পন্য বয়কট কি কোনো স্থায়ী সমাধান?

in hive-129948 •  6 months ago 

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রোজার মাস শুরুর সময় থেকেই বাজারে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সকলে চিন্তিত ছিলো। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলো তরমুজের দাম। পিস হিসেবে কেনা প্রতিটি তরমুজ অনেক বিক্রেতা ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করেছিলো। যার ফলে তরমুজ চলে গিয়েছিলো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গরমের ভেতর রমজানের সময় বাংলাদেশের মানুষ তরমুজ ফলটা খুব পছন্দ করে। তাছাড়া তরমুজ খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এটাতে নানা রকম উপকার রয়েছে। তাছাড়া সাদেও এটা অতুলনীয়। যাই হোক তরমুজের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতরে ক্ষোভের জন্ম নিচ্ছিলো। এরপরই হঠাৎ করে একটা অভূতপূর্ব বিষয় দেখা গেলো। যেটা এর আগে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। সেটা হচ্ছে যেই সিন্ডিকেটের কারণে তরমুজের দাম বেড়ে গিয়েছিলো।

IMG_20240330_150329.jpg

এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তরমুজ বয়কট করতে শুরু করলো। তরমুজ কেনা সকলে বন্ধ করে দিলো। হাতে গোনা অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আর কেউই তরমুজ কিনছিলো না। এর ফলে যা হওয়ার তাই হোলো। তরমুজের দাম হঠাৎ করে একেবারেই পড়ে গেলো। কিছুদিন আগেও যে তরমুজটা ৮০০-১ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিলো। সেই তরমুজই এখন ২০০২৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এখন দেশের সাধারন মানুষজন সবাই খুশি। কিন্তু একটা জিনিস সবাই বুঝতে পারছে না। যারা সিন্ডিকেট করে তরমুজের দাম বাড়িয়ে ছিলো। তাদের কিন্তু এতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। মূলত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শেষ পর্যন্ত সেই চাষী যে তরমুজ চাষ করেছিলো। কারণ চাষি সরাসরি তরমুজ বাজারজাত করে না। তরমুজ বাজারজাত করার জন্য তাকে ফরিয়া বা দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়। আর এই মধ্যস্বত্বভোগীরা হচ্ছে মূল ক্রিমিনাল। তারাই সমস্ত কিছুর দাম বাড়ানোর পেছনের কারিগর।


বাজারে তরমুজের দাম পড়ে যাওয়ার কারণে যেটা হবে চাষী তার তরমুজের ন্যায্য মূল্য পাবে না। এতে করে কৃষক ভবিষ্যতে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারাবে। যার ফলে এখন যে তরমুজ আমরা ৮০০/১ হাজার টাকায় কিনে খাচ্ছি। সেটা হয়তো একসময় কয়েক হাজার টাকা দামে কিনতে হবে। কারণ কৃষক চাষ কমিয়ে দিলে এমনিতেই সে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এই বয়কট কর্মসূচিকে আমিও সমর্থন করেছিলাম। তবে এখন চিন্তা করে দেখলাম আসলে বয়কট করা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। অনায্য ভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো ঠেকাতে হলে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাকে কৃষকের পণ্য নির্ধারিত মূল্যে বেচাকেনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পণ্য বিপণের ব্যবস্থাটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। একমাত্র তাহলেই সম্ভব সকল পক্ষের টিকে থাকা। না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে ভোক্তারা বিভিন্ন পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আবার কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আপনাদের কি মতামত সেটা কমেন্টে জানাতে পারেন।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | HONOR 90

---|---

স্থান | ফরিদপুর


ধন্যবাদ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে বিষয়টি এভাবে কখনো চিন্তা করিনি। আমরা তো ভেবেছিলাম যে বয়কট করলেই হয়তো দামটা কমে যাবে এবং জনসাধারণ কিনে খেতে পারবে। কিন্তু এর পিছনে যে আরো একটি লজিক রয়েছে সেটি আসলে আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে আমারও মনে হয় এইভাবে বয়কট করা স্থায়ী সমাধান নয়। সমাধান পেতে হলে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সিস্টেম পাল্টাতে হবে। মানে চাষীদের থেকে ক্রয়ের নির্ধারিত মূল্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত করা উচিত। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য নতুন কিছু শিখতে পারলাম।

ভাই দিনশেষে কৃষক এবং সাধারণ মানুষ সবদিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবেই হোক না কেনো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। শুধু তরমুজ না, বরং যেকোনো কৃষিপণ্য আমরা বয়কট করলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পায় না বলে, অনেকে কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছে। আমরা যদি কৃষিপণ্য বয়কট করি,তাহলে কৃষকদের সংখ্যা আরও কমে যাবে। তখন আমরাই বিপদে পরবো। কারণ তখন আরও চড়া দামে কৃষিপণ্য কিনতে হবে আমাদেরকে। সুতরাং একমাত্র সরকার পারে সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে। কিন্তু সরকার তো এই ব্যাপারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।