটা খুলে উনাদের বাসা দিয়ে নিচে নেমে তারপর আমাদের বাসার সামনে আসে। যেয়ে দেখে যে উনাদের কাছে যেই চাবি গুলো আছে সেই লকটা না দিয়ে আমরা ভেতর থেকে অন্য লক দিয়ে দিয়েছি। এদিকে আমি আমার ছেলে ওইখানে দাঁড়িয়েই ছিলাম। ভাবিটাও আমরা যতক্ষণ ছিলাম আমাদের সাথে ততক্ষণ ছিল যাতে আমরা ভয় না পাই।তাদের বাসায় যেতে বলেছিল। পরে আমার হাজব্যান্ড যাওয়ার পরে নিচ থেকে চাবিওয়ালাকে ডেকে এনে দরজার লক ভাঙ্গে, তারপর আমাদেরকে বের করে। ভাগ্যিস পাশের বাসায় সাথে আমাদের একটা যাওয়া আসার দরজা কিংবা টিনের পার্টিশন ছিল। আর আমরা উনাদের সহযোগিতা নিয়ে এযাত্রায় বের হতে পেরেছি তা না হলে আমাদের কি হতো আল্লাই জানে।বাচ্চাদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয় চোখের আড়াল হলেই অঘটন ঘটে যেতে পারে ।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওতো ছোট বাচ্চা মানুষ না বুঝেই ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু যদি বের না হতে পারতাম তাহলে যে কি হতো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাগ্যিস পাশের বাসার ভাবি বিরক্ত হয়ে দেখতে এসেছিল। তা না হলে তো কত সময় এভাবে আটকে থাকতে হতো তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আর আপনাদের বাসার যেই জায়গায় আটকা পড়েছিলেন ওই জায়গা থেকে তো অন্য কারো কথা শোনার কোন ব্যবস্থাও ছিল না। যাক অল্পের মধ্যে দিয়ে রক্ষা পেয়েছেন । এমন ঘটনা আমার সঙ্গেও একবার ঘটেছিল । পরে একদিন শেয়ার করব ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন আপু পাশের বাসার ভাবি বিরক্ত হয়ে দেখতে আশাতেই রক্ষা তা না হলে কি যে হতো আল্লাহই জানে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। আর আপনার ঘটনাটি শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনি তাহলে তো বেশ বিপদের মধ্যে পড়েছিলেন। আসলে এরকম বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া ভীষণ মুশকিল। যাক অবশেষে রক্ষা পেয়েছেন এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর এই বিপদে আপনার হাসি পাচ্ছিল জেনে সত্যি অবাক হলাম। সত্যি আপু আপনি খুবই সরল মনের একজন মানুষ। তাই তো সবকিছুকে সহজ ভাবে নেন। আমি হলে তো অস্থির হয়ে যেতাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আপু অনেক বড় বিপদের মধ্যেই পড়েছিলাম। কেন যে ওই সময় হাসি পাচ্ছিল আমি নিজেও জানিনা। কিন্তু পরে একটু ভয়ই পেয়েছিলাম ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম কিভাবে আপনারা বের হবেন বুঝতে পারছিলাম না। যদিও পাশের বাসার ভাবি বিরক্ত হয়ে দেখতে এসেছে এটা বেশ ভালো অনুভব করলাম। আসলে এরকম ঘটনা খুবই অস্বস্তিকর সময় কাটায়। আপনার ছেলেটা যে আপনাদের সাথে ছিল এটাই ভালো। আর আপনাদের পাশের বাসার সাথে একটা যোগসূত্র ছিল যাওয়ার এইটাও বেশ ভালো ছিল। শেষ পর্যন্ত যে বের হতে পেরেছেন এতে অনেক বেশি ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই আপু ওইখান দিয়ে যদি ওই টিনের পার্টিশন না থাকতো তাহলে কিভাবে যে ডাকতাম। টিনের শব্দ করার কারণেই তারা শুনতে পেয়েছে তা না হলে তো কারো বাসার শব্দ কারো বাসায় যায় না। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার ছেলে তো ইচ্ছা করে করেনি, ও ছোট মানুষ কি থেকে কি ভাবে লক লেগে গেছে বুঝতে পারে নি। আপনার হাসবেন্ডর প্রচেষ্টায় আপনারা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন। আর বিপদে আপদে সাহায্য সহযোগিতার জন্যই প্রতিবেশি দরকার। যায়হোক শেষ পর্যন্ত আপনারা বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পেরেছেন, তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন আপনি ছোট মানুষ ইচ্ছে করে তো করেনি। বিপদে-আপদে প্রতিবেশীরাই আগে এগিয়ে আসে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামত দেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit