পরম করুনাময় অসীম দয়ালু, মহান সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করছি-
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সদস্য বন্ধুরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি,আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আপনাদের মাঝে আমি জীবনে প্রথম সাঁকো দেখে বাবার সাথে সাঁকো পার হওয়ার স্মৃতি মূলক একটি ব্লগ লিখতে যাচ্ছি। চলুন আপনাদের মাঝে বাবার কোলে করে সাঁকো পার হওয়ার সেই স্মৃতিমূলক অনুভূতিটা প্রকাশ করি।
আপনারা সবাই জানেন যে, আমাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর এলাকায়। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি ব্যবসায়িক কারণে বেশি অংশ সময় ব্যস্ত থাকেন। ব্যস্ততার মাঝেও আমার বাবা আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতেন। আমরা যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন আমার বাবা যখনই অবসর সময় পেতেন আমাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন। একবার ব্যবসায়িক কাজের ঝামেলা কম থাকায় আমার বাবা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, যে তোমরা কোথায় ঘুরতে যাবে। আমি আর আমার এক বোন আমরা বেশি বায়না করতাম, যে এখানে যাবো ওখানে যাবো। আমাদের বাবা আমাদের দুজনের কথা ফেলত না। আমি আর আমার আপু মিলে সিলেক্ট করি যে আমার আব্বুর নানু বাড়িতে বেড়াতে যাব। আব্বুর নানা নানু কেউই বেঁচে ছিল না তখন। শুধু আব্বুর একমাত্র মামা বেঁচে ছিলেন। আব্বু তখন বলে যে চলো যাই অনেকদিন হয়ে গেলো মামাকে দেখি না। বাইনার কারণে আব্বু সেদিন আমাদেরকে নিয়ে যাবে বলেছিল।
আম্মু যখন জানতে পারে, তিনির মামা শ্বশুর বাড়িতে আমরা সবাই যাবো। তখন আম্মু আমাদের দু'বোনকে লং গ্রাউন দুটি সাদা জামা ও পিংক কালারের ২ জোড়া জুতা কিনে দিলেন। আমার আপু আর আমি সব সময় একই রকম জুতা ও জামা পড়তাম। যদি ও আমি আপুর চাইতে ছোট। তবু একজন এটা আরেকজনের কাছে বেশি ভালো লাগতো। তাই আম্মু দুইজনকে একই রকমের কাপড় কিনে দিতেন। আমরা যেদিন আব্বুর নানু বাড়ি অর্থাৎ আমার বড় নানা বাড়ি যাবো, সেদিন আমাদের দুই বোনকে একদম পরীর মত লাগছিল। সাদা কালারের দুটি জামা, জামাগুলোর মধ্যে ব্লু কালারের বল বল ছিট ছিল। আর জুতোগুলো পড়ার পর আব্বু আমাদেরকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন।
যেহেতু আব্বু তার মামার বাড়িতে যাবেন। সেহেতু তিনি অনেক কিছু কিনেছিলেন। সব রকমের ফল প্রয়োজনীয় জামা কাপড় এমনকি হাঁস-মুরগি আরো অনেক কিছু নিয়েছিলেন সাথে। আব্বুর মামা অর্থাৎ আমাদের বড় নানা কোন কাজ করে খেতেন না। সব সময় জমি বিক্রি করে বসে বসে খেতেন। আমার দাদুর নামের ৮০ শতাংশ জায়গা তিনি বিক্রি করে খেয়েছেন। তবু আমার আব্বু কিছু বলেননি। কারণ আমার দাদুরা ছয় বোন ও একটি ভাই ছিলেন। তাই সব বোনেরা সবার জায়গা নিয়ে নিলেও আমার দাদু সবার ছোট বোন হয়েও তিনির পাওনা জমি তিনি আনেননি। আর আব্বুর মামার অবস্থা ঐরকম ভালো ছিল না। আমার আব্বুর মামার বাড়ি মাধবপুরের কাছাকাছি। সেখানে গেলে বাসে করে বা সিএনজিতে যেতে হয়।
আমাদের বাড়ি থাকে প্রথমে আমরা কাউতলী গিয়েছিলাম, তারপর সিএনজির জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখনকার মত তখন অ্যাভেলাবল সিএনজি পাওয়া যেত না। তাই আমরা বাসে করে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় অনেকটা সময় লেগেছিল। আমার বয়স তখন বেশি ছিল না। আব্বু আমার হাতে গুলগুল রঙিন দুটি ললিপপ কিনে দিয়েছিলেন ও হাতে অনেকগুলো দুই টাকা নতুন নতুন নোট ছিল। তখন দুই টাকার নোটগুলোতে দোয়েল পাখি ছিল। আমি সেই টাকাগুলোকে পাখি টাকা বলতাম। ৫ টাকাগুলোতে হরিণের পিকচার থাকতো। সেই কারণে আমি এই টাকাগুলো অনেক পছন্দ করতাম।
আমরা যখন বাস থেকে নামলাম তখন দেখি বাঁশে একটি ব্রিজ। আসলে তখন এটা ব্রিজ না সাঁকো সেটা আমি জানতাম না। আমার জীবনে প্রথম আমি সাঁকো দেখেছিলাম সেখানে। সাঁকো অনেকটা বড় ছিল। তাই আব্বু আমাদের জন্য একটি নৌকা ভাড়া করেন ছোট নদীটি পার হওয়ার জন্য। আমার আপু আম্মু সেই নৌকায় উঠেন। তবে আমি বায়না করি যে আমি এই সুন্দর ব্রিজে উঠবো। আমি নৌকায় উঠবো না। তখন আমি আমার এত সুন্দর লং গ্রাউন্ড জামাটা নিয়ে মাটিতে বসে গিয়েছিলাম। কখন হালকা বৃষ্টি ও পড়ছিল। একেবারে কান্না করা শুরু করে দিয়েছিলাম। আব্বু তখন আমাকে কোলে নিয়ে সেই সাঁকোটি পার হলেন। সাঁকে পার হওয়ার সময় আমার অনেক আনন্দ লাগছিল।যখন আমি সাঁকোর মাঝামাঝি গিয়েছিলাম, তখন সাঁকোটি অনেকটা নড়াচাড়া করছিল। আব্বুর পেছনে অনেক লোক এবং সামনে দিয়েও দুজন লোক আসছিল তাই। ওই সময় আমার অনেকটা ভয় লেগে গিয়েছিল। ভয়ে আমার হাতে থাকা নতুন নতুন ওই টাকার নোটগুলো ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই টাকা গুলো নদীর পানিতে পড়ে গিয়েছিল। তখন আমি চুপ করে রয়েছিলাম আব্বুকে কিছু বলি নাই। সুন্দর করে সাঁকো পার হয়ে গিয়েছিলাম। সাঁকো পার হওয়ার পর আমি আব্বুর কোল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আব্বু বলেছে এখন হাটো, কিন্তু আমি যে পানিতে টাকা ফেলে দিয়েছি সেজন্যে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর হালকা হালকা কান্না কান্না ভাব করে আব্বুর কাছ থেকে আবার কিছু টাকা নিয়েছিলাম। তারপর আমাদেরকে নেওয়ার জন্য অনেক মানুষ এসেছিল আমাকে আব্বুর মামা অর্থাৎ আমাদের দাদা খুলে নিয়েছিল। আর তিনির সাথে আরো কয়েকজন লোক এসেছিল তারা সকল বাজার সদায় এগুলো নিয়ে দাদার বাড়িতে নিয়ে পৌছে দিলেন।
আমাদের দাদু সেদিন আমাদের অনেক আদর আপ্যায়ন করেছিলেন। আমি সেই দিনের সাঁকো পার হওয়ার ঘটনা আজও ভুলতে পারি নাই। তার মধ্যে বাবার কোলে ঘুমানো। বাবার কোলে করে সাঁকো পার হওয়া সেই ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে। যখন ট্রেনে করে আসি বিভিন্ন জায়গায় সাঁকো দেখলেই আমার সেই দিনের ঘুরতে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে যায়। আজও বাবার কথা অনেক মনে পড়ছিল আর সেই সাঁকোর ঘটনাটা। তাই আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিলাম।
আজ এই পর্যন্তই বন্ধুরা আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি আপনাদের কাছ থেকে বেঁধে নিতেছে আল্লাহাফেজ।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।
আমার পরিচিতি
আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপি করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit