মোটামুটি যখন ফোণটা আসে তখন বাজে ঘড়িতে সকাল ৪ টে, ভোর হয়ে এসেছে, এমন সময় সুপার সিনিয়রের ফোন। স্বাভাবিক ভাবেই একটু থমকালাম। যায় হোক ফোণ ধরলাম এরপর " "
মৌসম জীর ফাস্ট প্রশ্ন তু ইতনা *** কিউ হ্য বে ? সাথে আরো বাছা বাছা কয়েকটি শব্দবান। কোনমতে বললাম কেন দাদা কি হয়েছে ?
উলটোদিকে মৌসম দা যা বলল তার মর্মার্থ হয় বেকার মেয়েটাকে কস্ট দিচ্ছিস, তোকে অত্যন্ত ভালোবাসে, কত দূর থেকে এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি, আমি বোঝালাম যে আমার নিজেরই পোষায় না তো জোর করে প্রেম করবো নাকি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কোণ মতে ফোন রেখে সোজা বিছানায়।
ঘুম ভাংলো একটা বিরাট বাওয়ালের আওয়াজে, আমার দরজায় দুমদাম আওয়াজ, ঘুম চোখে কোন মতে উঠে দরজা খুলতেই ভেতরে ঢুক্লো গার্লস হোস্টেল থেকে জনা ১৫ সুন্দরী, সেখানে সিনিয়র জুনিওর সবাই আছে। সাথে কিছু সুপার সিনিয়র। আমি অলরেডি ভেবলে গেছি এইসব দেখে। আমার রুম মেটও ততক্ষনে ঘুম থেকে উঠে গেছে। বিচ্ছিরি ব্যাপার পুরো।
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে জানা গেল নন্দিতা নাকি সারা রাত কান্না কাটি করেছে এবং আমার নাম ধরে হাও মাও করে চিৎকার করেছে, মেয়েরা সামলাতে পারেনি তাই নারী সমিতি বসিয়ে ঠিক করেছে আজকেই হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে। অতঃপর সবাই মিলে আমার রুমে ভিজিট মেরেছে। সাথে ফেউ জুটেছে সিনিয়র রা, কলেজের মেয়েদের সমস্যা মানে তাদেরও সমস্যা। এমনি এমনি তো কাউকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না ।
ছেলে পুলে জুনিয়র রা তো উৎসাহ পেয়েছে, সিনিয়ররা বাওয়ালের চান্স আর আমার ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা বিরাট মজা, মোটামুটি মেয়েরা আমার ওপর ঝাঁপয়ে উঠেছে। এতসবের মাঝে আমি এদিকে কিছুতেই নন্দিতাকে দেখতে পাচ্ছি না, কোণ মতে জিজ্ঞেস করলাম আসল মানুষটি কোথায় ? কে একজন কি বলল আজ এত বছর পর খেয়াল নেই তবে বুঝলাম সে সেফ আছে এবং তার পাহারায় আরো জনা তিনেক মেয়ে আছে। সবাই মিলে নাকি তাকে পাহারা দিচ্ছে।
মোটামুটি সেদিন ক্যাল খাইনি তবে খাবার ফুল চান্স ছিল, সব শেষে মৌসম ভাইয়া বলল আমার যখন প্রেম করার ইচ্ছেই নেই তখন জোর করে লাভ নেই, বরং নন্দীতা কে বোঝানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিল দাদা । সুপার সিনিয়র বলে কথা, এদিকে বাওয়ালের আওয়াজে পোস্ট ডক, থিসিসেস দাদা দিদিরা আসতে শুরু করেছে, ওদের থেকে আমরা দুরেই থাকি, খুব বাধ্য হলে তারা মাস্টার্সের স্টুডেন্ট দের দিয়ে কিছু বলে পাঠায়, পারত পক্ষে বাকিদের সাথে কথা বলে না।
অতএব ঠিক হল মৌসম ভাইয়া বোঝাবে যে এই প্রেম হবার না, তুই মা গুটি গুটি নিজের যায়গায় ফেরত যা। এই মর্মে আইন পাস হলো। ভিড়ও পাতলা হলো আসতে আসতে। আমার রুম মেট আমাকে উদোম খিস্তি মেরে আবার সেদিনের জন্য এনার্জি নিতে শুরু করলো।
সন্ধ্যে বেলা অডিটোরিয়ামে গিয়ে দেখি ঝমকালো পরিবেশ। চারিদিকে নতুন আলো , ফুল ইত্যাদি মিলিয়ে দুরন্ত প্রেম প্রেম আমেজ, ততক্ষনে আমার পেটে কত কি ঢুকে গেছে আমি নিজেও জানি না, মাটিতে আছি না টলছি ঠাওর করতে পারছি না, কেউ একজন বলল দুপুর থেকে মৌসমদা নাকি নন্দিতা বোঝাচ্ছে এই প্রেম হবার নেই। আমার একটু হলেও খারাপ লেগেছিল সেদিন, নিজের প্রতিও লেগেছিল, সামান্য ফাজলামি করতে গিয়ে একটা মেয়েকে অনেকটা দুঃখ দিয়ে ফেলেছি।
যায়হোক তারপর ভুলে যায় সবকিছু, প্রোগামের সময় কে কোথায় ছিল কেউ জানে না। কিন্তু এর পর শুরু হল নতুন নাটক। মাঝে মাঝেই শুনলাম হোস্টেল থেকে মৌসমদা কে পাওয়া যাচ্ছে না, মাঝে মাঝেই মানে তিন চার দিন। হঠাত সেমেস্টারের আগে পর পর তিনদিন নেই।
ধীরে ধীরে যেটা বুঝলাম দাদা নাকি নন্দিতা কে কাউন্সেলিং করছে !
শুনে আমি হতভম্ব পুরো। মৌসম দা কে যে দেখেনি যে জানে না ভদ্রলোক কি জিনিষ, এখন ভদ্রলোকই বলবো। এক বিখ্যাত কোম্পানির কান্ট্রি হেড হয়ে বসে আছেন তিনি। মারকেটে যথেস্ট সুনাম। যায় হোক সবথেকে বড় ঝটকা লাগলো যেদিন মৌসম দার অন ক্যাম্পাস। কলেজে আসছে রেড হ্যাট আর সিস্কো একসাথে। জয়েন্ট জেভি হবে। সাজো সাজো রব সবার মধ্যে।
মৌসমদা পড়াশুনোতে আমাদের মতই, বিরাট ভালো বা এক্সট্রার্ডিনারি বলা যায় না। ওদের ব্যাচের সবাই মোটামুটি প্লেসড। কয়েকজন বাকি আছে , তাদের মধ্যে মৌসম দাও আছে। আর দিল্লি ন্যানেশল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলোজি ভারতের বুকে যথেস্ট নামকরা প্রতিষ্ঠান। ফলত ফ্যাকাল্টদের ও একটা সম্মানের ব্যাপার যদি এখান থেকে পুরো ব্যাচকে প্লেস করতে না পারে তাহলে আই আই টি ওয়ালারা আওয়াজ দেবে। যায় হোক সেদিন ক্যাম্পাসিং শুরু হবার কিছু আগে দেখা গেল মৌসমদা নেই।
আবার খোঁজ খোঁজ রব শুরু, ডিপার্টমেন্ট হেড তো পারলে আমাদের কেও খিস্তি দেই, কিছু পরে দেখা গেল মৌসম দা এলো। কোথা থেকে এলো , কোথায় ছিল কেউ জানে না। কিন্তু যেটা জানে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকে মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসে। বাকিরা যেখানে কম করেও ১৫ থেকে কুড়ি মিনিট সময় নিয়েছে, কেউ কেউ তারও বেশি সেখানে মৌসম ধিংড়া সাব মাত্র ৪ মিনিট।
আমরা জুনিয়ার সামনে যাওয়ার নিইয়ম নেই, কিন্তু কথা হাওয়াতে ভেসে আসছে। জানা গেল দাদা সিলেক্টেড। প্রথম পোস্টিং নাকি সাউথ আফ্রিকা তারপর ২ বছরের মধ্যে আবার দেশে। সাথে লোভনীয় প্যাকেজ। আমরা আনন্দিত। সেদিন যদিও সুপার সিনিয়র দের সবাই প্লেসড হয়ে গেল ওদের ডিপার্টমেন্টের। গোটা কলেজ জুড়ে খুশির আমেজ, পি এইচ ডির দাদা দিদিরা এসেও পার্টিতে যোগ দিল।
এমন সময় বোমা ফাটালো মৌসম দা নিজে। বলল আগামীকাল নাকি বিয়ে করছে। আমরা সবাই চমকে উঠলাম ! বিয়ে !! এই বয়েসে। লোকটা চাকরী পেয়ে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বোঝা যেল যে কাল সত্যিই বিয়ে, অফার লেটার পেয়েই নাকি বিয়ে করবে ঠিক করেছে। এবং করবে সেই নন্দিতাকেই !!!
এবার আমার চমকানোর পালা। কম্পিউটার সায়েন্স, আইটি, ইলেক্ট্রনিক্স এই তিন্টে দিপার্টমেন্ট অলমোস্ট হাত ধরাধরি করেই চলে, বাকি গুলোর সাথে অতটা পিরিত নেই, জানিও না তাদের ব্যাপারে। সেদিন রাতে মৌসম দার পার্টি বলাকা হোস্টেলে, সাথে মেয়েদেরও ইনভাইট। ততদিনে তারা পাস আউট, ফলে আর আর রেস্ট্রিকশন নেই।
দুরন্ত মজা করেছিলাম পরের দুটো দিন। আমি প্রায় জামাই আদর খেয়েছি সবার কাছে ভাগ্যিস নন্দীতা সেদিন আমাদের কলেজে এসেছিল।
দাদা বিয়ে করে হানিমুন করে ফিরে এসে চলে গেল সাউথ আফ্রিকা, আমরা থার্ড ইয়ার উঠে গেলাম। জীবন এগিয়েই চলছিল। এমন সময় আমার এক শীতের রাতে কম্বল জড়িয়ে গুলতানি মারছি নিজের হোস্টেলে, আমার রুমমেট জানালো সেদিন মৌসম দার ৪ মিনিটের ইন্টারভিও শেষ করার আসল কারন। ইন্টারভিউ প্যানেলে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে একজন নন্দিতার মামা !!!
17th june, 2022
21:30 PM
Durgapur ( W.B )
( চলবে )