একটি টেক্সট ম্যাসেজ ও তাহাদের স্পেশাল বিবাহ বার্ষিকী

in hive-129948 •  9 days ago 

হ্যাল্লো বন্ধুরা

|| আজ ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫|| মঙ্গলবার ||


প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় পরিবারসহ সুস্থ আছি, ভালো আছি। বরাবরের মতোন আজও আপনাদের সাথে নতুন একটি পোষ্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। পোস্ট টি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন অবশ্যই। তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷

IMG_20221118_163457.jpg




জানুয়ারির ২৬ তারিখে ছিলো আমার বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী। এবছর তাদের ৩৬ তম বিবাহ-বার্ষিকী গেলো। কিন্তু আমার বাবা তো বরাবরই ভোলাক্কার নির্ভেজাল মানুষ। দিন-দুনিয়ার তেমন বিশেষ কোন কিছুই তার মনে থাকে না। সুংসারের কার কি প্রয়োজন, পুজোর শপিং থেকে শুরু করে, বাসায় মেহমান আসলে কি দিয়ে আপ্যায়ন, কি বাজারসদাই - সব ডিপার্টমেন্ট মাকে একাই সামলাতে হয়। বরাবরের মতো এই বিশেষ দিনটার কথাও বাবা ভুলে গিয়েছিলো এবারও! আমার সাথে মায়ের কথা হয় সন্ধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসা যে, মা সাধারণত এই বিশেষ দিনে পায়েস রান্না করেন। এছাড়া ওভাবে আয়োজন করে কোনো কিছু করা হয় নি কখনোও! করা হবে কিভাবে! বাবার যে মনেই থাকে না!



IMG20250106124116.jpg


সন্ধ্যায় যখন কথা হলো মায়ের সাথে, মা কে সরাসরি তো আর উইশ না করে জিজ্ঞেস করলাম, আজকে পায়েস রান্না করো নি?? মা তো ওতেই বুঝে গিয়েছে আমি কি বলতে চাইছি! মা বললো -না, আজ পায়েস করা হয় নি৷ আসলে বাবা- মা দুজনেরই বেশ অনেকদিন থেকে ডায়াবেটিস টা বেড়ে গিয়েছে। তাই খাওয়া দাওয়া বুঝে-শুনেই করছেন। উনারা আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ও নেন না। সেকারণেই এবার পায়েস বাদ। পরে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা কি ভুলে গেসে নাকি? মা বলে, তার আর কবে এসব মনে থাকে! শুনে তো মন টাই খারাপ হয়ে গেলো। মায়ের এই নিয়ে আফসোস করা টা হয়তো স্বাভাবিক। আরো কিছুক্ষণ গল্প করে মায়ের কল রেখে দিলাম।



ওদিকে মায়ের সাথে কথা বলার পর আমারো তো কিছুটা মন খারাপ হয়ে ছিলো বাবার উপর! তবে মানুষের স্বভাব তো আর পরিবর্তন হয় না, কী আর করার! সে তো ইচ্ছে করে ভুপে যায় - এমন টা না। ওদিকে বাবাকেও সরাসরি ফোন দিয়ে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাতেও আনইজি লাগছিলো! ওই যে, ওভাবে অভ্যস্ত না যে! বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা ছোট থেকেই অনেক বেশি এক্সপ্রেসিভ আমাদের চেয়ে। কিন্তু আমরা তো তেমনটায় অভ্যস্ত না। তাই বাবাকেও হোয়াটস এপ এ " Happy Anniversary " লিখে একটা টেক্সট দিয়ে রাখলাম। যে অন্তত মনে তো পড়ুক! পরে আমারো মনে হচ্ছিলো যে এই কাজটাই তো সকাল সকাল করলেই হতো! তাহলে মায়েরও মন খারাপ হতো না। যাই হোক, বাবাও থ্যাংকস দিয়ে একটা ম্যাসেজ রিপ্লাই দিলো। তখন নিশ্চিন্ত হলাম যে এখন বাকিটা বাবা ম্যানেজ করে নিতে পারবে.. 😃

Screenshot_2025-01-26-23-43-51-70_6012fa4d4ddec268fc5c7112cbb265e7.jpg


রাতে প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে হুট করে মা একটা ছবি হোয়াটস এপ করলো। একটা মগ আর একটা বডি পারফিউম। সাথে লিখলো- এই প্রথম উপহার! আমি একটু বাবার ব্যাক আপ দেয়ার চেষ্টা করলাম যে তাহলে তো বাবার মনে ছিলো! কিন্তু মা দেখি বলে- " তোমার ম্যাসেজ দেখে মনে পরেছে! " মানে মায়ের কাছে বাবা ধরা পরে গেছে 🤭। যাই হোক, তবুও জানার পরে বাবা রাতের বেলা বাহিরে গিয়ে মায়ের জন্য কিছু উপহার তো নিয়ে এসেছে! এবং সেটাই যে বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম কোনো উপহার বাবার পক্ষ থেকে- এটাই অনেক কিছু! সেই প্রথমের সাক্ষী এবং উপলক্ষ হতে পেরেও আমার ভীষণ ই খুশী লাগছিলো। মা যতই রাগ করুক প্রথমে, উপহার পেয়ে পরে সে যে খুশীও হয়েছে, আবেগাপ্লুত হয়েছে, সেটাও নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না! একটা ছোট্ট টেক্সট ম্যাসেজ থেকে এমন দারুণ কিছু হলে মন্দ কি! ভাগ্যিস বাবাকে টেক্সট টা করেছিলাম! 😍😍
যাই হোক, আজ আর কথা বাড়াচ্ছি না। এটুকুই ছিলো আমার আজকের আয়োজন। আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। তারা যেন এভাবেই একসাথে সুস্থ থাকে, ভালো থাকে, সুখী থাকে সারাজীবন। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
🌼 ধন্যবাদ 🌼

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovZPhyQZF46Jzu1RHsqJAYaFK79KURRYTTDCfs83L9hXVyhHVVfQHR1BRxtCJby4EjZZkEPu8kTbt3hCBMQWS3cpN.png

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Screenshot_2025-01-28-14-47-03-87_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-46-49-74_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-46-19-47_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-46-00-75_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-45-49-10_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-45-20-88_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

Screenshot_2025-01-28-14-45-01-81_40deb401b9ffe8e1df2f1cc5ba480b12.jpg

প্রথমেই কাকু কাকিমার অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে প্রণাম জানাই। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বাড়ির ছেলেরা আর কবে এই দিনটিকে মনে রাখে আর মেয়েদের এই আক্ষেপ টাই তাদের কাছে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। জীবন যদি সিনেমার মতো হতো তাহলে হয়তো জীবনের অর্থটাই অন্যরকম হতো। তবে আপনার মেসেজে কাকু মনে করে কাকিমার জন্য উপহার এনেছেন এটা কিন্তু কাকিমার কাছে অন্যরকম সারপ্রাইজ। যাইহোক দুজনে এভাবেই ভালো থাকুন আরো অনেক অনেক বছর কাকিমা এভাবে আফসোস করুন আর মাঝে মধ্যে কাকু সারপ্রাইজ দিয়ে কাকিমা কে চমকে দিক।

অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি। আপনার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনুক। 😍 ওরা এভাবেই একসাথে হাসিতে-খুশিতে থাকুক, এটাই চাওয়া।