কাকা আটক হলেন ভয়ংকর এক কিডন্যাপার চক্রের হাতে। দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

in hive-129948 •  6 months ago 

migrant-393130_1280.jpg

image source

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ সর্ব অবস্থায় ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। কিছুদিন আগে আমি আপনাদের সাথে আমার কাকার ভয়ংকর এক kidnapper group এর হাতে আটক হওয়ার প্রথম পর্ব শেয়ার করেছিলাম। আজকে আমি সেটার দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব শেয়ার করবো।

কিডন্যাপাররা কাকা ও তার বন্ধুকে একটি নির্জন বিল্ডিং এর ভিতরে আটকে রাখে। বিল্ডিংটি কোন জায়গায় অবস্থিত, সেটার লোকেশন কাকা ও তার বন্ধু কারো জানা নেই। তবে তারা ধারণা করেছে এই বিল্ডিংটি কোন জঙ্গলের আশপাশে হবে। যেখানে মানুষের আনাগোনা খুবই কম। বিল্ডিং এর ভিতরে দুজনকে প্রবেশ করিয়ে তখন তাদের চোখ খুলে দেওয়া হলো। চোখ খুলে তারা যে দৃশ্যগুলো দেখল সেটা দেখার জন্য তারা কখনো প্রস্তুত ছিল না। তাদের চোখ খুলেই কিডন্যাপাররা তাদেরকে বিভিন্নভাবে আঘাত করতে লাগলো। কাকা ও তার বন্ধু সেখানে দেখতে পাই বিভিন্ন ধরনের দাঁড়ালো অস্ত্র রয়েছে। মানুষকে টর্চার করার এবং মানুষকে হত্যা করার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও আলাদা জায়গা রয়েছে। এই সবকিছু দেখে কাকা ও তার বন্ধু জীবনের মায়া ছেড়ে দিলেন। তারা ভেবেছে তারা হয়তো আর কোনদিন বেঁচে বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না।

স্কুলের বাচ্চাগুলোকে না নেওয়ার কারণে আমার কাকাকে অনেক বেশি মেরেছিল। মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকিয়ে হাতের মধ্যে আঙ্গুলের মধ্যে গরম সুই দিয়ে আঘাত করেছিল। বেশ কিছুক্ষণ তাদের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে তাদেরকে একটি রুমের মধ্যে বন্দী করে কিডন্যাপাররা চলে গেল। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে কিডন্যাপাররা আবার তাদের কাছে ফেরত আসলো। তারপর তাদের গলার মধ্যে ধারালো ছুরি ধরে তাদের নাম ঠিকানা ও আত্মীয়-স্বজন কে কি করে,কে কোথায় আছে সব খোঁজখবর নিলো। তারপর তাদেরকে বলল তারা যদি বাঁচতে চাই তাহলে প্রত্যেকে যেন ৫ লাখ করে টাকা দেয়। তারা দুইজন বললো আমাদের বাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার মত ও সামর্থ্য নেই। আমার কাকা তাদেরকে বলল আমি মাত্র একটি কিন্ডারগার্টেন শুরু করেছিলাম। আর আমার বন্ধু হুজুর তিনি এখনো স্টুডেন্ট, তার কোন ইনকাম নেই। বরং তার বউ ও দুইজন বাচ্চা আছে। একথা শোনার পর কিডন্যাপাররা দুইজনের কাপড় খুলে প্রচন্ডভাবে আঘাত করতে লাগলো। অবশেষে তাদেরকে বাধ্য করলো তারা যেন বাড়িতে ফোন করে টাকার কথা বলে।

আমার কাকার নিকট মোবাইল ছিল, কিডন্যাপাররা সেই মোবাইল দিয়ে বাড়িতে কথা বলে ৫ লাখ করে দশ লাখ টাকা দাবি করে। কাকা ও তার বন্ধুর পরিবার এ কথা শোনার পরে পাগলের মত বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা জোগাড় করলো। এক ঘন্টা পরে কিডনাপাড়া আবার ফোন দিলো। আমার কাকার আব্বু যখন বলল যে এক লাখ টাকা ম্যানেজ হয়েছে কিডন্যাপাররা সাথে সাথে মোবাইল কেটে দিলো।তখন আমার কাকার আব্বু ভেবেছিল হয়তো তারা কাকাকে মেরে ফেলবে। এজন্য সন্ধ্যার আগে আগেই আরো দুই লাখ টাকা জোগাড় করলো। সর্বমোট ৩ লাখ টাকা জোগাড় করলো। সন্ধ্যার পরে কিডন্যাপাররা আবার ফোন দিলো। তারপর কিডন্যাপাররা বলল যদি এই কথা বাহিরে কারো কাছে প্রকাশ করা হয় তাহলে কাকাকে মেরে নদীতে ফেলে দিবে।

আমার কাকার বাবা তথা আমার দাদা তিন লাখ টাকা নিয়ে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে কিডন্যাপারদের কথা অনুযায়ী কয়েকটি জায়গায় গেলো।তারা আমার দাদাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরয়েছে।অবশেষে রাত আটটার দিকে ভৈরব সেতুর উপর থেকে দাদার কাছ থেকে কিডন্যাপাররা টাকাগুলো নিয়ে গেলো। মেঘনা নদীর উপরে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই ভৈরব সেতু। কিডন্যাপাররা যখন টাকা নিয়ে চলে গেলো তখন দাদা কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে আসলো। তারপরে তিনদিন কোন যোগাযোগ ছিল না।

চতুর্থ দিনের মাথায় আসরের পরে হঠাৎ কাকা বাড়িতে আসলো।সবাই ভেবেছিল টাকা কম দেওয়ার কারণে কাকাকে হয়তো তারা মেরে ফেলবে। কিন্তু কাকার ভাগ্য ভালো ৩ লাখ টাকা পেয়ে তারা কাকাকে ও তার বন্ধুকে ছেড়ে দিলো। তবে কাকার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল।এরপর থেকে কাকা খুবই সতর্কভাবে চলাফেরা করে। ভাগ্যের গুনে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে কাকা ও তার বন্ধু সেদিন ফিরে এসেছিল। আমি যে ঘটনাগুলো বললাম সেগুলো আমি কাকার কাছ থেকেই শুনেছিলাম।

এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা একটি শিক্ষা অর্জন করতে পারি যে, কখনো কারো লোভনীয় অফারে পা দিবো না। অচেনা কেউ কোথাও যেতে বললে তার সাথে যাবোবনা। এই দুনিয়াটা অনেক কঠিন, তাই বুঝে শুনে আমাদেরকে সামনের দিকে পা ফেলতে হবে।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSfQKFP87GjNCaLdCLKkYFWdxRmYuKurkfDpnYWoUUypXiwgziwKKNP24nNC65i32Am8Fp.png

আমার পরিচিতি

আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবার করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপ করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

mCz6aUXpYgcE9hndDxJeFHNCvijWNENnxm5KqcEUM3o1siCoMX3by8iWdE4qYzWA7pZHzh4KthdoHPj2eEciPaXhHTdxhx5dKApkU8hxE3mUrybeUbtQCvbs4JC247APSjksrR6prneL2GBtrunMiz4r5CiYySVGKj1e3nT19qBCX5ekz5F.png

5QqP4NVdsPNcDeePyfoZLTLv8efTACU5P6GADTBgMgfXR7uJx5fN91AE46tFfFA7GwMq22wjUwwY5XDyUBMksyZSJGUEyK1Re6UWVZ1PqVR2ntgu73qAW8iDh6yPt8YVsiJ7enc87gmY874JVVHPQo6hSZvUs47FymTjqs43bSUF1Wvtd8T.jpg

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPre.png

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

আপু,আপনার এই পোস্টটার অপেক্ষায় ছিলাম কখন করবেন।পোস্ট দেখামাত্রই চলে এলাম পড়ার জন্য। আসলে অনেক সময়ই কোনো ছবি বা নাটকে দেখেছি এমন কিডন্যাপ এর কারসাজি। কিন্তু আপনার কাকার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী শুনে গা শিউরে উঠলো। আল্লাহতালার অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। তারা তিন লাখ টাকা পেয়েও যে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে এটাই বড় কথা।

আপু এই ঘটনাটি যখন আমার কাকার সাথে ঘটেছে তখন আমাদের অবস্থাও এরকমই হয়েছে। টিভি সিরিয়ালের চেয়েও ভয়ঙ্কর একটি ঘটনার সাথে সম্মুখীন হয়েছিল আমার কাকা। যাইহোক আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, কাকা বাড়ি ফিরে আসতে পেরেছে।